জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের ড্রেসকোড ও কারণ দর্শানোর নোটিশ

0
297
প্রতীকী ছবি

মর্মাহত হয়ে তাড়াহুড়া করে লিখতে হচ্ছে। বিদেশী পরাশক্তি গুলো গায়ে পড়ে মুসলমানদের উপর ঝেঁকে বসেছে। পৃথিবী উম্মাতাল প্রতিবাদে। আমরাও পিছে নেই। যদিও সরকারের কর্ণকুহূরে কিছুই ডুকছে না। অথচ আমরা আবেগে আপ্লুত হয়ে প্রধান মন্ত্রীকে কেউবা বলছেন, “কওমী জননী”, [i]একজন সংসদ সদস্য আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন আরও একটু আগবেড়ে বলেছেন, “হজরত শেখ হাসিনা, তোমাকে অভিবাদন”[ii] প্রেক্ষিতটা যখন এ রকম ঠিক তখনই জনস্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের পরিচালক মুহাম্মদ আবদুর রহিম কে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ এবং স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে কারন দর্শানোর নোটিস দিয়েছে কেন তিনি পুরুষদের টাকনুর উপর ও নারীদের হিজাবসহ টাকনুর নিচে পোশাক পরার নির্দেশ দিলেন।

তার অপরাধটা কি? হায়রে মুসলমান!!, আল্লাহ্‌র আদেশের বিরুদ্ধেও আমরা কারন কারন দর্শানোর নোটিস দিতে একটুও ভয় পাই না, প্রকারন্তরে এই নোটিস কি আল্লাহ্‌কে দেওয়া হয় নাই? হাঁ, আমরা সব পারি, আল্লাহকেও নোটিস দিতে পারি। মুসলমান শুধু বাপ দাদাদের বদৌলতে হয়েছি।  কি ভয়ংকর কথা, যেই উচ্চ পর্যায়ের কর্তা ব্যক্তি এই নির্দেশ দিয়েছেন, তিনি কি আদতেই মুসলিম কিনা, ভাববার অবকাশ আছে। আল্লাহ্‌ বলেন, যে কেউ আল্লাহ ও রসূলের অবাধ্যতা করে এবং তার সীমা অতিক্রম করে তিনি তাকে আগুনে প্রবেশ করাবেন। সে সেখানে চিরকাল থাকবে। তার জন্যে রয়েছে অপমানজনক শাস্তি। (সুরা নিসা, আয়াত ১৪) হে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা, কারন দর্শানো নোটিস দিয়ে কি আল্লাহ্‌র বিরাগাজন হচ্ছেন কি না একবার ভাবুন, নিজেকে জিজ্ঞেস করুন! আপনার আমার সবার জন্য আল্লাহ্‌র চুড়ান্ত নির্দেশ, আল্লাহ্‌ বলেন, হে ঈমানদার গন! তোমরা পরিপূর্ণভাবে ইসলামের অন্তর্ভুক্ত হয়ে যাও এবং শয়তানের পদাংক অনুসরণ কর না। নিশ্চিত রূপে সে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু (সুরা বাক্কারা, আয়াত ২০৮) এই ইসলামে পরিপূর্ণভাবে অন্তর্ভুক্ত হতে হলে রাসুল (সঃ) আদেশ নিষেধও আমাদেরকে তিলেতিলে মানতে হবে, তাইতো আল্লাহ্‌ বলেন, যে কেউ রসূলের আজ্ঞাপালন করে সে অবশ্যই আল্লাহ্‌র আজ্ঞাপালন করে। আর যে কেউ ফিরে যায় — আমরা তোমাকে তাদের উপরে রক্ষাকর্ত্তারূপে পাঠাই নি। (সুরা নিসা, আয়াত ৭৯)

উপরের বিষয়কে আমি দুই ভাগ করে আল্লাহ্‌ ও তাঁর রাসুলের আদেশ বর্ণনা করছি।

ক)     পুরুষের টাকনুর উপর কাপড় পরিধান করাঃ-  রাসুল (সঃ) স্পষ্ট হাদিস আছে এবং খুবই ভয়ানক যদি কোন পুরুষ টাকনুর নিচে কাপড় পরে, রাসুল (সঃ) বলেন,  “কিয়ামত দিবসে আল্লাহ্‌ তা’আলা তিনি ব্যাক্তির সাথে কথা বলবেন না, তাদের দিকে তাকাবেন না, তাদেরকে পবিত্র করবেন না এবং তাদের জন্য রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। সেই তিনি ব্যাক্তি হল –
১) পায়ের টাখনুর নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরিধানকারী,
২) দান করে খোটাদানকারী
৩) মিথ্যা শপথ করে পন্য বিক্রয়কারী
(মুসলিম শরীফ, তিরমিজী, আবু দাউদ ও ইবনে মাজাহ।)

