Saturday, December 7, 2024
No menu items!

আমাদের মুসলিমউম্মাহ ডট নিউজে পরিবেশিত সংবাদ মূলত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সমাহার। পরিবেশিত সংবাদের সত্যায়ন এই স্বল্প সময়ে পরিসরে সম্ভব নয় বিধায় আমরা সৌজন্যতার সাথে আহরিত সংবাদ সহ পত্রিকার নাম লিপিবদ্ধ করেছি। পরবর্তীতে যদি উক্ত সংবাদ সংশ্লিষ্ট কোন সংশোধন আমরা পাই তবে সত্যতার নিরিখে সংশোধনটা প্রকাশ করবো। সম্পাদক

হোমনিবন্ধফ্রান্সের শক্তির উৎসের পিছনে বর্বর ইতিহাস

ফ্রান্সের শক্তির উৎসের পিছনে বর্বর ইতিহাস

ফ্রান্সকে দমাতে হলে দরকার তার শক্তির মূল উৎস আফ্রিকার দেশগুলোকে ফ্রান্সের উপনিবেশ হতে মুক্ত করা।

আফ্রিকায় ফ্রান্সের ঘৃণ্য পলিসি নিয়ে আজকের এই লিখা।পুরোটা পড়লে অবাকই হবেন যে একবিংশ শতাব্দীতেও এমন নিকৃষ্ট উপনিবেশ কিভাবে চলে তা দেখে।

আফ্রিকা! ফ্রান্সের রান্নাঘর:

উপনিবেশিক আমলে আফ্রিকার ২৪ টি দেশে ফ্রান্স তার কলোনি স্থাপন করে ছিলো। দেশগুলো হলোঃ

ক)      উত্তর আফ্রিকাঃ আলজেরিয়া,মরক্কো, তিউনিসিয়া

খ)      সাহিল অঞ্চল বা পশ্চিম আফ্রিকাঃ মৌরতানিয়া, মালি, চাদ, নাইজার, সেনেগাল, টোগো, বেনিন, বুর্কিনা ফাসো, আইভরি কোষ্ট, গিনি।

গ)      মধ্য আফ্রিকাঃ ক্যামেরুন, মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র, কঙ্গো (রিপাবলিক), গ্যাবন

ঘ)      পূর্ব আফ্রিকাঃ জিবুতি, কমোরোস, মাদাগাস্কার।

উল্লিখিত কলোনিগুলোর বেশিরভাগকেই ফ্রান্স ১৯৬০ সালে স্বাধীনতা প্রদান করে। মোটামুটি ১৯৮০ সালের মধ্যেই সব আফ্রিকান দেশকে ফ্রান্স স্বাধীনতা দিয়ে দেয়।

তাহলে আজ ৪০-৫০ বছর পরও আমি কেনো বলছি আফ্রিকাকে লুটে খাচ্ছে ফ্রান্স? আসুন ভিতরের ইতিহাস নিয়ে আলোচনা করি। ব্রিটিশরা তাদের কলোনিগুলোকে স্বাধীনতা প্রদানের সময় কোনো চুক্তি করেনি। শর্তহীন স্বাধীনতা প্রদান করা হয় ব্রিটিশ কলোনিগুলোকে। কিন্তু ফ্রান্স আফ্রিকার সবগুলো দেশকে শর্তহীন স্বাধীনতা প্রদান করে নি।

ফ্রান্স তার কলোনিগুলোকে স্বাধীনতা প্রদানের সময় দুর্বল দেশগুলোর সাথে অর্থনৈতিক, সামরিক কিছু চুক্তি করে। আর এই চুক্তির গ্যাঁড়াকলে পড়ে দেশগুলো প্রতিনিয়তই হারাচ্ছে তাদের স্বকীয়তা।

ফ্রান্সের অর্থনৈতিক শোষণ:

ফ্রান্স আফ্রিকায় তার কলোনি গুলোকে স্বাধীনতা প্রদানের সময় দুর্বল রাষ্ট্র গুলোর দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এক অর্থনৈতিক ফাঁদ তৈরি করে। ফ্রান্স রাষ্ট্রগুলোর সাথে চুক্তি করে যে, তারা তাদের অর্জিত আয়ের সবটাই রাখবে FCFA ( franc for france african) নামক ব্যাংকে। এই FCFA তে আফ্রিকার ১৪ টি দেশ তাদের সব জাতীয় আয় জমা রাখে। দেশগুলো হলোঃ

(১ম আটটি দেশ পশ্চিম আফ্রিকান ফ্রাংক মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করে আর পরের ছয়টি দেশ মধ্য আফ্রিকান ফ্রাংক মুদ্রা হিসেবে ব্যবহার করে। )

১)      টোগো

২)      বেনিন

৩)      বুর্কিনা ফাসো

৪)      গিনি বিসাউ

৫)      সেনেগাল

৬)      আইভরিকোষ্ট

৭)      মালি

৮)      নাইজার

৯)      চাদ

১০)     ক্যামেরুন

১১)     মধ্য আফ্রিকা প্রজাতন্ত্র

১২)     কঙ্গো (ব্রাজাভিলা)

১৩)     নিরক্ষীয় গিনি

১৪)     গ্যাবন।

ইতালির ডেপুটি প্রাইম মিনিস্টারের মতে, ফ্রান্সের এই মুদ্রাভিত্তিক শোষণ আফ্রিকার মানুষকে বাধ্য করছে দেশ ত্যাগ করতে। তারা ইউরোপে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করে। এর ফলে দেখা যায় ভূমধ্য সাগরে নৌকা ডুবির ঘটনায় নিহতের ঘটনায় বেশিরভাগই FCFA-র অধিভুক্ত দেশের নাগরিক( ৩ নং ফটো)

FCFA কূটকৌশল

FCFA ভুক্ত প্রতিটি দেশ মুদ্রা হিসেবে ফ্রাংক ব্যবহার করে, যার নাম Currency of Franc for African সংক্ষেপে CFA। এর পাশাপাশি আফ্রিকার দেশগুলো তাদের সব সম্পদ FCFA তে জমা রাখতে বাধ্য। কিন্তু যখন খরচ করবার প্রয়োজন পড়ে তখন মাত্র ১৫% টাকা তারা উত্তোলন করতে পারবে।এরচেয়ে বেশি দরকার হলে আফ্রিকার দেশ গুলোকে নিজেদের টাকা নিজেদেরকেই ঋণ নিতে হবে FCFA থেকে। আবার এই ঋণ নেওয়ার পরিমাণ কখনো ২০% এর বেশি হতে পারবে না। আর সুদও দিত হবে কমার্শিয়াল রেটেই!

আফ্রিকান দেশগুলোর জমাকৃত টাকার ৬৫% ই FCFA খরচ দেখায় অপারেশনাল খাতে। FCFA মোট জমাকৃত টাকার ৮০% এর ও বেশি বিনিয়োগ করে নিজেদের নামেই। এ বিনিয়োগ থেকে প্রাপ্ত লাভের কোনো হিসাব কখনোই কোনো আফ্রিকান দেশকে দেওয়া হয় না! ধারণা করা হচ্ছে প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলার FCFA এর রিজার্ভে আছে।

কলোনিয়াল ঋণ:

কলোনি থাকার সময় ফ্রান্স আফ্রিকার দেশগুলোতে কিছু কিছু অবকাঠামো নির্মাণ করেছিলো। ঐ অবকাঠামোর খরচ দেখানো হয়েছিলো স্ব স্ব দেশের সরকারের খাত দিয়ে। বলা বাহুল্য, সব খরচই আফ্রিকান দেশগুলোর সরকারী ঋণ হিসেবে দেখানো হয়েছে। ফলশ্রুতিতে ঋণদাতা দেশ ফ্রান্সকে ঐ ঋণগুলো এখনও পরিশোধ করতে হচ্ছে স্বাধীন সার্বভৌম (!)আফ্রিকার দেশগুলোকে।

এরকম অসভ্যতা অন্য কোনো কলোনিয়াল শক্তি করেনি। ব্রিটিশ তো ভারতে অনেক অবকাঠামো নির্মাণ করেছে। যেমনঃ রেললাইন, কার্জন হল সহ আরো অনেক কিছু। তারা একটাকাও ঋণ দেখায়নি। অপরদিকে ফ্রান্স কলোনিয়াল আমলে শোষণ তো করছেই এখনও ঐ শোষণের সুদ নিতে চাচ্ছে! মানে এক গরু দুইবার জবাই।

প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধান:

পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার দেশগুলো যখন ফ্রান্সের কলোনি থেকে স্বাধীনতা অর্জন করে তখন ফ্রান্স সে দেশগুলোর সাথে খনিজ সম্পদ অনুসন্ধানের এক অসম চুক্তি সম্পাদন করে। চুক্তি অনুযায়ী কলোনিয়াল দেশগুলোর সব খনিজ সম্পদ উত্তোলনের প্রাথমিক দাবিদার হবে ফ্রান্স। ফ্রান্স যদি কখনো আগ্রহ না দেখা, তখনই কেবল সে দেশগুলো অন্য কোনো দেশ দিয়ে খনিজ সম্পদ উত্তোলন করতে পারবে!

বিগত শতাব্দীতে পশ্চিম ও মধ্য আফ্রিকার এই দেশ গুলোতে একের পর এক খনিজ ও প্রাকৃতিক সম্পদের সন্ধান মিলেছে। গত ৫০ বছরে আফ্রিকার বুকে একের পর এক প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদের খনি আবিস্কৃত হয়েছে। ফ্রান্সের সাথে প্রাকৃতিক সম্পদ অনুসন্ধানের চুক্তিতে আবদ্ধ অন্য দেশ গুলোতেও ডায়মন্ড, স্বর্ণ, আয়রন, টিম্বার সহ অন্যান্য মূল্যবান খনিজ সম্পদের ব্যাপক মজুদ বিদ্যমান।

গ্যাবনে আছে বিশাল ইউরেনিয়ামের মজুদ। আর ফ্রান্সের নিউক্লিয়ার রিঅ্যাক্টরগুলোর জন্য দরকার এই ইউরেনিয়াম।

ওমারের মৃত্যুর পর আজও গ্যাবনের ক্ষমতায় আছে তার ছেলে আলি ওমার বঙ্গো। ফ্রান্সের প্রতি তাদের আনুগত্যের বিষয়টা প্রকাশ পায় ওমার বঙ্গোর একটা উক্তি থেকে। যেখানে জ্যাক শিরাক (সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট) নিজেই আফ্রিকাকে শোষণের কথা স্বীকার করেছিলেন, সেখানে বঙ্গো বলেছিলেন, “গ্যাবনকে ছাড়া ফ্রান্স হচ্ছে ড্রাইভার ছাড়া গাড়ির মতো, আর ফ্রান্সকে ছাড়া গ্যাবন হচ্ছে জ্বালানী ছাড়া গাড়ির মতো।” অথচ বাস্তবে ফ্রান্সই দশকের পর দশক ধরে গ্যাবনের কাছ থেকে ইউরেনিয়াম জ্বালানি আদায় করে নিচ্ছে অত্যন্ত সুলভ মূল্যে।

এছাড়াও মালি, নাইজার, চাদ, টোগো, বেনিন, কঙ্গোর মাটির নিচে থাকা স্বর্ণ, ডায়মন্ড, আয়রন, পেট্রোলিয়ামসহ সকল খনিজ সম্পদ এক চেটিয়াভাবে উত্তোলন ও ভোগ করে যাচ্ছে ফ্রান্স।

আর তাইতো সাবেক ফরাসি প্রেসিডেন্ট ফ্রাঁসোয়া মিতেঁরা ১৯৫৭ সালে ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন, আফ্রিকার উপর নিয়ন্ত্রণ টিকিয়ে রাখতে না পারলে একবিংশ শতাব্দীর ইতিহাসে ফ্রান্সের কোনো জায়গা থাকবে না। পাঁচ দশক পর তার পরবর্তী প্রেসিডেন্ট জ্যাক শিরাক ২০০৮ সালে সেটা আবারও নিশ্চিত করে বলেছিলেন, আফ্রিকা না থাকলে ফ্রান্স তৃতীয় বিশ্বের তালিকায় ছিটকে পড়ত।

