Monday, September 16, 2024
No menu items!

আমাদের মুসলিমউম্মাহ ডট নিউজে পরিবেশিত সংবাদ মূলত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সমাহার। পরিবেশিত সংবাদের সত্যায়ন এই স্বল্প সময়ে পরিসরে সম্ভব নয় বিধায় আমরা সৌজন্যতার সাথে আহরিত সংবাদ সহ পত্রিকার নাম লিপিবদ্ধ করেছি। পরবর্তীতে যদি উক্ত সংবাদ সংশ্লিষ্ট কোন সংশোধন আমরা পাই তবে সত্যতার নিরিখে সংশোধনটা প্রকাশ করবো। সম্পাদক

হোমদৈনন্দিন খবরইসরাইল শিশু নির্যাতনকে স্বাভাবিক বিষয় মনে করে

ইসরাইল শিশু নির্যাতনকে স্বাভাবিক বিষয় মনে করে

ফিলিস্তিন সংহতি আন্দোলনের প্রবীণ কর্মী এবং ইহুদী জায়নবাদ বিরোধী টনি গ্রীনস্টাইনকে ২০১৮ সালে লেবার পার্টি থেকে বহিস্কার করা হয়েছিলো ‘এন্টি সেমেটিক’(ইহুদিবিদ্বেষী) তকমা দিয়ে। প্রায়ই দেখা যায় লেবার পার্টি `ইহুদীবাদ বিরোধী’ সমস্যার ব্যাপারটি উত্থাপন করে। দলটির আইনজ্ঞরা যেসব অভিযোগ আনে তা মূলত `ইহুদীবাদ বিরোধীতা’ নয় বরং এটা হলো বৈধভাবে ইসরাইলের সমালোচনা করা।

এরজন্য টনি গ্রীনস্টাইন তার ব্লগে ‘ফিলিস্তিন বিরোধী’ তৎকালীন লেবার এমপি লুইস ইলম্যানের কথা উল্লেখ করেছেন। এ মহিলা (লুইস ইলম্যান) কয়েক দশক ধরে ব্রিটেনে ইসরাইলপন্থী লবির নেতৃত্ব দিচ্ছেন। সে সময় তিনি ‘ইসরাইলের লেবার দলীয় বন্ধু’ সংগঠনের সহ-সভাপতি ছিলেন। বর্তমানে ওই সংগঠনের সভাপতি।

প্রায়ই ইসরাইল এবং তার লবির পক্ষপাতিত্ব করে ইলম্যান পার্লামেন্টে নানা প্রশ্ন করতেন। যেমন গ্রীনস্টেইন বলেন, তার স্বভাব ছিল ‘ইসরাইলের নিরাপত্তা ইস্যুকে সামনে নিয়ে আসা। তিনি লিখেছে, এ মহিলা ইসরাইলের দখলদার বাহিনীর জন্য যুক্তি তুলে ধরে তাদের রক্ষা করতে চান এবং ইসরাইলের মাধ্যমে যে ‘শিশু নির্যাতন’ হচ্ছে তার সমার্থক।

গ্রীনস্টাইন শুধুমাত্র মৌখিকভাবে আক্রমণ করেনি,তিনি তার ব্লগে এসব অভিযোগের বিস্তারিত প্রমান দিয়েছেন। একটি সংসদীয় বিতর্কে ইলম্যান ন্যাক্কারজনকভাবে ইসরাইলি বাহিনীকে সমর্থন করেন। রাতে ফিলিস্তিনি শিশুদের বাড়িতে গিয়ে তাদের আটক করার জন্য ইসরাইলি সেনাবাহিনীর অভিযানকেও তিনি সমর্থন করেন।

ইলম্যান ইসরাইলী বাহিনীর শিশু নির্যাতনকে সমর্থন করায় গ্রীনস্টাইন তার সমালোচনা করেন। হাস্যকরভাবে গ্রীনস্টাইনের সমালোচনাকে লেবার পার্টির বেরসিক আমলারা ‘অসম্মানজনক ভাষা’ বলে উল্লেখ করেন। যদিও ইসরাইলি বাহিনী ফিলিস্তিনি শিশুদের প্রতি যে আচরণ করছে তা শিশু নির্যাতনের আওতায়ভুক্ত বলে একাধিক প্রমান আছে।

আন্তর্জাতিক শিশু রক্ষা সংস্থা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে যে, ফিলিস্তিন এসব নির্যাতনের নতুন প্রমানাদির পূর্ণাঙ্গ বিবরণ দিয়েছে। এই রিপোর্টের মাধ্যমে এটা সাব্যস্ত হয়েছে যে, ইসরাইল ফিলিস্তিনি শিশু বন্দীদের আলাদা করে জেলে রাখার যে নিয়ম চালু করেছে তা আন্তর্জাতিক আইনে ভয়াবহ নির্যাতন বলে পরিচিত।

রিপোর্টের ৭৩নং পেইজে বলা হয়েছে-‘ইসরাইলি কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য কারাগারে ফিলিস্তিনি শিশুদের আলাদা ও একাকী রাখা হয়’। সেখানে বিস্তারিতভাবে বলা হয়েছে ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ কিভাবে আটক করে, কোন কোন কারনে আটক রাখে এবং কিভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করে ।

এই শিশু নির্যাতনকে ইসরাইলি সরকার আইনগত বৈধতা দিয়েছে। এটা শুধু নৈতিক স্খলনই নয়, বাজে দৃষ্টান্তও বটে।

