শান্তিতে নোবেলজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের উপদেষ্টা পরিষদ শপথগ্রহণ করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বঙ্গভবনের দরবার হলে শপথ নেয় এই নতুন সরকার। বিগত বছর ধরে দেশে চলমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি থেকে নতুন সরকার মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্য হবে মনে করছেন সাধারণ মানুষ। একইসঙ্গে দেশের ইতিবাচক পরিবর্তনের নতুন আশাও দেখছেন তারা।
নতুন সরকারে কাছে সাধারণ মানুষের প্রত্যাশ কি-সেটা জানতে শপথের পরদিন আজ শুক্রবার সকালে নানা শ্রেণি-পেশার মানুষের সঙ্গে কথা বলেছেন দৈনিক মানবজমিনের এই প্রতিবেদক।
বরিশালের মুলাদীর বাসিন্দা মো. সাইদুল ইসলাম। কয়েক বছর ধরে জীবিকার তাগিদে ঢাকায় থাকেন। সবজি বিক্রি করেন। নতুন সরকার গঠনের পরদিন সকালে মোহাম্মদপুর সল্লিমুল্লাহ রোডে কথা হয় তার সঙ্গে। তবে আজ পাকা পেঁপে বিক্রি করছিলেন তিনি। নতুন সরকার নিয়ে তার আগ্রহ প্রকাশ করলেন। দেশে শন্তি-শৃঙ্খলা ফিরে আসবে বলে মনে করেন এই ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী। – মো. সাইদুল ইসলাম
নতুন সরকারে কাছে প্রত্যাশা কি-এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম কমাতে হবে।
দেশে শান্তি ফিরে আসুক সেটাই চাই।’ নতুন সরকারের প্রধান ড. ইউনূস প্রসঙ্গে সাইদুল ইসলাম বলেন, ‘ড. মুহাম্মদ ইউনুস ভালো মানুষ। তিনি দেশটা ভালো করতে পারবেন।’
রাজধানীতে কয়েক বছর ধরে রং মিস্ত্রির কাজ করেন মো. হাসান মিয়া। তিনি বলেন, ‘জিনিসপত্রের দাম কমাতে হবে। দেশে শান্তি আসুক। আমরা সাধারণ মানুষ যাতে ভালো থাকি সেই ব্যবস্থা করতে হবে।’ – মো. হাসান মিয়া
রিকশাচালক মো. সোহেল হোসেন। রাজধানীতে রিকশা চালান। বিগত কয়েকদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ ও সহিংসতায় বের হতে পারেননি। আজ রিকশা নিয়ে বের হয়েছেন। তারমধ্যে একটু উৎসুক মনোভাবও দেখা গেলো।
নতুন সরকারের কথা উঠতেই তিনি জানালেন, দেশে নতুন সরকার এসেছে। গতকাল শপথ নিয়েছে। নতুন সরকারের কাছে তার চাওয়ার কথাও বললেন তিনি।
মো. সোহেল হোসেন বলেন, ‘নতুন সরকারের কাছে আমাদের নিরাপত্তা চাচ্ছি। জিনিসপত্রের যে দাম বেড়ে গেছে, এইগুলো কমানোর ব্যবস্থা করতে হবে। এটাই আমাদের গরিবের চাওয়া।’
মোহাম্মদপুর আসাদ গেটে পত্রিকা বিক্রি করেন শহিদুল হক খন্দকার। অনেকেই পেপার কিনছেন। নেড়েচেড়ে নতুন সরকারের শপথ সংক্রান্ত খবরগুলো দেখছেন। শহিদুল বলেন, ‘নতুন সরকারের কাছে চাওয়া- দেশের অর্থনীতি পুনরুদ্ধার করতে হবে। আইন-শৃঙ্খলা সঠিক পর্যায়ে নিয়ে আসা। সাধারণ জনগণের যে চাওয়া-পাওয়া সেগুলোকে পূর্ণ করা।’
জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউতে প্রাতঃভ্রমণ করছিলেন অবসরপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ার ওয়াহিদুর রহমান। নতুন সরকারের কাছে প্রত্যাশা কি-এমন প্রশ্নে জবাবে তিনি বলেন, ছাত্রদের যে চাওয়া সেই একই চাওয়া।’
