Tuesday, May 13, 2025
No menu items!

আমাদের মুসলিমউম্মাহ ডট নিউজে পরিবেশিত সংবাদ মূলত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সমাহার। পরিবেশিত সংবাদের সত্যায়ন এই স্বল্প সময়ে পরিসরে সম্ভব নয় বিধায় আমরা সৌজন্যতার সাথে আহরিত সংবাদ সহ পত্রিকার নাম লিপিবদ্ধ করেছি। পরবর্তীতে যদি উক্ত সংবাদ সংশ্লিষ্ট কোন সংশোধন আমরা পাই তবে সত্যতার নিরিখে সংশোধনটা প্রকাশ করবো। সম্পাদক

হোমদৈনন্দিন খবরএয়ার টিকিটের চড়া দামের নেপথ্যে সিন্ডিকেট, তদন্তে যা উঠে এলো

এয়ার টিকিটের চড়া দামের নেপথ্যে সিন্ডিকেট, তদন্তে যা উঠে এলো

বিদেশগামী বাংলাদেশি শ্রমিকদের জিম্মি করে চড়া দামে টিকিট বিক্রির শত কোটি টাকা হাতিয়ে নেওয়ার প্রমাণ মিলেছে সরকারি তদন্তে। ১১টি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্স, তাদের জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ) এবং অন্তত ৩০টি ট্রাভেল এজেন্সি এই সিন্ডিকেটে জড়িত বলে তদন্তে উঠে এসেছে। আর এই সিন্ডিকেটের কেন্দ্রীয় ভূমিকায় রয়েছেন গ্যালাক্সি ইন্টারন্যাশনালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ। তাকে বলা হয়েছে টিকিট সিন্ডিকেটের মূলহোতা। ইতোমধ্যে কমপক্ষে এক ডজন ট্রাভেল এজেন্সিকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়ে তলব করেছে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়।

তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনটি বাংলা ট্রিবিউনের হাতে এসেছে।

বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় (এমওসিএটি) গঠিত ৯ সদস্যের তদন্ত কমিটির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘জেনারেল সেলস এজেন্ট (জিএসএ)  হিসেবে সৌদিয়া, কাতার এয়ারওয়েজ, সালাম এয়ার, জাজিরা এয়ারওয়েজ, ওমান এয়ার এবং থাই এয়ারওয়েজের টিকিটের একক নিয়ন্ত্রণ নেন ওয়ালিদ। তার প্রতিষ্ঠান যাত্রীদের নাম ছাড়াই গ্রুপ বুকিংয়ের মাধ্যমে টিকিট মজুত করে, পরে সেগুলো অনানুষ্ঠানিকভাবে হোয়াটসঅ্যাপের মাধ্যমে দ্বিগুণ বা তিনগুণ দামে বিক্রি করে। এতে করে ৫০ হাজার টিকিট এক থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়।

ট্রাভেল এজেন্সিগুলোর বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা নির্ধারিত ৭ শতাংশ কমিশনের বাইরে বাড়তি দাম নির্ধারণ করে টিকিট বাজার ব্যবস্থাকে কাজে লাগিয়ে মারাত্মকহারে মুনাফা করেছে। এমনকি, কিছু প্রতিষ্ঠান সাব-এজেন্টদের মাধ্যমে ‘ব্লক টিকিট’ বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে চক্র গঠন করে টিকিট সিন্ডিকেট কারসাজি করে যাচ্ছে। এজেন্সিগুলোর মধ্যে রয়েছে- কাজী এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, সিটিকম ইন্টারন্যাশনাল, কিং এয়ার এভিয়েশন, আরবিসি ইন্টারন্যাশনাল, মেগা ইন্টারন্যাশনাল, মাদার লাভ এয়ার ট্রাভেলস, জেএস ট্রাভেলস অ্যান্ড ট্যুরস, সাদিয়া ট্রাভেলস, হাশেম এয়ার ইন্টারন্যাশনাল, নারিয়া ট্রাভেলস, এলহাম করপোরেশন এবং আল গাজী। ইতোমধ্যে সবাইকে কারণ দর্শানোর নোটিশ পাঠিয়ে বেসমারিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ে তলব করা হয়েছে।

