আপনার চিরশত্রু থেকে সাবধান
………………………………………..
اَعُوْذُ بِاللهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيْمِ
بِسْمِ اللهِ الرَّحْمٰنِ الرَّحِيْمِ
১.শয়তান সম্পর্কে মানুষকে আল্লাহর সতর্কবাণী
মহান আল্লাহ মানুষকে তাঁর সৃষ্টির মধ্যে অতি উচ্চ মর্যাদা দান করেছেন, সম্মানিত করেছেন তাকে অনেক গুণ বৈশিষ্ট্য দিয়ে। তিনি বলেছেন :
وَلَقَدْ كَرَّمْنَا بَنِي آدَمَ وَحَمَلْنَاهُمْ فِي الْبَرِّ وَالْبَحْرِ وَرَزَقْنَاهُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ وَفَضَّلْنَاهُمْ عَلَىٰ كَثِيرٍ مِّمَّنْ خَلَقْنَا تَفْضِيلًا
অর্থ : আর আদম সন্তানদের আমি দান করেছি সম্মান ও মর্যাদার আসন। তাদের পরিবহনের ব্যবস্থা করে দিয়েছি স্থলভাগ এবং জলভাগে। তাদের জীবন যাপনের উপকরণ হিসেবে সরবরাহ করেছি যাবতীয় উত্তম সামগ্রী। আর আমার অনেক সৃষ্টির উপরই তাদের প্রদান করেছি শ্রেষ্ঠত্ব। (সূরা ১৭ ইসরা : আয়াত ৭০)
মানুষ আল্লাহর ইবাদত ও খিলাফতের তথা তাঁর দাসত্ব ও প্রতিনিধিত্বের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে অধিষ্ঠিত থাকতে পারে এই মর্যাদার আসনে। মানুষের এই মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের মূল কারণ আল্লাহর দাসত্ব ও প্রতিনিধিত্ব। এই দায়িত্ব পালনের উদ্দেশ্যেই তাকে সৃষ্টি করা হয়েছে। কিন্তু, সে যদি এই দায়িত্ব পালন থেকে বিচ্যুত হয়, কিংবা যথাযথভাবে দায়িত্ব পালন না করে, তখন সে অনিবার্যভাবে বিচ্যুত হয়ে পড়ে তার সেই মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের আসন থেকে :
ثُمَّ رَدَدْنَاهُ أَسْفَلَ سَافِلِينَ
‘তারপর আমি তাকে নামিয়ে দিই নিচুদের চাইতেও নিচে।’ (সূরা আত তীন : ৫)
মানুষের পেছনে লেগে এ দায়িত্বই পালন করে শয়তান। মানুষকে তার দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনের সহজ-সরল-সঠিক পথ থেকে বিভ্রান্ত ও বিচ্যুত করে তার প্রকৃত মর্যাদা ও শ্রেষ্ঠত্বের আসন থেকে তাকে নিচে নামিয়ে দেয়াই শয়তানের প্রানান্তকর প্রচেষ্টা। এরি জন্যে সে মরিয়া হয়ে কাজ করে। এটাই তার জীবনের একমাত্র প্রতিজ্ঞা, একমাত্র অংগিকার।
কিন্তু মানুষ তার এই স্বঘোষিত সুস্পষ্ট শত্রুর বিষয়ে অচেতন, অসতর্ক ও গাফিল। যুগে যুগে আল্লাহ তায়ালা নবী রসূলগণের মাধ্যমে মানুষকে শয়তান সম্পর্কে সতর্ক করে আসছেন। শয়তানের ধোকা, প্রতারণা ও বিভ্রান্তি থেকে বাঁচার উপায় তাকে বলে দিয়েছেন।
আখেরি নবী মুহাম্মদ সা.-এর মাধ্যমে তিনি গোটা বিশ্ববাসীকে শয়তান সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। তাঁর প্রতি তিনি বিশ্ববাসীর জন্যে নাযিল করেছেন আল কুরআন। চিরস্থায়ীভাবে হিফাযত করেছেন এ কিতাবকে। এই মহাগ্রন্থ আল কুরআনে তিনি কিয়ামত পর্যন্তকার মানবজাতিকে শয়তানের চরম শত্র“তা সম্পর্কে বারবার সতর্কবাণী উচ্চারণ করেছেন। আহবান জানিয়েছেন শয়তানের প্রতারণা থেকে আত্মরক্ষা করতে, শয়তানের পদাংক অনুসরণ না করতে, তার আনুগত্য ও দাসত্ব না করতে :
