সীরাত: নবীজির (সা.) শ্রদ্ধায় মাতৃসমা নারীগণ
নবীজির আম্মাজান আমিনা তাঁর কিশোর বয়সে মারা যান। নবী জীবনে এমন অনেক নারী সাহাবী ছিলেন, যাদের সাথে তাঁর মাতৃসমা শ্রদ্ধাপূর্ণ সম্পর্ক ছিল।
এক. দুগ্ধমাতাগণ: তাঁরা ছিলেন চারজন। আবু লাহাবের দাসী সুহাইবা আল-আসলামিয়া, আব্দুল্লাহর দাসী ইথিওপিয়ান নারী উম্মু আইমান, বনু সা’দের নারী হালিমা এবং একই গোত্রের অন্য একজন নারী যিনি হামযা ইবন আব্দুল মুত্তালিবের দুগ্ধমাতা ছিলেন। সর্বশেষ নারীর সম্পর্কে কিছু জানা নেই, তবে অবশিষ্ট তিনজন নারী ইসলাম গ্ৰহণ করে নবীজির (সা.) সান্নিধ্য অর্জন করেছেন। হালিমা সা’দিয়া ও উম্মু আইমানের সাথে নবীজির (সা.) মাতৃসমা ব্যবহারের বিষয়ে রিওয়ায়াত রয়েছে।
দুই. খালাগণ: নবীজির (সা.) দুইজন খালা ছিলেন। ফারি’আ বিনত ওয়াহাব আয-যুহরিয়া, ফাখিতা বিনত আমর আয-যুহরিয়া। রিজালবিদগণ তাঁদের সাহাবী হিসেবে পরিচিতি তুলে ধরেছেন। প্রথমজনকে নবীজি (সা.) হাত ধরে সবার সম্মুখে তুলে ধরা এবং দ্বিতীয় জনকে হাদিয়া প্রদানের মনোরম দৃশ্য সম্পর্কে রিওয়ায়াত রয়েছে।
তিন. ফুফুগণ: তাঁদের সংখ্যা ছয়জন। ছাফিয়া, আতিকা, আরওয়া, উমাইমা, বাররা, উম্মু হাকিম আল-বাইদা। প্রথমজন যুবাইর ইবন আওয়ামের আম্মা। তাঁর ইসলাম গ্ৰহণ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত। উহুদ যুদ্ধে ছাফিয়াকে নবীজির (সা.) প্রতি মাতৃসমা ভূমিকায় দেখা গেছে। পরবর্তী তিনজনের ইসলাম গ্ৰহণ সম্পর্কে রিজালবিদগণ মতপার্থক্য করেছেন। তম্মধ্যে উমাইমা নবীজির (সা.) স্ত্রী যয়নবের আম্মা। খাইবরের গণীমত থেকে তাঁকে নবীজি (সা.) চল্লিশ ওয়াসাক পরিমাণ খেজুর দেয়ার রিওয়ায়াত থেকে অনেকে মনে করেন তিনি ইসলাম গ্ৰহণ করে থাকবেন। অবশিষ্ট দু’জন নবুওয়াতের যুগ পাননি।
চার. শ্বাশুড়িগণ: রিজালশাস্ত্রে নবীজির (সা.) বেশ কয়েক জন শ্বাশুড়ির নাম-পরিচিতি পাওয়া যায়।
১. উম্মু রূমান: জান্নাতের হুর সদৃশ নারী উম্মু রূমান আবু বকরের (রা.) স্ত্রী ও আম্মাজান আইশার (রা.) মাতা। তাঁর ইসলাম গ্ৰহণ সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত।
২. যয়নব বিনত মাযঊন: উমর ইবন খাত্তাবের (রা.) স্ত্রী ও আম্মাজান হাফসার (রা.) মাতা। সাহাবী আবদুল্লাহ ইবন উমর (রা.) তাঁর পুত্র। হিজরতের পূর্বে-ই ইন্তিকাল করেছেন কি-না সে বিষয়ে মতপার্থক্য থাকলেও তাঁর ইসলাম গ্ৰহণ প্রমাণিত হয়েছে।
