ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে কয়েক দিন আগেও আব্দুস সালাম নামের যে শিক্ষক খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে হেঁটে ভিক্ষাবৃত্তি করতেন। এখন সেই অধ্যক্ষ ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে দিয়েছেন। তার শিক্ষতা পেশাকে সম্মান জানিয়ে ইলিলিয়াস হোসেন নামের ঢাকার একজন বিশিষ্ট শিল্পপতি নিয়েছেন বৃদ্ধ এ শিক্ষকের দায়িত্ব। ওই শিক্ষকের নিজস্ব অ্যাকাউন্টে প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা করে পাঠানোর প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন এ ব্যবসায়ী।
আজ বুধবার দুপুরে এ বিষয়ে আমাদের সময় ঠাকুরগাঁও জেলা প্রতিনিধির মাধ্যমে ওই শিক্ষকের সঙ্গে ভিডিও কলে কথা বলে তিনি এ আশ্বাস দেন। এ সময় তাৎক্ষণিক বিকাশের মাধ্যমে নগদ কিছু অর্থ পাঠান তিনি।
এর আগে গত ৭ ডিসেম্বর দৈনিক আমাদের সময় অনলাইন-এ ‘ভিক্ষা করে জীবন চলে সাবেক অধ্যক্ষের’ এ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশিত হয়। পরে সংবাদটি দৃষ্টিগোচর হয় ওই শিল্পপতির।
এ বিষয়ে ইলিয়াস হোসেন বলেন, ‘একজন শিক্ষক ভিক্ষাবৃত্তির মতো অসম্মানজনক কাজ করবেন তা আমাকে মর্মাহত করেছে। নিজের সম্মান রক্ষার্থে তিনি নিজ এলাকা ছেড়ে দূরে গিয়ে ভিক্ষা করছেন, তা সত্যিকার অর্থে কষ্টকর। সব কিছু ভেবে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, যাতে ওই অধ্যক্ষ জীবনের বাকি সময়গুলো সুন্দরভাবে অতিবাহিত করতে পারেন, তার জন্য প্রতিমাসে ১০ হাজার টাকা উনার নামে ব্যাংক অ্যাকাউন্টে পাঠানো হবে। একই সঙ্গে সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নেওয়া হবে।’
দীর্ঘ ২৫ বছরের ভিক্ষাবৃত্তি জীবনের অবসান ঘটিয়ে নতুনভাবে সম্মানের সাথে নিজ এলাকায় বেঁচে থাকার যে স্বপ্ন, তা আজ পূরণ হওয়ার পথে। এ কথা জানিয়ে সাবেক সেই অধ্যক্ষ আব্দুস সালাম কৃতজ্ঞতা জানান ওই ব্যবসায়ী ও দৈনিক আমাদের সময়র প্রতি। এই শিক্ষক বলেন, ‘বাঁ পায়ের পক্ষাঘাত নিয়ে প্রতিনিয়ত মানুষের কাছে সাহায্য চাইতাম। অনেক সময় ঠিকমতো খেতে পারতাম না, কারণ যে সামান্য অর্থটুকু পেতাম তা দিয়ে আমার স্ত্রী ও সন্তানের মুখে খাবার তুলে দেওয়াই কষ্টকর ছিল। এখন থেকে যে টাকা পাবো, তা দিয়ে অনেক ভালোভাবে চলতে পারবে।’

আব্দুস সালামের বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলায়। তিনি উপজেলাটির দারুস সালাম সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসার সাবেক অধ্যক্ষ। শিক্ষকতার মহান পেশায় নিয়োজিত ছিলেন দীর্ঘ ২২ বছর।
১৯৯৮ সালে ধানবোঝাই ট্রাক্টর তার পায়ের ওপর পড়ে যায়। বাম ও ডান পায়ের মাংসপেশিতে অতিরিক্ত চাপ পড়ায় বাম পায়ের টিস্যু ছিঁড়ে যাওয়ার কারণে তিনি দীর্ঘদিন ধরে চলাফেরা করতে অক্ষম হয়ে পড়েন। পরে বিভিন্ন ডাক্তার-কবিরাজ-হাকিম দেখালেও তারা পুরোপুরি সুস্থ করে তুলতে পারেননি তাকে। অক্ষমতার কারণে সরে দাঁড়ান শিক্ষকতা পেশা থেকে।
এদিকে চিকিৎসার অর্থ সংগ্রহ করতে গিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়েছে তার পরিবার। স্ত্রী ছাড়াও এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে বিপাকে পড়েছেন তিনি। খেয়ে না খেয়ে কোনোভাবে দিনাতিপাত করেন। পরে বাধ্য হয়েই নেমে পড়েন ভিক্ষাবৃত্তিতে। লজ্জা আর অপমানে মুখ লুকাতে নিজ এলাকা ছেড়ে দূরে গিয়ে ভিক্ষা করেন এ শিক্ষক।