এখন থেকে কাতারের বিদেশি শ্রমিকেরা চাকরি বদল করতে পারবে। এক্ষেত্রে আগে নিয়োগদাতার কাছ যে এনওসি বা অনাপত্তি পত্র নেওয়ার বাধ্যবাধকতা ছিল তা উঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। এছাড়া একজন বিদেশি শ্রমিকের মাসিক ন্যূনতম বেতন নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০০ রিয়াল বা ২৭৪ ডলার।
বিশেষ করে ২০২২ সালে বিশ্বকাপের আয়োজক ঘোষিত হওয়ার পর থেকে কাতারে বিদেশি শ্রমিকদের বেতন বঞ্চনা ও নির্যাতন নিয়ে ধারাবাহিক সমালোচনা ও উদ্বেগের মুখে শনিবার এ সিদ্ধান্ত নেয় তাদের শ্রম সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়। এ সিদ্ধান্তকে যুগান্তকারী হিসেবে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে আলজাজিরা।
এর আগে কাফালা বা স্পন্সরশীপ ব্যবস্থার অধীনে শ্রমিকেরা চাকরি বদল করার জন্য নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে এনওসি নিতে হতো।
দীর্ঘদিন থেকে শ্রমিক অধিকার বিষয়ক সংগঠনগুলো বলে আসছিল, এই আইনের কারণে সেখানে শ্রমিকেরা তার স্পন্সর প্রতিষ্ঠানে থাকতে বাধ্য হয়। ফলে নিয়োগদাতা প্রতিষ্ঠানের কাছে শ্রমিকেরা মূলত জিম্মি হয়ে পড়ে এবং নির্যাতনের শিকার হয়। নতুন আইনের ফলে এখন থেকে শ্রমিকেরা নোটিস পিরিয়ড দিয়ে চাকরি বদলাতে পারবে।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এখন থেকে প্রথম বছরে চাকরি থেকে অব্যাহতি দিতে প্রতিষ্ঠানকে বা অব্যহতি নেওয়ার ক্ষেত্রে কর্মরত ব্যক্তিকে এক মাসের নোটিস এবং চাকরির বয়স দুই বছরের বেশি হলে দুই মাসের নোটিস দিতে হবে।
মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, যেসব প্রতিষ্ঠানে কর্মীরা ন্যূনতম বেতন পাচ্ছে না, সেসব প্রতিষ্ঠানে সেটি নিশ্চিত করতে সরকার কাজ করবে। নতুন এই আইন গেজেট আকারে প্রকাশের ছমাস পর থেকে কার্যকর হবে।
এ মাসের শুরুতে দেশটিতে বিদেশি শ্রমিকদের বেতন বঞ্চনা নিয়ে বিস্তারিত একটি প্রতিবেদন করে আলজাজিরা। তাতে বেতনের বিলম্ব, শ্রমিকদের বেতন না দেওয়া, এবং এনওসির কারণে সৃষ্ট সমস্যাগুলো তুলে ধরা হয় প্রতিবেদনটিতে।
এ বিষয়ে তখন হিউম্যান রাইটস ওয়াচের পর্যবেক্ষণ ছিল বিদেশি শ্রমিকদের নায্য ও সময়মতো বেতন পাওয়ার অধিকার নিশ্চিত করতে কাতারের সরকারের প্রচেষ্টা অপ্রতুল। নতুন এই আইন নিয়ে এক বিবৃতিতে মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, এ আইনের মাধ্যমে শ্রমিকদের বেতন ও আবাসনের ব্যবস্থা না করার জন্য শাস্তি কঠোর করা হয়েছে।
ন্যূনতম ওই মজুরির পাশাপাশি শ্রমিকদের ৫০০ রিয়াল বা ১৩৭ ডলার থাকার খরচ ও ৩০০ রিয়াল খাওয়া খরচ দিতে হবে প্রতিষ্ঠানকে। এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (আইএলও) বলেছে এই আইন কাতারে শ্রমের অধিকার প্রতিষ্ঠায় এই সংস্কার বিশাল অগ্রগতি।