Thursday, October 3, 2024
No menu items!

আমাদের মুসলিমউম্মাহ ডট নিউজে পরিবেশিত সংবাদ মূলত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সমাহার। পরিবেশিত সংবাদের সত্যায়ন এই স্বল্প সময়ে পরিসরে সম্ভব নয় বিধায় আমরা সৌজন্যতার সাথে আহরিত সংবাদ সহ পত্রিকার নাম লিপিবদ্ধ করেছি। পরবর্তীতে যদি উক্ত সংবাদ সংশ্লিষ্ট কোন সংশোধন আমরা পাই তবে সত্যতার নিরিখে সংশোধনটা প্রকাশ করবো। সম্পাদক

হোমনিবেদনআবিস্কারের নামে কলোনিয়ালিজম- এক কালো অধ্যায়

আবিস্কারের নামে কলোনিয়ালিজম- এক কালো অধ্যায়

এই যে আমরা বাচ্চাদের শিখাই “কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করেছে”, কিংবা “ভাস্কো দ্যা গামা ভারত আবিষ্কার করছে”– এইগুলো একধরনের ইউরোপিয়ান রেসিস্ট চিন্তা।। আমার ধারণা শুধু বাচ্চাদের বই কেন বড়দের অনেক বইতেও একই কথা লিখা আছে। আমার মনে আছে — কয়েকবছর আগেও আমি ভাবতাম- কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করেছে– এই বাক্যে ভুল কোথায়? ঠিকইতো আছে।কারণ এইভাবে আমাদের মাথায় ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে।

কিন্ত আমেরিকাতো কলম্বাস আবিষ্কার করার হাজার বছর আগে থেকেই সেখানে ছিলো। সেখানে মানুষ ছিলো।সেখানে সভ্যতা ছিলো। ইনকা ছিলো, মায়া ছিলো, আজটেক ছিলো।। সেখানে নানা রকম গোত্র ছিলো। তাদের মধ্যে যোগাযোগ ছিলো।।সবই যখন ছিলো তাহলে কলম্বাস কি করলো? এমন না যে কলম্বাস একদম জনমানব হীন একটা ভূমি আবিষ্কার করেছে আর সেখানে গিয়ে সভ্যতার জন্ম দিছে। তাহলে বলা যেত কলম্বাস আবিষ্কার করেছে। আসলে যেটা হবে, ইউরোপীয়রা জানতো না সেই ভূখন্ডের কথা।।বিশেষ করে উপনিবেশ করার জন্য যেভাবে তারা পৃথিবীর নানা দিকে ছড়িয়ে পড়েছে সেই দৃষ্টিকোন থেকে পৃথিবীর প্রথম কলোনাইজেশন শুরু হয়ে আমেরিকা থেকে। সেই অর্থে বলা যায় আমেরিকা পৃথিবীর প্রথম কলোনি। ট্রিটি অব টরডেলিস করে স্পেন আর পূর্তগাল কি সুন্দর পৃথিবীর জলরাশিকে দুইভাগ করে নিলো।।এক ভাগে যাবে স্পেন, আরেকভাগে পূর্তগাল। সেই ভাগাভাগির জের ধরে কলম্বাস পশ্চিম দিকে রওয়ানা হয়ে খুজে পেল আমেরিকা আর ভাস্কো দ্যা গামা খুজে পেল ভারত।

এর অর্থ দাঁড়ায় তারা কিছু আবিষ্কার করেনি৷ বরং উপনিবেশ বানানোর যে ইউরোপিয়ান প্রচেষ্টা সেটার শুরু হয়েছে এই ” আবিষ্কার ” নাম দিয়ে। এটাকে বলা উচিত কলম্বাস আমেরিকায় অনুপ্রবেশ করা শুরু করেছে ১৪৯৪ সালে, আবিষ্কার বলা উচিত নয়।