এনবিআর সূত্রে জানা গেছে, আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদ ও তার স্ত্রীর ব্যাংক হিসাব বড় অঙ্কের কর ফাঁকির অভিযোগে জব্দ করা হয়েছে। তাদের প্রতিষ্ঠান ইডিএস শুল্ক ফাঁকি দিয়ে বিদেশি মদ বাজারজাত করছে বলেও তদন্তে উঠে এসেছে। ইতোমধ্যে করমুক্ত সুবিধার আড়ালে চালানো এই কর্মকাণ্ডে শুল্ক গোয়েন্দা অধিদফতর থেকে কয়েক দফায় অভিযান চালানো হয়েছে।

এ বিষয়ে কর কমিশনার মো. আব্দুর রকিব বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘যারা কর ফাঁকি দিয়েছে এবং বাজার ব্যবস্থাকে ব্যবহার করেছে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। অনেক ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকার টিকিট দেড় লাখ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা নজিরবিহীন প্রতারণা ও শ্রমিকদের রক্ত শোষণ করা।

আসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্টস অব বাংলাদেশের (আটাব) নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, ‘আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদের উত্থান মূলত বিগত সরকারের ছত্রছায়ায়। তিনি তাদের দোসর ও বড় অর্থদাতা। গত ১৭ বছরে প্রায় ৮টি আন্তর্জাতিক এয়ারলাইন্সের জিএসএ এককভাবে নিয়ন্ত্রণে রেখেছেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার শিল্প ও বিনিয়োগ বিষয়ক উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান তার গোপন অংশীদার এই ওয়ালিদ। এসব ব্যবসার আয়ের একটি অংশ ক্ষমতাসীন দলের বিভিন্ন নেতার পকেটে যায় বলেও তদন্তে উল্লেখ আছে।

এ বিষয়ে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও আহমেদ ইউসুফ ওয়ালিদের পক্ষ থেকে কোনও মন্তব্য পাওয়া যায়নি।

তবে আটাবের মহাসচিব আফসিয়া জান্নাত সালেহ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘জিএসএ-দের কারণে প্রকৃত ট্রাভেল এজেন্সিগুলো টিকিট পেতো না। বরং তারা ঘুষের বিনিময়ে নির্দিষ্ট কিছু সিন্ডিকেটকে সুবিধা দেয়।’

বেসামরিক বিমান চলাচল ও পর্যটন মন্ত্রণালয় বলছে, ‘টিকিট বিক্রির নামে কোনও সিন্ডিকেট বা শোষণ সহ্য করা হবে না। প্রবাসী শ্রমিকদের স্বার্থ রক্ষায় সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ গত জানুয়ারিতে আটাবের অভিযোগের পর ১১ ফেব্রুয়ারি মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যাত্রীর নাম ও পাসপোর্ট অনুলিপি ছাড়া কোনও অগ্রিম কোট টিকিট বুকিং করা যাবে না। এই নির্দেশনার ফলে অনেক মজুত করা টিকিট গ্লোবাল ডিস্ট্রিবিউশন সিস্টেমে (জিডিএস) ফিরিয়ে দিতে বাধ্য হয় এয়ারলাইন্সগুলো। ফলে দাম কমে আসে এবং স্বচ্ছতা ফিরে আসে। বর্তমানে ঢাকা-জেদ্দা রুটে টিকিটের দাম ৪৮-৫০ হাজার টাকায় নেমে এসেছে, যা আগে ছিল প্রায় ১ লাখ ৯ হাজার টাকা। টিকিট খাত সিন্ডিকেট মুক্ত হওয়ায় শ্রমিক ও যাত্রীদের মধ্যেও স্বস্তি ফিরে এসেছে।

সরকারের গঠিত উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত কমিটি তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, শুধু লাভের কথা না ভেবে জনসেবার দিকটিও বিবেচনায় রাখতে হবে। প্রবাসী শ্রমিকদের কথা মাথায় রেখে এয়ারলাইন্সগুলোকে দায়িত্বশীল হতে হবে। তবে এখনও কারসাজির মূল হোতাদের বিরুদ্ধে দৃশ্যমান শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেওয়ায় প্রশ্ন উঠেছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা না নিলে ভবিষ্যতেও এমন সিন্ডিকেট গড়ে উঠবে।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

4 × two =

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য