অবকাঠামো নির্মাণ:

ফ্রান্সের সাথে চুক্তিবদ্ধ এই দেশগুলোর সাথে অব- কাঠামো নির্মাণ নিয়েও ফ্রান্স একতরফা সুবিধা ভোগ করছে। এই দেশগুলোর সরকারী ভবন নির্মাণ, বিদ্যুৎ- তেল-গ্যাসের পাইপলাইন নির্মাণসহ সকল সরকারী কাজে প্রধান প্রায়োরিটি পায় ফরাসী কোম্পানিগুলো।

উদাহরন হিসেবে বলা যায়, আইভরিকোষ্টে একটা বাঁধ নির্মাণে চীনা এক কোম্পানি আগ্রহ দেখায় সবচেয়ে কম মূল্যে। বিপরীতে এক ফরাসী কোম্পানি খরচ দেখায় চীনা কোম্পানির দ্বিগুণ। নিয়মানু- যায়ী কাজটা পাওয়ার কথা চীনা কোম্পানি। কিন্তু না, কাজটা পায় ফরাসী কোম্পানি।

এভাবে প্রতিবছর অব- কাঠামো নির্মাণ সংক্রান্ত কাজে কোটি কোটি ডলার অবৈধভাবে উপার্জন করছে ফরাসি কোম্পানিগুলো।

আফ্রিকায় ফ্রান্সের সামরিক আগ্রাসনঃ

ফ্রান্সের ঔপনিবেশিক ক্ষমতার সঙ্গে তাল না মিলিয়ে স্বাধীনতার পক্ষে কথা বলায় কিংবা স্বাধীন থাকতে চাওয়ায় ১৯৬৩ সাল থেকে ২২ জন আফ্রিকান প্রেসিডেন্টকে হত্যা করেছে ফ্রান্স। দেশটির চক্রান্তের শিকার হয়ে প্রাণ হারানো এসব প্রেসিডেন্টের তালিকায় সর্বশেষ যুক্ত হওয়া নাম মুয়াম্মর গাদ্দাফি।

এসব হত্যা কিংবা অভ্যুত্থান ঘটানোর পেছনে ছিল ফ্রান্সের তিনটি গোয়েন্দা সংস্থা। আর এই সংস্থাগুলো হলো এসডিইসিই, ডিজিএসই এবং ডিএসটি। এগুলোই আফ্রিকায় অভ্যুত্থান ঘটানো এবং মহা- দেশটির বিভিন্ন দেশের প্রেসিডেন্টকে হত্যার জন্য দায়ী বলে উল্লেখ করে এক উপ-সম্পাদকীয় প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আফ্রিকান গ্লোব।

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর নিজে- কে ফ্রান্সের একমাত্র নেতা দাবি করা চার্লস ডি গলের আমল থেকেই ফ্রান্স কর্তৃপক্ষ আফ্রিকানদের সঙ্গে এমনটি করে আসছেন। ফ্রান্সের সরা সরি মদদে আফ্রিকায় যে পরিমাণ অভ্যুত্থান হয়েছে তাতে দেশটির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতে একটি অভিযোগ দায়ের করা যেতেই পারে বলে ওই উপ-সম্পাদকীয়তে পরামর্শ দেয়া হয়।

ফ্রান্স আফ্রিকায় যেভাবে হত্যা এবং লুটপাট করেছে সে সম্পর্কীয় বিভিন্ন ডকুমেন্টারি আফ্রিকান এবং ফ্রান্সের বিভিন্ন টেলিভিশন চ্যানেলে হরহামেশাই প্রচার করা হয়। ফ্রান্সের এসডিইসিই আফ্রিকাতে বিভিন্ন ভুয়া তথ্য ছড়ানোর জন্য কাজ করে থাকে।

