আসসালামু আলাইকুম
একটি হাদীস হয়তো আমাদের জীবনের লক্ষ্য – উদ্দেশ্য ও কর্ম পদ্ধতি পরিবর্তন করে দিতে পারে। যে হাদীসটি সকাল -বিকাল পড়ার জন্য রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম আমাদেরকে নির্দেশ দিতেন।
বস্তুত বর্তমান দুনিয়ামুখী, জাগতিক মোহে আক্রান্ত, শির্কে লিপ্ত, ইসলাম ব্যতীত অন্য মতবাদে আসক্ত, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের আনীত শরী‘আতের প্রতি নিজেকে সম্পূর্ণরূপে সমর্পণ করতে ব্যর্থ মানুষগুলোর জন্য তাতে রয়েছে বিশাল চিন্তার খোরাক।
হাদীসটি হচ্ছে,
‘আব্বাস ইবন আব্দুল মুত্তালিব রাদ্বিয়াল্লাহু ‘আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছেন, “সে ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পেয়েছে, যে রব হিসেবে আল্লাহকে, দীন হিসেবে ইসলামকে এবং রাসূল হিসেবে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে সন্তষ্ট চিত্তে স্বীকারকরেছে।” [মুসলিম, হাদীস নং ৩৪]
বস্তুত রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কেন আমাদেরকে তা পড়তে বলেছেন তা অনুধাবন না করার কারণেই আমরা অনেকেই হয়তো সকাল বিকাল পড়ে থাকি, “রাদ্বীতু বিল্লাহি রাব্বান, ওয়াবিল ইসলামি দ্বীনান, ওয়াবিমুহাম্মাদিন নাবিয়্যান” তারপরও আমরা ঈমানের স্বাদ আমাদের অন্তর অনুভব করি না। জান্নাতে যাওয়ার জন্য নিজেদেরকে যোগ্য করে তুলতে পারি না।
হাদীসে বর্ণিত, সন্তুষ্ট হওয়ার অর্থ হচ্ছে কোনো কিছুতে তুষ্ট হওয়া, যথেষ্ট মনে করা, যা আছে তা ব্যতীত অন্য কিছুর তালাশ না করা। সুতরাং হাদীসের অর্থ হচ্ছে, আল্লাহকে রব্ব হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট, সুতরাং তিনি কেবল তার কাছেই সবকিছু প্রত্যাশা করেন, তার কাছে আবেদন নিবেদন করেন। আর ইসলামেকে দীন হিসাবে পেয়ে সন্তুষ্ট, সুতরাং আর কোনো জীবনব্যবস্থা তার জীবনে টেনে আনে না, ইসলাম প্রদর্শিত পথ ব্যতীত অন্য পথে চলে না। আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবী হিসাবে সন্তুষ্ট হওয়ার অর্থ তাঁর শরী‘আত ব্যতীত অন্য কারও দেয়া বিধানের দিকে তাকায় না। সুতরাং নিঃসন্দেহে এটা বলা যায় যে, যার মাঝে এ গুণ পাওয়া যাবে, তার অন্তরে ঈমানের স্বাদ খাঁটিভাবে প্রবেশ করেছে, তিনি ঈমানের স্বাদ যথাযথভাবে পেয়েছেন।
কাযী ইয়াদ্ব বলেন, তার ঈমান বিশুদ্ধ হয়েছে, তার আত্মা সন্তুষ্ট হয়েছে, তার অভ্যন্তরভাগের সাথে ঈমান যথাযথভাবে আমোদিত হয়েছে, কারণ তার দ্বারা আল্লাহকে রব্ব, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকে নবী, ইসলামকে দীন হিসাবে সন্তোষ প্রকাশ করার অর্থই হচ্ছে, এটা প্রমাণিত হওয়া যে, তার মাঝে সত্যিকারের জ্ঞানের উন্মেষ ঘটেছে, তার দৃষ্টি অত্যন্ত প্রখর হয়েছে, তার অন্তরে সেটা যথাাযথভাবে রন্ধ্রে রন্ধ্রে স্থান করে নিয়েছে। অপর হাদীসেও সেটা বলা হয়েছে যেখানে এসেছে, ‘সে ব্যক্তি ঈমানের স্বাদ পেয়েছে, যার কাছে আল্লাহ ও তাঁর রাসূল অপর সবকিছুর চেয়ে বেশি ভালোবাসার পাত্র হয়েছে….’। বস্তুত মানুষ যখন কোনো কিছুতে সন্তুষ্ট হয়ে যায়, সেটাকে ভালো মনে করে, তখন তার কাছে সে বিষয়টি সহজ হয়ে যায়, তার কোনো কিছুই কষ্টকর হয় না, অনুরূপভাবে ঈমানদার যখন ঈমান অন্তরে প্রবেশ করে, তার কাছে আল্লাহর আনুগত্য করা সহজ হয়ে যায়, তাতে সে স্বাদ অনুভব করে, এ পথের যাবতীয় কষ্ট তার কাছে কিছুই মনে হয় না। যেমনটি আমরা দেখতে পাই সাহাবায়ে কিরামের বেলায়, বিশেষ করে বিলাল রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু, সুমাইয়্যা রাদ্বিয়াল্লাহু্ আনহা, ইয়াসির রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু প্রমুখদের জীবনে।
ইমাম কুরতুবী বলেন, হাদীসে যে তিনটি বিষয়ে সন্তুষ্টচিত্ত হতে বলা হয়েছে তা দু’ভাগে বিভক্ত:
এক. সাধারণ সন্তুষ্টি, আর তা হচ্ছে, আল্লাহ ছাড়া কাউকে রব্ব না মানা, ইসলাম ছাড়া কোনো দীনকে গ্রহণ না করা, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু ‘আলাইহি ওয়াসাল্লামকেই কেবল তার রাসূল হিসাবে গ্রহণ করা। এটুকু সন্তুষ্টি কোনো মুসলিম থেকে বাদ যেতে পারবে না। কারণ এতটুকু সন্তুষ্টি ছাড়া দীনে ইসলামে প্রবেশের কোনো সুযোগ নেই।
দুই. বিশেষ সন্তুষ্টি, আর তা হচ্ছে এমন বিষয়াদি যা নিয়ে আল্লাহর নেককার বান্দারা যারা অন্তর নিয়ে চিন্তা করেন, তারা কথা বলে থাকেন, তা দু’ভাবে বিভক্ত, ১- এগুলোতে যথাযথ সন্তুষ্ট থাকা, ২- এগুলো যিনি পরিচালনা করেন তাঁর প্রতি সর্বদা সন্তুষ্টচিত্ত থাকা। তাঁর কাছে নিজের দীন-হীনতা প্রকাশ করা, তাঁর কাছেই চাওয়া, তাঁর পথে থাকা ও তাঁর নবীর শরীআত মোতাবেক চলা।