রাজধানীর ঐতিহ্যবাহী গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার ও বঙ্গবাজার মার্কেট ঘিরে ব্যাপক অনিয়ম-দুর্নীতি ও চাঁদাবাজির অভিযোগ উঠেছে। দীর্ঘ প্রায় ৩৩ বছর ধরে মার্কেট পরিচালনা কমিটির সভাপতি পদে থেকে নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে মোজাম্মেল হক মজুর বিরুদ্ধে। বিশেষ করে বিগত স্বৈরাচার সরকারের দোসর আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আফজালের সাথে মিলেমিশে লুটপাটের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
ভুক্তভোগীরা বলছেন, ৫ আগস্টের পর হাসিনা সরকারের বিদায়ের সাথে সাথে সাবেক এমপি আফজাল বিদায় নিলেও বিএনপির নাম করে এখনো অনিয়ম চাঁদাবাজি চালিয়ে যাচ্ছেন মজু। তার চাঁদাবাজিতে অতিষ্ঠ হয়ে থানায় জিডি করেছেন ভুক্তভোগী ব্যবসায়ীরা। শত শত কোটি টাকার অনিয়মের অভিযোগে আবেদন করা হয়েছে দুদকেও। কিন্তু বিএনপির নাম ব্যবহার করায় এখনো ধরাছোঁয়ার বাইরে রয়েছেন তিনি।
জানা গেছে, দীর্ঘ ৩৩ বছর গুলিস্তান ট্রেড সেন্টার মার্কেটের সভাপতির পদ দখলে রেখেছেন মজু। নির্বাচনের কোনো নিয়ম না মেনে পেশি ও টাকার শক্তি ব্যবহার করে পদে থাকছেন বছরের পর বছর। যে সরকার ক্ষমতায় এসেছে সেই সরকারের লোকদের বিপুল টাকা দিয়ে চালু রাখেছেন তার অবৈধ কর্মকাণ্ড। গত ১৬ বছর কিশোরগঞ্জের আওয়ামী লীগের সাবেক এমপি আফজাল চালিয়েছেন চরম অনিয়ম ও দুর্নীতি। ভবন নির্মাণের নিয়মনীতিকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে মার্কেটগুলোতে ইচ্ছেমতো দোকান তৈরি করে কোটি কোটি টাকার বাণিজ্য করেছেন। ট্রেড সেন্টারের সভাপতি হলেও তার বাহিনী দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করছেন গুলিস্তানের বঙ্গবাজার মার্কেট, গুলিস্তান পুরান বাজার, মহানগর কমপ্লেক্স, এনেস্কো টাওয়ারসহ আশপাশের মার্কেটগুলো।
দুদকে দেয়া এক অভিযোগে দেখা যায়, এনেক্সকো টাওয়ারের নিচ থেকে আটতলা পর্যন্ত ৩০টি দোকান বাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। গুলিস্তান ট্রেড সেন্টারে নামে-বেনামে রয়েছে ৩০টি, ফুলবাড়িয়া জাকের সুপার মার্কেটে ১০টি, নগর প্লাজা মার্কেটে ১৫টি, সিটি প্লাজা মার্কেটে ১০টি এবং বঙ্গবাজার কমপ্লেক্সে নামে-বেনামে রয়েছে তার আরো ২০টি দোকান। অভিযোগ রয়েছে, ঢাকা ট্রেড সেন্টার দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হিসেবে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের তৎকালীন মেয়র সাঈদ খোকনের নাম ভাঙ্গিয়ে অবৈধভাবে ৩৫০টি দোকান নির্মাণ করে বিক্রি করেন তিনি। এরপর ওই অবৈধ দোকানগুলোকে বৈধ করার নামে আট থেকে ১২ লাখ করে প্রায় ২৭ কোটি টাকা চাঁদা তোলেন ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে। এ ছাড়াও বঙ্গবাজার কমপ্লেক্স মার্কেটের গুলিস্তান হকার্স মার্কেট মালিক সমিতির ১৫৬টি দোকান বিক্রি করে হাতিয়ে নেন প্রায় ২০ কোটি টাকা। অভিযোগে আরো বলা হয়, তার বৈধ ও অবৈধ আয়ের ট্যাক্স ফাঁকি দিতে সিটি করপোরেশনের মার্কেটগুলোতে নামমাত্র মূল্যে একের পর এক দোকান ক্রয় করেছেন। ঢাকা, লক্ষ্মীপুরে গড়ে তুলেছেন একাধিক বাড়ি, ফ্ল্যাট, মার্কেটসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান।