Sunday, November 10, 2024
No menu items!

আমাদের মুসলিমউম্মাহ ডট নিউজে পরিবেশিত সংবাদ মূলত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সমাহার। পরিবেশিত সংবাদের সত্যায়ন এই স্বল্প সময়ে পরিসরে সম্ভব নয় বিধায় আমরা সৌজন্যতার সাথে আহরিত সংবাদ সহ পত্রিকার নাম লিপিবদ্ধ করেছি। পরবর্তীতে যদি উক্ত সংবাদ সংশ্লিষ্ট কোন সংশোধন আমরা পাই তবে সত্যতার নিরিখে সংশোধনটা প্রকাশ করবো। সম্পাদক

হোমযুগ জিজ্ঞাসাবাবা বেঁচে থাকলে এই আওয়ামী লীগ করতেন না

বাবা বেঁচে থাকলে এই আওয়ামী লীগ করতেন না

সাক্ষাৎকার: রেজা কিবরিয়া রাজনীতিক

২০১৮ সালে আইএমএফের চাকরি ছেড়ে ওয়াশিংটন থেকে দেশে ফেরেন ড. রেজা কিবরিয়া। তাঁর মূল পরিচয় অর্থনীতিবিদ হলেও নির্বাচনের আগের ওই সময়টিতে তিনি গণফোরামে যোগদান করেন। সাবেক অর্থমন্ত্রী প্রয়াত শাহ এ এম এস কিবরিয়ার ছেলে রেজা কিবরিয়া পরে ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে সংসদ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে আলোচনায় আসেন। নির্বাচনের পর গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে অংশ নেন। তবে নানা কারণে সম্প্রতি গণফোরাম থেকে পদত্যাগ করেন তিনি। এসব বিষয়ের পাশাপাশি সাম্প্রতিক রাজনৈতিক কয়েকটি প্রসঙ্গে তিনি কথা বলেন কালের কণ্ঠ’র সঙ্গে। সাক্ষাৎকার নিয়েছেন এনাম আবেদীন।

কালের কণ্ঠ : কী কারণে গণফোরাম ছাড়লেন?

কিবরিয়া : দেশের বিদ্যমান পরিস্থিতিতে অনেক কিছু বলার আছে। আমি বলতেও চাই। সেগুলো বলতে পারিনি। এ ছাড়া দলের ভেতরকার কিছু লোকের ব্যক্তিগত বিষয় ছিল। যেগুলো রেষারেষি হওয়ার মতো ঘটনা। কিন্তু এসবের মধ্যে আমি যুক্ত হতে চাই না।

কালের কণ্ঠ : বিএনপিকে নিয়ে বৃহত্তর ঐক্য?

কিবরিয়া : বিএনপিসহ উদারপন্থী আরো অনেক দল নিয়ে।

কালের কণ্ঠ : গণফোরাম কি এর বিপক্ষে?

কিবরিয়া : গণফোরাম চায়। কিন্তু ওই দলের মধ্যেই ছোট দল বড় দল নিয়ে কেউ কেউ প্রশ্ন তুলছে। তা ছাড়া দলের কেউ কেউ আমার অপছন্দের ব্যক্তি। আমি তাদের সঙ্গে রাজনীতি করতে চাই না। এখন বাইরে থেকে এ ব্যাপারে আমি কাজ করতে চাই।

কালের কণ্ঠ : পদত্যাগের চিঠি কিভাবে দিলেন?

কিবরিয়া : আগে কামাল হোসেন স্যারের সঙ্গে আলোচনা করে নিয়েছি। পরে উনার হাতে দিয়েছি।

কালের কণ্ঠ : তিনি কিছু বললেন ওই সময়?

কিবরিয়া : তিনি আমাকে অনেক স্নেহ করেন। তা ছাড়া পদে থাকার বিষয়ে অনিচ্ছার কথা কয়েক মাস ধরেই আমি উনাকে বলেছি। তিনি মেনে নিয়েছেন। উনার সঙ্গে কাজ করতে পারাটা আমার জীবনের অনেক বড় একটি অর্জন।

কালের কণ্ঠ : গণফোরাম থেকে পদত্যাগে আপনার রাজনৈতিক কোনো ক্ষতি?

