ঈদ ও তার বিভিন্ন আহকাম
ঈদ হল সেই দিন পালনের নাম, যা মানুষের চিরাচরিত অভ্যাস। ঈদ মানে ফিরে আসা। যেহেতু খুশীর বার্তা নিয়ে ঈদ বাৎসরিক বারবার ফিরে আসে এবং মানুষ তা বারবার পালন করে, তাই তাকে ঈদ বলা হয়। প্রত্যেক জাতির আচরণে ঈদ পালন করার প্রথা বড় প্রাচীন। প্রত্যেক বড় বড় ঘটনা-প্রবাহকে উপলক্ষ্য করে তারই মাধ্যমে সেই স্মৃতি জাগরণ করে ঈদ (পর্ব) পালন করে থাকে এবং তাতে তারা নানা ধরনের খুশী ও আনন্দ প্রকাশ করে থাকে।
অমুসলিম জাতির পর্ব সাধারণতঃ কোন না কোন বৈষয়িক ব্যাপারের সাথে জড়িত। যেমন নওরোজ, ক্রিসমাস ডে, মাতৃদিবস, ভালোবাসা দিবস, জন্মদিন, বিবাহ-বার্ষিকী প্রভৃতি পর্ব। যেহেতু সেগুলো তাদের মনগড়া ঈদ, সেহেতু তাতে তাদের স্রেফ বস্ত্তবাদী উৎসব ও আড়ম্বরই পরিলক্ষিত হয়।
পক্ষান্তরে মুসলিম উম্মাহর ঈদ হয় কোন দ্বীনী উপলক্ষ্যকে কেন্দ্র করে। মহান আল্লাহর কোন ইবাদত পরিপূর্ণ করে এবং তাঁর রসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম)-এর বিধিবদ্ধ শরীয়ত অনুযায়ী তাঁকে সন্তুষ্ট করার মাধ্যমে তা পালন করা হয়। কেননা, মুমিনদের এ দুনিয়ায় খুশী হল একমাত্র মাওলাকে রাজী করেই। যখন মুমিন নিজ মাওলার কোন আনুগত্য পরিপূর্ণ করে এবং তার উপর তাঁর দেওয়া সওয়াব ও পুরস্কার লাভ করে তখনই খুশীর ঢল নেমে আসে তার হৃদয়-মনে। যেহেতু সে বিশ্বাস ও ভরসা রাখে সেই আনুগত্যের উপর তাঁর মাওলার অনুগ্রহ ও ক্ষমার প্রতিশ্রুতির উপর। মহান আল্লাহ বলেন,
(قُلْ بِفَضْلِ اللهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَلِكَ فَلْيَفْرَحُوْا هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُوْنَ)
অর্থাৎ, তুমি বল, আল্লাহর এই অনুগ্রহ ও করুণা নিয়েই তাদেরকে খুশী হওয়া উচিত। আর তারা যা পূঞ্জীভূত করে তা (দুনিয়া) অপেক্ষা এটি শ্রেয়। (কুরআনুল কারীম ১০/৫৮)
আলী (রাঃ) বলেন, ‘যেদিন আমি আল্লাহর কোন প্রকার নাফরমানি করি না, সেদিনই আমার ঈদ।’
অন্যান্য জাতির ঈদ অনেক। কারণ, সেসব ঈদ তাদের নিজস্ব মনগড়া। কিন্তু মুসলিমদের (বাৎসরিক) মাত্র দুটি ঈদ; এর কোন তৃতীয় নেই – ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আযহা। আর এ দুটি ঈদ মহান আল্লাহরই বিধান। তিনিই বান্দার জন্য পালনীয় করেছেন। আনাস (রাঃ) বলেন, মহানবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম) মদ্বীনায় আগমন করলে দেখলেন, মদ্বীনাবাসীরা দুটি ঈদ পালন করছে। তা দেখে তিনি বললেন, (জাহেলিয়াতে) তোমাদের দুটি দিন ছিল যাতে তোমরা খেলাধূলা করতে। এক্ষণে ঐ দিনের পরিবর্তে আল্লাহ তোমাদেরকে দুটি উত্তম দিন প্রদান করেছেন; ঈদুল ফিতর এবং ঈদুল আযহার দিন।’[1]
অবশ্য এ ছাড়া একটি সাপ্তাহিক ঈদ আছে। আর তা হল জুমআহর দিন। সপ্তাহান্তে একবার ফিরে আসে এই ঈদ। অবশ্য এখানে আমাদের আলোচনা হবে ঈদুল ফিত্বর নিয়ে।([2])
[1] (সহীহ আবূ দাঊদ ১০০৪, নাসাঈ ১৫৫৫নং)
([2]( ঈদুল আযহা নিয়ে আলোচনা ‘যুল-হজ্জের তের দিন’-এ দরষ্টব্য।