৩. হিন্দ বিনত আওফ: তাঁর মূল নাম খাওলা। তাঁকে জমিনের বুকে শ্রেষ্ঠ শ্বাশুড়ি বলা হয়। নবীজি (সা.) প্রথমে তাঁর কন্যা যয়নব বিনত খুজাইমাকে বিয়ে করেন এবং তাঁর মৃত্যুর পর আরেক কন্যা মাইমুনা বিনত আল-হারিসকে বিয়ে করেন। এক কন্যা লুবাবা আল-কুবরা বিনত আল-হারিসকে বিয়ে করেন নবীজির চাচা আব্বাস আব্দুল মুত্তালিব (রা.)। ফদল ইবন আব্বাস (রা.) লুবাবা আল-কুবরার সন্তান। এক কন্যা সালমা বিনত উমাইসকে বিয়ে করেছে হামজা ইবন আব্দুল মুত্তালিব (রা.)। এক কন্যা আসমা বিনতে উমাউসকে বিয়ে করেন আবু বকর (রা.) এবং তাঁর মৃত্যুর পর আলী ইবন আবি তালিব (রা.)। অন্য এক কন্যা লুবাবা আস-সুগরাকে বিয়ে করেন ওয়ালিদ ইবন মুগিরা যার গর্বে খালিদ ইবন ওয়ালিদের (রা.) জন্ম হয়।
৪. ছাফিয়া বিনত আবিল-আস: তিনি আবূ সুফিয়ানের প্রথম স্ত্রী এবং আম্মাজান উম্মু হাবিবার (রা.) মাতা। তিনি উসমান ইবন আফফানের (রা.) ফুফু। নবীজির (সা.) জন্মের দু’বছর আগে জন্ম এবং নবীজির (সা.) ইন্তিকালের দু’বছর পর ইন্তিকাল করলেও তাঁর ইসলাম গ্ৰহণ প্রমাণিত হয়নি; বরং তিনি হানীফ সম্প্রদায় ভূক্ত ছিলেন। কোনো কোনো সূত্রে তাঁকে সাহাবিয়া হিসেবেও উল্লেখ করা হয়েছে।
নবীজির (সা.) অন্যান্য শ্বাশুড়িরা হয়তো বিয়ের আগেই ইন্তিকাল করেছেন, তাঁদের বিষয়ে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায় না।
পাঁচ. বনু নাযযারের দুই নারী: বনু নাযযারে বিয়ে করেন নবীজির (সা.) দাদা আব্দুল মুত্তালিব ও পরবর্তীতে তাঁর পিতা আবদুল্লাহ। দাদা কিংবা পিতার সূত্রে বনু নাযযারের দুই নারী উম্মু হারাম বিনত মিলহান (রা.) ও উম্মু সুলাইম বিনত মিলহান (রা.) নবীজির (সা.) খালা হিসেবে মাহরাম ছিলেন। তাঁরা দু’জন পরস্পর বোন ছিলেন। তম্মধ্যে উম্মু সুলাইম বিশিষ্ট সাহাবী আনাস ইবন মালিকের (রা.) আম্মা। বুখারী ও মুসলিমের কয়েকটি রিওয়ায়াত থেকে প্রতিয়মান হয়, নবীজি (সা.) তাঁদের দু’জনের সাথে মাতৃসমা সম্পর্ক লালন করতেন।
নবীজির (সা.) সাথে সম্পর্কের কারণে আল্লাহ তাআলা উক্ত নারীদের পৃথিবীতে সম্মানিত করেছেন। তিনি আখিরাতেও তাঁদেরকে সম্মানিত করুন। রিদওয়ানুল্লাহি তাআলা আলাইহিন্না আজমাঈন।