গেল বুধবার মার্কিন সামরিক বাহিনী ঘোষণা দেয় যে, তারা চলতি মাসেই ইরাকে অবস্থানরত আমেরিকান সৈন্যদল এর পরিমান ৫২০০ থেকে ৩০০০ এ কমিয়ে আনাবে, যা দীর্ঘদিন এর আকাঙ্খিত একটি আনুষ্ঠানিক পদক্ষেপ।
মার্কিন কেন্দ্রিয় নির্বাহীর প্রধান, নৌ জেনারেল ফ্রাংক মেককাঞ্জি, ইরাক ভ্রমন কালে বলেন যে, “আমরা আমাদের সহযোগীদের সামরিক শক্তি কার্যক্রম বর্ধিত করন বজায় রাখতে চাই ইরাকি সৈন্য বাহিনী দ্বারা এবং আমাদেরকে ইরাক থেকে আমাদের পদচারণ কমিয়ে আনতে সহযোগিতা করবে।”
এই জুন মাসে আমেরিকা এবং ইরাক তাদের প্রতিশ্রুতি নিশ্চিত করার লক্ষে আগামি মাসে মার্কিন সৈন্যদল কমিয়ে আনছে, স্থায়ী ঘাঁটি বা স্থায়ী সামরিক উপস্থিতির কোণ প্রকার পরিকল্পনা ওয়াশিংটন এর নেই।
ISIL (ISIS) এর সাথে যুদ্ধ করার জন্য মার্কিনীদের আনুমানিক ৫২০০ সৈন্যদল ইরাকে পাঠানো হয়। মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট এর কর্মকর্তা বলেন ইরাকি বাহিনী এখন অনেকটাই স্বনির্ভর ISIL এর অবশিষ্টাংশ নিয়ন্ত্রন করার জন্য।
গত মঙ্গলবার, নাম প্রকাশ না করার শর্তে ট্রাম্প প্রশাসন এর একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এয়ার ফোর্স ওয়ান এ উপস্থিত সাংবাদিকদের বলেন যে এই ধরনের একটা বিবৃতি এসেছিল এবং সামনে আরও একটি বিবৃতি আসতে পারে আফঘানিস্তান থেকে আরও সৈন্যদল প্রত্যাহার এর জন্য।
অব্যাহত প্রতিশ্রুতি
আমেরিকা ইরাক আক্রমন করে ২০০৩ এবং ২০১১ এ চলে যায়, কিন্তু ২০১৪ তে ফিরে আসে যখন ISIL সে দেশের বিরাট একটা অংশ দখল করে।
“ইরাকি বাহিনীর সুবিস্তর উন্নতি বুঝতে পেরে এবং ইরাকি সরকার এর সাথে আলোচনা এবং তাদের এবং আমাদের সামরিক জোট এর সহযোগিতায়, আমেরিকা সিধান্ত নিয়েছে যে সেপ্টেম্বর এ ইরাকে অবস্থানরত আমাদের সৈন্যদল এর পরিমান আনুমানিক ৫২০০ থেকে ৩০০০ এ আনা হবে।”
অবশিষ্ট মার্কিন বাহিনী ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনীকে উপদেশ ও সহযোগিতা দিয়ে যাবে যেহেতু তারা ISIL যোদ্ধাদের মূল উৎপাটন এ নিবিষ্ট, মেককাঞ্জি বলেন।
“মার্কিন এই সিদ্ধান্ত একটি পরিস্কার প্রমান বহন করে আমাদের চূড়ান্ত লক্ষের অঙ্গিকার নিয়ে, যা কিনা একটি ইরাকি নিরাপত্তা বাহিনী যেটি একটি ISIS পুনরুত্থান এবং ইরাকের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় সামর্থ্য হবে কোন প্রকার বাহ্যিক সহযোগিতা ছাড়া, মেককাঞ্জি বলেন।”
“সময়টা কঠিন ছিল, বিসর্জনও অনেক দেয়া হয়েছে, কিন্তু অগ্রগতিই মুখ্য ছিল। ”
অন্তহীন যুদ্ধ
২০১৬ সালে, ট্রাম্প “অন্তহীন যুদ্ধ” এর সমাপ্তির প্রচারণা চালায় কিন্তু মার্কিন বাহিনী রয়ে যায় বিভিন্ন দেশ এ যেমন আফঘানিস্তান, ইরাক এবং সিরিয়া, যদিও স্বল্প সংখ্যক হলেও।
“আমরা আমেরিকাকে নতুন যুদ্ধ করা থেকে বিরত রেখেছি এবং আমারা আমাদের সৈন্য বাহিনীকে দেশে ফিরিয়ে নিয়ে আসছি, আমারা তাদেরকে দূরদেশ থেকে ঘরে ফিরিয়ে আনছি,” মঙ্গলবারের একটি প্রচারণার বক্তব্যে ট্রাম্প তা বলেন। “আমারা হাজার হাজার কোটি ডলার খরচ করেছি, এবং আমরা এর থেকে কি পেয়েছি?”
গত মাসে, ইরাকি প্রধানমন্ত্রীর সাথে একটি সমাবেশে, ট্রাম্প তার প্রতিশ্রুতির উপর জোর দেন ইরাক থেকে মার্কিন সৈন্য বাহিনী সরিয়ে আনার।
ইরাকি সংসদ এ বছর ইরাক থেকে বিদেশি সৈন্য বাহিনী সরিয়ে নেয়ার পক্ষে সমর্থন দেয়, এবং মার্কিন এবং অন্য সহযোগী সৈন্য বাহিনীর ইরাক ত্যাগ করা এরই একটা অংশ।
ট্রাম্প এর সাথে ইরাকি প্রধানমন্ত্রী মুস্তাফা আল-কাদিমি এর বৈঠক এরই মধ্যে ওয়াশিংটন এবং তেহরান এর মধ্যে একটি নতুন উদ্দিপ্ত উত্তেজনার সৃষ্টি করেছে, যখন ওয়াশিংটন জাতিসঙ্ঘে বলে যে অতিতের সকল মুলতবীকৃত মার্কিন নিষেধাজ্ঞা ইরানের পুনর্বহাল করা হবে। ইরান এবং ইরাকের মধ্যে নিবিড় রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক এবং সামরিক বন্ধন বিদ্যমান।
জানুয়ারীতে আমেরিকা এবং ইরানের মধে প্রকাশ্য সংঘর্ষের সম্ভাবনা বৃদ্ধি পায় যখন একটি মার্কিন ড্রোন বাগদাদের বিমান বন্দর আঘাত হানে যা ইরানের সেনা প্রধান কাশেমি সোলেইমানি এবং ইরাকি মেলেশিয়া নেতা আবু মাহদি আল-মুহান্দিস নিহত করে।
ক্ষিপ্ত ইরাকি আইন সভার সদস্য, শিয়া রাজনৈতিক চক্রান্তকারী দল দ্বারা উদ্বুদ্ধ, একটি অবাধ্যতামুলক সিদ্ধান্তের অনুমোদন দেয় ইরাক থেকে সকল মার্কিন নেতৃত্বাধীন সামরিক জোট এর সৈন্য বাহিনী প্রত্যাহার এর নিমিত্তে।
সোলেইমানি হত্যার জবাবে, ইরান, জানুয়ারী ৮ এ, একটি বালিস্তিক মিসাইল ছোড়ে ইরাক এর আল-আসাদ বিমান বন্দর এ, যার ফলে ১০০ এরও বেশী আমেরিকান সৈন্যদল মাথায় গুরুতর আঘাত পায়।