يَا بَنِي آدَمَ لاَ يَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَا أَخْرَجَ أَبَوَيْكُم مِّنَ الْجَنَّةِ يَنزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْآتِهِمَا ۗ إِنَّهُ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيلُهُ مِنْ حَيْثُ لَا تَرَوْنَهُمْ ۗ إِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِينَ أَوْلِيَاءَ لِلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ
অর্থ : হে আদম সন্তানেরা (সতর্ক হও)! শয়তান যেনো ধোকা প্রতারণার (ফবপবরাব) মাধ্যমে তোমাদের দায়িত্ব কর্তব্য পালন থেকে বিচ্যুত করে) ভুল পথে পরিচালিত করতে না পারে, যেভাবে সে (ধোকা প্রতারণার মাধ্যমে) তোমাদের (আদি) পিতা-মাতাকে জান্নাত থেকে বের করে দিয়েছিল। তাদের পরস্পরকে তাদের গোপন অংগ দেখানোর জন্যে সে তাদের বিবস্ত্র করে দিয়েছিল। সে এবং তার দলবল এমনভাবে (বা এমন স্থান থেকে) তোমাদের দেখতে পায় যেখান থেকে তোমরা তাদের দেখতে পাওনা। আমি শয়তানগুলোকে সেই সব লোকদের অলি (অভিভাবক) বানিয়ে দিয়েছি, যারা ঈমান আনেনা, ঈমানের পথে চলেনা। (সূরা ৭ আল আ’রাফ : আয়াত ২৭)
وَلَا تَتَّبِعُوا خُطُوَاتِ الشَّيْطَانِ ۚ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
অর্থ : তোমরা শয়তানের পদাংক অনুসরণ করোনা, নিশ্চয়ই সে তোমাদের ডাহা দুশমন। (সূরা ২ আল বাকারা : আয়াত ১৬৮)
وَلَا يَصُدَّنَّكُمُ الشَّيْطَانُ ۖ إِنَّهُ لَكُمْ عَدُوٌّ مُّبِينٌ
অর্থ : (হে মানুষ!) শয়তান যেনো (সত্য-সঠিক-সরল পথে চলতে) তোমাদের প্রতিবন্ধক হয়ে দাঁড়াতে না পারে। জেনে রাখো, সে তোমাদের সুস্পষ্ট শত্রু। (সূরা ৪৩ যুখরুফ : আয়াত ৬২)
يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ ۖ فَلَا تَغُرَّنَّكُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا ۖ وَلَا يَغُرَّنَّكُم بِاللَّهِ الْغَرُورُ إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمْ
عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوهُ عَدُوًّا ۚ إِنَّمَا يَدْعُو حِزْبَهُ لِيَكُونُوا مِنْ أَصْحَابِ السَّعِيرِ
অর্থ : হে মানুষ! নিশ্চয়ই আল্লাহর ওয়াদা হক (সত্য); সুতরাং এই পৃথিবীর জীবন যেনো কিছুতেই তোমাদের প্রলুব্ধ ও প্রতারিত না করে এবং সেই মহা প্রতারক (শয়তান)ও যেনো আল্লাহ সম্পর্কে তোমাদের ধোকায় না ফেলে। শয়তান তো তোমাদের ডাহা শত্রু। সুতরাং তাকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ করো। সে তো তার অনুসারীদের (এমন সব কাজের) আহবান জানায়, যাতে তারা জাহান্নামের জ্বলন্ত আগুনের অধিবাসী হয়ে যায়। (সূরা ৩৫ ফাতির : আয়াত ৫-৬)
মহান আল্লাহ এসব অকাট্য ও বিবেক জাগ্রতকারী সতর্কবাণী দ্বারা কি মানুষ শয়তানের ধোকা, প্রতারণা ও ষড়যন্ত্রের ব্যাপারে সতর্ক হবেনা?
