বিষয়টিকে দুইভাবে দেখা যায়। হালকা ও গুরুত্ব। আবার একে তিন ভাগে বিশ্লেষণ করার সুযোগ আছে। আমরা এক্ষণে চেষ্টা করবো বিশ্লেষণ করার যে আল্লাহ্র একত্ববাদ কি? পরবর্তীতে আসব হালকা ও গুরুত্ব বলতে বা কি বুঝি?
আল্লাহ্র একত্ববাদ বলতে খুবই সাদামাটা যা বুঝায় তা হোল আল্লাহ্ সুবহানু ওয়া তা’আলা এক, তাঁর সাথে কারও কোন আত্মীয়তার সংশ্লিষ্টতা নাই। যার ফলে তাঁর একত্ববাদে অন্য কেওই শরীক নাই। তাই তিনি নিজেই বলেছেন, বলুন, (হে মুহাম্মাদ) তিনি আল্লাহ, এক। আল্লাহ অমুখাপেক্ষী, তিনি কাউকে জন্ম দেননি এবং কেউ তাকে জন্ম দেয়নি। এবং তার সমতুল্য কেউ নেই। (সুরা ইখলাস, আয়াত ১-৪) আল্লাহ্র একত্ববাদের উপর যে বইটা সবচেয়ে বেশী পঠনযোগ্য তা হোল ডঃ আবু আমীনাহ বিলাল ফিলিপ্স এর “এক”। তিনি খুব সাবলীল ভাষায় বর্ণনা করেছেন আল্লাহ্র একত্ববাদকে। আরবী পরিভাষায় এই একত্ববাদকে এককথায় তাওহীদ বলে, আমি সে দিকে যাচ্ছি না, এ বিষয়ে উক্ত বই খানা এক বিরাট সুখপাঠ্য। বিস্তারিত জানার জন্য পড়ে দেখতে পারেন। সাধারণত আল্লাহ্র একত্ববাদের সাথে যেটা সবচেয়ে বেশী সাংঘর্সিক তা হল বহুশ্বেরবাদ বা বহুদেবত্ববাদ। যারা আল্লাহকে বিশ্বাস করে না, এক দিক দিয়ে বা এক অর্থে তারা বহুশ্বেরবাদ থেকে এগিয়ে আছে, ডঃ জাকের নায়েক এর মতে, তাদেরকে সুধু বুঝাতে হবে এই পৃথিবী সৃষ্টি এবং এর সবকিছু তৈরিতে কোন এক সত্তার হাত আছে এবং তিনিই বিধাতা। এবং তিনি একজন, বহুজন নহে। কিন্তু সবচেয়ে বেশী যে বিষয়টা তর্ক সাপেক্ষ তা হোল বহুশ্বেরবাদ।
বহুশ্বেরবাদের প্রবক্তা যে সুধু হিন্দুরা তা নয়, খৃষ্টান, ইহুদী, বৌদ্ধ, শিখ সহ নানা জাতীর অস্তিত্ব এখনও বর্তমান আছে। উক্ত সব ধর্মের প্রবক্তারা এই বিশ্বাসে বিশ্বাসী যে অনেকগুলো দেবতা দুনিয়াতে বিদ্যমান ছিল এবং তারা জগত পরিচালনা ও মনুষ্য বা সমাজকে তার প্রয়োজনীয় সামগ্রী বন্টন, বিপদ দূরীকরণ সহ বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিয়োজিত ছিল এবং এখনও আছে। এই কল্পনাকে পূঁজি করে তারা তাদের মননশীলতায় একটা ছবির ছক বা পরিলেখ অঙ্কন করে এবং তাকে পুজা বা অর্চনার মাধ্যমে নিজের প্রয়োজন মেটায়। অথচ আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, – আর (তারা) উপাসনা করে আল্লাহকে বাদ দিয়ে এমন বস্তুর, যা না তাদের কোন ক্ষতিসাধন করতে পারে, না লাভ এবং বলে, এরা তো আল্লাহর কাছে