
তাফসীর “সূরা আল-ফাতিহা”
আয়াত নং ০৩ ( الرحمن الرحيم )
অর্থ: যিনি পরম করুনাময় অসীম দয়ালু।
الرحمن ও الرحيم:
(আর রহমান) এবং (আর রাহীম) এই দুইটি শব্দ আল্লাহর গুণবাচক নাম। যা ( الرحمة ) রহমত শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ অসীম দয়ালু ও পরম করুণাময়।
অধিকাংশ মুফাসসিরদেরমতে “আর রাহমান’ যাহার রহমত সৃষ্টির সকলের উপর বিরাজমান দুনিয়াতে ও আখেরাতে।
আল্লাহ তা’য়ালা বলেন:-
وَ رَحْمَتِیْ وَ سِعَتْ كُلَّ شَیْءٍؕ
“আর আমার অনুগ্রহ সব (মানব, দানব, প্রাণীকুল সকল) কিছুকে পরিবেষ্টন করে আছে”। আল-আরাফ:১৫৬
‘আর রাহিম’ যার রহমত শুধু মু’মিনদের জন্য নির্দিষ্ট আর সেটা আখেরাতে। আল্লাহ তা’য়ালা বলেন:-
وَ كَانَ بِالْمُؤْمِنِیْنَ رَحِیْمًا
“আর তিনি (আল্লাহ) মু’মিনদের প্রতি বড়ই মেহেরবান”।
সহীহ মুসলিমে এসেছে-
عَنْ أَبِي هُرَيْرَةَ، أَنَّ رَسُولَ اللَّهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ “ لَوْ يَعْلَمُ الْمُؤْمِنُ مَا عِنْدَ اللَّهِ مِنَ الْعُقُوبَةِ مَا طَمِعَ بِجَنَّتِهِ أَحَدٌ وَلَوْ يَعْلَمُ الْكَافِرُ مَا عِنْدَ اللَّهِ مِنَ الرَّحْمَةِ مَا قَنِطَ مِنْ جَنَّتِهِ أَحَدٌ ”
আবূ হুরাইরাহ্ (রাঃ) থেকে বর্ণিতঃ: রসূলুল্লাহ (সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেছেনঃ “আল্লাহর নিকট যে কি পরিমাণ শাস্তি রয়েছে, ঈমানদারগণ যদি তা জানত তবে কেউ তাঁর কাছে জান্নাতের প্রত্যাশা করত না। এমনিভাবে আল্লাহর কাছে যে কি পরিমাণ রহমত আছে, অবিশ্বাসীরা যদি তা জানত তবে কেউ তার জান্নাত থেকে নিরাশ হত না”। সহিহ মুসলিম, হাদিস নং ৬৮৭২
এছাড়া রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন আল্লাহর রহমত ব্যতীত কোন ব্যাক্তি তার নিজের আমলের দ্বারা জান্নাতেও যেতে পারবে না এবং জাহান্নাম থেকে রক্ষাও পাবে না। সহীহ বুখারীতে এসেছে রাসূল (সঃ) বলেন-
لَنْ يُنَجِّيَ أَحَدًا مِنْكُمْ عَمَلُهُ قَالُوا وَلاَ أَنْتَ يَا رَسُولَ اللهِ صلى الله عليه وسلم قَالَ وَلاَ أَنَا إِلاَّ أَنْ يَتَغَمَّدَنِي اللهُ بِرَحْمَةٍ سَدِّدُوا وَقَارِبُوا وَاغْدُوا وَرُوحُوا وَشَيْءٌ مِنْ الدُّلْجَةِ وَالْقَصْدَ الْقَصْدُ تَبْلُغُوا.
“কস্মিনকালেও তোমাদের কাউকে তার নিজের ‘আমাল কক্ষনো নাজাত দিবে না। তারা (সাহাবীগণ)বললেন, হে আল্লাহ্র রসূল! আপনাকেও না? তিনি বললেনঃ আমাকেও না। তবে আল্লাহ্ আমাকে তাঁর রহমত দিয়ে আবৃত রেখেছেন। তোমরা যথারীতি ‘আমল করে নৈকট্য লাভ কর। তোমরা সকালে, বিকালে এবং রাতের শেষভাগে আল্লাহ্র ইবাদাত কর। মধ্য পন্থা অবলম্বন কর। মধ্য পন্থা তোমাদেরকে লক্ষ্যে পৌঁছাবে। -সহিহ বুখারী, হাদিস নং ৬৪৬৩
শিক্ষা ও প্রায়োগিক ক্ষেত্র:
আল্লাহ তাআলার রহমত ও অনুগ্রহের কারণে পৃথিবীর উপর বিচরণশীল প্রত্যেকটা মানব দানব সহ সমস্ত প্রাণীকুল শ্বাস-প্রশ্বাস চলমান। তিনিই নিজ অনুগ্রহে সবার রিজিকের বন্দোবস্ত করেন। তাদের অস্তিত্ব দান করেন।
আখেরাতেও তাঁর অনুগ্রহ ব্যতীত একজন ব্যক্তিও মুক্তি লাভ করতে পারবে না। তাই সদা-সর্বদা আল্লাহর রহমত ও অনুগ্রহের জন্য আমাদেরকে প্রার্থনা করা উচিত। তাঁর এবাদত করা উচিত। আর তার হুকুম-আহকাম পালন করে তাঁর নৈকট্য অর্জন করার মাধ্যমে তাঁর অনুগ্রহের পাত্রে পরিণত হওয়া আমাদের একান্ত কর্তব্য।