কিবরিয়া : আমি মনে করি না কোনো ক্ষতি হয়েছে। আমি কার নেতৃত্ব মানব সেটাই একটা ব্যাপার আছে। ড. কামাল হোসেনের মতো আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন একজন ব্যক্তির সঙ্গে কাজ করতে পারাটা অবশ্যই প্রিভিলেজ। তা ছাড়া আর কী করা যেত। আমি চেষ্টা করেছি।

কালের কণ্ঠ : আপনার বাবা শাহ এ এম এস কিবরিয়া আওয়ামী লীগ সরকারের অর্থমন্ত্রী ছিলেন। সেদিক থেকে আওয়ামী লীগের রাজনীতিতেই আপনার থাকার কথা। কিন্তু নির্বাচন করলেন ধানের শীষ মার্কা নিয়ে। এ নিয়ে মানুষের জানার কৌতূহল রয়েছে।

কিবরিয়া : প্রথমত, আমার বাবা যে রাজনীতি করতেন, আর এখনকার আওয়ামী লীগ যে রাজনীতি করছে দুটি এক নয়। আমার মনে হয়, আমার বাবা বেঁচে থাকলেও এখন আওয়ামী লীগের সঙ্গে থাকতেন না। কারণ অনেক কিছু হয়েছে আওয়ামী লীগ যেটি বলে বা বিশ্বাস করে সেখান থেকে তারা সরে এসেছে। তাই বলব, আমি আদর্শ থেকে সরে আসিনি। তবে ওই দলে যেতে চাই না। দ্বিতীয়ত, পারিবারিক রাজনীতির সূত্র ধরে ওই দলে যেতেই হবে—বাংলাদেশের এই কালচার বা স্টাইলের সঙ্গেও অমি একমত নই।

কালের কণ্ঠ : আওয়ামী লীগের সঙ্গে দূরত্বের কারণ বলবেন?

কিবরিয়া : দলটিকে এখন আমার আদর্শহীন মনে হয়। এককালে সত্যিই আওয়ামী লীগ অত্যন্ত জনপ্রিয় একটি দল ছিল। এখন আমার অবাক লাগে, দলের ভেতরে যাঁরা আছেন তাঁরা এই দলের দশা দেখে কিছু বলছেন না কেন।

কালের কণ্ঠ : ধানের শীষের জোটের সঙ্গে তো জামায়াত ছিল। এটা কি আপনার আদর্শের সঙ্গে যায়?

কিবরিয়া : জামায়াত কার সঙ্গে যায় বা যায় না সেটি নিয়ে অনেক কিছু বলা যায়। ১৯৯০ সালে একই মঞ্চে এখনকার সরকারি দলের অনেককে দেখেছি। কেউ কেউ জামায়াতের সঙ্গে তখন হ্যান্ডসেইক করেছেন। তখন তো গেছে। তার চেয়ে বড় কথা, সরকারবিরোধী শক্তির মধ্যে বিএনপি অবশ্যই বড় ফ্যাক্টর ছিল। অবশ্য গণফোরামে তখন সদ্য যোগ দিয়েছি। ফলে জানা ছিল না যে তারা ধানের শীষে নির্বাচন করবে। শেষ পর্যন্ত দলের নেতৃত্বের সিদ্ধান্ত আমাকে মেনে নিতে হয়েছে।

কালের কণ্ঠ : আপনার বাবা প্রয়াত কিবরিয়া সাহেবের বিচারপ্রক্রিয়ার ধীরগতির কারণ জানা আছে?

কিবরিয়া : আওয়ামী লীগের প্রতি এটাও একটা রাগের কারণ। বিএনপির পর আওয়ামী লীগের আরো ১২ বছর কেটে গেল। এতে বোঝা যায়, আওয়ামী লীগ এই বিচার নিয়ে কতটুকু সিনসিয়ার বা সিরিয়াস। এ ঘটনায় পারিবারিকভাবে আমরা খুবই অসন্তুষ্ট। তারা সুষ্ঠু তদন্ত করতে পারেনি বা চায়নি কেন সেটি খুবই রহস্যময় হয়ে আছে।

কালের কণ্ঠ : তথাকথিত ‘তৃতীয় শক্তি’র আলোচনা ও গুঞ্জনে অনেক সময়ই আপনার নাম আসে। বলা হয়, তৃতীয় শক্তির চোখ আপনার দিকে রয়েছে। কী বলবেন?