আবূ হুরায়রা (রাঃ) বর্ণনা করেন, নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ

ماَ أسْفَلَ الكعبين مِـنَ الإزاَرِ فَفِيْ النّـارِ

“যে টাখনুদ্বয়ের নীচে কাপড় ঝুলিয়ে পরা হত তা আগুনের মধ্যে জ্বলবে” বুখারী শরীফ হাদিস নং- ৫৭৮৭।

হে আল্লাহ্‌র বান্দা, মুহাম্মদ আবদুর রহিম তো আপনাকে সহ তাঁর সব পুরুষ সহকর্মীকে সেই আগুনের হাত থেকে বাঁচানোর প্রয়াস নিয়েছেন, যে দিন সে আগুনের উপকরণ হবে মানুষ ও পাথর। যে আদেশ আপনার দেওয়া উচিত ছিল, তা তিনি দিয়ে আপনাকেও পরিত্রাণ দিয়েছে, আর আপনি তাকে দিলেন নোটিস!, সত্যিই সেলুকাস!

খ)     নারীদের হিজাবসহ টাকনুর নিচে পোশাক পরাঃ- আল্লাহ্‌ বলেন, হে নবী! আপনি আপনার স্ত্রীগণকে, কন্যাগণকে ও মুমিনদের নারীগণকে বলুন, তারা যেন তাদের চাদরের কিয়দংশ নিজেদের উপর টেনে দেয়। এতে তাদের চেনা সহজ হবে। ফলে তাদের উত্যক্ত করা হবে না। আল্লাহ ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু। (সূরা আহযাব : ৫৯)

(হে নবী!) মুমিন নারীদেরকে বলুন, তারা যেন তাদের দৃষ্টিকে সংযত রাখে ও তাদের লজ্জাস্থানের হিফাযত করে। তারা যেন সাধারণত যা প্রকাশ থাকে তা ছাড়া নিজেদের আভরণ প্রদর্শন না করে। (সূরা নূর : ৩১)

তারা যেন গ্রীবা ও বক্ষদেশ মাথার কাপড় দ্বারা আবৃত করে। … (সূরা নূর : ৩১)

আবদুল্লাহ ইবনে আববাস রা. উক্ত আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, আল্লাহ তাআলা মুমিন নারীদেরকে আদেশ করেছেন যখন তারা কোনো প্রয়োজনে ঘর থেকে বের হবে তখন যেন মাথার উপর থেকে ওড়না/চাদর টেনে স্বীয় মুখমন্ডল আবৃত করে। আর (চলাফেরার সুবিধার্থে) শুধু এক চোখ খোলা রাখে।-ফাতহুল বারী ৮/৫৪, ৭৬, ১১৪

আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. থেকে বর্ণিত, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, নারী হল সতর তথা আবৃত থাকার বস্ত্ত। নিশ্চয়ই সে যখন ঘর থেকে  বের হয় তখন শয়তান তাকে মনোযোগ দিয়ে দেখতে থাকে। আর সে যখন গৃহাভ্যন্তরে অবস্থান করে তখন সে আল্লাহ তাআলার সবচেয়ে বেশি নিকটে থাকে।-আলমুজামুল আওসাত, তবারানী

রাসুল (সঃ) বলেন, যে পুরুষ নারীর পোশাক পরিধান করে বা যে নারী পুরুষের পোশাক পরিধান করে, তাদের উপর আল্লাহ্‌র লা’নত বর্ষিত হউক (আবু দাউদ ৪/৬০)

