বগুড়ার শিবগঞ্জ থানায় এক গৃহবধূ (১৭) ধর্ষণচেষ্টার মামলা করতে গেলে মামলা না নিয়ে পাল্টা তার বিরুদ্ধে ২৯০ ধারায় মামলা দিয়ে তাকে যৌনকর্মী হিসেবে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এসএম বদিউজ্জামানের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ করেন ওই গৃহবধূর মা। গতকাল শুক্রবার (৪ ডিসেম্বর) বিকেলে শিবগঞ্জ প্রেস ক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে এই অভিযোগ এনে তিনি ওসি বদিউজ্জামান ও থানার এসআই রতন কুমার রায়ের বিচার দাবি করেন।
তবে এই অভিযোগ অস্বীকার করে ওসি বদিউজ্জামান জানান, ওই গৃহবধূ অসামাজিক কার্যকলাপের সময় জনগণ হাতেনাতে আটক করে পুলিশে দেয়।
গৃহবধূর মা সংবাদ সম্মেলনে বলেন, আমার মেয়ের সঙ্গে সিহালী ফকিরপাড়া গ্রামের আবদুর রশিদের ছেলে কলেজছাত্র রামিম হাসান রিমনের প্রেমের সম্পর্ক ছিল। রিমনের পরিবার রাজি না থাকায় আমি মেয়েকে সিহালী ফকিরপাড়া গ্রামে বিয়ে দিই। কিন্তু বিয়ের পরও রিমন আমার মেয়ের সঙ্গে মোবাইল ফোনে সম্পর্ক অব্যাহত রাখে। স্বামী বাড়িতে না থাকায় রিমন গত ২৪ নভেম্বর দুপুরে মেয়ের বাড়িতে ঢোকে এবং তাকে ধর্ষণের চেষ্টা করে। পিরব ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের মেম্বার আবুল কাশেম বাড়িতে ঢুকে রিমন ও তার মেয়েকে ধরে পুলিশকে খবর দেন। পরে শিবগঞ্জ থানার ওসি এসএম বদিউজ্জামান ও এসআই রতন কুমার রায় দুজনকে আটক করে নিয়ে যান। আমার মেয়ে রিমনের বিরুদ্ধে ধর্ষণচেষ্টার মামলা করতে চাইলে পুলিশ তা নেয়নি। তারপর দুজনকে দণ্ডবিধির ২৯০ ধারায় মামলা দিয়ে (পতিতাবৃত্তি) চালান দেওয়া হয়। পরে আদালত দুজনকে জামিনে ছেড়ে দেন।
তিনি আরও বলেন, এসআই রতন কুমার রায় আমার কাছ থেকে ১০ হাজার টাকা নিয়েছেন। পুলিশ কর্মকর্তারা ধর্ষণচেষ্টার মামলা না নিয়ে তার মেয়েকে পতিতা হিসেবে চালান দিয়ে সম্মান নষ্ট করেছেন। বর্তমানে মেয়েকে তার শ্বশুরবাড়ির লোকজনও গ্রহণ করতে অস্বীকৃতি জানাচ্ছেন। এতে আমার মেয়ে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছে। উপায় না পেয়ে মেয়ে আদালতে মামলা করেছে। আমি এ ঘটনায় জড়িত পুলিশ কর্মকর্তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করছি।
তবে ওসি বদিউজ্জামান জানান, ওই গৃহবধূকে অসামাজিক কার্যকলাপের সময় জনগণ হাতেনাতে আটক করে পুলিশে দেয়। তাকে ২৯০ ধারায় মামলা দিয়ে আদালতে চালান দেওয়া হয়েছে। তিনি বা তার মা মামলার জন্য থানায় আসেননি।
এ প্রসঙ্গে শিবগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপার আরিফুল ইসলাম সিদ্দিকী জানান, ঘটনার সময় তিনি ছুটিতে থাকায় বিষয়টি তার জানা নেই।
পুলিশ সুপার আলী আশরাফ ভুঞা জানান, গৃহবধূর অভিযোগ পেয়েছেন। তবে তার ও তার মায়ের অভিযোগ সত্য নয়। জনগণ তাদের হাতেনাতে ধরে পুলিশে দিয়েছে। তাই দুজনকে ২৯০ ধারায় কোর্টে চালান দেওয়া হয়।
এলাকায় খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, রিমনের সঙ্গে ওই গৃহবধূর মাদ্রাসা জীবনে প্রেমের সম্পর্ক ছিল। বিয়ের পরও রিমন তার সঙ্গে মোবাইল ফোনে সম্পর্ক রাখেন। গত ২৪ নভেম্বর দুপুরে রিমন ওই গৃহবধূর স্বামীর বাড়ির সামনে ঘোরাফেরা করার একপর্যায়ে ঘরে ঢুকে পড়েন। এ সময় সেখানে থাকা ইউপি মেম্বার আবুল কাশেম তাদের আটক করে চিৎকার শুরু করেন। সন্ধ্যা পর্যন্ত দুজনকে আটকে রাখেন তিনি। পরে সুবিধা করতে না পেরে তিনি তাদের শিবগঞ্জ থানায় সোপর্দ করেন। পরে পুলিশ রিমনের বাবার সঙ্গে যোগসাজশ করে গৃহবধূকে পতিতা হিসেবে কোর্টে চালান দেয়। এ ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। এ নিয়ে জনগণের মাঝে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়। ওই গৃহবধূ পুলিশ সুপার, শিবগঞ্জ সার্কেলের সহকারী পুলিশ সুপারসহ বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ, সংবাদ সম্মেলন ও আদালতে মামলা করায় এস আই রতন কুমার রায়কে অন্যত্র বদলি করা হয়েছে।