আকীদা, ঈমান, সুন্নাহ এগুলো সর্বযুগের আলেমগণের নিকট একই পরিভাষার ভিন্ন ভিন্ন নাম। আমি বুঝি না আকীদা শব্দটি গ্রহণ করতে কিছু মানুষের এত চুলকানী কেন? আমি মিলিয়ে দেখেছি, তাঁরাই এ শব্দটি নিয়ে বাড়াবাড়ি করে যারা এ ফিল্ডের লোক নয়, অথবা যারা জগাখিচুড়ি ঐক্যে বিশ্বাসী।
আবার দেখি কারও দাবী হচ্ছে, আকীদা ৩য় শতকে ব্যবহৃত পরিভাষা। অন্য কারও নিকট চতুর্থ শতকের।
বস্তুত আকীদা শব্দটি একটি গ্রহণযোগ্য পরিভাষা, আমাদের শাইখ আব্দুল মুহসিন আব্বাদ হাফিযাহুল্লাহ তা বিস্তারিত ব্যাখ্যা করে সাব্যস্ত করেছেন।
নিচে আমি কয়েকটি বিষয় পয়েন্ট আকারে তুলে ধরছি। (বিস্তারিত শাইখের গ্রন্থ “আর রাদ্দু আলাল মালেকী” গ্রন্থে দেখুন)
১) আকীদা শব্দটির মূল অর্থ হচ্ছে কোনো কিছু অন্তরে বদ্ধমূল হওয়া, মজবুত হয়ে থাকা। এ অর্থে কুরআনে কারীমে শব্দটির বিভিন্ন রূপ এসেছে।
২) আকীদা শব্দটির সীগাহ রূপ হাদীসে এসেছে।
সুনান দারেমীর সহীহ বর্ণনায় এসেছে, لا يعتقدهن قلب مسلم
৩) আকীদা শব্দটির শব্দরূপ সাহাবীগণের কেউ কেউ ব্যবহার করেছেন।(আল ইবানাহ)
৪) অনুরূপ আকীদা শব্দটি তাবে’ঈগণ ব্যবহার করেছেন, যেমন ইমাম যুহরী ব্যবহার করেছেন। (সহীহ বুখারী)
৫) আকীদা শব্দটি যুগ যুগ ধরে আমাদের ইমামগণ বিনা বিরোধিতায় ব্যবহার করেছেন “অন্তরের দৃঢ় বিশ্বাস” অর্থে।
এমনকি এ ব্যাপারে আহলে সুন্নাত, আশআরী, মাতুরিদী, মুতাযিলা কেউই বিরোধিতা করেনি।
৬) আকীদা নামে মুসলিমদের সকল গোষ্ঠী নির্দ্ধিধায় শত শত গ্রন্থ রচনা করেছেন, কেউ এটা নিয়ে কোনো ভিন্নমত পোষণ করেননি।
৭) আকীদা শব্দটি সকল ধর্মের লোকদের জন্য কমন টার্ম হিসাবে ব্যবহার করা যায়, যেমন বলা যায়, খৃষ্টানদের আকীদা-বিশ্বাস। কিন্তু বলা যায় না, খৃষ্টানদের ঈমান। কারণ ঈমান নিছক মুসলিমদের শরঈ পরিভাষা।
৮) তাছাড়া “লা মুশাহাতা ফিল ইস্তেলাহ” যদি পরিভাষায় সমস্যা না থাকে তাহলে সেটা ব্যবহার নিয়ে অযথা ঝগড়া করা আলেমদের কাজ নয়।
৯) আর যদি বলতেই থাকুন যে, ঈমানই বলবো, তাহলেও আমরা বলবো, আসুন ঈমান শিখে নেই, ঈমান শুদ্ধ না হলে জান্নাতে যাওয়া যাবে না।
১০) মূলত আকীদা ও ঈমান নিয়ে কিছু মানুষের চুলকানির মূল কারণ হচ্ছে, বিষয়টি অপ্রয়োজনীয় করার চেষ্টা করা। যা কুফরী লালন করার মতই। আল্লাহ আমাদের হেফাযত করুন।
আসুন আমরা আকীদা শব্দটিকে বিদ্বেষের জায়গা না বানাই। আকীদা সহীহ করার ক্ষেত্রে সময় ব্যয় করি।