স্বস্তি ফিরতে শুরু করেছে রাজধানীর কাঁচাবাজারে। বেশির ভাগ সবজির দামই কমেছে কেজিতে ১০ থেকে ১৫ টাকা। শীতকালীন সবজি বাজারে এলে দাম আরো কমার সম্ভাবনা দেখছেন বিক্রেতারা। তবে কিছুটা বেড়েছে চালের দাম। পেঁয়াজ রসুনের দাম বাড়লেও কমেছে আদা ও মুরগির দাম। নি¤œমুখী বেশির ভাগ মাছের দাম।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সবজির মধ্যে ঢেঁড়স, পটোল, ঝিঙে, চিচিঙ্গা ৫০-৬০ টাকা কেজিতে নেমেছে, যা গত সপ্তাহের চেয়ে প্রায় ২০ টাকা কম। এ ছাড়া বেগুন, করলা ও কাঁকরোল ৮০-১০০ টাকা ও পেঁপে ৪০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। কিছুদিন আগে এসব সবজির দাম ১০০ টাকার ওপরে ছিল। বাজারে ফুলকপি ৫০ টাকা থেকে কমে ৩০ টাকা এবং লাউ ৮০-১০০ টাকা থেকে ৫০-৬০ টাকায় নেমেছে। কাঁচা মরিচের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১২০-১৬০ টাকা দরে, দুই সপ্তাহ আগে যা ছিল ২৫০ টাকার ওপরে।
সবজি বিক্রেতারা বলছেন, শীতের সবজির সরবরাহ বাড়ছে। কিছুদিনের মধ্যে সবজির দাম আরো কমে আসবে। অবশ্য আলুর দাম কেজিপ্রতি ৫ টাকা বেড়ে ৬০-৬৫ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। ভারত থেকে আমদানি করা পেঁয়াজ ১২০ টাকা এবং দেশী পেঁয়াজ ১৫০ টাকা, প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ১২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে।
দুই সপ্তাহ আগেও ডিমের বাজার ছিল অস্থির। প্রতি ডজন ডিম ১৬০-১৭০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। সরকার দাম নির্ধারণ করে দেয়ার পর এ ভোগ্যপণ্যটির দাম কমে ১৫০-১৫৫ টাকায় নেমেছে। তবে এ দাম সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি। মালিবাগ বাজারের ডিম বিক্রেতা ইউনুস হোসেন বলেন, সবজির দাম কমেছে, যে কারণে এখন ডিমের দামও কমে আসছে। ভোক্তারা তুলনামূলক কম দামে শীতের নতুন সবজি পাচ্ছেন।
এদিকে, বাজারে সবজির দাম কিছুটা কমে আসায় স্বস্তির নিঃশ্বাস দেখা গেছে ক্রেতাদের মধ্যে। মিরপুর-৬ বাজারে ইসমাইল নামের এক ক্রেতা বলেন, শাক-সবজির দাম অনেকটাই কমে এসেছে। তবে আরেকটু কমলে আমাদের জন্য ভালো হয়। সরকার মনিটরিং বজায় রাখলে বাজার নাগালে রাখা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন। তিনি বলেন, আমরা স্বল্প আয়ের মানুষ, প্রতিদিন মাছ-গোশত খাই না। শাকসবজি খেয়েই বাঁচি, এগুলোর দাম বেশি থাকলে আমাদের সংসার চালাতে হিমশিম খেতে হয়।
আফসার হোসেন নামে অপর ক্রেতা বলেন, প্রায় মাসখানেক ধরে দেখছি বাজার চড়া, অথচ নতুন সরকারের কাছে মানুষের অনেক প্রত্যাশা ছিল। কিন্তু সে অনুযায়ী আমরা এখনো তেমন কিছুই দেখছি না। এই মুহূর্তে সরকারের উচিত বাজারে তদারকি বাড়ানো এবং যেকোনো মূল্যে এই নিয়ন্ত্রণ করা। এ ছাড়া সাধারণ মানুষের আশা-আকাক্সক্ষা পূরণে সরকার ব্যর্থ হবে।
কাওরানবাজারে আনিস নামে এক ক্রেতা বলেন, বাজারে শাক-সবজির দাম অনেকটাই কমে এসেছে। তবে আরেকটু কমলে আমাদের জন্য ভালো হয়। আমাদের প্রত্যাশা বিগত সরকার যা ১৬ বছরে পারেননি সেই কঠিন কাজটি এ যুগের তরুণদের দ্বারা অসম্ভব নয়। সবকিছু বিবেচনা করে বাজার সিন্ডিকেট ভাঙাসহ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের বিকল্প নেই। ভোক্তার স্বার্থ দেখার দায়িত্ব সরকারের। বস্তুত অসাধু ব্যবসায়ীরা কারসাজি করে সব ধরনের নিত্যপণ্যের বাজার অস্থির করে তোলে। উচ্চ মূল্যস্ফীতি সঠিকভাবে নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে অন্তর্বর্তী সরকারের অনেক সংস্কার কর্মসূচিই বাধাগ্রস্ত হবে। তাই ব্যবসায়ী সিন্ডিকেটকে আইনের আওতায় এনে বাজারে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে বাজার নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে তিনি মনে করেন।
এদিকে সবজির দাম প্রসঙ্গে বিক্রেতা আব্দুল হালিম বলেন, সপ্তাহ দুয়েকের মধ্যে সবজির দাম আরো কমে যাবে। আরেক বিক্রেতা রাব্বি আহমেদ বলেন, সরবরাহ বাড়ায় বাজারে কমতে শুরু করেছে শীতের সবজির দাম। ঘূর্ণিঝড়ের কোনো প্রভাব না পড়লে, সামনে দাম বাড়ার সম্ভাবনা নেই; বরং আরো কমবে। এদিন ব্রয়লার মুরগি ১৯০ থেকে ২০০ টাকা, সোনালি মুরগি ৩০০-৩২০ টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে, যা গত সপ্তাহেও একই দাম ছিল।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, রুই ২৪০ থেকে ২৬০ টাকা, পাবদা ৪০০ টাকা, ট্যাংরা ৮০০ টাকা, কৈ ২২০ টাকা, সিলভার কার্প ২২০ টাকা, পাঙ্গাশ ২০০ টাকা, তেলাপিয়া ২২০ টাকা, শিং ৮০০ টাকা, বোয়াল প্রতি কেজি ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।