তাফসীর
اعوذ بالله من الشيطان الرجيم
আমি বিতাড়িত শয়তান থেকে আল্লাহর নিকট আশ্রয় চাই।
অর্থাৎ আমি আশ্রয় চাচ্ছি একমাত্র আল্লাহ তায়ালার নিকট বিতাড়িত শয়তানদের সকল অনিষ্ট ও ক্ষতি থেকে। যাতে তারা আমার দ্বীনের ব্যাপারে কোন ক্ষতি করতে না পারে এবং আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের হক ও হুকুম আদায়ের ক্ষেত্রে কোন প্রতিবন্ধকতা তৈরি করতে না পারে।
اعوذ: শব্দটি এসেছে ( الإستعاذة) থেকে, যার অর্থ ( الإستعاذة ) ও ( الإستجارة ) আশ্রয় চাওয়া, আশ্রয় নেওয়া, সাহায্য চাওয়্।
الشيطان: শয়তান শব্দটি সম্পর্কে আবু জাফর (রাঃ) বলেন:
“والشيطان ، في كلام العرب : كل متمرد من الجن والإنس والدواب وكل شيء”
“মানুষ, জ্বিন এবং জন্তু-জানোয়ার হতে প্রত্যেক বিদ্রোহী,উদ্ধত ও অবাধ্যকে আরবরা ‘শয়তান’ নামে অভিহিত করতো”।
কেননা আল্লাহ তাআলা বলেছেন:
( وَ كَذٰلِكَ جَعَلْنَا لِكُلِّ نَبِیٍّ عَدُوًّا شَیٰطِیْنَ الْاِنْسِ وَ الْجِنِّ )
আর এভাবে আমি শয়তানদেরকে প্রত্যেক নবীর জন্য শত্রু স্বরূপ বানিয়েছি, (যাদের অনেকেই) মানুষ ও জিনদের অন্তর্ভুক্ত। সূরা আন-আম ১১২।
الرجيم: শব্দটি শয়তানদের জন্য একটি গুনবাচক শব্দ। যার অর্থ: অভিশপ্ত, বিতাড়িত। যেহেতু শয়তানরা আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের সকল কল্যাণ ও মঙ্গল থেকে বিতাড়িত।
আউযুবিল্লাহ‘ এর ফজিলত ও উপকারিতাঃ-
আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস থেকে বর্ণিত যে, জিবরীল সর্বপ্রথম রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের নিকট ‘আউযুবিল্লাহ’ অবতরণ করেছেন। -তাবারি।
পবিত্র কোরআনে শয়তানের অনিষ্ট থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করার জন্য আল্লাহ তাআলা নির্দেশ দিয়েছেন।
( وَقُلْ رَبِّ أَعُوذُ بِكَ مِنْ هَمَزَاتِ الشَّيَاطِينِ )
অর্থাৎ: ” আর আপনি বলুন, ‘হে আমার রব, আমি শয়তানের কুমন্ত্রণা থেকে আপনার কাছে পানাহ চাই”। সূরা আল-মুমিনুন ৯৭।
কোরআন তেলাওয়াতের পূর্বে আল্লাহ তাআলার নিকট শয়তানের প্ররোচনা থেকে আশ্রয় প্রার্থনা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামীন বলেন,
( فَإِذَا قَرَأْتَ الْقُرْآنَ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ مِنَ الشَّيْطَانِ الرَّجِيمِ)
অর্থাৎ: “আপনি যখন কুরআন তিলাওয়াত (করার ইচ্ছা) করবেন তখন অভিশপ্ত শয়তান হতে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করবেন।” -সূরা আন -নাহল ৯৮।
রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সর্বদায় শয়তানের অনিষ্ট থেকে আত্মরক্ষার জন্য ‘আউযুবিল্লাহ’ পাঠ করতেন। এ ব্যাপারে হাদীসের গ্রন্থ সমূহের জিকিরের অধ্যায়গুলোতে অসংখ্য হাদিস বর্ণিত হয়েছে।
এছাড়া পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে শয়তান মানুষের শত্রু, তাকে শত্রু হিসেবে গ্রহণ করার জন্য। যেহেতু আমরা তাকে দেখতে পাই না সেহেতু তার ক্ষতি , অনিষ্টা, প্ররোচনা এবং কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য বেশি বেশি আউযুবিল্লাহ পাঠ করে আল্লাহর কাছে আশ্রয় চাইতে হবে।
(اِنَّ الشَّیۡطٰنَ لَکُمۡ عَدُوٌّ فَاتَّخِذُوۡہُ عَدُوًّا ؕ اِنَّمَا یَدۡعُوۡا حِزۡبَہٗ لِیَکُوۡنُوۡا مِنۡ اَصۡحٰبِ السَّعِیۡرِ)
“নিশ্চয় শয়তান তোমাদের শত্রু; সুতরাং তাকে তোমরা শত্রু হিসাবেই গ্রহণ কর।সে তো তার দলবলকে (অনুসারীদেরকে) এ জন্য আহবান করে যে, তারা যেন জাহান্নামী হয়।” সূরা-ফাতির ০৬।
শিক্ষা ও প্রায়োগিক ক্ষেত্র:
জীবনের সর্বক্ষেত্রে একজন মুমিনের একমাত্র প্রমাণিত শত্রু হচ্ছে শয়তান। তাই সর্ব অবস্থায় তার প্ররোচনা ও কুমন্ত্রণা থেকে বাঁচার জন্য আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করতে হবে।
তাই আমরা যেন রাগ, ক্ষোভ, হিংসা- বিদ্বেষ,কু-ধারণা, মিথ্যা,গীবত,প্রতারণা ও লোভ-লালসার এবং যাবতীয় কাজ করার ক্ষেত্রে তার প্ররোচনায় বিভ্রান্তির শিকার না হই, পড়া বা জ্ঞান অর্জনের ক্ষেত্রে তার কুমন্ত্রণায় ভুল জ্ঞান যেন অর্জিত না হয় ও তার কুমন্ত্রণার কারণে আমল করার সময় এমন ভাবে আমল-ইবাদত যেন না করি, যার ধরুন প্রতিদান থেকে বন্চিত হতে হয় এবং প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য মানব এবং জিন সৃষ্ট সকল ধরনের ক্ষতি ও অনিষ্ট থেকে বাঁচার জন্য সব সময় আউযুবিল্লাহ পাঠ করতে হবে।