উপহাস, বিদ্রুপ, গালি, অপমান, অপবাদ
▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬▬
মহানবী (সা.) বলেন : ‘আল্লাহ তা‘আলা অশ্লীল ও কটুভাষীকে ঘৃণা করেন।’ (জামে তিরমিজি ১৯৫২, ইফা)
মানুষকে উপহাস ও বিদ্রূপ করা খুবই কুৎসিত কাজ এবং বড় গুনাহ। এর মাধ্যমে মুমিন ব্যক্তিকে অসম্মান করা হয়ে থাকে অথচ পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহ বলেছেন :
وَلِلَّـهِ الْعِزَّةُ وَلِرَسُولِهِ وَلِلْمُؤْمِنِينَ
‘সম্মান কেবল আল্লাহ,তাঁর রাসূল ও মুমিনদের জন্য।’ (সুরা মুনাফিকুন ৮)
কটুকথা বলার অর্থ হল কাউকে গালি দেয়া বা অপমান করা। এটা নিঃসন্দেহে অন্যায়।
যখন মানুষের ক্ষেত্রে কোন খারাপ কিছু ঘটে অথবা যখন কেউ তাদের অপছন্দনীয় কোন কাজ করে তখন অধিকাংশ মানুষই গালিগালাজ করে। তারা বলে যে,গালি দেয়া তাদের ক্রোধ দমনে সাহায্য করে এবং তাদেরকে আরও খারাপ কোন কিছু করা থেকে বিরত রাখে। যদিও এটা কিছুটা হলেও সত্য কিন্তু ইসলাম একে প্রত্যাখ্যান করে। কেননা,যে ব্যক্তি তার ক্রোধকে কটু ভাষা প্রয়োগ ছাড়া নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না,তার ইচ্ছাশক্তি খুবই দুর্বল। ইসলামী আচরণের দৃষ্টিকোণ থেকে ঐ ব্যক্তিই মহৎ যে তার ক্রোধকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে এবং ঐ অবস্থায়ও হাসিখুশী থাকে। রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন :
‘মুসলমানকে গালি দেয়া ফাসেকী এবং তাকে হত্যা করা কুফরী।’৪
তাই কাউকে অপমান করার জন্য গালি দেয়া যে কোন অবস্থায়ই অনুচিত। ইসলাম আমাদের কাউকে অসম্মানিত করার শিক্ষা দেয় না। যদি কেউ আমাদের প্রতি অন্যায় করে তাহলে প্রতিবাদ করতে হবে অথবা তাদের বলতে হবে যে,তারা যা বলে তা আমরা পছন্দ করি না।
কিন্তু তাদেরকে অপমান করা হল নিজেকে অতি নিম্ন স্তরে অবনমিত করা এবং ইসলামে এটা গ্রহণযোগ্য নয় যে,কেউ নিজেকে অসম্মানিত করবে।
অন্যকে ঠাট্টা করা বা উত্যক্ত করা থেকে বোঝা যায় যে,সেই ব্যক্তির চরিত্রের একটি অংশ ত্রুটিপূর্ণ। ঠাট্টা করাকে কৌতুক বলে মনে হতে পারে। কিন্তু এটি চিন্তা করা উচিত যে,আমাকে কেউ এভাবে উত্যক্ত করলে আমার অনুভূতি কেমন হবে।
রাসূলুল্লাহ (সা.) বলেছেন : ‘তোমরা অশ্লীলতা থেকে বেঁচে থাক। আল্লাহ তা‘আলা অশ্লীলতা ও সীমাতিরিক্ত অনর্থক কথা বলা পছন্দ করেন না।’ (মদীনা পাবলিকেশান্স কর্তৃক প্রকাশিত ইমাম গাযযালী প্রণীত এহইয়াউ উলুমিদ্দীন, ৩য় খণ্ড, পৃ. ৩৩১)
রাসূলুল্লাহ (সা.) ইরশাদ করেন,
“দুনিয়ায় যারা কাউকে নিয়ে উপহাস করে তাদের জন্য আখিরাতে জান্নাতের দরজা খোলা হবে এবং তাদেরকে জান্নাতের দিকে ডাকা হবে। কিন্তু তারা যখন কাছে এসে জান্নাতের দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে উদ্যত হবে তখনই দরজা বন্ধ করে দেওয়া হবে। এভাবে বারবার তাদেরকে ডাকা হবে এবং প্রবেশ করতে গেলেই তা বন্ধ করে দেওয়া হবে। একপর্যায়ে এভাবে করতে করতে সে নিরাশ হয়ে আর জান্নাতের দিকে ফিরে যাবে না। এভাবে দুনিয়ায় তার উপহাসের পরিণামে আখিরাতে তাকে নিয়ে এ ধরনের উপহাস করা হবে। (কানজুল উম্মাল, হাদীস ৮৩২৮)
পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে,
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا يَسْخَرْ قَوْمٌ مِّن قَوْمٍ عَسَىٰ أَن يَكُونُوا خَيْرًا مِّنْهُمْ وَلَا نِسَاءٌ مِّن نِّسَاءٍ عَسَىٰ أَن يَكُنَّ خَيْرًا مِّنْهُنَّ ۖ وَلَا تَلْمِزُوا أَنفُسَكُمْ وَلَا تَنَابَزُوا بِالْأَلْقَابِ ۖ بِئْسَ الِاسْمُ الْفُسُوقُ بَعْدَ الْإِيمَانِ ۚ وَمَن لَّمْ يَتُبْ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ [٤٩:١١]
মুমিনগণ,কেউ যেন অপর কাউকে উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারী অপেক্ষা উত্তম হতে পারে এবং কোন নারী অপর নারীকেও যেন উপহাস না করে। কেননা, সে উপহাসকারিণী অপেক্ষা শ্রেষ্ঠ হতে পারে। তোমরা একে অপরের প্রতি দোষারোপ করো না এবং একে অপরকে মন্দ নামে ডেকো না। কেউ বিশ্বাস স্থাপন করলে তাদের মন্দ নামে ডাকা গোনাহ। যারা এহেন কাজ থেকে তওবা না করে তারাই যালেম। (সূরা হুজরাত, আয়াত-১১)
আর যারা যালেম, তাদের জন্য রয়েছে ভয়াবহ আযাব।
আল্লাহ বলেন ‘আমি জালিমদের জন্য প্রস্তুত করে রেখেছি অগ্নি, যার বেষ্টনী তাদেরকে পরিবেষ্টন করে রাখবে, তারা পানীয় চাইলে তাদেরকে দেয়া হবে গলিত ধাতুর মতো পানীয়, যা তাদের মুখমণ্ডল বিদগ্ধ করবে, এটি কত নিকৃষ্ট পানীয়, জাহান্নাম কতই না নিকৃষ্ট আশ্রয়।’ (সূরা কাহফ; ২৯)
আল্লাহ বলেন; তাদের সতর্ক করে দাও আসন্ন দিন (কেয়ামত) সম্পর্কে এবং দুঃখকষ্টে তাদের প্রাণ কণ্ঠাগত হবে। জালিমদের জন্য কোনো অন্তরঙ্গ বন্ধু নেই এবং যার সুপারিশ গ্রাহ্য হবে এমন কোনো সুপারিশকারীও নেই। (সূরা মুমিন, ১৮)
- সংকলনেঃ মোঃ শরীফুল ইসলাম