২০৩ বর্গকিলোমিটার আয়তনের সাতকানিয়া উপজেলার চট্টগ্রাম চট্টগ্রাম মহানগরী থেকে ৫৫ কিলোমিটার দূরে। প্রায় পাঁচ লাখ মানুষের চিকিৎসাসেবায় দুর্গম জনপদে যুক্ত হয়েছে ‘আমার অ্যাম্বুলেন্স’ সেবা। এই অ্যাম্বুলেন্সটির মূল ব্যবহারকারী হবেন দরিদ্র্যরোগী। যাঁরা প্রাইভেট ক্লিনিক থেকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকায় অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে চট্টগ্রাম মহানগরীতে উন্নত চিকিৎসার জন্য আসতে পারেন না। সাতকানিয়ায় ০১৮৭২৯৯২২৭৭ বা ০১৩০৪৪০০৪৯৯-এ ফোন করলেই ‘আমার অ্যাম্বুলেন্স’ রোগীর দরজায় পৌঁছবে।
দানের টাকায় ‘আমার অ্যাম্বুলেন্স’ চালুর বিষটি ডা. মোরশেদ আলী ব্যাখ্যা করেছেন এভাবে, ‘সাতকানিয়ার প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে অনেক রোগী সময় মতো চট্টগ্রামে উন্নত চিকিৎসার জন্য পৌঁছতে পারেন না। এই কারণে অনেক ক্ষেত্রে জীবনহানি হয়। এছাড়া দরিদ্র অনেক রোগী আছে, যাঁরা অর্থাভাবে প্রাইভেট হাসপাতালের অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে চট্টগ্রাম নগরীতে পৌঁছতে পারেন না। রোগীদের সময় ও অর্থাভাবের বিষয়টি চিন্তা করেই আমার অ্যাম্বুলেন্স সেবা চালুর ধারণা মাথায় এসেছে। এতে সাতকানিয়ার মানুষ সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছে। ফলে এই ধারণা বাস্তবরূপ পেয়েছে।’
সাতকানিয়ার পাহাড় উপত্যাকা পুরানগড় ইউনিয়নের সন্তান ডা. মোরশেদ আলী ব্যক্তিগতভাবে উপলদ্ধি করেন, দুর্গম এলাকা থেকে জরুরি চিকিৎসার জন্য চট্টগ্রাম নগরীতে পৌঁছা কতোটা দূরূহ। তিনি বর্তমানে চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক। তরুণ সার্জন হিসেবেও বেশ খ্যাতি অর্জন করেছেন তিনি। জেনারেল হাসপাতালই চট্টগ্রামের প্রথম হাসপাতাল-সেখানে করোনা চিকিৎসাসেবা শুরু হয়েছিল। শুরু থেকেই করোনাকালীন যোদ্ধা হিসেবে কাজ করছেন। এর বাইরেও নিজ উপজেলা সাতকানিয়া, কক্সবাজারের কুতুবদিয়া, বান্দরবানের নাইক্ষ্মংছড়ি এবং খাগড়াছড়ির রামগড় উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে অক্সিজেন সরবরাহ লাইন স্থাপনসহ আধুনিক সুযোগ সুবিধা গড়ে তোলেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের (ফেসবুকে) অর্থ সংগ্রহ করে এই পর্যন্ত চারটি সরকারি হাসপাতালে অক্সিজেনের ব্যবস্থা করেছেন করোনাক্রান্ত রোগীদের সেবা দেওয়ার লক্ষ্যে। যা করোনা পরবর্তী সময় সাধারণ রোগীদের জন্য ব্যবহার করা যাবে। তাঁর সর্বশেষ উদ্যোগ ‘আমার অ্যাম্বুলেন্স’ সেবা।
‘আমার অ্যাম্বুলেন্স’ সেবা চালুর জন্য প্রায় ১৭ লাখ টাকা ব্যয়ে একটি নতুন অ্যাম্বুলেন্স ক্রয় করা হয়েছে। এর মধ্যে ‘আমার অ্যাম্বুলেন্স’ তহবিলে জমা হয়ে সাত লাখ টাকা। আগে চারটি উপজেলা সদর হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন স্থাপনের পরও উদ্ধৃর্ত দানের অর্থ ছিল আরো সাত লাখ টাকা। এই ১৪ লাখ টাকা ছাড়াও ব্যক্তিগত তহবিল থেকে আড়াই লাখ টাকা দিয়েছেন গাড়ি ক্রয় করতে। আরো ৫০ হাজার টাকা দেনা আছে এই প্রকল্পে। যা তিনি বহন করবেন বলে জানিয়েছেন।
শুক্রবার বিকেলে চালু হওয়া ‘আমার অ্যাম্বুলেন্স’ সেবা প্রথম গ্রহণ করেছেন সাতকানিয়ার ছিটুয়াপাড়ার বাসিন্দা সারোয়ার জামাল (৩৩)। সেবাটি উদ্বোধনের এক ঘণ্টার মধ্যেই এই রোগী সেবাটি গ্রহণ করেন। প্রথম সেবাগ্রহীতা রোগীর ভাই সারোয়ার কামাল কালের কণ্ঠকে বলেন, ‘আমার ভাই কক্সবাজার চাকরি করেন। তিনি হঠাৎ হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে পড়লে তাঁকে দ্রুত কেরানীহাটস্থ আশশেফা হাসপাতালে ভর্তি করি। কিন্তু ডাক্তারগণ তাঁকে চট্টগ্রাম মেডিকেল হাসপাতালে দ্রুত স্থানান্তরের পরামর্শ দেন। এমতাবস্থায় আমরা মাত্র ১৮০০ টাকায় ‘আমার অ্যাম্বুলেন্স’ সেবা গ্রহণ করি। অন্য হাসপাতাল থেকে অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করলে প্রায় সাড়ে তিন হাজার টাকা পরিশোধ করতে হতো। সেই হিসেবে দরিদ্ররোগী হিসেবে আমরা সুবিধা পেয়েছি। এই সেবা সাতকানিয়ার দরিদ্র্য মানুষদের জন্য খুবই উপকারী হবে।’
ডা. মোরশেদ আলী জানিয়েছেন, আমার অ্যাম্বুলেন্স সেবায় অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়া হবে না। শুধুমাত্র জ্বালানী, চালকের বেতন-ভাতাদি এবং গাড়ি রক্ষণাবেক্ষণ বাবদ যে ব্যয় হবে-সেটাই নেওয়া হবে রোগীদের কাছ থেকে। এর বাইরে যদি একেবারে দরিদ্র্যরোগী হন, তাহলে বিশেষ বিবেচনায় ফ্রি সুবিধা পাবেন। আর চট্টগ্রাম নগরীর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় কোনো রোগীর মৃত্যু হলে সেই রোগী বিনা খরচে সাতকানিয়ায় পৌঁছে দেবে ‘আমার অ্যাম্বুলেন্স।’