আফ্রিকাকে নিজেদের অধীনে রাখতে সর্বক্ষণ কাজ করে যাচ্ছে ফ্রান্সের গোয়েন্দা সংস্থা ডিজিএসই। ডিএসটি নামের অপর একটি সংস্থা কাজ করে ফ্রান্সের অভ্যন্তরীণ ও বাহিরের নিরাপত্তা রক্ষায়। ফ্রান্স যাতে অভিবাসী সমস্যায় না পড়ে সেজন্যও কাজ করে এই সংস্থাটি। ডিজিএসই, ডিএসটি এবং এসডিইসিই নামের সংস্থাগুলো ছাড়া ফ্রান্সের মিলিটারি ইন্টিলিজেন্স আফ্রিকার বিভিন্ন সংঘর্ষে অপপ্রচার চালাতে কাজ করে।

মূলত চারটি সুফলের কারণে ডি গল কখনোই আফ্রিকার পূর্ণ স্বাধীনতা চাননি। এর প্রথম কারণ হচ্ছে, জাতি সংঘে ফ্রান্সের পক্ষে ভোট দেয়া দেশের সংখ্যা বৃদ্ধি। দ্বিতীয়ত, আফ্রিকার তেল, ইউরেনিয়াম, স্বর্ণ, কাঠ ও কোকোয়া বাজেয়াপ্ত করা। তৃতীয়ত ফ্রান্সের রাজনীতিতে অর্থায়ন। চতুর্থত যুক্তরাষ্ট্রের অনুচর হয়ে আফ্রিকাকে নিয়ন্ত্রণে রাখা। মূলত এই চারটি কারণে ফ্রান্স এমন একটি জাল তৈরি করেছে যা তার ঔপনিবেশিক ক্ষমতাকে ক্ষুণ্ণ না করে। এই কারণে আফ্রিকায় এখনও রক্ত ঝরছে।

সামরিক ঘাঁটি

আফ্রিকায় নিজেদের এক- চ্ছত্র আধিপত্য বিস্তার করার লক্ষ্যে ফ্রান্স এখানকার দেশ গুলোতে নিয়মিত সেনা অভিযান পরিচালনা করে। এর পাশাপাশি তার ৫ টি স্থায়ী সামরিক ঘাঁটি আছে আফ্রিকার বুকে। সেনেগাল, গ্যাবন, জিবুতি, রিইউনিয়ন, মায়োতি’তে ৫ টি স্থায়ী ঘাঁটির পাশাপাশি আরো কিছু দেশে ফ্রান্সের সৈন্য উপস্থিতি বিদ্য- মান। মৌরতানিয়া, বুর্কিনা ফাসো, নাইজার, মালি, চাদ, আইভরিকোষ্ট, মধ্যআফ্রিকা প্রজাতন্ত্র, ক্যামেরুন এমনই কয়েকটি হতভাগা দেশ!

টোগো

টোগোতে গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রথম রাষ্ট্রপতি সিলভানাস অলিম্পিওক ফ্রান্সের শোষণের বেড়াজাল ও বিভিন্ন অসম চুক্তি থেকে বের হয়ে আসার ঘোষণা দিয়েছিলেন। এর কিছুদিন পরেই তার বিরুদ্ধে এক অভ্যুত্থানের পর ১৯৬৩ সালের ১৩ জানুয়ারি তাকে হত্যা করা হয়। সেখানে ফ্রান্সের সরাসরি মদদ ছিল বলে স্বীকার করা হয়। ওই অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয়া এতিয়েন আইয়াদেমা এরপর প্রায় চার দশক ক্ষমতায় ছিলেন। এতিয়েন আইয়াদেমা তার চার দশকের শাসনামলে মূলত টোগোকে ফ্রান্সের গুদামঘরে পরিণত করেছেন।

নাইজার

ফ্রান্স নাইজার থেকে যেই দামে ইউরেনিয়াম কিন্‌ত তার চেয়ে বেশি দামে অন্য দেশে বিক্রির ঘোষণা দিয়েছিলেন দেশটির নেতা হামানি ডিওরি। তবে এই ঘোষণার জন্য তাকে জীবন দিতে হয়েছিল। কারণ ওই ঘোষণার পর নাইজারে অভ্যুত্থান হয় এবং তাকে হত্যা করা হয় নৃশংসভাবে। এভাবে মহাদেশের একের পর এক নেতার বিরুদ্ধে অভ্যুত্থান ঘটানোর পেছনে মদদ দান ও সরাসরি হত্যায় অংশ নেয় ফ্রান্স।