আমাদের সুপারিশকারী। তুমি বল, তোমরা কি আল্লাহকে এমন বিষয়ে অবহিত করছ, যে সম্পর্কে তিনি অবহিত নন আসমান ও যমীনের মাঝে ? তিনি পুতঃপবিত্র ও মহান সে সমস্ত থেকে যাকে তোমরা শরীক করছ। (সুরা ইউনুস, আয়াত ১৮) উক্ত ছবি বা মূর্তিগুলো একেক গুষ্টি, সমাজ, জাতি, ধর্মগুরু বা দেশ ভেদে ভিন্ন রুপ ধারন করে এবং মূর্তিগুলোর প্রতিচ্ছবি ভিন্ন ভিন্ন হয় অথচ দেবতা গুলোর নাম একই থাকে। এর বিশেষ কারন এই দেবতাগুলোর প্রতিচ্ছবি ব্যক্তিকেন্দ্রিক মানসপটে আঁকা , তাদের নিজস্ব ধারনা প্রসুত এবং তারা তাতে তারই রূপ দেয়া হয়। এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, তারা (বহু ঈশ্বরবাদীরা) বলছেঃ তোমরা তোমাদের উপাস্যদেরকে ত্যাগ করো না এবং ত্যাগ করো না ওয়াদ, সূয়া, ইয়াগুছ, ইয়াউক ও নসরকে। (সুরা নুহ, আয়াত ২৩)
এটা অনেকটা এইরকম, ক্লিওপেট্রার ছবি আজও বিভিন্ন জনের দ্বারা প্রতি? অঙ্কিত হচ্ছে, ফলে বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জনের অঙ্কনে তার বিভিন্ন চিত্র ফুটে উঠে, কখনো সে কাঁদে, কখনো সে হাসে বা চোখ টীপি দেয়। বাস্তবে ক্লিওপেট্রা বলে কিছুই ছিল না এ সুধু চিত্রকরের কল্পনাপ্রসূত এক প্রতিবিম্ব। তবে রাষ্ট্র বা সমাজ এই বিষয়ে যদি কোন আইন বলবত করে তবে সবাই বাধ্য যে এর কোন রূপ বিকৃতি করা সম্ভব না। এখানেও তাই ঘটেছে। ধর্মগুরু বা রাষ্ট্রের ইচ্ছাই কাজে পরিণত হয়েছে বা হয়।
এই বিংশ শতাব্দীতে বসে আপনি কি এই বিশ্বাস এখনও পোষণ করেন যে, ঐ দেবতা গুলোর আদৌ কোন অস্তিত্ব ছিল এবং যদি থেকেও থাকতো কিন্তু আজ তারা নাই, মৃত, আর মৃত দেবতা কি ভাবে এই বিংশ শতাব্দীতে আমদেরকে চালনা করছে? সুধু তাদের কল্পনা রূপ টুকু আছে আর ঐ প্রতিচ্ছবিকেই পূজা করা হচ্ছে। অথচ আল্লাহ্ তা’আলা বলেন, – এবং যারা আল্লাহকে ছেড়ে অন্যদের ডাকে, ওরা তো কোন বস্তুই সৃষ্টি করে না; বরং ওরা নিজেরাই সৃজিত। তারা মৃত-প্রাণহীন এবং কবে পুনরুত্থিত হবে, জানে না। (সুরা নাহল, আয়াত ২০-২১)
হিন্দু ধর্ম, গ্রীক পুরাণ সহ অন্যান্য ধর্মেও দেবতাদেরকে খুব মহানুভব রূপে চিত্রিত করা হয় নাই বরং তাদের বেশীরভাগ দেব দেবী যৌন উসৃংখল, নিজেরদের মধ্যে হানাহানি, স্বার্থপরতা, অশুভ প্রতিযোগিতা, বিলাসী, হিংসা, বিদ্বেষে ভরপুর ছিল এবং এক সময় এই নশ্বর পৃথিবী ছেড়ে চলেও গিয়েছে। সবচেয়ে মজার বিষয় হোল, আজ হিন্দুদের অনেক মানুষরূপী