রিমান্ডে আসামিদের অপ্রয়োজনীয় হয়রানি বন্ধে আইন সংস্কারের প্রস্তাব দেয়া হবে। আমাদের লক্ষ্য জনবান্ধব পুলিশ কীভাবে তৈরি হবে তা নিশ্চিত করা। পুলিশের নিজেদের সমস্যার কথা শুনছি, একইভাবে পুলিশ নিয়ে জনগণের যে মতামত রয়েছে তা-ও শুনছি। আইন-কানুন বদলের প্রস্তাবও আসছে। তবে সংস্কারকাজ অনেক চ্যালেঞ্জিং বলে জানিয়েছেন পুলিশ প্রশাসনে সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন। গত এক মাসে পুলিশ সংস্কার কমিশনের কাজের অগ্রগতি নিয়ে মানবজমিন-এর সঙ্গে বিস্তারিত কথা বলেছেন তিনি। সফর রাজ হোসেন বলেন, পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রথম ড্রাফ্ট আমাদের ১০ সদস্যের সমন্বয়ে প্রায় প্রস্তুত করা হয়েছে। পরবর্তী মিটিংয়ে বসে আমরা প্রতিটি বিষয় ধরে আলোচনা করবো। গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আমরা ইতিমধ্যে আলোচনা করেছি। সেগুলোর ড্রাফ্ট করা হয়েছে। পরবর্তীতে সেখান থেকে কিছু বিষয় যুক্ত হবে। কিছু বাদ যাবে। প্রথম ড্রাফ্ট এর কাজ শেষে আমরা স্টেক হোল্ডারদের সঙ্গে কথা বলবো। এগুলোর মধ্যে পুলিশ এবং হিউম্যান রাইটস এর বিষয় রয়েছে। দেশের সাধারণ মানুষের ওপর যে আইন প্রয়োগ করা হয় তার সংশোধনে আমরা কাজ করছি। বিষয়টি যদিও অনেক সহজ না। অনেক পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। এটা হলো ফৌজদারি কার্যবিধিতে দু’টি আইন আছে। প্রথমটি হলো, সেকশন ৫৪ ধারায় যে কাউকে কোনো ওয়ারেন্ট ছাড়া আটক করা। এবং সেকশন ১৬৭ ধারায় বলা আছে কোর্টের আদেশে রিমান্ডে নেয়া। এক্ষেত্রে ৫৪ ধারায় অনেক শর্ত দেয়া আছে যেগুলো পুলিশকে মানতে হবে। রিমান্ডের ক্ষেত্রে পুলিশ এবং ম্যাজিস্ট্রেটকে যে নির্দেশনা দেয়া আছে সেগুলো মানতে হবে। এ বিষয়ে নিয়ে আমরা আইন মন্ত্রণালয়সহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে কথা বলেছি। এটা অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কোনো কারণে যদি মনে হয় এটা সংস্কার করা দরকার। এটা নিশ্চিতকরণে আমাদের যা যা দরকার চেষ্টা করবো এবং যেটা করলে ভালো হয় সেটা করবো। এ বিষয়ে আইন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে আমাদের বৈঠক হয়েছে।
এছাড়া কোন কোন ক্ষেত্রে রিমান্ড দেয়া হবে এবং তাদের সঙ্গে কী ধরনের ব্যবহার করা হবে এ বিষয়ে উচ্চ আদালতের রায় থাকা সত্ত্বেও তা মানা হচ্ছে না। এই বিষয়টিতে আমরা গুরুত্ব দিতে চাই। এক্ষেত্রে ভিক্টিম এর সঙ্গে পুলিশ ও ম্যাজিস্ট্রেটের ওপর পৃথক কিছু নির্দেশনা আছে। তা কীভাবে কতটুকু প্রয়োগ হবে সেটাও সংযুক্ত করা হবে। এতে করে সাধারণ মানুষ সুফল ভোগ করবে। বিষয়টি বিভিন্ন মন্ত্রণালয় হয়ে প্রধান উপদেষ্টার কাছে উপস্থাপন করা হবে। এটার জন্য বিগত সরকারের আমলে উচ্চ আদালত একটি নির্দেশনা দিয়েছেন। আমাদের মূল কাজ হবে সিআরপিসি নিয়ে। এটা নিয়ে আমরা ব্যাপক প্রচারণা চালাবো। আশা করছি সরকার এতে সম্মতি দেবে। বিগত সরকার এই আইনের বাস্তবায়ন চাননি। তিনি বলেন, পুলিশ নিয়ে শতাধিক আইন আছে। আমরা শুধুমাত্র প্রায়োরিটি লিস্টে থাকা বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করবো। সরকারের যে লক্ষ্য এবং উদ্দেশ্য আছে সেটা নিয়েই কাজ করা আমাদের একমাত্র কাজ। তিন মাস টার্গেট করে আমাদের কর্মপরিকল্পনা করা আছে। এক্ষেত্রে নির্ধারিত সময়ের মধ্যে আমাদের কাজ সম্পন্ন করার পরিকল্পনা রয়েছে। জনবান্ধব পুলিশ, রাষ্ট্রীয় নাগরিকের অনেক আগেই যেটা পাওয়ার কথা সেটা হয়তো তারা পায়নি। জনবান্ধব পুলিশ বলতে তারা সাধারণ নাগরিকের সঙ্গে কী ধরনের আচরণ করবেন। সাধারণ মানুষের কতটা কাছে যেতে পারবেন এটা যেমন রয়েছে একইভাবে পুলিশের বেতন কাঠামো এক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। যেটা প্রয়োজনের তুলনায় খুবই কম। বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের মতো আকর্ষণীয় বেতনকাঠামো নেই তাদের। ফলে তাদের জীবনযাত্রার মান বহুলাংশে ব্যাহত হচ্ছে এবং এটা অন্য সাধারণ মানুষের মতো তাদের জীবনযাত্রার মানের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট স্টেকহোল্ডারদের সঙ্গে আমরা কথা বলবো। এটাও সংস্কার পরিকল্পনায় রয়েছে। তবে সরকার কতটা বাস্তবায়ন করবে- সেটা তাদের ওপর নির্ভর করে। রাজনৈতিক কারণে পুলিশ এবং সাধারণ মানুষের মধ্যে এক ধরনের দূরত্ব তৈরি হয়েছে। এটা নিয়ে গণমাধ্যমসহ সুশীল সমাজ থেকে আমাদের কাছে যদি প্রস্তাবনা আসে তাহলে এ বিষয়ে আমরা কাজ করবো। আমাদের একটিই লক্ষ্য জনবান্ধব এবং নিরপেক্ষ একটি পুলিশ বাহিনী থাকবে। জনসাধারণ তাদের কাছ থেকে সেবা পাবে। এটাই আমাদের মূল টার্গেট। এ বিষয়ে আমরা অংশীজনদের পরামর্শ নেয়ার পাশাপাশি তা বাস্তবায়নে কাজ করছি বলে জানিয়েছেন এই কর্মকর্তা।
পুলিশ সংস্কার কমিশনের প্রধান সফর রাজ হোসেন আরও বলেন, আমাদের লক্ষ্য জনবান্ধব পুলিশ কীভাবে তৈরি হবে তা নিশ্চিত করা। আমরা যেমন পুলিশের নিজেদের সমস্যার কথা শুনছি, একইভাবে পুলিশ নিয়ে জনগণের যে মতামত রয়েছে তাও শুনছি। সবার বক্তব্য লিপিবদ্ধ করার কাজ চলছে। আইন-কানুন বদলের প্রস্তাবও আসছে। তবে সংস্কারকাজ অনেক চ্যালেঞ্জিং। সবার মতামত নিয়ে সংস্কার প্রস্তাব দেয়া হবে। এদিকে কেমন পুলিশ চাই’- জানতে চেয়ে গত রোববার একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করেছে ‘পুলিশ সংস্কার কমিশন’। বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার মুখোমুখি অবস্থানের কারণে তোপের মুখে থাকা পুলিশকে ‘পাল্টে ফেলতে’- জনসাধারণের কাছে তথ্য চেয়ে বিজ্ঞপ্তি দিয়েছে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের গঠিত এই কমিশন। মতামত প্রদানকারীর পরিচয় ‘গোপন রেখে’ প্রাপ্ত তথ্য শুধুমাত্র সংস্কার কাজের সহায়তায় ব্যবহৃত হবে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে আশ্বস্ত করা হয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কমিশনের প্রধান বলেন, ইতিমধ্যে এ বিষয়ে আমরা ব্যাপক সাড়া পাচ্ছি। পাশাপাশি পত্রিকায় এ সংক্রান্ত সংবাদের কাটিং কপি ও সুশীল সমাজের পরামর্শ প্রত্যাশা করছি। এতে করে আমাদের লক্ষ্য বাস্তবায়নে অনেকটাই সফল হবো বলে আশা করি।