Sunday, January 26, 2025
No menu items!

আমাদের মুসলিমউম্মাহ ডট নিউজে পরিবেশিত সংবাদ মূলত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সমাহার। পরিবেশিত সংবাদের সত্যায়ন এই স্বল্প সময়ে পরিসরে সম্ভব নয় বিধায় আমরা সৌজন্যতার সাথে আহরিত সংবাদ সহ পত্রিকার নাম লিপিবদ্ধ করেছি। পরবর্তীতে যদি উক্ত সংবাদ সংশ্লিষ্ট কোন সংশোধন আমরা পাই তবে সত্যতার নিরিখে সংশোধনটা প্রকাশ করবো। সম্পাদক

হোমদৈনন্দিন খবরগ্রেফতার আতঙ্কে ইরাক প্রবাসীরা

গ্রেফতার আতঙ্কে ইরাক প্রবাসীরা

সরকারের সব নিয়মকানুন মেনে ইরাকে গিয়ে অবৈধ হয়ে পড়েছেন হাজার হাজার প্রবাসী বাংলাদেশী। অবৈধ অভিবাসী ও রিফিউজিদের গ্রেফতারে ইরাক সরকার জোরালো অভিযান পরিচালনা করছে গত নভেম্বর থেকে। প্রবাসী শ্রমিকদের কর্মস্থল ও আবাসিক এলাকায় দিনে রাতে অভিযান চলছে। পুলিশি অভিযানে গ্রেফতার হচ্ছেন শত শত বাংলাদেশী। এই অবস্থায় চরম আতঙ্কে রয়েছেন প্রবাসীরা। গ্রেফতার হয়ে জরিমানা দিয়ে দেশে ফিরে আসা শ্রমিকরা বলছেন, অবৈধ হওয়ার কারণে নিয়োগকর্তারা কোনো দায়িত্ব নিচ্ছেন না। জরিমানা ও বিমানের টিকিট বাবদ ৮০০-১০০০ ডলার দিয়ে দেশে ফিরতে পারছেন। কিন্তু যারা দিতে পারছেন না তাদের দিনের পর দিন ইরাকের ডিপোর্টেশন সেন্টারে মানবেতর জীবন যাপন করতে হচ্ছে। মারধর তথা শারীরিক নির্যাতনেরও শিকার হতে হচ্ছে।

ইরাকে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাস শ্রম উইংয়ের কাউন্সিলর মোহাম্মদ রেজাউল কবীর ইরাকের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বরাত দিয়ে বলেন, এমনিতেই দেশটিতে ২৫ লাখের মতো রিফিউজি রয়েছে। তার ওপর সম্প্রতি আফ্রিকার আরো বিভিন্ন দেশ থেকে লাখ লাখ রিফিউজি ঢুকেছে। অর্থনৈতিক মন্দা, তেলের দাম কমে যাওয়ায় ইরাকে খুব সমস্যা হচ্ছে। আর পুরো মধ্যপ্রাচ্যেই জনমত গড়ে উঠেছে বিদেশী শ্রমিকদের জন্য তাদের নিজ দেশের মানুষ চাকরি পাচ্ছে না। এই ধরনের চাপের মুখে ইরাক সরকার অভিযান চালাচ্ছে। তবে বাংলাদেশী আনডকুমেন্টেডদের বিষয়ে ইরাক সরকার ইতিবাচক। আমরা চেষ্টা করছি তারা যাতে বৈধতা পায়। কারণ তারাও বাংলাদেশীদের ভালোবাসে।

