পাঠ্যসূচিতে থাকলেও গুরুত্ব কমছে ইসলাম শিক্ষার। বিশেষ করে নবম ও দশম শ্রেণীর পর এসএসসি বা বোর্ড পরীক্ষা থেকেও বাদ দেয়া হচ্ছে বিষয়টি। ফলে মুসলিম প্রধান বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের কাছে ইসলাম শিক্ষা ঐচ্ছিক বিষয়ে পরিণত হতে পারে এমন আশঙ্কাও করছেন অনেক অভিভাবক। ইতোমধ্যে অনেকে অভিযোগ করছেন, আগামী ২০২২ শিক্ষাবর্ষ থেকেই ইসলাম শিক্ষাকে গুরুত্বহীন করে নতুন কারিকুলাম বাস্তবায়নের প্রস্তুতি শুরু করেছে জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি)। তবে এনসিটিবি বলছে ইসলাম শিক্ষাকে কম গুরুত্ব দেয়া নয় বরং শিক্ষার্থীরা যাতে বিষয়টিকে আরো বেশি পঠন ও শিখনের মধ্যে আনতে পারে সেই লক্ষ্যেই পাঠ্যসূচিতে কিছুটা পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আর বোর্ড পরীক্ষায় ইসলাম শিক্ষাকে বাদ দেয়া হলেও স্কুলের নিজস্ব পরীক্ষায় এটি অন্তর্ভুক্ত থাকবে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মাধ্যমিকের পাঠ্যসূচিতে বড় ধরনের পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পরিবর্তিত এই পাঠ্যসূচি ২০২২ শিক্ষাবর্ষ থেকেই কার্যকরের চিন্তা করা হচ্ছে। সূত্র মতে, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) ২০২২ সাল থেকে নতুন পাঠ্যসূচিতে শিক্ষাদানের লক্ষ্য নিয়ে এই পাঠ্যক্রম নিয়ে এখন প্রস্তুতির কাজ করছে এবং এর অংশ হিসেবেই যুক্ত করা হচ্ছে নতুন নামের কয়েকটি বিষয়। তবে নতুন বিষয়গুলো নামের দিক থেকে নতুন হলেও বিষয় বস্তুর দিক থেকে পুরোপুরি নতুন নয় বলেও জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ দিকে এনসিটিবি ইতোমধ্যেই জানিয়েছে, নতুন পাঠ্যসূচিতে সব শিক্ষার্থীকে দশম শ্রেণী পর্যন্ত দশটি বিষয় পড়তে হবে। আর এসএসসি পরীক্ষা হবে দশম শ্রেণীতে এবং শুধু দশম শ্রেণীর পাঠ্যসূচির আলোকে। সেই সাথে এসএসসিতে শুধুমাত্র পাঁচটি বিষয়ের ওপর খাতা-কলমে পরীক্ষা নেয়ার সুপারিশ করেছে এনসিটিবি। অর্থাৎ দশম শ্রেণীতে ১০টি বিষয় পড়ানো হলেও এসএসসি পরীক্ষা হবে পাঁচটি বিষয়ের ওপর। সেগুলো হলো বাংলা, ইংরেজি, গণিত, বিজ্ঞান ও সামাজিক বিজ্ঞান। অর্থাৎ ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের ওপর কোনো বোর্ড পরীক্ষা হচ্ছে না। অন্য দিকে ধর্মীয় ও নৈতিক শিক্ষা, জীবন ও জীবিকা, ডিজিটাল প্রযুক্তি, ভালো থাকা এবং শিল্প ও সংস্কৃতি এই পাঁচটি বিষয়ে খাতা-কলমে কোনো পরীক্ষা নেয়া হবে না।
