হজরত ইসা (আ.) আল্লাহর কাছে চলে গেছেন ৬০০ বছর হয়ে গেছে। ৬০০ বছরে তাঁর অনুসারীরা তাদের ধর্মকে বিকৃত করতে করতে এমন অবস্থায় পৌঁছেছে, পান থেকে চুন খসলেই ভিন্নমতালম্বীদের দীন থেকে খারিজ করে দিচ্ছে। খ্রিস্টধর্মের মধ্যে অনেক ফিরকা বা দল তৈরি হয়ে গেল। প্রতিটি দল নিজেদের সত্যের একমাত্র ডিলার ঘোষণা করে বসল। মাওলানা আবুল কালাম আজাদ তরজুমানুল কোরআনে লিখেছেন, ইতিহাস পড়ে জানা যায় তখনকার সময় খ্রিস্টানদের অবস্থা এমন পর্যায়ে পৌঁছল যে প্রত্যেক ধর্মগুরুই একটি ফিরকা বা দল হয়ে গেল। আর প্রত্যেক দলই ঘোষণা করল, আমি ছাড়া আর সব কাফির ও জাহান্নামি। এর চেয়ে ভয়ংকর অবস্থা ইহুদিদের হয়েছে। ইহুদি ধর্মগুরুরা জীবন দিয়ে একটি কথাই ঘোষণা করতে থাকলেন, কেউ ইহুদি না হওয়া পর্যন্ত বিশ্বাসী তথা মুমিন হতে পারবে না, জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না। খ্রিস্টানদের মতো ইহুদি ধর্মও দলে দলে বিভক্ত হয়ে টুকরো টুকরো হয়ে গেল। সে সময়ের বিভীষিকাময় দৃশ্যের বর্ণনা দিয়ে আল কোরআনে আল্লাহ বলেন, ‘ওরা বলে, ‘ইহুদি বা খ্রিস্টান না হলে কখনো জান্নাতে প্রবেশ করতে পারবে না।’ এটি ওদের মিথ্যা প্রত্যাশা। হে নবী! আপনি বলুন, ‘তোমরা সত্যবাদী হলে এর সপক্ষে প্রমাণ পেশ কর।’ (সুরা বাকারাহ, আয়াত ১১১) ইহুদি-খ্রিস্টানদের ধর্মীয় বিরোধ ও বাড়াবাড়ির আরও চমৎকার বর্ণনা সামনের আয়াতে এসেছে। তারা যখন নিজেদের ভিতরই দ্বন্দ্ব-সংঘাত-ফতোয়াবাজিতে লেগে গেল, তখন ভিন্ন ধর্মের লোকদের তারা সহ্য করতে পারবে না তা বলাই বাহুল্য।
কোরআনের বর্ণনায় এসেছে, ‘ইহুদিরা বলে, ‘খ্রিস্টানদের বিশ্বাসের কোনো ভিত্তি নেই’, খ্রিস্টানরা বলে, ‘ইহুদিদের বিশ্বাসের কোনো সত্যতা নেই’। অথচ উভয় সম্প্রদায়ই কিতাব পড়ে। আবার যাদের কিতাবের কোনো জ্ঞান নেই তারাও অনুরূপ দাবি করে। সুতরাং এ নিয়ে কোনো বিতর্কের প্রয়োজন নেই বরং শেষ বিচারের দিন আল্লাহ এ মতবিরোধের চূড়ান্ত মীমাংসা করবেন।’ (সুরা বাকারাহ, আয়াত ১১৩) ভারতের বিখ্যাত পন্ডিত ড. হামিদুল্লাহ বলেন, এমন একটি চরম বিশৃঙ্খল সমাজে আগমন করেন রসুল (সা.)। ওই সময়ে তিনি সব ধর্মীয় বিরোধ দূর করে সবাইকে এক পতাকার নিচে নিয়ে আসেন। সবাইকে ঐক্যবদ্ধ করার ক্ষেত্রে তিনি মৌলিক মিলগুলোয় গুরুত্ব দিয়েছেন। তা-ও কোরআনের নির্দেশেই হয়েছে।
আল্লাহ বলেন, ‘হে নবী! ওদের বল, হে কিতাবিরা! এস আমরা আমাদের কিতাবের অভিন্ন কথায় একমত হই! আর কথাটা খুব সহজ- ‘আল্লাহ ছাড়া কারও উপাসনা করব না। আল্লাহর সঙ্গে কাউকে শরিক করব না। আল্লাহ ছাড়া কাউকে বা কোনো মানুষকে প্রতিপালক বা প্রভুরূপে গ্রহণ করব না। যদি তারা এ বিষয়ে একমত হতে না চায় তবে তাদের সুস্পষ্টভাবে বল, তোমরা সাক্ষী থাক, অবশ্যই আমরা আল্লাহতে সমর্পিত হয়েছি।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৬৪) এভাবে অন্য ধর্মের মৌলিক বিষয়গুলো সামনে রেখে ঐক্যের ডাক দিয়েছেন রসুল (সা.)। তিনি যখন মদিনা সনদ তৈরি করেন তখন স্পষ্ট ঘোষণা করেছেন, ‘মদিনার মুসলমান ও ইহুদিরা এক জাতি। সবাই নিজ নিজ ধর্ম পালন করবে কিন্তু একের বিপদে অন্যে ঝাঁপিয়ে পড়বে।’ এ ঐক্যের ফলেই মাত্র ২৩ বছরে ইসলাম বিজয়ী শক্তিতে রূপান্তরিত হয়।
বিডি প্রতিদিন/এমআই