দেবতা বিদ্যমান এবং যৌন উসৃংখলতা সহ বিভিন্ন অপরাধের জন্য তারা রাষ্ট্রীয় আইনে সাজা প্রাপ্ত হয়ে কয়েদ খানায় আবদ্ধ আছে। এবার একবার ভেবে দেখুন দেবতাদের কি হাল অবস্থা। অথচ দেবতার শাব্দিক অর্থ দেব থেকে এসেছে, যার মূল হোল শুভ্র, কল্যাণকর, সূচি। এদিকে চন্দ্র, সূর্য, তারকারাজী, ইঁদুর, হাতি, সাপ সহ অনেক জড় পদার্থকেও অনেকে দেবতা মূলে অর্চনা করে। অনেকে হয়ত এইসব জড় পদার্থকে ঈশ্বর মানে না, তার অর্থ এই না যে কেওই মানে না, তবে অনেকেই মানে।
এ বিষয়ে এবার দেখুন ইসলাম কি বলে, ইব্রাহীম (আঃ) ও এ বিষয়ে ধন্ধে পড়ে গিয়ে কি ভাবে ফিরে এসেছেন, অনন্তর যখন রজনীর অন্ধকার তার উপর সমাচ্ছন্ন হল, তখন সে একটি তারকা দেখতে পেল, বললঃ ইহা আমার প্রতিপালক। অতঃপর যখন তা অস্তমিত হল তখন বললঃ আমি অস্তগামীদেরকে ভালবাসি না। অতঃপর যখন চন্দ্রকে ঝলমল করতে দেখল, বললঃ এটি আমার প্রতিপালক। অনন্তর যখন তা অদৃশ্য হয়ে গেল, তখন বলল যদি আমার প্রতিপালক আমাকে পথ-প্রদর্শন না করেন, তবে অবশ্যই আমি বিভ্রান্ত সম্প্রদায়ের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাব। অতঃপর যখন সূর্যকে চকচক করতে দেখল, বললঃ এটি আমার পালনকর্তা, এটি বৃহত্তর। অতপর যখন তা ডুবে গেল, তখন বলল হে আমার সম্প্রদায়, তোমরা যেসব বিষয়কে শরীক কর, আমি ওসব থেকে মুক্ত। আমি এক মুখী হয়ে স্বীয় আনন ঐ সত্তার দিকে করেছি, যিনি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডল সৃষ্টি করেছেন এবং আমি মুশরেক নই। (সুরা আন-আম, আয়াত ৭৬-৭৯)
এই বহুঈশ্বরবাদ সমন্ধে এক আল্লাহ্ তা’আলা স্বয়ং বলেন, যদি নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলে আল্লাহ ব্যতীত অন্যান্য উপাস্য থাকত, তবে উভয়ের ধ্বংস হয়ে যেত। অতএব তারা যা বলে, তা থেকে আরশের অধিপতি আল্লাহ পবিত্র। (সুরা আম্বিয়া, আয়াত ২২) এ থেকে সহজেই অনুমেয় যে আল্লাহ্ ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। এই পৃথিবী নামক গ্রহ এতদিন স্থায়িত্ব থাকতো না। তিনি আরও বলেন, আল্লাহ কোন সন্তান গ্রহণ করেননি এবং তাঁর সাথে কোন মাবুদ নেই। থাকলে প্রত্যেক মাবুদ নিজ নিজ সৃষ্টি নিয়ে চলে যেত এবং একজন অন্যজনের উপর প্রবল হয়ে যেত। তারা যা বলে, তা থেকে আল্লাহ পবিত্র। (সুরা মুমিনুন, আয়াত ৯১) উপরোক্ত সত্যতার বিপরীতে আমার আপনার প্রকৃতপক্ষে কি কোন বক্তব্য আছে?