রাজনৈতিক হত্যাকান্ড

ফ্রান্সের পুতুল হতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণেই মহাদেশ- টির একের পর এক নেতাকে হত্যা করা হয়। যেসব আফ্রিকান প্রেসিডেন্টের ঘাতক ফ্রান্স:

১.       ১৯৬৩ সালে টোগোর প্রেসিডেন্ট সিলভানাস অলিম্পিওকে।

২.      ১৯৬৬ সালে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট জন-আগুয়ই ইরনসিকে।

৩.      ১৯৬৯ সালে সোমালিয়ার প্রেসিডেন্ট আব্দিরাখিদ- আলি শর্মেককে।

৪.      ১৯৭২ সালে জানজিবারের প্রেসিডেন্ট অ্যাবিড-আমানি কারুমকে।

৫.      ১৯৭৫ সালে মাদাগাস্কারের প্রেসিডেন্ট রিচার্ড রত্সিমন্দ্রাভকে।

৬.      ১৯৭৫ সালে চাদের প্রেসিডেন্ট ফ্রান্সোইস- এনগার্টা টম্বলবায়েকে।

৭.      ১৯৭৬ সালে নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুরতলা-রামাত মোহামেডকে।

৮.      ১৯৭৭ সালে কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট মারিয়েন জিউবাইকে।

৯.      ১৯৭৭ সালে ইথিওপিয়ার প্রেসিডেন্ট তিফেরি বান্তিকে।

১০.     ১৯৮১ সালে মিশরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার এল-সাদেতকে।

১১.     ১৯৮১ সালে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট উইলিয়াম রিচার্ড তোলবার্তকে।

১২.     ১৯৮৭ সালে বার্কিনো-ফাসোর প্রেসিডেন্ট থমাস শঙ্করকে।

১৩.     ১৯৮৯ সালে কোমোরসের প্রেসিডেন্ট আহম্মেদ আবদাল্লাকে।

১৪.     ১৯৮৯ সালে লাইবেরিয়ার প্রেসিডেন্ট শামুয়েল-ক্যানিয়ন ডিওকে।

১৫.     ১৯৯২ সালে আলজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মোহাম্মেদ বোদিয়াফকে।

১৬.     ১৯৯৩ সালে বুরুন্ডির প্রেসিডেন্ট মেলচিয়ার এনডেডায়কে।

১৭.     ১৯৯৪ সালে বুরুন্ডির প্রেসিডেন্ট সাইপ্রিন এন্টারিয়ামিরকে।

১৮.     ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডার প্রেসিডেন্ট জুভেনাল হাবিয়ারিমানাকে।

১৯.     ১৯৯৯ সালে নাইজারের প্রেসিডেন্ট ইব্রাহিম বারে- মেইনাসারাকে।

২০.     ২০০১ সালে কঙ্গোর প্রেসিডেন্ট লরেন্ট- ডিজায়ারড কাবিলাকে।

২১.     ২০০৯ সালে গিনি বিসাউয়ের প্রেসিডেন্ট বার্নার্ডো ভায়েরাকে।

২২.     ২০১১ সালে লিবিয়ার প্রেসিডেন্ট মুয়াম্মর গাদ্দাফিকে।

এছাড়া ২০১৩ সাল থেকে সন্ত্রাস বিরোধী যুদ্ধের নাম করে “সাহিল অঞ্চল” তথা মালি, মৌরতানিয়া, নাইজার ও চাদে ফ্রান্স তার ব্যাপক শক্তি প্রদর্শনের মহড়া দিচ্ছে যাতে করে ফ্রান্সের এই উপনি- বেশের বিরুদ্ধে কোনো আফ্রিকান আঙুল তুলতে না পারে।

ফরাসি ভাষা আগ্রাসনঃ

ফরাসি ভাষা বিশ্বের ৫ম বৃহত্তম ভাষা। অথচ ফ্রান্সের বাইরে ফরাসি জাতির উপস্থিতি কানাডা ছাড়া আর কোথাও তেমন নাই। তাহলে ফরাসি ভাষার এমন বুস্টিং কেমনে সম্ভব হলো?

