চট্টগ্রাম ও কক্সবাজার উপকূলীয় অঞ্চলের ৩৪ জন জলদস্যু অস্ত্র জমা দিয়ে আত্মসমর্পণ করেছেন।
বৃহস্পতিবার সকালে চট্টগ্রামের বাঁশখালী আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে অনুষ্ঠিত সভায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের হাতে অস্ত্র তুলে দিয়ে তারা আত্মসমর্পণ করেন। আত্মসমর্পণের সময় নিজেদের ব্যবহৃত দেশি-বিদেশি ৯০টি অস্ত্র ও ২ হাজার ৫৬ রাউন্ড গুলি ও কার্তুজ জমা দেন। এ সময় জলদস্যুরা অতীত কর্মকাণ্ডের জন্য ক্ষমা চেয়ে সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, ‘উপকূলীয় এলাকায় কোনো জলদস্যু বা বনদস্যুকে আস্তানা গড়তে দেওয়া হবে না। র্যাব, পুলিশ, কোস্টগার্ড রয়েছে, প্রয়োজনে বিজিবি রয়েছে। আপনারা পালিয়ে বেড়াতে পারবেন, কিন্তু আস্তানা গড়তে পারবেন না। আত্মসমর্পণ না করলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর মুখোমুখি হলে কি পরিস্থিতি হবে, তা আপনারাই জানেন। যে যেখানে আছেন, তাদেরকে খুঁজে বের করা হবে। তাই কঠোর পরিণতির আগে আত্মসমর্পণ করে ফেলুন। যারা আত্মসমর্পণ করেছেন তাদেরকে আন্তরিক ধন্যবাদ। আমরা উপকূলে সকল দস্যুবাহিনী দমন করবোই।’
তিনি বলেন, ‘যারা আত্মসমর্পণ করেননি তারা ভাববেন না, কিছু হবে না। আপনারা যা যা করছেন, সবই আমরা দেখছি, কোথাও পালিয়ে থাকতে পারবেন না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এখন আগের চেয়ে অনেক দক্ষতা ও সক্ষমতায় পরিপূর্ণ। এক সময় উপকূলের লোকজন এসব জলদস্যুদের কাছে জিম্মি ছিলো। ধার করে হলেও দস্যুদের দাবিকৃত টাকা পরিশোধ করতে হতো। জেলেদের নিয়ে আটকে রেখে মুক্তিপণ আদায় করা হতো। ২০১৬ সালের ৩১ মে সুন্দরবনের কুখ্যাত মাস্টার বাহিনী আত্মসমর্পণের মাধ্যমে দস্যুদের আত্মসমর্পণ প্রক্রিয়া শুরু হয়। এখন পর্যন্ত বিভিন্ন উপকূলের ৩২৮ জন জলদস্যু আত্মসমর্পণ করেছে। এখন আমাদের উপকূলকে দস্যুমুক্ত বলছি না, তবে সংখ্যা অনেক কমে এসেছে।’
পুলিশ মহাপরিদর্শক (আইজিপি) ড. বেনজীর আহমেদ বলেন, ‘শেখ হাসিনার বাংলদেশে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের দেশে কোন চোর ডাকাত থাকতে পারে না। যারা আত্মসমর্পণ করেছে, তারা যেন সমাজের মূলধারায় ফিরে আসতে পারে সেজন্য সবাইকে সহযোগিতা করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কিছু কুলাঙ্গার দেশবিরোধী কুৎসা রটিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করছে। আপনারা কেউ গুজবে কান দিবেন না। যে কোনো তথ্য যাচাইয়ে ৯৯৯ এ ফোন দিন, আমরা আপনাদের পাশে আছি।’ এ সময় বক্তব্য রাখেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সভাপতি শামসুল হক টুকু, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জননিরাপত্তা বিভাগের সিনিয়র সচিব মোস্তফা কামাল, র্যাবের অতিরিক্ত মহাপরিচালক কর্নেল তোফায়েল মোস্তফা সারওয়ার প্রমুখ।
র্যাব জানায়, যারা আত্মসমর্পন করেছে তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে র্যাবের পক্ষ থেকে সার্বিক সহায়তা করা হবে। যারা এখনো আত্মসমর্পণ করেননি তাদের আইনের আওতায় আনতে র্যাবের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত থাকবে। হত্যা ও ধর্ষণ মামলা ছাড়া এসব জলদস্যুদের বিরুদ্ধে চলমান বিভিন্ন মামলা আইনি প্রক্রিয়ায় প্রত্যাহার করা হবে। আত্মসমর্পণকারী জলদস্যুরা হলেন, বাইশ্যা বাহিনীর আব্দুল হাকিম ওরফে বাইশ্যা ডাকাত (৫২), আহামদ উল্লাহ (৪২) ও আব্দুল গফুর ওরফে গফুর (৪৭), ফুতুক বাহিনীর দিদারুল ইসলাম ওরফে পুতিক্যা (৩২), জসিম উদ্দিন (২৬) ও মিজানুর রহমান (২৩), খলিল বাহিনীর আব্দুর রহিম (৬৪) ও মাহমুদ আলী প্রকাশ ভেট্টা।
বাদল বাহিনীর ওবায়দুল্লাহ (৩৬), রমিজ বাহিনীর ইউনুছ (৫৬), দিদার বাহিনীর তৌহিদ ইসলাম (৩৪), বাদশা বাহিনীর নিজাম উদ্দিন ভান্ডারী, ইউনুস (৫১), কামাল উদ্দিন (৪৭), কাদের বাহিনীর আব্দু শুক্কুর (২৮), জিয়া বাহিনীর সাহাদাত হোসেন দোয়েল (৪১), পারভেজ (৩৩), নাছির বাহিনীর নাছির (৫১), আমির হোসেন (৪৮), সাকের (৪০)। কালাবদা বাহিনীর সেলিম বাদশা (৩৪), আব্দুল গফুর ওরফে গফুর, আবু বক্কর সিদ্দিক (৩১), মামুন মিয়া (২৭), আবু বক্কর সিদ্দিক ওরফে বাইশ্যা (২৯), বেলাল মিয়া (৩০), আব্দুল হাকিম ওরফে বাককু (৩৫), রশিদ মিয়া (৩৬), ইসমাইল (২৪), শাবউদ্দিন ওরফে টুন্নু (৩২), ফেরদৌস (৫২), রেজাউল করিম (৪০), ইউনুচ (৪২) ও মন্জুর আলম (৪২)।
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন