বারবার তওবার পর গুনাহ হয়ে যাচ্ছে? বারবার তওবার পরেও পাপের পুনরাবৃত্তি হয়ে যায়। এমনটা অনেকেরই হয়। বিশেষত বর্তমান সময়ে ইসলামকে জীবনে ধারণ করে চলতে চাওয়া তরুণেরা এ সমস্যার সম্মুখীন হন সবচে বেশি। এভাবে তারা মানসিক যন্ত্রণায় ভুগতে থাকেন। কখনাে নিজের উপর হতাশ হয়ে পড়েন।
জেনে রাখা উচিত যে, কুরআন এমন বান্দাদের জন্য হতাশার পরিবর্তে আশার কথা জানিয়ে দেয়। পবিত্র কুরআনে নবীজি (সা.) কে সম্বােধন করে আল্লাহ তাআলা বলেন
قل يعبادي الذين أشرفوا على أنفسهم لا تفنظوا من خفة الله، إن الله يغفر الذنوب جميعا، إنه هو الغفور الرحيم
অর্থঃ বলুন, হে আমার বান্দাগণ! তােমরা যারা নিজেদের প্রতি অবিচার করেছ আল্লাহর অনুগ্রহ হতে নিরাশ হয়াে না; নিশ্চয় আল্লাহ্ সমস্ত গুনাহ ক্ষমা করে দেবেন। নিশ্চয় তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।” (সূরা যুমার, আয়াত: ৫৩]
আল্লাহর ক্ষমার দরজাও কখনাে বন্ধ থাকে না। এক হাদীসে কুদসীতে নবীজি (সা.) বলছেন, আল্লাহ বলেন
يا ابن آدم إنك ما دعوتني ورجوتني غفرت لك على ما كان منك ولا أبالي ، يا ابن أدم لو بلغت ذنوبك عنان السماء ثم استغفرتني غفرث لك، يا ابن آدم إنك لو أتيتني بقراب الأرض خطايا ثم لقيتني لا تشرك بي شيئا الأتيتك بقرابها مغفرة
অর্থঃ হে আদম সন্তান! তুমি যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে ডাকতে থাকবে এবং আমার কাছে আশা করতে থাকবে, আমিও তােমাকে ক্ষমা করতে থাকবাে। হে আদম সন্তান! তােমার গুনাহ যদি আসমান পর্যন্তও ভরে ওঠে, এরপর তুমি আমার কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করাে, আমি তােমাকে ক্ষমা করে দিব। হে আদম সন্তান! যদি তুমি আমার কাছে সমগ্র জমিন পরিমাণ ভুল-ভ্রান্তি নিয়ে এসেও উপস্থিত হও, আর তুমি আমার সঙ্গে কাউকে শরীক করনি, তাহলে আমিও এই পরিমাণ ক্ষমা নিয়েই তােমার কাছে আসব। [তিরমিযি, হাদীসনং:৩৫৪০]
তাওবার মধ্যে নিম্নলিখিত বিষয়ের উপস্থিতি একান্ত জরুরি। নতুবা তওবা সম্পুর্ন হয় না।
১. পাপের জন্য অনুতপ্ত হওয়া , লজ্জিত হওয়া ও অনুশােচনা করা,
২. পাপ পরিত্যাগ করা বা গুনাহর কাজ ছেড়ে দেওয়া এবং
৩. ভবিষ্যতে আর কখনাে পাপ না করার আন্তরিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা ও আল্লাহর কাছে আন্তরিক ও দৃঢ় প্রতিজ্ঞা করা।
৪. আল্লাহর আনুগত্যে নিজেকে সমর্পণ করা
৫. মহান আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া
সুতরাং, তাওবার ভিতর অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যৎ- তিনটি কালের সাথে সম্পর্ক বিদ্যমান:
১. অতীতের সাথে কৃত পাপের লজ্জিত হওয়ার সম্পর্ক। ২. বর্তমানের সাথে গুনাহর কাজ ছেড়ে দেওয়ার সম্পর্ক।
৩. ভবিষ্যতের সাথে গােনাহ না করার অঙ্গীকারের সম্পর্ক।
যদি কোনাে ব্যক্তি তার কৃত পাপের জন্য অনুতপ্ত না হয় বা তা পরিত্যাগের ইচ্ছা না করে, তাহলে তার মৌখিক তওবা উপহাস ছাড়া আর কিছু নয়। মৌখিক তওবা প্রকৃত তওবা নয়। আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়া তাওবার। একটি প্রকাশ।
তবে তওবার শর্ত পূরণ ছাড়া শুধু ইসতিগফার বা আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাওয়াতে পরিপূর্ণ তাওবা হয় না। কেউ যদি তওবার শর্ত পূরণ না করে শুধু মুখে বলে ‘আমি তাওবা করছি’ তাহলে তা একটি মিথ্যাচার।
সুতরাং সর্বদা আল্লাহর কাছে আপনার গুনাহের জন্য ক্ষমা চাইতে থাকুন এবং বিশ্বাস রাখুন, নিশ্চিতভাবে আল্লাহ আপনার গুণাহকে মাফ করে দেবেন। আল্লাহ কোথাও বান্দার মা প্রার্থনাকে প্রত্যাখ্যানের কথা বলেননি। কেউ যদি কখনাে আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করে, তবে আল্লাহ কখনােই বলেন না- “আমি তােমাকে ক্ষমা করব না।”
তিনি সবসময়ই আপনাকে ক্ষমা করার জন্য প্রস্তুত আছেন। যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি আপনার গুনাহকে স্বীকার করেন, আন্তরিকভাবেই আল্লাহর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেন এবং প্রতিজ্ঞা করেন- ঐ গুনাহের কাজ আপনি দ্বিতীয়বার করবেন না, আপনি আল্লাহর ক্ষমা পাওয়ার যােগ্য থাকেন। যদিও আপনার মনের ভুলে আবার গুনাহ করে ফেলেন, তবুও যতক্ষণ আপনার মাঝে প্রতিজ্ঞা থাকে আপনি ঐ গুনাহ থেকে চিরতরে বিরত হবেন, আল্লাহর ক্ষমার দরজা আপনার জন্য খােলা থাকবে।
সুতরাং, গুনাহ আমাদের দ্বারা হয়ে যেতেই পারে। তবে সর্বদা আমাদের উচিত গুনাহের উপর থেকে না গিয়ে ক্ষমার জন্য আল্লাহর কাছে নিজেকে মেলে ধরা।
আল্লাহ আমাদের সকলের যাবতীয় গুনাহকে ক্ষমা করে দিন এবং জীবনে স্থিরতা দান করুন।
নিম্নে কিছু তাওবা-ইস্তেগফার এর জন্য দু’আ দেওয়া হলঃ
তাওবা-ইস্তেগফার এর জন্য
দু’আ
হাদিসে বর্ণিত তাওবার কতিপয় দোয়া::
দোয়া-১:
উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা-হ।
أستغفر الله
অনুবাদঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি।
প্রতি ওয়াক্তের ফরয সালাতে সালাম ফিরানাের পর রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এই দোয়া ৩ বার পড়তেন। [(মিশকাত-৯৬১]
দোয়া-২;
أستغفر الله وأتوب إليه
উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা-হা ওয়া আতূবু ইলাইহি।
অনুবাদঃ আমি আল্লাহর ক্ষমা প্রার্থনা করছি ও তাঁর দিকে ফিরে আসছি। রাসুলুল্লাহ (সাঃ) প্রতিদিন ৭০ বারের অধিক তাওবা ও ইসতিগফার করতেন। বুখারী-৬৩০৭]
দোয়া-৩:
رب اغفر لي وثب علي إنك أنت التواب
الرحيم الغفور
উচ্চারণঃ রাব্বিগ্ ফিরলী, ওয়া তুব আলাইয়্যা, ইন্নাকা আনতাত তাওয়া-বুর রাহীম। দ্বিতীয় বর্ণনয় “রাহীম”-এর বদলে: ‘গাফুর’।
অনুবাদঃ হে আমার প্রভু, আপনি আমাকে ক্ষমা করুন এবং আমার তাওবা কবুল করুন। নিশ্চয় আপনি মহান তাওবা কবুলকারী করুণাময়। দ্বিতীয় বর্ণনায়: তাওবা কবুলকারী ও ক্ষমাকারী।
রাসুলুল্লাহ (সাঃ) মসজিদে বসে এক বৈঠকেই এই দোয়া ১০০ বার পড়েছেন। (আবূ দাউদ-১৫১৬, ইবনু মাজাহ-৩৮১৪, তিরমিযী-৩৪৩৪, মিশকাত-২৩৫২]
দোয়া-৪;
أستغفر الله الذي لا إله إلا هو الحى القيوم
وأثوب إليه
উচ্চারণঃ আস্তাগফিরুল্লা-হাল্লাযী লা- ইলা-হা ইল্লা- হুওয়াল হাইয়্ুল কইয়্যূম ওয়া আতুবু ইলায়হি।
অনুবাদঃ আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাই, তিনি ছাড়া প্রকৃতপক্ষে কোন মা’বুদ নেই, তিনি চিরঞ্জীব, চিরস্থায়ী
এবং তাঁর কাছে তাওবাহ্ করি। এই দোয়া পড়লে আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন-যদিও সে যুদ্ধক্ষেত্র হতে পলায়নকারী হয়। [আবু দাউদ-১৫১৭, তিরমিযী-৩৫৭৭, মিশকাত-২৩৫৩]
দোয়া-৫:
اللهم أنت ربي لا إله إلا أنت خلقتني وأنا عبدك وأنا على عهدك ووعدك ما استطغث أعوذ بك من شر ما صنعت أبوء لك بنعمتك علي وأبوء لك بذنبي فاغفر لي فإنه لا يغفر الذنوب إلا أنت
উচ্চারণঃ আল্লাহুম্মা আনতা রব্বী লা-ইলাহা ইল্লা আনতা খালাক্কতানী ওয়া আনা আ’বদুকা ওয়া আনা আ’লা আদিকা ওয়া ওয়াদিকা মাসতাত’তু আউযুবিকা মিন শারি মা ছা’নাতু আবূউলাকা বিনি’মাতিকা আ’লাইয়্যা ওয়া আবূউলাকা বিযানবী ফাগ্ফিলী ফাইন্নাহু লা-ইয়াগফিরুনূবা ইল্লা আনতা
অনুবাদঃ হে আল্লাহ তুমিই আমার প্রতিপালক। তুমি ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তুমিই আমাকে সৃষ্টি করেছ। আমি তােমারই গােলাম। আমি যথাসাধ্য তােমার সঙ্গে প্রতিজ্ঞা ও অঙ্গীকারের উপর আছি। আমি আমার সব
কৃতকর্মের কুফল থেকে তােমার কাছে পানাহ চাচ্ছি। তুমি আমার প্রতি তােমার যে নিয়ামত দিয়েছ তা স্বীকার করছি। আর আমার কৃত গুনাহের কথাও স্বীকার করছি। তুমি আমাকে মাফ করে দাও। কারন তুমি ছাড়া কেউ গুনাহ ক্ষমা করতে পারবে না। এই দোয়া সকালে পড়ে রাতের আগে মারা গেলে অথবা রাতে পড়ে সকালের আগে মারা গেলে সে জান্নাতে যাবে।
[বুখারী-৬৩০৬]
আল্লাহ সুবহানাহু ওয়া তা’য়ালা আমাদের তাওবা বেশি বেশি করার তাওফীক দিন। ওমা তাওফীকি ইল্লা বিল্লাহ,
আল্লাহুম্মা আমিন।