অবশেষে নিষিদ্ধ ভয়ংকর মাদক ইয়াবার বিষয়টি স্বীকার করল মিয়ানমার। মাদকবিরোধী অভিযান যৌথভাবে পরিচালনা নিয়েও কিছুটা আগ্রহ দেখাল দেশটি। আর মাদক পাচার রোধে নাফ নদ ও বঙ্গোপসাগরে মাছ শিকারে নিয়োজিত দুই দেশের জেলেদের ঠিকানাসহ ডাটাবেজ প্রস্তুতে মিয়ানমার সম্মত হয়েছে বলে জানিয়েছেন মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর (ডিএনসি)-এর মহাপরিচালক (ডিজি) মোহাম্মদ আহসানুল জব্বার। গতকাল বিকালে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ডিএনসির প্রধান কার্যালয়ে তিনি গণমাধ্যমকে এসব কথা বলেন।
এর আগে বাংলাদেশ-মিয়ানমার মহাপরিচালক পর্যায়ের চতুর্থ দ্বিপক্ষীয় বৈঠক অনলাইন প্ল্যাটফরম (জুম) অনুষ্ঠিত হয়। বাংলাদেশের পক্ষে ডিএনসির মহাপরিচালক মোহাম্মাদ আহসানুল জব্বার নেতৃত্ব দেন। এ ছাড়া স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও বিভিন্ন আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ১৮ কর্মকর্তা অংশ নেন। চলমান করোনা পরিস্থিতির উন্নতি হলে ২০২১ সালে পরবর্তী বৈঠক মিয়ানমারে হবে। সভায় মিয়ানমার বাংলাদেশকে জানিয়েছে, ইতিমধ্যে তারা শান, রাখাইন ও মংডু রাজ্যে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা উদ্ধার করেছে। ডিএনসির ডিজি বলেন, জেলে, মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারের ডাটাবেজ তৈরির বিষয়ে উভয় পক্ষ একমত পোষণ করেছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তবর্তী এলাকায় মাদকের উৎস, মাদক পাচারের রুট ও স্পটের তথ্য বিনিময় করতে উভয় দেশ সম্মত হয়েছে। বাংলাদেশের সীমান্তবর্তী এলাকায় মিয়ানমারের মাদক ব্যবসায়ীদের ইয়াবা তৈরির কারখানার বিষয়েও মিয়ানমারকে জানিয়েছে ডিএনসি। মিয়ানমার এসব কারখানা ধ্বংস করার আশ্বাস দিয়েছে। ডিজি বলেন, সভায় দুই দেশ মাদক পাচারে জড়িতদের তালিকা নিয়মিতভাবে হস্তান্তর করবে। মাদক নিয়ন্ত্রণে নিয়মিতভাবে অভিজ্ঞতা ও তথ্য বিনিময়ের বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।
সীমান্তে লিয়াজোঁ অফিসের বিষয়ে আহসানুল জব্বার বলেন, টেকনাফ ও মংডুতে লিয়াজোঁ অফিস স্থাপনের পর এখনো নিয়মিত সভা হয়নি। তবে উভয় পক্ষ আশা প্রকাশ করেছে, অতি শিগগিরই সভা হবে। বৈঠকে মাদক পাচারের নিত্যনতুন কৌশলের সঙ্গে আপডেট হওয়া এবং গোয়েন্দা তথ্য উভয় পক্ষ একে অন্যের সঙ্গে নিয়মিতভাবে আদান-প্রদানের সিদ্ধান্ত হয়। এ ছাড়া ইয়াবা তৈরির উপাদান সিউডোএফিড্রিন ও অন্যান্য কেমিক্যাল পাচারের ক্ষেত্রে তথ্য বিনিময় এবং অভিযান পরিচালনার বিষয়ে উভয় পক্ষ সম্মত হয়।
চীন ও থাইল্যান্ড থেকে সিউডোএফিড্রিনসহ অন্যান্য কেমিক্যালস মিয়ানমারে পাচার হচ্ছে বলে তারা জানিয়েছেন। তারা ইয়াবা তৈরির উপাদান সিউডোএফিড্রিন উদ্ধারে অভিযান পরিচালনা করবেন। পরবর্তী সভা ২০২১ সালে কভিড পরিস্থিতি উন্নতি হলে মিয়ানমারে হবে।
ডিএনসি সূত্র বলছেন, সম্প্রতি মিয়ানমারে ইয়াবা আসক্তের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য পরিমাণ বেড়ে যাওয়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে পড়েছে সে দেশের সরকার। আর সে কারণেই বাংলাদেশের সঙ্গে আলোচনায় আগ্রহ দেখিয়েছে তারা। দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে তারা জানিয়েছেন, গত নয় মাসে ৩.৭ টন আফিম, ১.৬ টন হেরোইন, ৩১৪ মিলিয়ন ইয়াবা, ইয়াবা তৈরির ২ হাজার ১৪৪ কেজি উপাদান, ৩৯৪ কেজি গাঁজা, ১৬.৮ টন আইস, ৮৮৮ কেজি ক্যাটামিন ও ১৯ টন ক্যাফেইন জব্দ করা হয়েছে।