তাফসীর “বিসমিল্লাহ”
بسم الله الرحمن الرحيم
অর্থ:(আরম্ভ করছি) পরম করুনাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে।
শাব্দিক বিশ্লেষণ:
بسم:
শব্দটি ( إسم ) ‘ইসম’ থেকে, যার অর্থ নাম।
আর ( الله ) ‘আল্লাহ’ নামটি আল্লাহ তায়ালার নাম সমূহের মধ্যে সবচেয়ে মহত্বপূর্ণ নাম বা ‘ইসমে আজম’ বলা হয়।
الرحمن ও الرحيم:
এই দুইটি শব্দ আল্লাহর গুণবাচক নাম। যা ( الرحمة ) রহমত শব্দ থেকে এসেছে। যার অর্থ অসীম দয়ালু ও পরম করুণাময়।
অধিকাংশ মুফাসসিরদেরমতে “আর রাহমান’ যাহার রহমত সৃষ্টির সকলের উপর বিরাজমান দুনিয়াতে। ‘আর রাহিম’ যার রহমত শুধু মুমিনদের জন্য নির্দিষ্ট আর সেটা আখেরাতে।
একজন মুসলিমের জীবনে ‘বিসমিল্লাহর’ গুরুত্ব:
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম সকল আলেমদের ঐক্যমতের ভিত্তিতে এটি সূরা আন-নামলের ৩০ নম্বর আয়াত।
إِنَّهُ مِنْ سُلَيْمَان وَإِنَّهُ بِسْمِ اللَّه الرَّحْمَن الرَّحِيم
নিশ্চয় এটা সুলাইমানের নিকট হতে এবং নিশ্চয় এটা পরম করুনাময় অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে। সুরা আন-নামল ৩০।
ইসলামী শরীয়ায় বিসমিল্লাহ শুধু কুরআন পাঠকরার সময় পাঠ করতে র্নিদেশ দেওয়া হয়নি । বরং ইসলামী সভ্যতা ,সংস্কৃতি ও লাইফ স্টাইল এর অন্যতম একটি আদর্শিক শিক্ষা হল প্রত্যেকটি কথা, কাজ শুরু করার পূর্বে ‘বিসমিল্লাহ’ পাঠ করা, আল্লাহর নামে শুরু করা। যাহা কুরআনের অসংখ্য নির্দেশনা এবং রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কথা, কাজ ও নির্দেশনার মাধ্যমে প্রমাণিত।
যেমন পবিত্র কোরআনে বিসমিল্লাহ না বলে জবাই করতে নিষেধ করা হয়েছে, এবং বিসমিল্লাহ না বলে জবাই করা প্রাণীর মাংস খাওয়া হারাম করা হয়েছে।
وَلاَ تَأْكُلُوا مِمَّا لَمْ يُذْكَرْ اسْمُ اللَّهِ عَلَيْهِ وَإِنَّهُ لَفِسْقٌ
আর তোমরা (যা যবেহ করার সময়) আল্লাহর নাম নেওয়া হয়নি, তা ভক্ষণ করো না। কেননা, নিশ্চয় তা পাপ কর্ম । সূরা আন-আম ১২২
রাসূল (সঃ) তিনি প্রতিদিন সকাল বিকাল বলতেন,
بِسْمِ اللَّهِ الَّذِي لَا يَضُرُّ مَعَ اسْمِهِ شَيْءٌ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَهُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
“আমি সে আল্লাহর নামে শুরু করছি যার নামে শুরু করলে যমীন ও আসমানে কেউ কোন ক্ষতি করতে পারে না, আর আল্লাহ তো সব কিছু শুনেন ও সবকিছু দেখেন।” [ ইবনে মাজাহ: ৩৮৬৯]
খাবার খাওয়ার সময় রাসূল (সঃ) বিসমিল্লাহ পড়তে বলেছেন-
يَا غُلاَمُ، سَمِّ اللَّهَ
“হে বৎস খাবার গ্রহণের পূর্বে বিসমিল্লাহ পড়ো। বুখারী ৫৩৭৬
এছাড়াও তিনি দরজা বন্ধ করতে, আলো নিভাতে, পাত্র ঢাকতে, পানপাত্র বন্ধ করতে, কাপড় খুলতে, স্ত্রী সহবাসের পূর্বে, ঘুমানোর সময়, ঘর হতে বের হওয়ার সময়, চুক্তিপত্র, বেচা-কিনা লিখার সময়, বাহনে উঠতে, মসজিদে ঢুকতে, বাথরুমে প্রবেশ করতে, যুদ্ধ শুরু করার সময় এবং মৃতকে কবর দিতে বিসমিল্লাহ বলতে নির্দেশ দিয়েছেন। -তাফসীরে জাকারিয়া দ্রঃ
শিক্ষা ও প্রায়োগিক ক্ষেত্র:
আমাদেরকে জীবনের সকল ক্ষেত্রে সমস্ত বৈধ কথা ,কাজ, এবং খাওয়ার ক্ষেত্রে বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম পড়ায় অভ্যস্ত হতে হবে। আল্লাহর রহমত এবং দয়া পাওয়ার জন্য, কথা ও কাজের ক্ষেত্রে তার তৌফিক প্রাপ্তি ও খাওয়ার ক্ষেত্রে তার বরকত প্রাপ্তির জন্য এবং নানান প্রকারের অনিষ্ট থেকে আল্লাহর ইচ্ছায় রক্ষা পাওয়ার জন্য ‘বিসমিল্লাহ’ পড়তে হবে।
আসুন, প্রতিদিন কুরআনুল কারীমের একটি আয়াত শিখি
কাজী মোঃ যায়েদ আল-মাদানী খতীব মাসজিদ বিলাল (রাঃ) বনশ্রী, ঢাকা