ধর্ষণের ঘটনায় সালিস বা মীমাংসা রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। একই সঙ্গে ধর্ষণের ঘটনায় গত পাঁচ বছরে সারা দেশের থানা, আদালত ও ট্রাইব্যুনালে কতগুলো মামলা হয়েছে, তা জানিয়ে প্রতিবেদন দিতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
এক রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে আজ বুধবার বিচারপতি মো. মজিবুর রহমান মিয়া ও বিচারপতি মহি উদ্দিন শামীমের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চ্যুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এই আদেশ দেন।বিজ্ঞাপন
ধর্ষণের মতো শাস্তিযোগ্য অপরাধের ক্ষেত্রে মধ্যস্থতা, সালিস বা মীসাংসা রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে এবং ইতিপূর্বে এ বিষয়ে দেওয়া তিনটি রায়ের নির্দেশনা বাস্তবায়ন চেয়ে ১৯ অক্টোবর আইন ও সালিশ কেন্দ্রের (আসক) পক্ষে ওই রিট করা হয়। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন আইনজীবী জেড আই খান পান্না, ইয়াদিয়া জামান, অনীক আর হক, মো. শাহীনুজ্জামান ও সৈয়দা নাসরিন। রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল নওরোজ মো. রাসেল চৌধুরী।
পরে আইনজীবী সৈয়দা নাসরিন প্রথম আলোকে বলেন, ধর্ষণের ঘটনায় আইনি বিধিবিধান অনুসরণ ও ভুক্তভোগীর সুরক্ষা এবং যথাযথ প্রতিকার নিশ্চিতে ইতিপূর্বে হাইকোর্ট তিনটি মামলায় রায় দেন। তবে রায়ের নির্দেশনার বাস্তবায়ন দেখা যায় না। রায়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নে বিবাদীদের নিষ্ক্রিয়তা কেন অবৈধ হবে না এবং অর্থ বা অন্য কিছুর বিনিময়ে ধর্ষণের ঘটনায় সালিস রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়েছে রুলে। একই সঙ্গে ইতিপূর্বে হাইকোর্টের দেওয়া তিনটি রায়ের নির্দেশনা বাস্তবায়নে কী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, তা জানিয়ে তিন মাসের মধ্যে বিবাদীদের আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে।বিজ্ঞাপন
রিটে তিনটি মামলায় ইতিপূর্বে উচ্চ আদালতের রায়ের নির্দেশনার প্রসঙ্গ উল্লেখ রয়েছে। ২০১৬ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি হাইকোর্টের এক রায়ে বলা হয়, ধর্ষণ, যৌন হয়রানিসহ এমন প্রতিটি আমলযোগ্য অপরাধ যেখানেই ঘটুক না কেন, তার তথ্য থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে (ওসি) লিপিবদ্ধ করতে হবে। ১৮ দফা নির্দেশনাসংবলিত ওই রায়ের নির্দেশনায় বলা হয়, ধর্ষণ বা যৌন নিপীড়নের সব ঘটনায় বাধ্যতামূলকভাবে ডিএনএ পরীক্ষা করতে হবে। ডিএনএ পরীক্ষা ও অন্যান্য পরীক্ষার নমুনা নির্ধারিত ফরেনসিক ল্যাব বা ডিএনএ প্রোফাইলিং সেন্টারে ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে পাঠাতে হবে।
ওই বছরের ৫ ডিসেম্বর হাইকোর্ট আরেক রায়ে নির্ধারিত ১৮০ দিনের মধ্যে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনের মামলার বিচার শেষ না হলে জবাবদিহির বিধান অনুসরণ (ব্যাখ্যা দেওয়া) করতে ট্রাইব্যুনালের বিচারক, পাবলিক প্রসিকিউটর ও তদন্ত কর্মকর্তাকে (পুলিশ) নির্দেশ দেন। এ বিধান যথাযথভাবে প্রতিপালন করা না হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতেও বলা হয়। সর্বশেষ গত বছরের ১৮ জুলাই হাইকোর্ট এক রায়ে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে বিচারাধীন ধর্ষণ এবং ধর্ষণ–পরবর্তী হত্যা মামলাগুলো আইনে নির্ধারিত ১৮০ দিনের মধ্যে শেষ করতে, মামলায় সাক্ষীর উপস্থিতি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতে তদারকি কমিটি গঠন করা এবং জবাবদিহি নিশ্চিতে ছয় দফা নির্দেশনা দেন।