*** মহান আল্লাহপাক বলেন
ان عدة الشهور عند الله اثنا عشر شهرا في كتاب الله يوم خلق السموت و الارض منها أربعة حرم
“ আকাশ ও পৃথিবী সৃষ্টির দিন থেকেই লওহে মাহফুজে ১২ টি মাস লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে । অর্থাৎ ১২ টির উপরই সীমাবদ্ধ । কম/ বেশ নয় । সেখান থেকে ৪টি মাস সম্মানিত ।”
সূরা আত তাওবা ৩৬
সম্মানিত মাসগুলো হলো জ্বিলক্বদ , জ্বিলহজ্ব, মুহররম ও রজব ।
সাধারণ মানুষ তো অনেক পরের কথা , অধিকাংশ হুজুরগণও এ মাসগুলোর তাৎপর্য / অর্থ / ব্যাখ্যা/ বিশ্লেষণ সম্পর্কে জিরো পয়েন্টে ! অথচ সাপ্তাহিক দিনগুলো / ১২ মাস ও হিজরী ‘র অভ্যূদয় ইসলামে অনেক বড় হিকমত বহন করে থাকে । এসব নিয়ে আমাদের মধ্যে চর্চা হওয়া উচিত । সন্তানদের জানানো উচিত । ইহা জ্ঞান ভান্ডারের একটি অংশ ।
*** আরবী ক্যালেন্ডারে মুহররম মাস দিয়ে শুরু হয়ে জ্বিলহজ্ব মাস দ্বারা সমাপ্ত হয়ে থাকে ।
*** মুহররম ( محرم ) শব্দের অর্থ সম্মানিত ও হারামকৃত । কুরআনের ভাষায়
و لا يحرمون ما حرم الله و رسوله
সূরা তাওবা ২৯
তদানিন্তন আরবগণ অনেক কিছু হালাল ও অনেক কিছু হারাম করে নেয়ার কারণে এ মাসটির নামকরণ হয়েছে মুহররম । অর্থাৎ এ মাসটিকে সম্মান করত: তাঁরা অনেক কাজ থেকে বিরত থাকতেন । খলীফা সাইয়্যিদুনা ওমর রা:’র শাসনামলে সাইয়্যিদুনা ওসমান রা:’র পরামর্শে তিনি ১৬ তম হিজরীর মাথায় সন প্রবর্তন করেন ।
*** সফর ( صفر ) শব্দের অর্থ ক্ষুধায় পেট কামড়ানো কীট । আরবীতে বলা হয় دواب البطن
মর্মার্থ হলো মানুষকে পথ ভুলিয়ে দেয়া ভূত- প্রেত ! “ এ জাতীয় বিশ্বাসকে মহানবী সা: শির্ক বলেছেন । এক জামানায় কু লক্ষণের প্রতি মানুষের এমন বিশ্বাসের জায়গা থেকে صفر নামটি পরিচিতি লাভ করে । মনে রাখবেন যে, শব্দটি س দ্ধারা লেখা হলে অর্থ বদলে যাবে । سفر অর্থ ভ্রমণ করা । مسافر অর্থ ভ্রমণকারী । আবার صفر থেকে اصفر হতে গেলে তখন অর্থ হবে হলুদ রং ।
*** রবিউল আউয়াল ( ربيع الاول ) অর্থ প্রথম বসন্ত । হিজরী সনের ৩য় মাস । নবুয়তের ১৩ তম বছরে আল্লাহপাক তাঁকে নিরাপত্তার সাথে সাইয়্যিদুনা আবু বকর রা:’কে সংগে করে মদীনায় যাওয়ার পথ সুগম করেন । এ মাসে মহানবী সা:’র জন্ম ও মৃত্যু । তারিখ সুনির্দিষ্ট নয় । তবে দিনটি সুনির্দিষ্ট ছিলো । يوم الاثنين
*** হিজরী সনের ৪র্থ মাস হলো