অবশ্য সরকারের পরিকল্পনা অনুযায়ী ২০২২ শিক্ষাবর্ষের নতুন এই পাঠ্যক্রমের বিরোধিতা করে ইতোমধ্যে বিভিন্ন সংগঠন, আলেমসমাজ, অভিভাবক ফোরাম, বিভিন্ন ইসলামী দল ও সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বক্তব্য বিবৃতি দিচ্ছেন। তারা ইসলাম শিক্ষাকে পাঠ্যসূচি থেকে বাদ দেয়া কিংবা বিষয়টিকে ঐচ্ছিক বিষয়ে পরিণত না করারও দাবি জানিয়েছেন। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও বিষয়টি নিয়ে নেতিবাচক বক্তব্য বা বিবৃতি আসছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা মন্ত্রণালয় থেকে একটি বিবৃতি দিয়ে বলা হয়েছে পাঠ্যসূচি থেকে ইসলাম শিক্ষা বাদ দেয়ার খবরটি গুজব। তারা বলছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় বা সংশ্লিষ্ট কেউ মাধ্যমিক শিক্ষাব্যবস্থা থেকে ইসলাম শিক্ষা বাদ দেয়া হবে বলে কোনো মন্তব্য করেননি।
পাঠ্যসূচি থেকে ইসলাম শিক্ষা বাদ দেয়া হচ্ছে নাকি বিষয়টিকে গুরুত্বহীন করা হচ্ছে এ বিষয়ে গতকাল বুধবার এনসিটিবির সদস্য (শিক্ষাক্রম) অধ্যাপক ড. মশিউজ্জামান নয়া দিগন্তকে জানান, পাঠ্যসূচি থেকে ইসলাম শিক্ষাকে বাদ দেয়া বা গুরুত্বহীন কোনোটিই করা হচ্ছে না। বরং নতুন পাঠ্যসূচিতে আগের মতোই ইসলাম শিক্ষা থাকবে। তবে পরীক্ষার বিষয়ে কিছুটা পরিবর্তন আনা হচ্ছে। আমরা মনে করি আগের তুলনায় নতুন কারিকুলামে শিক্ষার্থীরা ইসলাম শিক্ষা বিষয়ে আরো বেশি গুরুত্ব দেবে। কেননা শিক্ষার্থীদের শিখন ও পঠনে ইসলাম শিক্ষাকে আগের তুলনায় আরো বেশি গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে।
তিনি আরো জানান, এসএসসি বা বোর্ড পরীক্ষায় ইসলাম শিক্ষা বাদ দেয়া হলেও স্কুলের ধারাবাহিক মূল্যায়নে কোনো বিষয়ই বাদ যাবে না। ইসলাম শিক্ষা বিষয়ের ওপর বোর্ডে পরীক্ষা হয়তো হবে না কিন্তু স্কুলের ধারাবাহিক মূল্যায়নের ফলাফল বোর্ডে জমা হবে। অর্থাৎ এসএসসির রেজাল্ট কিন্তু সবগুলোর (১০টি বিষয়ের) ফলাফলের ভিত্তিতেই চূড়ান্ত করা হবে। একটি উদাহরণ টেনে তিনি বলেন, ধরুন একটি হাদিস কিংবা তার শানে নুজুল হয়তো কোনো শিক্ষার্থী মুখস্থ লিখে দিলো কিন্তু তার কোনো বাস্তবায়ন সে করে না। এটা করলে তো আর কিছু শেখা হলো না। আমরা চাইছি প্রত্যেক শিক্ষার্থী তার বাস্তব জীবনে প্রতিটি শিক্ষার প্রতিফলন ঘটাবে। আমরা চাইছি তারা (শিক্ষার্থীরা) ভালো কিছু শিখবে এবং সেটির বাস্তবায়ন করতে হবে।
পাঠ্যক্রম ও পরীক্ষার এই পদ্ধতিতে ইসলাম শিক্ষার গুরুত্ব আগের তুলনায় কমল কি না এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মোটেই না। বরং গুরুত্ব আরো বাড়বে। শিক্ষার্থীরা হাতে-কলমে যা শিখবে তার ভিত্তিতেই তার রেজাল্ট সে পাবে। সংক্ষেপে যদি বলি তাহলে এভাবে বলা যায়, ইসলাম শিক্ষা বিষয়টির ওপর বোর্ড পরীক্ষা হয়তো হবে না কিন্তু ইন্টারনাল অ্যাসেসমেন্ট ও তার রেজাল্ট বোর্ডে জমা হবে।