গত প্রায় দুই বছর ধরে ইরাকের শ্রমবাজার বন্ধ। এর আগে যারা গেছেন তারা প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের অধীনস্থ সংস্থা বিএমইটির ছাড়পত্র (স্মার্ট কার্ড) নিয়েই গেছেন। বৈধ ভিসায় ইরাকে যাওয়ার ২ মাসের মধ্যে ইকামা করতে হয়। কিন্তু রিক্রুটিং এজেন্সিগুলো যাদের পাঠিয়েছে সংশ্লিষ্ট নিয়োগকর্তা বা কোম্পানি তাদের ইকামা করে দেয়নি। ফলে বৈধভাবে গিয়েও তারা অবৈধ হয়ে পড়েছেন। প্রায় ৮ বছর ধরে ইরাক প্রবাসী সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়ার জাকির হোসেন। তিনি বলেন, ২০১৩ সালে ইরাকে যাওয়ার পর ৩ মাসের একটা ভিসা লাগানো হয় পাসপোর্টে। বলা হয়, এরপর ইকামা লাগানো হবে; কিন্তু তা আর লাগানো হয়নি। অনেক টাকা খরচ করে ইরাকে এসেছি, তাই অবৈধ হওয়ার পরেও থেকে যেতে বাধ্য হই। সেই থেকে আছি। একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করি। সেখানেই থাকি। এত দিন তেমন কোনো সমস্যা হয়নি, কিন্তু গত ডিসেম্বর থেকে পুলিশ যখন তখন অভিযান চালাচ্ছে গ্রেফতার আতঙ্কের মধ্যেই আমাদের কাজ করতে হচ্ছে।

২০১৮ সালে বৈধ প্রক্রিয়ায় ইরাক যান মুন্সীগঞ্জের মো: আসাদুল ইসলাম। ১ বছরের মাল্টিপল ভিসায় প্রায় চার লাখ টাকা খরচ করে যান তিনি। আসাদুল বলেন, এরপর আর ইকামার মেয়াদ বাড়ায়নি। দেশে ফিরে যাবো; কিন্তু যে টাকা খরচ করে এসেছি তা-ও তো তুলতে পারিনি। তাই অবৈধভাবেই থেকে যাই। তিনি বলেন, দিনে ১২-১৩ ঘণ্টা ডিউটি। বেতন পাই ৪০০ ডলার। আমার মতো অনেকেই এভাবে ইরাকে এসে অবৈধ হয়ে পড়েছে। আরো কথা হয় ইরাক প্রবাসী জহির খান, সাইফুল আলম, মাকসুদুর রহমান, সাইফুল ইসলাম, শহিদুল ইসলাম, সেরনিয়াবাত সজিব, মাসুদ রানা শাহীনের সাথে।

তারা বলছেন, বৈধভাবে ইরাকে গিয়ে হাজার হাজার প্রবাসী নানা কারণে অবৈধ হয়ে পড়েছেন। সবাই এখন গ্রেফতার আতঙ্কে আছেন। কূটনৈতিক তৎপরতার মাধ্যমে পুলিশি অভিযান বন্ধ এবং তাদের বৈধতা দিতে ইরাক সরকারের সাথে যেন আলোচনা করা হয়, এ জন্য তারা প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্টদের সহযোগিতা কামনা করেন।

সম্প্রতি গ্রেফতার হয়ে দেশে ফিরেছেন ফেনীর এমদাদুল। ২০১৩ সাল থেকে ইরাক প্রবাসী ছিলেন তিনি। তার সাথে গত ৮ জানুয়ারি একই ফ্লাইটে জেল খেটে দেশে ফিরেছেন আরো ১০ জন। তিনি জানান, ইরাকে যাওয়ার পর তাদের ইকামা দেয়া হয়নি। ফলে শুরু থেকেই অবৈধ হয়ে দেশটিতে কাজ করতে হয় তাদের। গত ৩১ ডিসেম্বর কর্মস্থলে অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় এমদাদসহ ছয়জনকে। পরে মালিক পাঁচ হাজার ডলার জরিমানা দেয়ার পর জেল থেকে মুক্তি দিয়ে তাদের দেশে ফেরত পাঠানো হয়। এমদাদ বলেন, জেলখানায় ৮ দিন ছিলাম। সেখানে অসংখ্য প্রবাসী রয়েছেন। রাতে গায়ের সাথে গা লাগিয়ে ঘুমিয়েছি। যারা জরিমানা দিতে পারছে না তাদের পুলিশ বেল্ট খুলে পেটাচ্ছে। বলছে দ্রুত জরিমানার ব্যবস্থা করো, দেশে যাও। কিন্তু অনেকেই তা পারছে না। কারণ, যেহেতু অবৈধ তাই মালিকরাও খোঁজ নেয় না। অনেকে বাড়ি থেকে টাকা নিয়ে দেশে ফিরছেন। এই সময়ে বাংলাদেশ দূতাবাসের কেউই তাদের খোঁজখবর নেয়নি বলে অভিযোগ তাদের।
লাশ আনতে পারছেন না