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের প্রসঙ্গ তুলে তিনি বলেন, আপনি খেয়াল করছেন কিনা বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়করা ৫ টি পয়েন্ট দিয়েছে-এই দেশ কেমন চাই, শিক্ষাব্যবস্থা কেমন চাই, স্বাস্থ্য ব্যবস্থা কেমন চাই, আমাদের সামাজিক ব্যবস্থা কেমন চাই এবং সর্বোপরি রাষ্ট্রের যে রিফর্ম সেটা কীভাবে হবে। এই পাঁচটা পয়েন্ট খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি এই ৫টা পয়েন্ট পূর্ণ হয়, তাহলে আমরা বলবো এই আন্দোলন সাকসেস হয়েছে।’
কিছু দূর যেতেই দেখা গেলো এক দল শিক্ষার্থী ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করছে। তারা রাজধানীর সিটি কলেজের শিক্ষার্থী। গত কয়েকদিন ধরেই চলমান পরিস্থিতিতে শিক্ষার্থীদের ট্রাফিকের দায়িত্ব পালন করতে দেখা গেছে। সেই অনুসারে আজও দায়িত্ব পালন করছে তারা।
রাজধানীর ব্যস্ততম স্থান ফার্মগেট। তখন ঘড়ির কাঁটায় ঠিক সকাল সাড়ে ৮টা। তখনো যানবাহন ও মানুষের চাপ বাড়েনি। এছাড়া সাপ্তাহিক ছুটির দিন শুক্রবার। ফুটপাতে চা বিক্রি করেন মো. সুমন । ইতিমধ্যে নতুন সরকারের শপথ টিভিতে দেখেছেন। নতুন সরকারের কাছে চাওয়া কি-এমন প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘নতুন সরকারের কাছে আমরা চাই দেশকে যেন ভালো রাখে। সন্ত্রাসমুক্ত রাখে।’ – মো. সুমন
দেশের চলমান পরিস্থিতি নিয়ে বলেন, ‘সন্ত্রাসী, রাহাজানি, চুরি, ছিনতাই ও ডাকাতি এগুলো যেন না হয়। আমরা সাধারণ মানুষ যাতে সাধারণভাবে খেয়ে-পরে থাকতে পারি। জিনিসপত্রের দাম যেন কম থাকে।’
নোবেল বিজয়ী অধ্যাপক ড. ইউনুস নেতৃত্বাধীন সরকার ভালো করবেন বলে মনে করেন তিনি। মো. সুমন বলেন, ‘ড. ইউনুস ভালো মানুষ। এবার দেশের ভালো হবে।’
উল্লেখ্য, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের মুখে গত সোমবার প্রধানমন্ত্রীর পদ থেকে পদত্যাগ করে দেশ ছেড়ে পালান শেখ হাসিনা। পদত্যাগের পর দেশ পরিচালনার জন্য অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠনের প্রক্রিয়া শুরু হয়। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ বিলুপ্তির পর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে প্রধান করে দেশের অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের সিদ্ধান্ত হয়। গত মঙ্গলবার রাতে বঙ্গভবনে প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিনের সঙ্গে তিন বাহিনীর প্রধান ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়কদের বৈঠকে এই সিদ্ধান্ত হয়।
এরপর গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ৯টায় বঙ্গভবনের দরবার হলে আয়োজিত শপথ অনুষ্ঠানে প্রথমে প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে শপথবাক্য পাঠ করান প্রেসিডেন্ট মো. সাহাবুদ্দিন। পরে ১৬ উপদেষ্টার মধ্যে ১৩ জন শপথগ্রহণ করেন। তিন উপদেষ্টা ঢাকার বাইরে থাকায় তারা পরে শপথ নেবেন বলে জানানো হয়।