তিনি আরও খোলাখুলি ভাবে বহু ঈশ্বরবাদের বিপরীতে বলেন, শুনছ, আসমানসমূহে ও যমীনে যা কিছু রয়েছে সবই আল্লাহর। আর এরা যারা আল্লাহকে বাদ দিয়ে শরীকদের উপাসনার পেছনে পড়ে আছে-তা আসলে কিছুই নয়। এরা নিজেরই কল্পনার পেছনে পড়ে রয়েছে এবং এছাড়া আর কিছু নয় যে, এরা বুদ্ধি খাটাচ্ছে। (সুরা ইউনুস, আয়াত ৬৬) এ থেকে সত্যি প্রতীয়মান হয় যে আমাদের প্রতিপালক এক মাত্র আল্লাহ্ সুবহানু ওয়া তা’আলা। এবং তিনিই সব সৃষ্টির মালিক।
এখানে সবিশেষ উল্লেখযোগ্য যে এক আল্লাহ্ ই বহুঈশ্বরবাদের বিরুদ্ধে তাঁর যুক্তি, সত্যতা তুলে ধরেছেন, কিন্তু তাঁর প্রতিউত্তরে বহু ঈশ্বর রা এমন কি তাদের মধ্যে একজনেরও এমন কোন উক্তি পাওয়া যাবে না, গ্রহণযোগ্য তো পরের কথা। আর তারা এক আল্লাহ্র প্রতিবাদই বা করবে কি ভাবে কারন তারা মানুষ রূপী দেবতা এবং একসময় মৃত্যুকে আলিঙ্গন করতে বাধ্য হয়েছে। অতএব আমরা যারা বহু ঈশ্বরের পূজা অর্চনা করি তারা কি ভাবে নিশ্চিত হয়ে তা করছে? আল্লাহ্ বলেন এই পৃথিবী এবং পৃথিবীর মধ্যস্থিত সব কিছু তিনি সৃষ্টি করেছেন এবং তিনি তার মালিক,- জিজ্ঞেস করুন, নভোমন্ডল ও ভুমন্ডলে যা আছে, তার মালিক কে? বলে দিনঃ আল্লাহ। তিনি অনুকম্পা প্রদর্শনকে নিজ দায়িত্বে লিপিবদ্ধ করে নিয়েছেন। তিনি অবশ্যই তোমাদেরকে কেয়ামতের দিন একত্রিত করবেন। এর আগমনে কোন সন্দেহ নেই। যারা নিজেদের কে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে, তারাই বিশ্বাস স্থাপন করে না। (সুরা আন-আম, আয়াত ১২) একটা নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এবং তারপর আবার তা বিলীন করে দেবেন। এবার তিনি বলেন, আমিই চুড়ান্ত মালিকানার অধিকারী হব পৃথিবীর এবং তার উপর যারা আছে তাদের এবং আমারই কাছে তারা প্রত্যাবর্তিত হবে। (সুরা মারিয়াম, আয়াত ৪০)
বহু ঈশ্বরবাদী এবং একেশ্বরবাদী এই দুই শ্রেণীর লোক ছাড়াও আরও এক শ্রেণীর লোক আছে যারা কোন ঈশ্বর আছে বলে বিশ্বাস করে না, তাদের বিষয় আজকের এই আলোচনায় স্থান দেওয়া হয় নাই , বিষয়বস্তু থেকে আমাদের দৃষ্টি অন্য দিকে ধাবিত হবে বলে। উক্ত দুই শ্রেণীই তাদেরকে অন্য চোখে দেখে।
যারা হালকা বা সাদামাটা ভাবে বহু ঈশ্বরের অস্তিত্ব স্বীকার করেন, অথচ প্রকৃতপক্ষে তারা কোন পূজা অর্চনায় অংশ গ্রহণ করেন না, মনে সুধু একটা ভাব পোষণ করেন, তাদের পরিণতিও তাদের মতই যারা বহু ঈশ্বরের বিষয়টা গুরুত্বের সাথে নেয়। তাদের জন্য প্রশ্ন হোল তবে কেন এই ভাবনাটা ছেড়ে দিতে পারেন না, উপরের আলোকপাত কি আপনার জন্য যথেষ্ট নয়? বহু ঈশ্বরের ভাবনা আপনাকে আমৃত্যু এবং মৃত্যু পরবর্তী আজীবন শাস্তি ভোগ করতে হবে। যদিও বলা হয় মানুষের শুরু আছে শেষও আছে, প্রকৃতপক্ষে মানুষের শেষ নাই, তবে শুরু আছে। মৃত্যু বাস্তবিক একধরনের স্থানান্তর। এপার হতে ওপার। মৃত্যু হল দুনিয়াবী জীবনের শেষ এবং মানুষের জীবনের চিরস্থায়ী বিচ্ছেদের একটি মুহূর্ত। ইসলামী দৃষ্টিকোণ অনুযায়ী মৃত্যু একটি ইতিবাচক সত্তা, মৃত্যুর মুহূর্তটি মানুষের পুনর্জন্মের এক মুহূর্ত।