ফরাসি ভাষাভাষী জনগোষ্ঠীর ৮০% ই হলো আফ্রিকার জনগণ। কলোনি থাকাকালীন ফ্রান্স এসব দেশের স্থানীয় ভাষাকে বাদ দিয়ে ফরাসি ভাষায় সবকিছু চালু করে। আর দরিদ্র আফ্রিকার মানষ যেখানে খেতেই পারে না ঠিক মত, সেখানে মাতৃভাষার রাষ্ট্রীয় করণ নিয়ে চিন্তা তো জাস্ট বিলাসিতা!

মোট ২১টি আফ্রিকান দেশের রাষ্ট্রভাষা হলো ফরাসি। রাষ্ট্র গুলো হলোঃ

১)      মালি

২)      নাইজার

৩)      বেনিন

৪)      বুর্কিনা ফাসো

৫)      আইভরিকোষ্ট

৬)      গিনি

৭)      টোগো

৮)      সেনেগাল

৯)      চাদ

১০)     মধ্য আফ্রিকান প্রজাতন্ত্র

১১)     ক্যামেরুন

১২)     কঙ্গো(গণতান্ত্রিক)

১৩)     কঙ্গো(রিপাবলিক)

১৪)     গ্যাবন

১৫)     নিরক্ষীয় গিনি

১৬)     জিবুতি

১৭)     মাদাগাস্কার

১৮)     কমোরোস

১৯) বুরুন্ডি

২০)     রুয়ান্ডা

২১      )সিচেলিস

এছাড়াও আলজেরিয়া, তিউনিসিয়া, মরক্কো, মৌরতানিয়াসহ আরো কয়েকটি আফ্রিকান দেশের বাণিজ্যিক ভাষা হিসেবে ব্যবহৃত হয় ফ্রান্স। ফরাসি রাষ্ট্রভষার মর্যাদা পেয়েছে বিশ্বের ২৯ টি রাষ্ট্রে, তার মধ্যে ২১ টিই রাষ্ট্র হলো আফ্রিকান!

ভাষার মাধ্যমে ফ্রান্স আফ্রিকায় তার উপনিবেশ চালাতে ব্যাপক সুবিধা লাভ করে। আফ্রিকার মেধাবী শিক্ষার্থীদের জন্য প্রতিবছর হাজার হাজার স্কলারশিপ প্রদান করে ফ্রান্স সরকার। আর এই মেধাবীরা দেশে গিয়ে ফ্রান্সের প্রভুত্ব টিকেয়ে রাখার দীক্ষাটাও পেয়ে থাকে ফ্রান্সে শিক্ষা নিতে গিয়ে।

সর্বোপরি, আফ্রিকার বেশির ভাগ মানুষেরই মাতৃভাষা হলো সাহিলি, আরবিসহ অন্যান্য উপ জাতিক ভাষা। কিন্তু শিক্ষা, চাকরি, বাণিজ্য সর্বক্ষেত্রে ফরাসি ভাষার ব্যবহার আফ্রিকানদের চূড়ান্তভাবে নিঃশেষ করে দিচ্ছে।

Saifuddin Ahmed বিষয় গুলো বিশ্লেষণ করে উপ- সংহার টেনেছেন এভাবে — আর আফ্রিকানদের এই রক্ত চোষার মধ্য দিয়েই ফ্রান্স হয়ে উঠেছে বিশ্বের বৃহৎ পরাশক্তি। আর সেই শক্তিবলে তারা নিয়মিত অপমান করে চলছে ইসলামকে। তাই আমাদের উচিত ফ্রান্সের উপনিবেশি- কতার বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো। তবেই ফ্রান্সকে থামানো সম্ভব। যাই হোক এর সঙ্গে দ্বিমত করা কঠিন।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

4 × two =

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য