অতি দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেয়া আল্পনার বিশ বছর আগে কিশোরী অবস্থায় বিয়ে হয় ওই গ্রামের আরেক অতি দরিদ্র পরিবারের ছেলে সেকেন্দার আলীর সাথে। দিনমজুরি ও মাঝে মাঝে রিক্সা চালিয়ে সংসার চালাতেন সেকেন্দার। এক সময় তারা পাড়ি জমায় শহরে। রংপুরের কোন এক বস্তিতেই সংসার পাতেন। সেখানেই সে কাজটিই করতেন তিনি। অন্যের বাসা বাড়িতে ঝি’র কাজ করতেন স্ত্রী আল্পনা। দুজনের আয়ে সংসার চলে সুখে দু:খে। একে একে তাদের কোল জুড়ে আসে দুই সন্তান। এখন বড় মেয়ে সাথীর বয়স ৮ বছর, ছেলে রাকিবের বয়স ২ বছর। এর মধ্যে সর্বনাশী করোনার ঢেউ লাগে দেশে। এর সংক্রমণ রোধে দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করে সরকার। কাজ হারিয়ে বিপাকে পড়ে তারা। ফিরে আসে এলাকায়।
দীর্ঘস্থায়ী করোনার প্রভাবে ধীরে ধীরে অন্ধকারে ডুবে যেতে থাকে তারা। চিন্তায় অসুখে পড়েন স্বামী সেকেন্দার। ঔষধ-পথ্য না পেয়ে সে অসুখ স্থায়ী বাসা বাধে শরীরে। দুর্বল শরীরে এখন কাজে যেতে পারেন না তিনি। বাধ্য হয়ে সংসারের হাল ধরেন স্ত্রী আল্পনা। তার সামান্য আয়ে কোনমতে দুবেলা দু’মুঠো খাবার জুটলেও একেক দিন একেক জায়গায় খোলা আকাশের নীচে রাত কাটাতে হয় তাদের। তাদের এ দুরবস্থা দেখে ৭ মাস আগে আল্পনার চাচা আজিজার রহমান তার বাড়ীর গোয়াল ঘর ও টয়লেটের
মাঝখানে এক চিলতে জায়গা দেখিয়ে তাকে বলেন, তোরা আপাতত এখানেই থাকতে পারিস ঘর তুলে। কিন্তু ঘর তুলতে দরকার টিন, কাঠ, বাঁশের। কেনার সামর্থ্য নেই, ফলে সেটিও হয়নি। সেখানেই প্লাস্টিক ও ছোড়া কাপড় দিয়ে ঝুপড়ি বানিয়ে মাটিতে খর বিছিয়ে সংসার পাতেন। প্রকৃতির নিয়মে আসা শীতের ঠাণ্ডায় শরীরে কাঁপন ধরে। ঘুম হয় না রাতে। অর্থ সাশ্রয়ে সংসারের খরচ আরো কমিয়ে দেন আল্পনা। কয়দিন জমিয়ে সে টাকায় ৫ফুট দৈর্ঘ্য ও ৪ ফুট প্রস্থের একটি চৌকি কেনে তিনি। এর চারদিকে খুঁটি বেধে সেখানেই টানিয়েছেন প্লাস্টিক ও ছেড়া কাপড়। এখন চৌকিতেই পেতেছেন সংসার।
আল্পনা জানান, স্থানীয় চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে অনেক ঘুরেও তিনি কোন সহযোগিতা পাননি। একদিকে মাথা গোজার ঠাই নাই, অন্য দিকে চারজনের খোরপোষ যোগানো তার জন্য কষ্টসাধ্য হয়ে উঠেছে।
সেন্দোর আলী জানান, অতিকষ্টে এই চৌকিতে দুই সন্তানসহ ৪ জনের রাত কাটাতে হয়। এই দুঃখের কথা লজ্জায় কাউকে জানাতে পারিনি। মেয়ে নূরানী মাদ্রাসার প্রথম শ্রেণীর শিক্ষার্থী সাথী আকতার জানান, রাতে চৌকিতে এভাবে ঘুমাতে তার অনেক কষ্ট হয়।
আজিজার রহমান জানান, আল্পনা ও সেকেন্দার আলী দম্পত্তির কোন জমি নাই। তিনি তাদের থাকার জায়গা দিয়েছেন। কিন্তু ঘর উঠানোর মত কোন সামর্থও তাদের নেই। তাই তারা খোলা আকাশের নীচে এভাবেই সবাস করছে।
স্থানীয় মাইদুল ইমলাম, আবিয়া বেগম, জিয়া মিয়া, সাইদুল ইসলাম জানান,পরিবারটির দুর্দশার কথা স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের জানলেও তারা তাদের জন্য কোন পদক্ষেপ নেয়নি। এমনকি সরকারের বিভিন্ন সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্প থাকলেও বঞ্চিত এই পরিবারটি।
বল্লভের খাষ ইউপি চেয়ারম্যান আকমল হোসেন বলেন, পরিবারটি নিতান্তই অসহায়। তদের বসত ভিটা এমনকি থাকার ঘরও নেই। তারা খোলা আকাশের নিচে পলিথিন মোড়ানো একটি চৌকিতে বসবাস করছেনা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা নুর আহমেদ মাছুম জানান, মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দেয়া প্রকল্পের আওতায় ভূমিহীনদের গৃহনির্মাণ চলমান রয়েছে। আল্পনাকে এই প্রকল্পে তালিকাভুক্ত করে জমিসহ একটি ঘর নির্মাণ করে দেয়া হবে।
ইত্তেফাক/বিএএফ