রবিউস সানী ( ربيع الثاني ) বা ২য় বসন্ত । কুরাইশদের সন্ধানে মহানবী সা: রাবেগ শহরের পূর্বে বাহরাইন পর্যন্ত পৌঁছেন । সেখানে রবিউল আখের ও জুমাদাল উলা ২ মাস ধরে অবস্হান করেন । মদীনায় ইব্নে উম্মে মাকতুম রা: তাঁর স্হলাভিষিক্ত ছিলেন । দুশমনদের কাউকে না পেয়ে অবশেষে মহানবী সা: মদীনায় ফিরে আসেন ।
*** হিজরী সনের ৫ম বর্ষ হলো জুমাদাল উলা । ৪র্থ হিজরী’র এই দিনে মহানবী সা:’র দৌহিত্র সাইয়্যিদুনা ওসমান রা: ও সাইয়্যিদাহ রোকেয়া রা:’র ছেলে আব্দুল্লাহ মারা যান । মা’ জীবিত থাকা অবস্হায় তিনি ইন্তিকাল করেন ।
*** ষষ্ট মাস হলো জুমাদাল উখরা । جمد অর্থ জমে যাওয়া । যেহেতু এই দুই মাসে প্রচুর ঠান্ডা ও শীতের কারণে পানি বরফ হয়ে যেতো । তাই নাম রাখা হয়েছে জুমাদা ।
*** ৭ম মাস হলো রজব ( رجب ) অর্থ সম্মান করা । জাহেলী যুগের লোকেরা এ মাসটিকে খুব বেশী সম্মান করতেন । আরবরা যুদ্ধ – বিগ্রহ থেকে জাতিকে বারণ করতেন । এ কারণেই এই নাম ।
*** ৮ম মাস হলো শা’বান ( شعبان ) অর্থ গ্রুপিং । পানির অনুসন্ধানে আরবদের বিভিন্ন মতপার্থক্য ও মতবিরোধের সূত্র ধরে এভাবে নামটি চলে আসে ।
*** ৯বম মাস হলো রমাধান ( رمضان ) অর্থ জ্বালিয়ে পুড়িয়ে দেয়া । সাওম ( صوم/ ج. صيام ) অর্থ আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য উপবাস থাকা । নিয়ত সহকারে উপবাস থাকার কারণে কবিরা গুনাহ সমূহ জ্বলে পুড়ে ভস্ম হয়ে যাওয়ার কারণে রমাধান নামে লিপিবদ্ধ হয়েছে ।
*** ১০ম মাস হলো শাউয়াল ( شوال ) । অর্থ উঁচু করা , উন্নতিকরণ , পাল্লা ভারী হওয়া । এ অধিক রোজা পালনের মধ্যে দিয়ে ছওয়াবের পাল্লা ভারী করা হয় ।
*** ১১তম মাস হলো জ্বিলক্বদ ( ذي القعد ) অর্থ বসে থাকা । হজ্বের মাসের প্রতি সম্মান দেখিয়ে তখনকার আরবজাতি এ মাসে যুদ্ধ – বিগ্রহ থেকে বিরত থাকতেন । নামকরণের কারণ এটাই ।
*** ১২তম মাস হলো জ্বিলহজ্ব ( ذي الحج ) অর্থ কা’বার যেয়ারত করা সুনির্দিষ্ট বিধান সমূহ অনুসরণের মধ্যে দিয়ে । সূরা হজ্ব নামে পবিত্র কুরআনে একটি সূরা রয়েছে ।
*** রেফারেন্স :
صحيح البخاري
صحيح مسلم
النهاية في غريب الحديثو الأثر لابن الأثير
الأغصان النديةشرح الخلاصة البهية
سيرة ابن هشام
الشهور العربية
السيرة النبوية لابن كثير
تحرير ألفاظ التنوية للنووي
MQM Saifullah Mehruzzaman