ক্যাডেট কলেজে থাকতে আমাদের জন্য প্রতিদিন মাগরিবের নামাজ আর শুক্রবারে জুমুয়ার নামাজ মাসজিদে গিয়ে পড়া ছিল ফরজ। আর বাকি নামাজগুলো মাসজিদে গিয়ে পড়া ছিল মাকরূহ এবং ক্ষেত্রবিশেষে হারাম।
ছুটির দিনগুলোতে ফজরের টাইম, আসরের টাইম ফ্রি পাওয়া যেত; ওই দিনগুলোতে মাসজিদে গিয়ে ফজরের নামাজ আর আসরের নামাজ পড়া ছিল মাকরূহ। আর নরমাল দিনগুলোতে ফজরের সময় সকালের ফিজিক্যাল ট্রেইনিং(পিটি) কিংবা প্যারেডের জন্য প্রস্তুতি নিতে হতো, আসরের টাইমে চলতো বাধ্যতামূলক গেইমস টাইম। আর এমনিতে প্রতিদিনই জুহরের টাইমে চলতো লাঞ্চ, এশার টাইমে চলতো রাত্রিকালীন প্রিপারেশন ক্লাস (প্রেপ) কিংবা ডিনার। তাই নরমাল দিনগুলোতে মাগরিব বাদে সব ওয়াক্তের নামাজই মাসজিদে গিয়ে পড়া ছিল হারাম।
মাঝেমধ্যে গেইমস কম্পিটিশন থাকতো, তখন এমনও হতো পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষ হতে হতে মাগরিবের টাইম হয়ে গেছে। সেইদিনগুলোতে আসরের নামাজ মাসজিদে গিয়ে পড়া তো দূরের কথা পুরস্কার বিতরণী এটেন্ড না করে নিজের হাউজে(হলে) এসে পড়াও হারাম হয়ে যেত।
.
তখন খুব সম্ভবত এসএসসি বা এইচএসসি পরীক্ষার্থী। রাতে আমাদের প্রেপ মাফ ছিল, তো এশার নামাজের জামাতের সময় হাউজে ফ্রি ছিলাম। তো ভাবলাম মাসজিদে গিয়ে নামাজটা পড়ে আসি। মাসজিদে যাবার পথে ইসলামিক স্টাডিজ এর স্যারের সাথে দেখা, উনি আটকে দিলেন ও বললেন, মাসজিদে গিয়ে এশার নামাজ পড়ার ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা আছে। কার নিষেধাজ্ঞা? উপর থেকে নিষেধাজ্ঞা। সেদিন ফীল করতে পারলাম ক্যাডেট কলেজ যেই উপরওয়ালার নির্দেশে চলে সেই উপরওয়ালা মহান আল্লাহ্ নন, অন্য কেউ।
.
হাফপ্যান্ট পরা ছেড়েছিলাম সেই বাচ্চাকালে। কিন্তু ক্যাডেট কলেজ আমাকে ক্লাস টুয়েল্ভ (এইচএসসি) পর্যন্ত সকাল আর বিকালে জোর করে হাফপ্যান্ট পরিয়েছে।
একবার আমাদের থেকে আমাদের টিচার কিছু রিভিউ নিচ্ছিলেন যে ক্যাডেট কলেজের একটিভিটিগুলো কেমন ইম্প্রুভ করা যায়, কী কী পজিটিভ চেঞ্জ আনা যায় ইত্যাদি। তো সেদিন আমি কিছু পয়েন্ট লিখেছিলাম, এর মধ্যে একটা ছিল পিটি আর গেইমস টাইমে হাফপ্যান্ট এর পরিবর্তে থ্রি কোয়ার্টার বা ফুলপ্যান্ট করা যেহেতু নাভি থেকে হাটু পর্যন্ত ঢেকে রাখা ফরজ। উনি আমার পয়েন্ট পড়ে হাসছিলেন, উনার হাসি থেকে বুঝতে পেরেছিলাম যে এই পরিবর্তনের আশা করাটা আমার জন্য ছিল বড় রকমের বোকামি।
.
দাড়ি রাখা ছিল হারাম, টাখনুর উপর কাপড় পরা ছিল হারাম, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় অডিটোরিয়ামে সবার সাথে একসাথে মুভি না দেখে হাউজে স্টেয় করা ছিল হারাম।
.
পয়েন্ট বলতে থাকলে তো শেষ হবে না, তাই থামি।
.
ক্যাডেট কলেজে পড়ার কারণে অনেক অনেক সুযোগ সুবিধা পেয়েছি, অনেক ধরণের সুন্দর অভিজ্ঞতার সাক্ষী হয়েছি যেগুলো বাইরের স্কুল কলেজগুলোতে চিন্তাই করা যায় না। তো মাঝেমধ্যে আগে মন চাইতো ক্যাডেট কলেজের প্রশংসা করে একটা ফেসবুক পোস্ট দেই। কিন্তু যখন উপরে উল্লেখ করা সিচুয়েশনগুলোর কথা মনে আসতো তখন মাথা ব্ল্যাংক হয়ে যেত।
.
আমি কাউকে ক্যাডেট কলেজে যেতে নিরুৎসাহিত কেন করি — এর কারণটা আশা করি আপনারা ধরতে পেরেছেন।
ক্যাডেট কলেজের কিছু অভিজ্ঞতা
ফেইসবুক পেইজ থেকে