পোস্টারে আরো বলা হয়, উইঘুরদের উপর আরোপিত চীন সরকারের বিধি নিষেধ তুলে নিতে হবে এবং তাদের বন্দী শিবিরগুলো থেকে মুক্তি দিতে হবে।
চীনে উইঘুরদের দমন পীড়নের জন্য প্রতিবাদের ঘটনা দেশে এটিই প্রথম নয়। চলতি বছরের আগস্ট মাসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে চীনের উইঘুর মুসলিম হত্যা ও নির্যাতন বন্ধের দাবিতে মানববন্ধন, প্রতিবাদ সমাবেশ ও সচিত্র প্রদর্শনী কর্মসূচি পালন করা হয়। এ ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে বিগত বছরগুলোতে উইঘুরদের ওপর নির্যাতন বন্ধের দাবি জানিয়ে মানববন্ধন করা হয়েছে।
শুধু দেশে নয়, উইঘুরদের বিরুদ্ধে চালানো চীনের এই দমন নীতির সমালোচনা হচ্ছে বিশ্ব জুড়ে। চলতি মাসে উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীন সরকারের নির্মম অত্যাচারের কড়া নিন্দা জানিয়েছেন ১৩০ জনের বেশি ব্রিটিশ আইনপ্রণেতা। সেইসঙ্গে বেইজিংকে, ‘জাতিগত নিধনে’র জন্য অভিযুক্ত করেন তারা।
এই বছরই উইঘুর মুসলিমদের ওপর নির্যাতন করার অভিযোগে চীনের বিরুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি বিল পাস হয়। মার্কিন কংগ্রেসে পাস হওয়ার পর ১৭ জুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ওই বিলে সই করেন।
চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের ওপর নির্মম নির্যাতন চালানো হচ্ছে এমন অভিযোগ করে এর তীব্র নিন্দা জানায় তুরস্ক। দেশটি চীনের উইঘুর সম্প্রদায়ের ওপর এ নির্যাতনকে ‘মানবতার জন্য লজ্জাজনক’ বলে আখ্যা দিয়ে জিনজিয়াং প্রদেশে মুসলিমদের আটকে রাখা বন্দীশিবির বন্ধ করে দেয়ার আহ্বান জানায়।
উইঘুরদের ওপর চীন বিশেষ নজরদারী রাখছে এমন তথ্য দিয়ে বিবিসির প্রতিবেদনে বলা হয়, চীনে শিনজিয়াং প্রদেশের উইঘুর মুসলিম জনগোষ্ঠীর লাখ লাখ লোকের উপাত্ত সংগ্রহ করতে একটি মোবাইল অ্যাপ ব্যবহার করছে চীনা পুলিশ। শিনজিয়াংয়ে ১০ লাখের বেশি উইঘুর মুসলিমকে ‘স্বেচ্ছাসেবী শিক্ষা কেন্দ্রের’ নাম করে বিভিন্ন বন্দি শিবিরে আটকে রেখেছে চীন। সেখানে মুসলিমদের ওপর নির্মম অত্যাচার ও তাদের ধর্মীয় বিশ্বাসের ওপর আঘাত করা হচ্ছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমের খবরে বলা হয়েছে।
চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে গত তিন বছরে মুসলিম সম্প্রদায়ের ৩১টি মসজিদ পুরোপুরি ধ্বংস করা হয়েছে। এছাড়া ২০১৬ সালের পর থেকে ওই অঞ্চলের বেশ কয়েকটি ইসলামি ধর্মীয় স্থাপনাকে আংশিকভাবেও ধ্বংস করা হয়েছে। দ্য গার্ডিয়ান এবং ওপেন সোর্স সাংবাদিকতার ওয়েবসাইট বেলিংক্যাটের তদন্তে এমন তথ্যই উঠে এসেছে। স্যাটালাইট ভিউ থেকে তারা দেখতে পান এই চিত্র।
এ ছাড়াও সেখানকার এক অধিবাসী অভিযোগে জানায়, চীনের জিনজিয়াং প্রদেশে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম নারীদের জোরপূর্বক গর্ভপাত ঘটানো হচ্ছে। সেইসঙ্গে সদ্যজাত শিশুকেও মেরে ফেলা হচ্ছে।
চীনের জিনজিয়াং প্রদেশটিতে সংখ্যালঘু উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের বসবাস। উইঘুর মুসলিম সম্প্রদায়ের ২০ লাখেরও বেশি মানুষকে সেখানে এক ধরনের বন্দীশিবিরে আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ করে আসছে বিভিন্ন দেশে পালিয়ে যাওয়া উইঘুর সম্প্রদায়ের মানুষ। চীন মুসলিমদের ওপর গত কয়েক বছর ধরে নানা অত্যাচার করছে বলে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় ও পশ্চিমা অনেক দেশ অভিযোগ তুলেছে। গত বছর জাতিসংঘ জানায়, উইঘুরের ১০ লাখ মুসলিম মানুষকে আটক রেখেছে চীন। তবে এসব অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করে আসছে চীন।
আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমসহ বেশ কিছু দেশের আইন প্রণেতারা চীনের এই কার্যক্রমের সমালোচনা করে আসলেও চীনা কমিউনিস্ট পার্টির কর্মকর্তারা দাবি করেন, ‘বিশ্বের সবচেয়ে সুখী মুসলমান হলেন এই উইঘুর গোষ্ঠীরা।’