সরকারের সব নিয়ম মেনে জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরো’র (বিএমইটি) স¥ার্ট কার্ড নিয়ে ইরাকে গিয়েছিলেন কক্সবাজারের উখিয়ার আব্দুল জব্বার। প্রবাস জীবনের ২ বছরের মাথায় গত বছরের ১৬ জুলাই তিনি মারা যান। পারিবারিক অসচ্ছলতার কথা উল্লেখ করে আব্দুল জব্বারের লাশ সরকারি খরচে দেশে আনার জন্য ওয়েজ আর্নার্স কল্যাণ বোর্ডে আবেদন করেছেন তার স্ত্রী রাবেয়া বেগম। একই সাথে মৃত্যুজনিত ক্ষতিপূরণসহ অন্যান্য পাওনা আদায়ের জন্য বলা হয় আবেদনে। তার লাশ বাগদাদের কারেটা সিটি হাসপাতালে আছে বলেও গত বছরের সেপ্টেম্বরে কল্যাণ বোর্ডে করা আবেদনে উল্লেখ করা হয়।

এ বিষয়ে ইরাকে নিযুক্ত বাংলাদেশ দূতাবাসের শ্রম কাউন্সিলর মোহাম্মদ রেজাউল কবীর বলেন, ইরাকে প্রবাসীদের ৯টা লাশ ছিল। বর্তমানে ৮টা রয়েছে। সরকারি টাকায় তো সব লাশ দেশে পাঠানো সম্ভব হয় না। কোনো কোনো ক্ষেত্রে কোম্পানির মালিক টাকা দেয়, আবার দেয় না। তখন বিভিন্ন দানশীল প্রতিষ্ঠানের দ্বারস্থ হই। পরিবারের পক্ষ থেকেও অনেক সময় খরচ বহন করা হয়।

রেজাউল কবীর নয়া দিগন্তকে বলেন, গত দুই বছর ধরে ইরাকের শ্রমবাজার বন্ধ। এর আগে যারা এসেছে তাদের ভিসা বৈধ, আসার প্রক্রিয়া বৈধ ছিল। যেভাবেই তারা আসুক (ইরাকে) দুই মাসের মধ্যে ইকামা করতে হয়। এর মধ্যে না হলেই অবৈধ হয়ে পড়েন। এ ক্ষেত্রে আমাদের কর্মীদের অসতর্কতা এবং সংশ্লিষ্ট নিয়োগ কর্তার গাফিলতি বা অনিচ্ছার কারণে ইকামা হয় না। কোম্পানির মালিক বা নিয়োগকর্তা ইকামা করে দিতে আগ্রহী হন না, কারণ ইকামা করতে টাকা লাগে। যেহেতু অর্থনৈতিক অবস্থা ভালো নয় তাই তারা কর্মীদের সময়মতো করে দেন না। আবার যারা বৈধ ছিলেন, গত দেড় বছরে তাদের ইকামা রিনিউ না হওয়ায় তারাও অবৈধ হয়ে পড়েছেন।
তিনি বলেন, বৈধ-অবৈধ মিলে ইরাকে দেড় লাখের মতো বাংলাদেশী রয়েছে। যে সমস্যা চলছে তা অচিরেই সমাধান হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন রেজাউল কবীর। যারা অবৈধ হয়ে জেলে যাচ্ছেন তাদের খোঁজখবর নেয়া হয় নাÑ সংশ্লিষ্টদের এমন অভিযোগ সত্য নয় বলে জানান শ্রম কাউন্সিলর ।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

5 × 4 =

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য