তাহলে এতদিন আমরা যে বললাম? এটাই হয়তো ইউরোপিয়ান লেন্স। কলোনিয়ান লেন্স। আমাদের শেখানো হয়েছে ইউরোপ মানেই জ্ঞান বিজ্ঞান। আমাদের শেখানো হয়েছে তারা গিয়ে আসলে আমাদের আবিষ্কার করেছে নয়তো আমরা বিচ্ছিন্ন ছিলাম।।আমেরিকার আদিবাসীরা বর্বর। ইউরোপিয়ানরা এসে সভ্যতা শিখাইছে।।জেমস কুক অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার করছে। কি ডাহা মিথ্যা কথা। হাজার বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ার আদিবাসীদের সাথে চীন, ভারত সহ নানা অঞ্চলের অধিবাসীদের যাতায়ত ছিলো।। ফিলিপিনোদের যাতায়ত ছিলো৷ কিন্ত ইউরোপিয়ানরা এইগুলো জানতো না।কলোনিয়ালরা এইগুলো জানতো না।

তাই কলম্বাস, ভাস্কো দ্যা গামা, জেমস কুক এরা আমেরিকা, ভারত কিংবা অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কার করে নাই।। এরা কলোনিয়ালিজম শুরুর করার উপলক্ষ্য শুরু করেছে মাত্র।

আমেরিকার পুর্ব উপকূলে ভাইকিংদের আনাগোনা ছিলো ১০৫০ সালের দিকে।।এখন যেটা নিউ ফাউন্ডল্যান্ড ( কানাডার অংশ) এবং লাগোয়া আমেরিকার মেইন ( যেখানে আমি থাকি) এখানে ভাইকিংরা ইউরোপিয়ান কলোনিয়াল শক্তিরা আসার কয়েকশ বছর আগেই এসেছিলো। কিন্ত কলম্বাসের মত স্থানীয়দের ধরে মেরে হত্যা করে ভূমি দখল করে কলোনি বানাই নাই তাই ইউরোপিয়ান ইতিহাসে সেটা আবিষ্কার না।

ইউরোপ তার কলোনিয়ালিজমের ঘৃন্য ইতিহাসকে রোমান্টিসাইজ করে ” আবিষ্কার ” নাম দিয়েছে।আর আমরাও সেটাকেই জ্ঞান ধরে নিয়ে দিনের পর দিন পুনুরুৎপাদন করে যাচ্ছি। আমাদের আসলে বলা উচিত– কখন আমেরিকায় কলোনিয়ালজিম শুরু হয়েছে আর কার মাধ্যমে হয়েছে।- আবিষ্কার টাবিষ্কার কিছু না।

ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জয়শংকর রাশিয়া – ইউক্রেন যুদ্ধের প্রাক্কালে একটা চমতকার কথা বলেছে– ইউরোপকে বুঝতে হবে ইউরোপ মানেই বিশ্ব না।।তারা এই ভ্রান্ত ধারণা থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।।ইউরোপ মানে ইউরোপ, আমরা মানে আমরা।।ইউরোপের সমস্যা মানে বিশ্বের সমস্যা না, ইউরোপের সমস্যা।

এতদিন ইউরোপ তাদের আবিষ্কারকে বিশ্বের কাছে প্রথম আবিষ্কার হিসাবে দেখিয়ে আসছে।।এর অর্থ তারা মানেই বিশ্ব, এমন ভাব।।এটা ইউরোপিয়ান ও কলোনিয়াল লেন্স।।এইধরনের তথ্য তত্ত্বকে প্রমোট করা মানে কলোনিয়ালিজমকেই প্রমোট করা।

ইউরোপ আবিষ্কার করার আগেই সব কিছু তাদের মত ছিলো।।তারাই রবং উপনিবেশ বানিয়ে স্থানীয় হারমোনিয়াস সিস্টেমকে ধ্বংস করে তাদের সিস্টেমকে চাপিয়ে দিয়ে পরে প্রচার করেছে তাদেরটাই জ্ঞান আর আগেরটা কুসংষ্কার।

সেদিন আরিফ ভাই ( Arifuzzaman Khan) এর সাথে কথা প্রসংগে উনি চমৎকার তথ্য দিলেন -( যদিও আমি যাচাই করতে পারিনি) কলোনিয়ালিজম পৃথিবীতে দূর্ভিক্ষের প্রকটতা বাড়িয়ে দিয়েছে। ( এখানে একটু যোগ করি- অনেকেই বলেছেন কলোনিয়ালিজম শুরুর অনেক আগেই দূর্ভিক্ষ ছিলো। কিছু গবেষনা এমন তথ্য দিলেও অল্টারনেটিভ কিছু হাইপোথিসিস আছে। কিছু গবেষক বলেন, কলোনিয়ালিজমের আগে কোন কোন অঞ্চলে খাদ্য সংকট ( seasonal food shortage) দেখা দিলেও মানুষ মাইগ্রেট করে উর্বর অন্য এলাকায় চলে গিয়ে সেই সমস্যার মোকাবেলা করতো। কিন্ত কলোনিয়ালিজমের পর মানুষকে একটা নির্দিষ্ট জায়গায় থাকতে বাধ্য করা হয়েছে।।তাই খাদ্য সংকট দূর্ভিক্ষে ( Famine) পরিণত হলেও মানুষ সেইসব দূর্ভিক্ষে খাদ্যাভাবে মৃত্যুবরণ করাই ছিলো নিয়তি। গ্রেট বেংগল ফেমাইন পুরো বাংলা অঞ্চলের ডেমোগ্রাফি পরিবর্তন করে দিয়েছিলো)। এটা খুবই স্ট্রাইকিং তথ্য। যদি এটা সত্য হয়ে থাকে, তাহলে পৃথিবীতে খাদ্যাভাব, সামাজিক বিশৃংখলা, অসাম্য এইসব আমদানীর জন্য ইউরোপকে দায়ী করাই যায়, জ্ঞানের জন্য কৃতিত্ব আসবে অনেক পরে। কারণ স্থানীয় জ্ঞানকে তারা ধ্বংস করে দিয়েছে তাই এখন উপায় নেই সেটার উপযোগিতা যাচাই করার।

ইউরোপিয় জ্ঞান ছাড়াই তাজমহল, পিরামিড, পেরুভিয়ান একুয়াডাক্ট, চীনের প্রাচীরের মত অসাধারণ সব স্ট্রাকচার প্রমান করে কলোনিয়ালিজমের আগেই পৃথিবীর নানা অঞ্চলে সমৃদ্ধ জ্ঞান বিজ্ঞানের চর্চা ছিলো।।সেগুলোকে ধ্বংস করে ইউরোপিয়ান জ্ঞান দিয়ে যখন সবকিছুকে বিবেচনা করতে গেল– তখন স্থানীয়রা যেহেতু ইউরোপিয় ভাষা ও তাদের সংষ্কৃতিকে আত্নস্থ করতে পারলো না, তাদের কে পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হিসাবে চিহ্নিত করলো। এইভাবেই সমাজে একধরনের অশিক্ষিত শ্রেনী তৈরি হলো। এই যে অশিক্ষিত শ্রেনী এটাও একধরনের উপনিবেশিক প্রকল্পের আউটকাম। যে কৃষক, জেলে ইংরেজি জানে না, তাকে অশিক্ষিত মূর্খ বলছি। কিন্ত জীবন যাপনের জন্য সে খাদ্য ফলাতে পারে। সে মাছ ধরে জীবিকা অর্জন করতে পারে তাহলে সে অশিক্ষিত কেমনে হলো? আমাদের কলোনিয়াল মাইন্ড সেট আর কলোনিয়াল শিক্ষা ব্যবস্থায় সে অশিক্ষিত কিন্ত শিক্ষার প্রধান উদ্দেশ্য যে খাদ্য উৎপাদন ও প্রকৃতির সাথে সহবস্থান সেখানেত সে মূর্খ নয়।

আমরা আসলে ফ্রাঞ্জ ফানোর সেই Black Skin White Mask এর ভেতরেই আটকে আছি। আমি আপনি সহ অধিকাংশই আসলে কলোনিয়াল সিন্ড্রোমেই আটকে আছি।পশ্চিম মানেই জ্ঞান,বিজ্ঞান আর বাকিরা মূর্খ এটা শুধু একটা দৃষ্টিভংগী যেটা ইউরোপিয়ানরা কলোনিয়ালিজমের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত করে গিয়েছিলো আর আমরা সেটা পুনুরুৎপাদন করে যাচ্ছি।
baten Mohammad

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

1 × 4 =

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য