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেনঃ তোমরা ধ্বংস হওয়ার জন্য সৃষ্ট হও নাই বরং চিরকাল থাকবে। আপনি যখন মারা যান তখন আপনি শুধুমাত্র এক ঘর থেকে অন্য স্থান স্থানান্তরিত হন। মূলত, এই রূপান্তর এবং স্থানান্তর মানুষের আত্মার উন্নয়ন এবং আধ্যাত্মিক অগ্রগতি জন্য প্রয়োজন।
উদাহরণস্বরূপ, ইমাম হুসাইন (রাঃ) আশুরার দিনে তাঁর অনুগত সঙ্গীদের বললেন:
“হে মহৎ লোকদের সন্তানগণ দৃঢ় থাক, কারণ মৃত্যু কেবল একটি সেতু যা আপনাকে নিয়ে যাবে আপনার অস্বস্তি ও যন্ত্রণার থেকে স্বর্গে যেখানে বিস্তৃত আছে বাগানগুলি। তাহলে আপনাদের মধ্যে কে এ দুনিয়া নামক কারাগার থেকে স্বাধীনতা কামনা করতে চায় না? অবশ্যই, আর আপনার শত্রুদের জন্য মৃত্যু হোল তাদের জাঁকজমক পূর্ণ প্রাসাদ থেকে দুর্গ নামক জেলখানায় যেখানে সে সার্বক্ষণিক অত্যাচারিত হবে। ” অথচ আপনি বহু ঈশ্বরবাদও পুরোপুরি পালন করেন না আবার একেশ্বরবাদেও বিশ্বাস রাখেন না, যেহেতু বহু ঈশ্বরে আপনার বিশ্বাসে ছেদ আছে শুধু মনে একটা প্রভাব বিরাজ করছে, তাই এই ধ্যান থেকে নিজেকে মুক্ত করেন পুরোপুরি ভাবে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন,- এই বিশ্ব জগত তিনিই সৃষ্টি করেছেন, তিনি ছাড়া আর কোন প্রভু নাই এবং পূজা, অর্চনা ইবাদতের একমাত্র তাঁরই প্রাপ্য। অতএব, সৃষ্টিকারীকে কেনই বা অস্বীকার করবো আর কেনই বা তাঁর ইবাদত সহ গুন ও প্রশংসা করবো না যা তাঁর একান্তই প্রাপ্য। তাইতো তিনি বলেন, – আমার এবাদত করার জন্যই আমি মানব ও জিন জাতি সৃষ্টি করেছি। (সুরা আয-যারিয়াত, আয়াত ৫৬)
এবার একটু ভিন্নভাবে চিন্তা করুন; যদি ধরে নেন যে বহু দেবতা বা ঈশ্বর আছে এবং আপনি তাদের পূজা অর্চনা করেন, এ কথা সূর্যালোকের মত সত্য যে সব সময় আপনি তাদেরকে সমানভাবে খুশি করতে পারবেন না, এবং এও স্বীকার করেন যে মৃত্যু পরবর্তী জাহান্নাম ও জান্নাতে স্থানান্তরিত হবেন আপনার কৃত কর্মের ফলে, তা হলে ব্যাপারটা এই দাঁড়ায় যে, সব দেবতার প্রতি যেহেতু সমানভাবে খুশি করতে পারেন নাই, ফলে কেহ আপনাকে জান্নাতে আবার কেহ আপনাকে জাহান্নামে ঠেলে দিবে, একি আদৌ সম্ভব? একটি সত্ত্বাকে কি ভাবে দুই জায়গায় পাঠানো যাবে? অথচ এর বিপরীতে এক আল্লাহ্কে যদি আপনি খুশি কারতে পারেন তবে আর কোন আল্লাহ্ নেই যে ভিন্ন মত আসতে পারে, আর যদি তাঁর খুশির মধ্যে কিছু ছেঁদও থাকে তবে তা তাঁর একক দয়া তিনি আপনাকে নিজ ক্ষমতাবলে মাপ করে জান্নাতে পাঠাবেন।