এটাই শিশুদের প্রতি ইসরাইলি আচরণের ধরণ। ইসরাইল শিশু নির্যাতনকে স্বাভাবিক বিষয় মনে করে ।

‘বিশ্বে ইসরাইলই একমাত্র সন্দেহভাজন দেশ যারা বছরে ৫০০-৭০০ শিশুকে মার্শাল কোর্টে বিচার করে বলে ডিসিআইপির ( নিরাপত্তা বাহিনী নিয়ে কাজ করা একটি সংস্থা) মন্তব্য করেছে। সংস্থাটি মনে করে, ২০০০ সাল থেকে এ পর্যন্ত প্রায় ১৩ হাজার ফিলিস্তিনি শিশুকে ইসরাইলি দখলদার বাহিনী আটক করেছে, জেলে পুরেছে এবং মার্শাল কোর্টে বিচার করেছে। এ প্রতিবেদনে তারা শিশুদের আটকে রাখার ১০৮টি ঘটনা বিস্তারিতভাবে পর্যবেক্ষণ করেছে। এসব ঘটনায়, শিশুরা কোনো উকিল বা তাদের বাব-মা’র উপস্থিতি ব্যাতিরেকে জিজ্ঞাসাবাদের স্বীকার হয়েছে। এসব ঘটনার ৯৪% ক্ষেত্রে ,শিশুদের জিজ্ঞাসাবাদের আগে তাদের কোনো ধরনের আইনী পরামর্শ নেয়ার সুযোগ দেয়া হয়নি ।

ইসরাইলি বাহিনীর জিজ্ঞাসাবাদের কৌশল হলো মানসিক ও শারীরিকভাবে বাধ্যকরণ। সংস্থাটির প্রতিবেদন মতে, ভয়, ভীতি, গালাগালি এবং মারধোরের মাধ্যমে তাদের ইচ্ছামত স্বীকারোক্তি আদায় করা হয়।

শতকরা আশি ভাগ শিশু বলেছে, জিজ্ঞাসাবাদের সময় তাদের চাপের মুখে রাখা হয়েছে। তাদের শরীর একটি চেয়ারের সাথে বাধা থাকত দীর্ঘ জিজ্ঞাসাবাদের সময়টাতে। এ ধরণের অবস্থাকে তারা সত্যিকার অর্থে যন্ত্রনাময় বলে বর্ণনা করেছে।

যে কারো মতে এটা অত্যাচার। এধরনের নির্যাতন করা হয় শিশুদের কাছ থেকে স্বীকারোক্তি আদায় করার জন্য।

এতেই বোঝা যায় কেন শতকরা ৯৯.৭% ফিলিস্তিনি ইসরাইলের সাম্প্রদায়িক সামরিক আদালতে দোষী সাব্যস্ত হয়।

আপনি যদি নিজের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য দেয়ার জন্য নির্যাতিত হতে থাকেন তাহলে যেকোন আদালত আপনাকে সহজেই দোষী প্রমানিত করতে পারবে। চিন্তা করুন শিশুরা কতটা ভয় পেয়েছে। ডিসিআইপি একে নিষ্ঠুর, অমানবিক,ন্যাক্কারজনক আচরণ এবং ভয়াবহ শাস্তি বলে বর্ণনা করেছে।

এটা প্রমাণ করে ইসরাইল অত্যাচার করার রীতি-নীতিকেকেই প্রাধান্য দেয়। অভিযোগ গঠনের আগে এবং আদালতে বিচারের পূর্বে তারা ধারাবাহিকভাবে নির্যাতন চালিয়ে যায়। প্রহসণের আদালতে দোষী প্রমানিত হবার পর তাদের আর নির্যাতন করা হয় না। ডিসিআইপি যুক্তি সহকারে বলছে এটা একটা দালিলিক প্রমান যে, ইসরাইল জিজ্ঞাসাবাদের সময় শিশুদের নির্যাতন করে স্বীকারোক্তি ও গোয়েন্দা তথ্য আদায়ের জন্য।

ডিসিআইপি’র খালিদ কুজমার মতে, আন্তর্জাতিক আইন শিশুদের ক্ষেত্রে নির্জন কারাবাস এবং এ ধরণের নিষ্ঠুর,অমানবিক এবং ন্যাক্কারজনক আচরণকে নিষিদ্ধ করেছে। যদিও এখনও ইসরাইলি কর্তৃপক্ষ এখনও মাঝেমধ্যে শিশুদের এভাবে আটক করে। এটা ব্যাপকভাবে স্বীকৃত এ ধরণের আচরণ শিশুদের তাৎক্ষনিক ও দীর্ঘমেয়াদি মানসিক ক্ষতির কারণ হয়। এটা এখনই বন্ধ করা উচিৎ এবং এ নিষেধাজ্ঞা আইন দ্বারা স্বীকৃত হওয়া উচিৎ।

ইসরাইল এবং তার ইউরোপীয় প্রপাগান্ডা প্রচারকারী লবি দাবি করে তারা মধ্যপ্রাচ্যের একমাত্র গণতন্ত্র। কিন্তু এই প্রতিবেদন এটা প্রমান করেছে যে, শিশুদের বিরুদ্ধে যারা ধারাবাহিকভাবে অত্যাচার করে তারা স্বৈরাচারি। এ ধরণের দেশ কখনও গনতন্ত্রী হতে পারে না।

সূত্র : মিডল ইস্ট মনিটর

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

12 − 7 =

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য