মোনাকো ভিত্তিক তেল এবং গ্যাস পরামর্শদাতা প্রতিষ্ঠান উনাওয়েলের একজন প্রাক্তন ব্রিটিশ নির্বাহীকে ১.৭ বিলিয়ন ডলারের তেল প্রকল্প গ্রহণ করতে দখলহওয়া ইরাকের সরকারী কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার জন্য তিন বছর চার মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
উনাওয়েলের প্রাক্তন ইরাকী পরিচালক ইরাকি বংশোদ্ভূত বাসিল আল-জারাহ উপসাগরীয় অঞ্চলে তেল পাইপলাইন, একটি তেল প্ল্যাটফর্ম এবং সমুদ্রতীরবর্তী ভাসমান ঘাটগুলি নির্মাণের চুক্তিগুলি সুরক্ষিত করতে ঘুষের জন্য ১৭ মিলিয়ন ডলার প্রদানের বিষয়টি স্বীকার করেছেন। মূলত, ২০০৩ সালে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সাদ্দাম হুসেনের পতনের পর থেকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশটি বিশৃঙ্খলাবদ্ধ অর্থনীতি থেকে উত্তোরণের চেষ্টা করে আসছে।
উনাওয়েলের কর্ণধার, বিশিষ্ট আহসানী পরিবার কীভাবে মধ্য প্রাচ্য, আফ্রিকা এবং মধ্য এশিয়ায় পশ্চিমা প্রতিষ্ঠিত ক্লায়েন্টদের জন্য জ্বালানি চুক্তি সুরক্ষিত করেছিল তা নিয়ে সিরিয়াস ফ্রড অফিস (এসএফও) এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের পাঁচ বছরের তদন্তের পরে লন্ডনের একজন বিচারক এই বিষয়ক তৃতীয় সাজা দিলেন।
লন্ডনে অন্য একটি মামলায় উনাওয়েলের প্রাক্তন ব্যবস্থাপক ৫৫ বছর বয়সী স্টিফেন হোয়াইটলি এবং ৪৫ বছর বয়সী জিয়াদ আকলকে ইতিমধ্যে যথাক্রমে তিন ও পাঁচ বছরের কারাদন্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে।
”এটি ছিল দুর্নীতির একটি ধ্রুপদী মামলা। যেখানে শক্তিশালীরা অন্যের হতাশা এবং দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে নিজের পকেটকে আরো শক্তিশালী করেছিল।”- এসএফও প্রধান লিসা ওসোফস্কি বলেছেন।
আল-জারাহের আইনজীবীকে মন্তব্যের জন্য অনুরোধ করা হলে এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনও মন্তব্য দেননি তিনি।
এসএফও-এর তদন্ত মূলত আহসানী পরিবার কেন্দ্রিক ছিল। তবে, ২০১৮ সালে সামান আহসানির প্রত্যর্পণ নিয়ে মার্কিন প্রসিকিউটরদের সাথে ইতালিতে সংঘর্ষ, এজেন্সিটিকে যুক্তরাজ্যে তাদের বিচারের প্রচেষ্টাকে ব্যর্থ করে দিয়েছিল।
অভিযুক্ত ব্রিটিশ-লেবানিজ আকল এবং ব্রিটিশ হোয়াইটলি, ইরাকের দক্ষিণ তেল কোম্পানিতে সরকারী কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ার জন্য অন্যদের সাথে ষড়যন্ত্র করেছিল এবং আরেক অভিযুক্ত ৭১ বছর বয়সী আল-জারাহ ইরাকি তেল মন্ত্রণালয়ে সরকারি কর্মকর্তাদের ঘুষ দেওয়ায় জড়িত ছিলেন বলে অভিযোগ করেন ব্রিটিশ প্রসিকিউটররা।
আকল এবং হোয়াইটলি অভিযোগগুলো অস্বীকার করেছিলেন। আল-জারাহ ২০১৯ সালে পাঁচটি অপরাধের দোষ স্বীকার করেছিলেন। বৃহস্পতিবার তার সাজা শুনানিতে আরও অপরাধ বিবেচনায় নেওয়ার জন্য বলেন তিনি।
হোয়াইটলি এবং আকলকে, ৫৫ মিলিয়ন ডলার তেল চুক্তি করার জন্য ৫ লাখ ডলারেরও বেশি ঘুষ দেওয়ার ষড়যন্ত্রের জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছিল। তাদের আইনজীবীদের মতে, তারা অভিযোগগুলোর বিরুদ্ধে আপিল করার পরিকল্পনা করছে।
প্রাক্তন উনাওয়েল ক্লায়েন্ট এসবিএম অফশোরের প্রাক্তন বিক্রয় ব্যবস্থাপক ছিলেন ৬৮ বছর বয়সী পল বন্ড। আদালত তার মামলায় কোনও রায় পৌঁছাতে না পারায় জানুয়ারি মাসে তাকে একটি বিচারের মুখোমুখি হতে হয়েছিল।
সাইরাস এবং সামান আহসানী ভাতৃদ্বয় হলেন উনাওয়েলের ব্রিটিশ-ইরানি প্রাক্তন প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এবং প্রধান অপারেটিং অফিসার। ২০১৯ সালে ঘুষ দেওয়ার অভিযোগে দোষী সাব্যস্ত হওয়ার পরে তারা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে কারাদণ্ডের অপেক্ষায় রয়েছে।