অতএব আর ভুল নয়, আজই এবং এখনই তাঁর সত্তাকে একক ভাবে মেনে নেন এবং তাঁর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেন।
আর যারা বহু ঈশ্বরবাদকে গুরুত্ব দিয়ে বিশ্বাস ও পূজা করেন, তাদের জন্য এই কথা বলে শেষ করছি যে, পারলে এক আল্লাহ্ ছাড়া প্রমান আনেন যে, এই পৃথিবীর অস্তিত্তে অন্য কোন ইলাহর কোন কর্মযোগ্য আছে। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন,- এখন মুশরেকরা বলবেঃ যদি আল্লাহ ইচ্ছা করতেন, তবে না আমরা শিরক করতাম, না আমাদের বাপ দাদারা এবং না আমরা কোন বস্তুকে হারাম করতাম। এমনিভাবে তাদের পূর্ববর্তীরা মিথ্যারোপ করেছে, এমন কি তারা আমার শাস্তি আস্বাদন করেছে। আপনি বলুনঃ তোমাদের কাছে কি কোন প্রমাণ আছে যা আমাদেরকে দেখাতে পার। তোমরা শুধুমাত্র আন্দাজের অনুসরণ কর এবং তোমরা শুধু অনুমান করে কথা বল। (সুরা আন-আম আয়াত ১৪৮) এ প্রসঙ্গে আল্লাহ্ তা’আলা সমগ্র মানবজাতিকে উদ্দেশ্য করে বলেন, – বলে দাও (মুহাম্মাদ), হে মানবকুল, সত্য তোমাদের কাছে পৌঁছে গেছে তোমাদের পরওয়ারদেগারের তরফ থেকে। এমন যে কেউ পথে আসে সেপথ প্রাপ্ত হয় স্বীয় মঙ্গলের জন্য। আর যে বিভ্রান্ত ঘুরতে থাকে, সে স্বীয় অমঙ্গলের জন্য বিভ্রান্ত অবস্থায় ঘুরতে থাকবে। অনন্তর আমি (মুহাম্মাদ) তোমাদের উপর অধিকারী নই। (সুরা ইউনুস, আয়াত ১০৮) তিনি আরও বলেন,- হে মানবজাতি! তোমাদের পালনকর্তার যথার্থ বাণী নিয়ে তোমাদের নিকট রসূল এসেছেন, তোমরা তা মেনে নাও যাতে তোমাদের কল্যাণ হতে পারে। আর যদি তোমরা তা না মান, জেনে রাখ আসমানসমূহে ও যমীনে যা কিছু রয়েছে সে সবকিছুই আল্লাহর। আর আল্লাহ হচ্ছেন সর্বজ্ঞ, প্রাজ্ঞ। (সুরা নিসা, আয়াত ১৭০)
সার্বিক ভাবে দেখুন, আল্লাহ্ তা’আলা আমাদের বর্তমান অবস্থান, ইবাদত ও কাজ কর্ম পর্যবেক্ষণ করে বলেন,- তারা আল্লাহকে যথার্থ মূল্যায়ন করতে পারেনি, যখন তারা বললঃ আল্লাহ কোন মানুষের প্রতি কোন কিছু অবতীর্ণ করেননি। আপনি জিজ্ঞেস করুনঃ ঐ গ্রন্থ কে নাযিল করেছে, যা মূসা নিয়ে এসেছিল? যা জ্যোতিবিশেষ এবং মানব মন্ডলীর জন্যে হেদায়েতস্বরূপ, যা তোমরা বিক্ষিপ্তপত্রে রেখে লোকদের জন্যে প্রকাশ করছ এবং বহুলাংশকে গোপন করছ। তোমাদেরকে এমন অনেক বিষয় শিক্ষা দেয়া হয়েছে, যা তোমরা এবং তোমাদের পূর্বপুরুষরা জানতো না। আপনি বলে দিনঃ আল্লাহ নাযিল করেছেন। অতঃপর তাদেরকে তাদের ক্রীড়ামূলক বৃত্তিতে ব্যাপৃত থাকতে দিন (সুরা আন-আম, আয়াত ৯১)