২০ জানুয়ারি, আল জাজিরা, ডিডব্লিউ : চীনের জিনজিয়াংয়ে উইঘুর মুসলমানদের ওপর গণহত্যা চালিয়েছে দেশটির ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট সরকার। মঙ্গলবার এক বিবৃতিতে এমন অভিযোগ করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও। চীনে উইঘুর মুসলমানদের ওপর চীন সরকারের নিপীড়ন নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্বেগ নতুন নয়। তবে এ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই প্রথমবারের মতো গণহত্যা শব্দটি ব্যবহার করা হলো।
মাইক পম্পেও বলেন, জিনজিয়াং-এর পশ্চিমাঞ্চলীয় এলাকায় উইঘুর মুসলমানদের ওপর দমনপীড়নের অংশ হিসেবে সেখানে ‘গণহত্যা ও মানবতাবিরোধী অপরাধ’ করেছে চীন। এ ব্যাপারে ট্রাম্প প্রশাসন নিশ্চিত।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, প্রাপ্ত তথ্য উপাত্ত যাচাই বাছাইয়ের পর আমি নিশ্চিত যে, চীনের কমিউনিস্ট পার্টি নিয়ন্ত্রিত সরকার জিনজিয়াংয়ে প্রধানত মুসলিম উইঘুর এবং অন্যান্য জাতিগত ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীগুলোর ওপর গণহত্যা চালিয়েছে।
এর আগেও উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীন সরকারের বর্বরতা নিয়ে সরব হয়েছে ওয়াশিংটন। জিনজিয়াং প্রদেশের বেশ কিছু প্রশাসনিক ব্যক্তির যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ইউরোপীয় ইউনিয়নও উইঘুর মুসলিমদের ওপর চীন সরকারের নৃশংসতার বিষয়টি একাধিকবার সামনে এনেছে। তবে এ ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে এই প্রথমবারের মতো গণহত্যা শব্দটি ব্যবহার করা হলো।
মাইক পম্পেও বলেন, ২০১৭ সাল থেকে জিনজিয়াং প্রদেশে অব্যাহত গণহত্যা চালাচ্ছে চীন। লাখ লাখ মানুষকে বন্দি করা হচ্ছে। তাদের ধর্মাচরণ করতে দেওয়া হচ্ছে না। জন্মনিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করা হচ্ছে। শুধু উইঘুর নয়, আরও বেশ কিছু ধর্মীয় সংখ্যালঘু গোষ্ঠীর সঙ্গে একই আচরণ করা হচ্ছে। নাম না নিলেও তিনি যে তিব্বতে বৌদ্ধদের সঙ্গে চীনের আচরণের কথা বলতে চেয়েছেন, তা স্পষ্ট।
করোনাকালে চীনের সঙ্গে ট্রাম্প প্রশাসনের সম্পর্ক সবচেয়ে খারাপ হয়। ট্রাম্প-পম্পেওর চীনবিরোধী নীতি ভূরাজনৈতিক ভারসাম্য বদলে দিচ্ছিল। অনেকরই ধারণা, বাইডেন ট্রাম্পের মতো কঠিন অবস্থান নেবেন না। তবে ট্রাম্পের নীতি থেকে তিনি একেবারে সরেও আসতে পারবেন না। চীন বিষয়ে যে কোনও অবস্থান নেওয়ার সময় ট্রাম্পের নীতিগুলো সামনে চলে আসবে। বস্তুত, সে কারণেই পম্পেও সরকারিভাবে চীনের বিরুদ্ধে গণহত্যার অভিযোগ নথিভুক্ত করে রাখলেন বলে প্রতীয়মান হচ্ছে। চীন নিয়ে বাইডেন অপেক্ষাকৃত নরম অবস্থান নিতে গেলে এই নথিটি সামনে চলে আসবে।
চীন অবশ্য পম্পেও-র বিবৃতি নিয়ে এখনও পর্যন্ত কোনও মন্তব্য করেনি। তবে অতীতে জার্মান চ্যান্সেলর চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের প্রশ্নের মুখে এ বিষয়ে মুখ খুলেছিল তারা। চীনের দাবি, উইঘুর মুসলিমদের নিয়ে যে অভিযোগ তোলা হয়, তা ঠিক নয়। যদিও চীন থেকে পালানো উইঘুর মুসলিমদের অনেকেই কমিউনিস্ট সরকারের ভয়াবহ নিপীড়নের কথা বর্ণনা করেছেন।
২০২০ সালের ডিসেম্বরে গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর গ্লোবাল পলিসি-র রিপোর্টে জিনজিয়াং-এ উইঘুর মুসলিমদের বলপূর্বক দাসে পরিণত করার অভিযোগ করা হয়েছে চীনের বিরুদ্ধে। এতে বলা হয়, জোর করে উইঘুর মুসলিমদের দিয়ে তুলা চাষ করছে চীনের ক্ষমতাসীন কমিউনিস্ট পার্টি। এই অভিযোগ সামনে আসার পর আঙুল উঠেছে বিশ্বের প্রথম সারির কয়েকটি জুতো ও পোশাক প্রস্তুতকারক সংস্থার দিকেও।
সেন্টার ফর গ্লোবাল পলিসি-র রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০১৮ সালে পাঁচ লাখ ৭০ হাজার উইঘুর মুসলিমকে তুলা চাষে বাধ্য করা হয়েছিল। যে কায়দায় তাদের নির্দিষ্ট স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল তা আধুনিক শ্রমিক অধিকারের বিরোধী। কার্যত দাসের মতো ব্যবহার করা হয়েছিল তাদের সঙ্গে।
জিনজিয়াং প্রদেশে গোটা বিশ্বের ২০ শতাংশ তুলা উৎপাদন হয়। চীন এই তুলা পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রফতানি করে। অ্যাডিডাস, নাইকো, গ্যাপের মতো সংস্থা জিনজিয়াং প্রদেশের তুলা কেনে। অধিকার সংগঠনগুলোর বক্তব্য, এই সংস্থাগুলো সব জেনেও চীন থেকে তুলা কেনে। অবিলম্বে এটি বন্ধ করা উচিত।