জাতিসংঘ তুরস্ককে সম্ভাব্য যুদ্ধাপরাধ এবং অন্যান্য অধিকার লঙ্ঘনের তদন্ত করার জন্য অনুরোধ করেছে। তারা বলছে, তুরস্ক বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মাধ্যমে উত্তর সিরিয়ার বৃহত্তর অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে।
মানবাধিকার বিষয়ক জাতিসংঘের হাইকমিশনার মিশেল বাশেলেট বলেছেন, সিরিয়ার ওই অঞ্চলগুলিতে সহিংসতা ও অপরাধের ঘটনা চলমান ছিল ।
তরে শুক্রবার জাতিসংঘের মানবাধিকার অফিস (ওএইচসিআর) এক বিবৃতিতে উল্লেখ করে যে, সাম্প্রতিক মাসগুলোতে সহিংসতা ও অপরাধবোধের দরুন আইন লংঘন মারাত্মক আকার ধারণ করেছে।
সম্প্রতি উদ্বেগজনকভাবে লক্ষ করা গেছে যে, ওই সব অঞ্চলে হত্যাকাণ্ড, অপহরণ, অবৈধভাবে মানুষের স্থানান্তর, জমি ও সম্পত্তি দখল এবং সশস্ত্র দলগুলো কোনো সুস্পষ্ট সামরিক প্রয়োজনীয়তা ছাড়াই জোরপূর্বক দখল এবং লুটপাট করছে। এগুলো নথিভুক্ত করেছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কমিশন।
তারা জানায়, ক্ষতিগ্রস্থদের মধ্যে বেশির ভাগ বিরোধী দলগুলির সাথে জোটবদ্ধ গোষ্ঠী বা তুর্কি সমর্থিত সশস্ত্র গোষ্ঠীর সমালোচনাকারীরা রয়েছে।
ওহিএইচসিআর জানিয়েছে, ক্ষমতা ভাগাভাগি নিয়ে তুরস্কের বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠী নিজেদের মধ্যেই মারামারিতে লিপ্ত হয়। এতে করে ক্ষতিগ্রস্ত ও হতাহত হচ্ছে বেসামরিক লোকজন ও অবকাঠামো।
বাশেলেট তুরস্ককে উদ্দেশ্য করে বলে, ‘আমাদের যাচাই করা ঘটনাগুলির তাত্ক্ষণিকভাবে নিরপেক্ষ, স্বচ্ছ এবং স্বতন্ত্র তদন্ত শুরু করার আহ্বান করছি। সংশ্লিষ্ট সশস্ত্র দলগুলির দ্বারা আটক এবং অপহরণকৃত দের উদ্ধার এবং এর পিছনে দায়ীদের জবাবদিহির ব্যবস্থা করা উচিত। কিছু ক্ষেত্রে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে তাদেরকে আন্তর্জাতিক আইনের আওতায় আনা যেতে পারে’।
এ ছাড়া চলতি বছরের শুরু থেকে গত সোমবার পর্যন্ত সেখানে বিস্ফোরণ এবং সংঘর্ষের ফলে কমপক্ষে ১১৬ জন বেসামরিক নাগরিকের মৃত্যু হয়েছে এবং আহত হয়েছেন অন্তত ৪৬৩ জন।
তিনি বলেন যে, কিছু ন্যাক্কারজনক ঘটনার জন্য তদন্তটি আরও বেশি জরুরী হয়ে পড়ে। তন্মধ্যে সিরিয়ায় আটক ও অপহরণকৃতদের সশস্ত্র দল দ্বারা তুরস্কে স্থানান্তরের তথ্য আমরা পেয়েছি।
‘ভিত্তিহীন অভিযোগ’ প্রত্যাখ্যান করেছে তুরস্ক
পরে শুক্রবার তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাশেলেটের বক্তব্যে অসন্তোষ প্রকাশ করে। আইন লঙ্ঘনের জন্য দায়ী সিরিয়ান সরকার এবং পিকেকে / ওয়াইপিজি সন্ত্রাসী সংগঠনের উল্লেখ না করায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছে তারা।
আঙ্কারা ধারণা করছে, ইউএস-সমর্থিত কুর্দি সিরিয়ান সুরক্ষা ইউনিট-ওয়াইপিজি এর সাথে তুরস্কের কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির-পিকেকে এর যোগাযোগ রয়েছে।
‘আমাদের সাথে সিরিয়ার বিরোধী গোষ্ঠীর সহিংসতার অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে আমরা মনে করি। এ ধরনের দাবি কে আমরা সম্পূর্ণ অস্বীকার করি’ – তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
এক বিবৃতিতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বাচেলেটকে “অযৌক্তিক সমালোচনা” করারও অভিযোগ করেন । মন্ত্রণালয় আরো জানায়, ‘আঙ্কারা এই প্রতিবেদন সম্পর্কিত তাদের “মতামত এবং আপত্তি ” সম্পর্কে জাতিসংঘকে অবহিত করবে’।
তুরস্ক বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মাধ্যমে উত্তর-পূর্ব সিরিয়ার বৃহত্তর অঞ্চল নিয়ন্ত্রণ করছে। এবং ওয়াইপিজিবকে হঠানোর লক্ষ্যে অভিযান পরিচালনা করছে।
গত বছরের অক্টোবরে তুর্কি সেনাবাহিনী এবং তাদের সিরীয় সমর্থক গোষ্ঠীগুলো কুর্দি বাহিনী থেকে দেশটির সীমান্তের অভ্যন্তরে ১২০ কিলোমিটার প্রসারিত একটি এলাকা দখল করেছিল।
আঙ্কারা সরকার তাদের মিত্র মস্কোর সঙ্গে ২০১৮ সালের চুক্তির অংশ হিসেবে উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় ইদলিবে বেশ কয়েকটি সামরিক ঘাঁটিতে সেনা মোতায়েন করেছে। পার্শ্ববর্তী আলেপ্পো প্রদেশে ২০১৬ সাল থেকে একাধিক সামরিক অভিযানের পর সীমান্ত বরাবর একটি অঞ্চলও নিয়ন্ত্রণ করছে।