তাফসীর সূরা “আল ইখলাস”আয়াত নং ০১
قُلْ هُوَ اللّٰهُ اَحَدٌۚ “বল আল্লাহ এক”
অত্র আয়াতে আল্লাহ তা’আলা তাঁর একত্ববাদ এর পরিচয় দিয়েছেন। এজন্য আল্লাহ তা’আলার একত্ববাদ বা তাওহিদ এর ব্যাপারে পরিচ্ছন্ন বিশ্বাসের অধিকারী হওয়ার জন্য পরিষ্কার ইলম বা জ্ঞান অর্জন করা আবশ্যক। কেননা এই বিষয়ে মহাগ্রন্থ আল কুরআনে আল্লাহ তায়ালা অসংখ্য নির্দেশনা দিয়ে বলেন:
اِنَّنِیْۤ اَنَا اللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّاۤ اَنَا فَاعْبُدْنِیْۙ وَ اَقِمِ الصَّلٰوةَ لِذِكْرِیْ
“আমিই আল্লাহ, আমি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, কাজেই তুমি আমার ইবাদত করো এবং আমাকে স্মরণ করার জন্য নামায কায়েম করো”। -ত্ব-হা:১৪,
ذٰلِكُمُ اللّٰهُ رَبُّكُمْۚ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَۚ خَالِقُ كُلِّ شَیْءٍ فَاعْبُدُوْهُۚ وَ هُوَ عَلٰى كُلِّ شَیْءٍ وَّكِیْلٌ
“এই আল্লাহ তোমাদের রব। তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই। সবকিছুর তিনিই স্রষ্টা। কাজেই তোমরা তাঁরই বন্দেগী করো। তিনি সবকিছুর তত্বাবধায়ক”। আল-আনয়াম:১০২,
فَاعْلَمْ اَنَّهٗ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا اللّٰهُ وَ اسْتَغْفِرْ لِذَنْۢبِكَ وَ لِلْمُؤْمِنِیْنَ وَ الْمُؤْمِنٰتِؕ وَ اللّٰهُ یَعْلَمُ مُتَقَلَّبَكُمْ وَ مَثْوٰىكُمْ۠
“অতএব, হে নবী! ভাল করে জেনে নাও, আল্লাহ ছাড়া আর কেউ ইবাদাতের যোগ্য নয়। নিজের ত্রুটির জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করো এবং মু’মিন নারী ও পুরুষদের জন্যও। আল্লাহ তোমাদের তৎপরতা সম্পর্কে অবহিত এবং তোমাদের ঠিকানা সম্পর্কেও অবহিত”। -মুহাম্মাদ:১৯,
অর্থাৎ আল্লাহ তা’আলা তার উলুহিয়্যাত তথা এবাদত এর ক্ষেত্রে রুবুবিয়্যাত তথা লালন পালনের ক্ষেত্রে এবং আসমা ও সিফাতের ক্ষেত্রে একক সত্তার অধিকারী।
উলুহিয়্যাত: অর্থাৎ সকল ইবাদত, ভালোভাসা, ভয়, আশা, দোয়া, কুরবানি, নজর, জবাই, মান্নাত, আশ্রয় দেওয়া ও সাহায্য প্রার্থনা এবং অসুস্থ্যতা, বিপদ-আপদ দূর করার ক্ষেত্রে, আল্লাহ একমাত্র ইলাহ ও অদ্বিতীয়, তাঁর কোন শরীক নেই। আল্লাহ তা’আলা বলেন;-
وَ اعْبُدُوا اللّٰهَ وَ لَا تُشْرِكُوْا بِهٖ شَیْــٴًـا
“আর তোমরা সবাই আল্লাহর বন্দেগী করো। তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না”।-আন-নিসা:৩৬,
وَ مَاۤ اُمِرُوْۤا اِلَّا لِیَعْبُدُوا اللّٰهَ مُخْلِصِیْنَ لَهُ الدِّیْنَ حُنَفَآءَ وَ یُقِیْمُوا الصَّلٰوةَ وَ یُؤْتُوا الزَّكٰوةَ وَ ذٰلِكَ دِیْنُ الْقَیِّمَةِؕ
“আর তাদেরকে তো এছাড়া আর কোন হুকুম দেয়া হয়নি যে, তারা নিজেদের দ্বীনকে একমাত্র আল্লাহর জন্য নির্ধারিত করে একনিষ্ঠভাবে তাঁর ইবাদাত করবে, নামায কায়েম করবে ও যাকাত দেবে, এটিই যথার্থ সত্য ও সঠিক দ্বীন”। -আল-বাইয়েনাহ:৫,
রুবুবিয়্যাত: সমগ্র সৃষ্টি জগতের সকল কিছু পরিচালনা ও প্রতিপালন করা, রক্ষণাবেক্ষণ, রিজিকের ব্যবস্থা এবং অস্তিত্ব দান ও ধ্বংস করার ক্ষেত্রে আল্লাহ তাআলা একক সত্বা ও অদ্বিতীয়।
یٰۤاَیُّهَا النَّاسُ اعْبُدُوْا رَبَّكُمُ الَّذِیْ خَلَقَكُمْ وَ الَّذِیْنَ مِنْ قَبْلِكُمْ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُوْنَۙ
“হে মানব জাতি। ইবাদাত করো তোমাদের রবের, যিনি তোমাদের ও তোমাদের পূর্বে যারা অতিক্রান্ত হয়েছে তাদের সবার সৃষ্টিকর্তা, এভাবেই তোমরা তাকওয়া অর্জনের আশা করতে পারো”।–আল-বাক্বারাহ:২১,
قُلْ مَنْ یَّرْزُقُكُمْ مِّنَ السَّمٰوٰتِ وَ الْاَرْضِؕ قُلِ اللّٰهُۙ وَ اِنَّاۤ اَوْ اِیَّاكُمْ لَعَلٰى هُدًى اَوْ فِیْ ضَلٰلٍ مُّبِیْنٍ
“(হে নবী!) তাদেরকে জিজ্ঞেস করো, “কে তোমাদের আকাশসমূহ ও পৃথিবী থেকে জীবিকা দান করে?” বলো, “আল্লাহ, এখন অবশ্যই আমরা অথবা তোমরা সঠিক পথে অথবা সুস্পষ্ট গোমরাহীর মধ্যে নিপতিত।”–সাবা:২৪,
তাওহীদুল আসমা ওয়াস সিফাত: আল্লাহ তাআলা তার সুন্দর সুন্দর নাম ও সেই নাম গুলোর বৈশিষ্ট্যের ক্ষেত্রে একক সত্তার অধিকারী, তার সাদৃশ্য এবং সমতুল্য কেউ নেই, তার নাম ও বৈশিষ্ট্যের সাথে কাউকে তুলনা করা যাবেনা। তাই আল্লাহ তা’আলা ইরশাদ করেন:-
اَللّٰهُ لَاۤ اِلٰهَ اِلَّا هُوَؕ لَهُ الْاَسْمَآءُ الْحُسْنٰى
“তিনি আল্লাহ, তিনি ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই, তাঁর জন্য রয়েছে সর্বোত্তম নামসমূহ”। – ত্ব-হা:৮,
وَ لِلّٰهِ الْاَسْمَآءُ الْحُسْنٰى فَادْعُوْهُ بِهَا۪-وَ ذَرُوا الَّذِیْنَ یُلْحِدُوْنَ فِیْۤ اَسْمَآئِهٖؕ-سَیُجْزَوْنَ مَا كَانُوْا یَعْمَلُوْنَ
“ভাল নামগুলো আল্লাহর জন্য নির্ধারিত। সুতরাং ভাল নামেই তাঁকে ডাকো এবং তাঁর নাম রাখার ব্যাপারে যারা সত্য থেকে বিচ্যুত হয়ে যায় তাদেরকে বর্জন কর। তারা যা কিছু করে এসেছে, তার ফল অবশ্যি পাবে”।–আল-আরাফ:১৮০,
শিক্ষা ও প্রায়োগিক ক্ষেত্র:আমাদের ঈমান আকিদা ও বিশ্বাস বিশুদ্ধ এবং দৃঢ় করার জন্য আল্লাহ্ তা’আলার একত্ববাদ তথা তাওহীদের উপর বিশুদ্ধ ও নির্ভুল জ্ঞান অর্জন করতে হবে। গ্রহণযোগ্য ও পরকালে প্রতিদান যোগ্য ইবাদতের জন্য তাওহীদের উপর দৃঢ় বিশ্বাসী হতে হবে।