কিবরিয়া : এটা একটা সুখবর। এক ধরনের ফ্লাটারি। তবে আমি বলব, তৃতীয়, পঞ্চম বা ষষ্ঠ যে শক্তিই জনগণের রায় পেয়ে ক্ষমতায় আসুক অসুবিধা কী! রাজনৈতিক প্রতিযোগিতা তো খারাপ জিনিস নয়। হয়তো এতে প্রথম বা দ্বিতীয় শক্তি অসন্তুষ্ট হতে পারে। জনগণ এতে অসন্তুষ্ট হবে বলে মনে হয় না।

কালের কণ্ঠ : আপনার নাম আসার কারণ জানতে চাই…

কিবরিয়া : এটা আমি জানি না কেন? আমি এ ধরনের কোনো খবর পাইনি। আপনি আগে জানতে পারলে আমাকে জানাবেন। এটা ভালো জিনিস। তবে আমার লক্ষ্য খুবই সোজা এবং সরল। আমি সত্যিকার অর্থে আইএমএফের অনেক ভালো একটা চাকরি ছেড়ে ২০১৮ সালে ওয়াশিংটন থেকে দেশে এসেছি। দেশকে কিছু কনট্রিবিউট করার জন্য।

কালের কণ্ঠ : এখন কি মনে হয় ভুল হয়েছে?

কিবরিয়া : না, ঠিকই হয়েছে। স্যাক্রিফাইস করার প্রয়োজন মনে করেছি। আমার বাচ্চারা অনেক ভালো স্কুলে পড়ত। অনেক ভালো মানের জীবনযাত্রা ফেলে রেখে এখানে এসেছি।

কালের কণ্ঠ : সামনে ভালো কিছু দেখতে পাচ্ছেন?

কিবরিয়া : একদিন এ দেশে অবশ্যই ভালো কিছু হবে। সেখানে আমি কনট্রিবিউট করতে পারব কি না জানি না। তবে আমার বাবা দেশ ও জনগণের সেবা করার শিক্ষা আমাদের দিয়ে গেছেন। তিনি বলতেন, এই দেশ তোমাকে প্রডিউস করেছে। সো, তোমাকে অবশ্যই দেশকে কিছু দিতে হবে।

কালের কণ্ঠ : এটা কি রাজনীতি নাকি অন্য কোনো সামাজিক সেবায় যুক্ত হয়ে করতে চাইছেন?

কিবরিয়া : আল্লাহ যখন সুযোগ করে দেবেন তখন অবশ্যই পারব। তবে কিভাবে সেটি এখনই বলতে পারছি না। এখনই কোনো রাজনৈতিক দলে যোগদান করছি না। তবে বিশ্বাস করি, অবশ্যই ভালো সুযোগ হবে। যদি না হয় অন্তত অন্যায়ের পক্ষে ছিলাম না এই সান্ত্বনা থাকবে।

কালের কণ্ঠ : সীমান্ত হত্যা বন্ধে কড়া বিবৃতি, ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচন পরিস্থিতি পর্যাালোচনা করে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাওয়ার বিষয়ে আপনার প্রস্তাবনা মানা হয়নি; এটা কি সত্যি?

কিবরিয়া : গণফোরাম ও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট এটাতে সরাসরি না করেনি। তবে শেষ পর্যন্ত কোনো কর্মসূচি নেওয়া হয়নি এটা ঠিক। তবে এখন আমি দলের বাইরে। এ জন্য মানুষের অধিকারের ইস্যুতে কথা বলা দরকার বলে মনে করি। যদিও কিছু ইস্যু এখন পুরনো হয়ে গেছে।

কালের কণ্ঠ : নির্বাচন নিয়ে কিছু বলতে চাইছেন?

কিবরিয়া : ২০১৮ সালে অনুষ্ঠিত নির্বাচন একটা ফ্রড। তবে এই নির্বাচনের প্রয়োজন ছিল আওয়ামী লীগকে এক্সপোজ বা স্বরূপ উদঘাটন করার জন্য।

কালের কণ্ঠ : কিন্তু বিএনপি কি সঠিক রাজনীতির পথে আছে?

কিবরিয়া : বিএনপির খুব কঠিন অবস্থা চলছে। যেভাবে তাদের নামে লাখ লাখ মিথ্যা মামলা সরকারে দিচ্ছে, সেগুলো মোকাবেলা করা খুবই কঠিন। তবে দলটির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার বয়স ২০ বছর কম এবং শারীরিক অবস্থা ভালো থাকলে পরিস্থিতি ভিন্নরকম হতো।

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

1 × five =

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য