বিদ্যুত্ বিভাগ এবং পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি) এবং প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ১ হাজার ৩২০ মেগাওয়াট ক্ষমতার রামপাল বিদ্যুেকন্দ্র থেকে বিদ্যুত্ সরবরাহে সরকার যে কয়টি লাইন নির্মাণের প্রকল্প গ্রহণ করে তার মধ্যে একটি মোংলা-খুলনা ২৩০ কেভি ডাবল সার্কিট ট্রান্সমিশন লাইন। বিদেশি কোম্পানি ইএমসির নেতৃত্বাধীন ইএমসি-টিবিইএ যৌথ উদ্যোগকে (জেভি) এ কাজের জন্য নির্বাচিত করে সরকারি সংস্থা পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি অব বাংলাদেশ (পিজিসিবি)।
এ জন্য ইএমসি-টিবিইএর সঙ্গে বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪৬ কোটি ৯৫ লাখ টাকা এবং মার্কিন মুদ্রায় ৮৫ লাখ ১৬ হাজার মার্কিন ডলার দেওয়ার চুক্তি করে পিজিসিবি। চুক্তির আওতায় সঞ্চালন লাইনটির মালপত্র সরবরাহ, প্রয়োজনীয় খনন ও পরীক্ষণ এবং বাস্তবায়নের কাজ করার কথা ইএমসি এবং টিবিইএর। নকশা ও প্রকৌশলগত কিছু কাজ ছাড়া বাকি সব কাজ তারা স্থানীয় প্রকৌশলী এবং শ্রমিকদের মাধ্যমে সম্পন্ন করে। প্রয়োজনীয় মালামাল ও যন্ত্রপাতিও সংগ্রহ করে স্থানীয় প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে। এ জন্য ছয়টি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তারা চুক্তি করে বা বিভিন্ন কার্যাদেশ দেয়।
স্থানীয় ছয়টি সরবরাহকারী-ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান জানায়, তারা সব মিলিয়ে প্রায় ৩৮ কোটি টাকার কাজ করেছেন। এর মধ্যে ২৬ কোটি টাকার বেশি পরিশোধ করেছে ইএমসি। বাকি রয়েছে ১১ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। বিভিন্নভাবে যোগাযোগ করেও এ টাকা পাচ্ছেন না তারা। প্রকল্পে ইএমসির পার্টনার চীনা কোম্পানি টিবিইএ এবং বাংলাদেশের সরকারি সংস্থা পিজিসিবির সঙ্গে যোগাযোগ করেও সমাধান মেলেনি। এ প্রকল্পে টাওয়ার সরবরাহ করেছে কনফিডেন্স গ্রুপ। তাদেরও বাকি রয়েছে প্রায় ৯ কোটি টাকা।
২০১৮ সালে ইএমসিএ বাংলাদেশ ছেড়ে যাওয়ার পর প্রায় এক বছর বন্ধ থাকে কাজ। গত বছরের নভেম্বরে ফের কাজ শুরু হলেও এ বছরের মার্চে করোনা ভাইরাস সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর কাজে ধীরগতি দেখা দেয়। এ সময় বিল ও বেতন পাওনা ব্যক্তিরা বিভিন্ন জনের কাছে যায়। কিন্তু সমাধান মেলেনি। সর্বশেষ গত মঙ্গলবার বকেয়া বিল-বেতনের দাবিতে নির্মাণকাজ ফের বন্ধ করে দিয়েছেন কর্মীরা। স্থানীয়দের চাপে তারা কাজ করতে পারছেন না। এতে অনিশ্চয়তায় পড়েছে প্রকল্পটি। সর্বশেষ গত অক্টোবরে পিজিসিবির ব্যবস্থাপনা পরিচালক গোলাম কিবরিয়া এ রিপোর্টারকে বলেছিলেন, নতুন করে কোনো বাধা তৈরি না হলে আগামী বছরের ফেব্রুয়ারি নাগাদ কাজটি শেষ হয়ে যাবে।
২০১৫ সালের ডিসেম্বরে পিজিসিবি এবং ইএমসি-টিবিইএর মধ্যে স্বাক্ষরিত চুক্তি অনুযায়ী পরবর্তী ১৮ মাস অর্থাত্ ২০১৭ সালের জুনে সঞ্চালন লাইনটির নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার কথা। কেন্দ্র থেকে খুলনার হরিণটানা সাবস্টেশন পর্যন্ত লাইনটির দৈর্ঘ্য ২৪ কিলোমিটার। দুই দফা সময়সীমা বাড়িয়ে ২০১৮ সালের ডিসেম্বরের মধ্যে কাজ সম্পন্ন করার কথা ছিল। কিন্তু কাজ শেষ না করে ঐ বছরের অক্টোবর মাসে বাংলাদেশ ছেড়ে চলে যায় নির্মাণকাজের নেতৃত্বে থাকা ইএমসি।
ইত্তেফাক/এসআই