তাফসীর
“সূরা আল-নাস “
নামকরণ:
‘আল-নাস’ অর্থাৎ মানুষ। প্রথম আয়াতে ( الناس ) “আন-নাস” শব্দ থেকে নামকরণ করা হয়েছে। সূরা ‘নাস’ ও ‘ফালাক’ দু’টি সূরাকে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনার সূরা বলা হয়।
নাযিল হওয়ার সময়কাল:-
হযরত উকবা ইবনে আমের (রা:) বর্ণিত একটি হাদীস হচ্ছে: একদিন রসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে বলেন:-
أَلَمْ تَرَ آيَاتٍ أُنْزِلَتِ اللَّيْلَةَ , لَمْ يُرَ مِثْلُهُنَّ , أَعُوذُ بِرَبِّ الْفَلَقِ أَعُوذُ بِرَبِّ النَّاسِ-
“তোমরা কি দেখনি যে, আজ রাতে আমার ওপর কেমন ধরনের আয়াত নাযিল হয়েছে? নজীরবিহীন আয়াত! “কুল আউযু বি রব্বিল ফালাক এবং কুল আউযু বি রব্বিন নাস”। – সহীহ মুসলীম;৮১৪
হযরত উকবা ইবনে আমের (রা:) হিজরতের পরে মদীনা তাইয়েবায় ইসলাম গ্রহণ করেন বলেই এ হাদীসের ভিত্তিতে এ সূরা দু’টিকে মাদানী বলার যৌক্তিকতা দেখা দেয়।
এছাড়াও ইহুদিরা কর্তৃক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাই সাল্লাম এর উপর করা যাদু-টোনা হতে আশ্রয় প্রার্থনার জন্য এই সূরাটি নাযিল হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে।
কাতাদাহ ও আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস হতে বর্ণিত এক রেওয়াতেও এই দু’টি সূরাকে মাদানী উল্লেখ করা হয়েছে।
হাসান বাসরী (রঃ), আতা (রঃ) এবং ইকরামা প্রমুখের মতে এই সূরা দুটি মাক্কী।
বিষয়বস্তু ও ফজিলত:-
সূরা “আন নাস” ও “ আল-ফালাক” দুটি নাযিল হওয়ার অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে কিভাবে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ও তাঁর উম্মত আল্লাহর নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করবে তা শিক্ষা দেওয়া। অবাধ্য ও হিংসুকদের হিংসা-বিদ্বেষ থেকে, যাদুর অনিষ্টতা এবং অন্যায়কারীদের যাবতীয় ক্ষয়-ক্ষতি হতে মহান রবের নিকট আশ্রয় প্রার্থনা করা।
أَنَّ عَائِشَةَ رَضِيَ اللهُ عَنْهَا أَخْبَرَتْهُ أَنَّ رَسُوْلَ اللهِ صلى الله عليه وسلم كَانَ إِذَا اشْتَكَى نَفَثَ عَلَى نَفْسِهِ بِالْمُعَوِّذَاتِ وَمَسَحَ عَنْهُ بِيَدِهِ فَلَمَّا اشْتَكَى وَجَعَهُ الَّذِيْ تُوُفِّيَ فِيْهِ طَفِقْتُ أَنْفِثُ عَلَى نَفْسِهِ بِالْمُعَوِّذَاتِ الَّتِيْ كَانَ يَنْفِثُ وَأَمْسَحُ بِيَدِ النَّبِيِّ صلى الله عليه وسلم عَنْهُ.
আয়িশাহ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ:তিনি বলেন, যখন রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) অসুস্থ হয়ে পড়তেন তখন তিনি আশ্রয় প্রার্থনার দুই সূরাহ (ফালক ও নাস) পাঠ করে নিজ দেহে ফুঁক দিতেন এবং স্বীয় হাত দ্বারা শরীর মাসাহ করতেন। এরপর যখন মৃত্যু-রোগে আক্রান্ত হলেন, তখন আমি আশ্রয় প্রার্থনার সূরাহ দু’টি দিয়ে তাঁর শরীরে ফুঁ দিতাম, যা দিয়ে তিনি ফুঁ দিতেন। আর আমি তাঁর হাত দ্বারা তাঁর শরীর মাসাহ করিয়ে দিতাম। -সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৪৪৩৯
মুআয ইব্ন আবদুল্লাহ্ তাঁর পিতার মাধ্যমে থেকে বর্ণিতঃ: রাসূল (সঃ) বলেছেন-
«قُلْ هُوَ اللَّهُ أَحَدٌ، وَالْمُعَوِّذَتَيْنِ حِينَ تُمْسِي، وَحِينَ تُصْبِحُ، ثَلَاثًا يَكْفِيكَ كُلَّ شَيْءٍ»
“ কুল হুয়াল্লাহু আহাদ, কুল আউযু বিরাব্বিল ফালাক, কুল আউযু বিরাব্বিন্নাস এই তিনটি সূরা সকাল-সন্ধ্যায় তিনবার করে (পাঠ করলে)। সকল বিপদাপদে এটাই তোমার জন্য যথেষ্ট। -সুনানে আন-নাসায়ী, হাদিস নং ৫৪২৮.
তিরমিজীতে এসেছে-
عَنْ عُقْبَةَ بْنِ عَامِرٍ، قَالَ أَمَرَنِي رَسُولُ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم أَنْ أَقْرَأَ بِالْمُعَوِّذَتَيْنِ فِي دُبُرِ كُلِّ صَلاَةٍ .
উক্ববাহ্ ইবনু ‘আমির (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) আমাকে প্রতি ওয়াক্ত নামাযের পর সূরা আন্-নাস ও সূরা আল-ফালাক্ব পাঠের আদেশ করেছেন। তিরমিজী ২৯০৩.
এগুলো ছাড়াও হাদিসের গ্রন্থসমূহে সূরা নাস ও ফালাকের আরো বহু ফজিলত বর্ণিত হয়েছে।