অন্যের সম্পদ আত্মসাৎ করে এলাকায় সমাজসেবক বনে গেছেন ঢাকার দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের শুভাঢ্যা ইউনিয়নের হাসনাবাদ এলাকার আসলাম সিকদার (৫৫)। এলাকায় তাঁর সমাজসেবক হিসেবে পরিচিতি থাকলেও এর মধ্যে রয়েছে প্রতারণা। আসলে তিনি একজন মুখোশধারী প্রতারক। বসুন্ধরা হাউজিংকে নিজের ও ভাইদের জমি দেওয়া এবং অন্যের জমি কিনে দেওয়ার কথা বলে বসুন্ধরার কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা নেন তিনি। কিন্তু জমি আর দেননি। বরং জমি বা টাকা ফেরত চাইতে গেলে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন। তাঁর কোনো রাজনৈতিক পরিচয় নেই। তবে যখন যে দলে সুবিধা পান, তখন সেই দলের হয়ে কাজ করেন তিনি।
হাসনাবাদ এলাকার মৃত আব্দুল মালেক সিকদারের ছেলে আসলাম সিকদার। জানা যায়, দক্ষিণ কেরানীগঞ্জের কোণ্ডা ইউনিয়নে বাপ-দাদার সম্পত্তি দিয়ে আসলাম হাউজিং নামে একটি আবাসন প্রকল্প (হাউজিং প্রজেক্ট) বানান আসলাম। ২০০৩-২০০৪ সালের দিকে তিনি তাঁর এই প্রজেক্টের জায়গা বসুন্ধরার কাছে বিক্রি করে ও আশপাশ থেকে আরো জায়গা কিনে দেওয়ার কথা বলে তিন কোটি টাকা বায়না নেন। পরে তিনি তাঁর প্রজেক্টের জায়গা বসুন্ধরাকে আর বুঝিয়ে দেননি। টাকা আর জায়গা দুটো নিয়েই বসুন্ধরার সঙ্গে গড়িমসি করতে থাকেন। পরে তিনি প্রজেক্টের মধ্যে একটি ‘রঙ্গশালা’ তৈরি করেন। সেখানে রাতেরবেলা চলে বিভিন্ন অপকর্ম। এই অপকর্ম যাতে বাইরে প্রকাশ না পায় সে জন্য তিনি তাঁর বাবার নামে গড়েন একটি ফাউন্ডেশন। এই ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে এলাকায় বিভিন্ন সামাজিক কাজে যুক্ত হয়ে তিনি বনে যান ‘সমাজসেবক’।
কিন্তু বসুন্ধরার কাছ থেকে নেওয়া সেই তিন কোটি টাকা বা জমি কোনোটাই দিচ্ছেন না বসুন্ধরাকে। এদিকে বসুন্ধরা কম্পানি আসলামের ভাইদের কাছ থেকে তাঁদের জমি কিনে দলিল করে নেয়। বসুন্ধরা সেই জায়গা প্লট আকারে বিক্রি করে ক্রেতাদের (এলওটি) কাছে বুঝিয়ে দেয়। তবে প্লট এলওটিরা সেখানে কাজ করতে গেলে আসলাম তাঁদের বাধা ও নানা হুমকি দেন। এ বিষয়ে প্লট এলওটিরা দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় বিভিন্ন সময় কয়েকটি সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করেন। কিন্তু আসলাম সিকদার থানা-পুলিশকে ম্যানেজ করে সাধারণ ডায়েরি বা অভিযোগ তদন্ত করতে দেননি।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, আসলাম সিকদারের রয়েছে নিজস্ব একটি বাহিনী। সারা দিন এই বাহিনী নিয়ে বিভিন্ন কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত থেকে সন্ধ্যার পর ‘রঙ্গশালায়’ বসে তাঁর আসর। এখান থেকে তাঁর বাহিনী দিয়ে এলাকায় নানা অপকর্ম করে থাকেন তিনি। অভিযোগ আছে, কোণ্ডা ইউনিয়ন পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান আতিকুল্লাহ ২০১৩ সালের ১০ ডিসেম্বর আসলামের এই রঙ্গশালায় বসে মদ পান করেন। এরপর তিনি সেখান থেকে কোণ্ডা ১০ শয্যা হাসপাতালে যান। পরের দিন হাসপাতালের পাশে তাঁর পোড়া লাশ পাওয়া যায়। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক ব্যক্তি জানান, থানা-পুলিশের সঙ্গে আসলামের রয়েছে বেশ সখ্য। এলাকায় থানার পুলিশ এলে মোটা অঙ্কের টাকা দিয়ে ম্যানেজ করতেন তিনি। আতিকুল্লাহ হত্যা মামলায় তিনি গ্রেপ্তার হলেও পরে আইনের ফাঁকফোকর দিয়ে বের হয়ে আসেন। এরপর সেই মামলায় তাঁকে আর বেগ পেতে হয়নি।
আসলামের অত্যাচারে অতিষ্ঠ বসুন্ধরা রিভারভিউ এলাকার জনগণ। তাঁর বিরুদ্ধে দক্ষিণ কেরানীগঞ্জ থানায় ছয়টি সাধারণ ডায়েরি রয়েছে। সেগুলো হলো—জিডি নং-১১১৩, তারিখ ২৯-১১-২০১৭, বাদী প্লট এলওটি গিয়াস উদ্দিন; জিডি নং-৫১৯, তারিখ ১২-১১-২০১৯, বাদী প্লট এলওটি মো. রসেল আহমেদ; জিডি নং-১৪৯০, তারিখ ৩১-১২-২০২০, বাদী বসুন্ধরা কম্পানির সিকিউরিটি মো. সাইফুল ইসলাম; জিডি নং-৮৩৬, তারিখ ২০-২-২০২০, প্লট এলওটি মো. রিপন আলী; জিডি নং-১৬১৭, তারিখ ২৯-১২-২০২০, বাদী প্লট এলওটি মো. রাসেল আহমেদ। এত সব অভিযোগের পরও আসলাম সিকদার দিব্যি চলাফেরা করেন।
বর্তমানে আসলাম এক ব্যাংকের মামলায় জেলহাজতে আছেন। এ কারণে এ বিষয়ে তাঁর বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।