নিশ্চয়ই অবগত হয়েছেন যে, মুহাম্মদ আবদুর রহিম কোন অন্যায় কাজ করেননি। বরং নোটিশ দিয়ে আপনারাই ঘোরতর অন্যায় করেছেন। ড্রেস কোড বলে একটা কথা আছে, পৃথিবীব্যাপী সব দেশেই এই নিয়ম কার্যকর। আমাদের দেশে আর্মি, এয়ারফোর্স, নেভী, পুলিশ বাহিনী, র‍্যাব, হোটেলগুলো, উড়োজাহাজ সহ অনেক সেক্টরে ড্রেসকোড মানা হয়, যদিনা সরকার নিজ থেকে কোন নিয়ম চালূ করে। যে কথা না বললেই নয় তা হোল, ধর্মের সাথে সাংঘর্ষিক না হলে যে কেওই শালীন ড্রেস পরিধান করতে পারে। মুহাম্মদ আবদুর রহিম বিভাগীয় প্রধান হিসাবে এই নিয়ম চালূ করাতে সাধারণ মুসলিমের কাছে ধন্যবাদ পাওয়ার যোগ্য। কারণ দর্শানোর নোটিস নহে। তিনি আপনাদের সবাইকে এমনকি খোদ প্রধানমন্ত্রীকে আগুন থেকে রক্ষা করার এক অভূতপূর্ব দায়িত্ব হাতে নিয়েছেন। আল্লাহ্‌ তাঁর মঙ্গল করুন।

মনে রাখবেন আল্লাহ্‌ আমাদেরকে সৃষ্টি করেছেন এবং আমাদের চরিত্রের খুঁটিনাটি খূব ভালই জানেন, তাইতো তিনি বলেন, তুমি কি তবে তাকে লক্ষ্য করেছ যে তার খেয়াল-খুশিকে তার উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে? আর আল্লাহ্ জেনে-শুনেই তাকে পথভ্রষ্ট হতে দিয়েছেন, আর তিনি মোহর মেরে দিয়েছেন তার শ্রবণেন্দ্রিয়ে ও তার হৃদয়ে, আর তার দর্শনেন্দ্রিয়ের উপরে তিনি বানিয়ে দিয়েছেন একটি পর্দা। কাজেই আল্লাহ্‌র পরে আর কে তাকে পথ দেখাবে? তবুও কি তোমরা মনোযোগ দেবে না? (সুরা জাথিয়া, আয়াত ২৩) নিজের ইচ্ছামত মত প্রকাশ করবেন না, তাতে আল্লাহ্‌র বিরাগভাজন হয়ে পড়বেন।

নিঃসন্দেহ যারা আমাদের নির্দেশসমূহে মিথ্যারোপ করে আর সে-সব থেকে হামবড়াই করে, তাদের জন্য মহাকাশের দ্বার উন্নুক্ত করা হবে না আর তারা বেহেশতেও প্রবেশ করতে পারবে না, যে পর্যন্ত না উট প্রবেশ করে সূচের ছিদ্র দিয়ে। আর এইভাবে আমরা অপরাধীদের প্রতিফল দিই। তাদের জন্যে নরকাগ্নির শয্যা রয়েছে এবং উপর থেকে চাদর। আমি এমনিভাবে জালেমদেরকে শাস্তি প্রদান করি। ( সুরা আরাফ আয়াত ৪০-৪১) হৃদয় কাঁপানো কি ভয়ংকর কথা।

ভাবছেন হয়ত আল্লাহ্‌র আদেশ অমান্য করলেও কিছু কষ্ট ভোগ করে জান্নাতে চলে যাবেন, এতই সহজ? আল্লাহ্‌ আপনার মনের কথা ব্যক্ত করছেন এই ভাবে,  আর তারা বলে — “আগুন আমাদের গুনতির কয়েকদিন ছাড়া কদাচ স্পর্শ করবে না।” তুমি বলো — “তোমরা কি আল্লাহ্‌র কাছ থেকে কোনো প্রতি‌শ্রুতি নিয়েছ? তাহলে আল্লাহ্ তাঁর ওয়াদার কখনো খেলাফ করেন না, অথবা তোমরা কি আল্লাহ্ সন্বন্ধে যা জান না তাই বলছ?” (সুরা বাক্কারা, আয়াত ৮১)

আশা করি আল্লাহ্‌ আপনাকে সঠিক চিন্তা করার সুযোগ দিবেন এবং এও আশা করি অবিলম্বে মুহাম্মদ আবদুর রহিমের কারণ দর্শানোর নোটিশ তূলে নিবেন নতুবা অপেক্ষা করুন সহসাই আল্লাহ্‌র আজাবে গ্রেফতার হন কিনা।


[i] https://www.bbc.com/bengali/news-46087868

[ii] https://be.bangla.report/post/49205-cpIQuyfxC

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

nine + 3 =