২.শয়তান আল্লাহর অবাধ্য, মানুষের চরম দুশমন এবং মহাপ্রতারক
শয়তান সম্পর্কে মানুষের সুস্পষ্ট ধারণা থাকা জরুরি। কারণ যে ব্যক্তি শত্রুর ষড়যন্ত্র সম্পর্কে সঠিক ধারণা রাখেনা, সে সহজেই শত্রুর ষড়যন্ত্রের শিকার হয়। দেখুন শয়তান সম্পর্কে মহান আল্লাহ কী বলেন :
১. শয়তান আল্লাহর চরম অবাধ্য : إِنَّ الشَّيْطَانَ كَانَ لِلرَّحْمَـٰنِ عَصِيًّا ‘শয়তান দয়াময় রহমানের চরম অবাধ্য-নাফরমান।’ (সূরা মরিয়ম : আ. ৪৪)
২.শয়তান আল্লাহর প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ : وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِرَبِّهِ كَفُورًا ‘শয়তান তার প্রভুর প্রতি অতিশয় অকৃতজ্ঞ।’ (সূরা ১৭ ইসরা : আয়াত ২৭)
৩.শয়তান মানুষের স্বঘোষিত সুস্পষ্ট দুশমন : ِاِنَّ الشَّيْطَانَ لِلْإِنسَانِ عَدُوٌّ مُّبِينٌ ‘নিশ্চয়ই শয়তান মানুষের সুস্পষ্ট শত্রু।’ (সূরা ১২ ইউসুফ : আয়াত ৫)
৪.শয়তান মানুষের জন্যে মহাপ্রবঞ্চক : وَكَانَ الشَّيْطَانُ لِلْإِنسَانِ خَذُولًا ‘অবশ্যি শয়তান মানুষের জন্যে মহাপ্রবঞ্চক, মহা ধোকাবাজ।’ (সূরা ২৫: ২৯)
৫.শয়তান মুমিনদেরকে তার বন্ধুদের ভয় দেখায় : إِنَّمَا ذَٰلِكُمُ الشَّيْطَانُ يُخَوِّفُ أَوْلِيَاءَهُ
‘এ হলো শয়তান। সে তোমাদেরকে তার বন্ধুদের ভয় দেখায়।’ (সূরা ৩ : ১৭৫)
৬.শয়তানের সংকল্প মানুষকে চরম বিপথগামী করা : وَيُرِيدُ الشَّيْطَانُ أَن يُضِلَّهُمْ ضَلَالًا بَعِيدًا : ‘শয়তান তাদেরকে সঠিক পথ থেকে বিভ্রান্ত করে বহুদূর নিয়ে যেতে চায়।’ (সূরা ৪ আন নিসা : আয়াত ৬০)
৭.মানুষের সামনে শয়তানের সব প্রতিশ্রুতিই প্রতারণা : وَمَا يَعِدُهُمُ الشَّيْطَانُ إِلَّا غُرُورًا : ‘শয়তানের সমস্ত ওয়াদাই প্রতারণা আর ধোকাবাজি।’ (সূরা ১৭ ইসরা : আয়াত ৬৪)
৮.শয়তান মহাপ্রতারক : وَلاَ يَغُرَّنَّكُمْ بِاللهِ الْغُرُوْرَ ‘মহাপ্রতারক যেনো আল্লাহর ব্যাপারে তোমাদেরকে ধোকায় না ফেলে। (সূরা লোকমান : ৩৩ ; সূরা ফাতির : ৫)