Sunday, December 10, 2023

আমাদের মুসলিমউম্মাহ ডট নিউজে পরিবেশিত সংবাদ মূলত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সমাহার। পরিবেশিত সংবাদের সত্যায়ন এই স্বল্প সময়ে পরিসরে সম্ভব নয় বিধায় আমরা সৌজন্যতার সাথে আহরিত সংবাদ সহ পত্রিকার নাম লিপিবদ্ধ করেছি। পরবর্তীতে যদি উক্ত সংবাদ সংশ্লিষ্ট কোন সংশোধন আমরা পাই তবে সত্যতার নিরিখে সংশোধনটা প্রকাশ করবো। সম্পাদক

হোমদাওয়াবিজয় তো শুধুমাত্র আল্লাহর থেকেই আসে

বিজয় তো শুধুমাত্র আল্লাহর থেকেই আসে

বিজয় তো শুধুমাত্র আল্লাহর থেকেই আসে

আল্লাহ্ সুবহানাহু ওয়া তা’আলা বলেছেন,

‘‘…এবং বিজয় তো শুধুমাত্র আল্লাহর থেকেই আসে’’ [সূরা আলি ইমরান ৩: ১২৬]

এটি এমন একটি আয়াত যেখানে কঠোরতম এক সীমারেখার কথা স্মরণ করানো হয়েছে। এখানে ‘শুধুমাত্র আল্লাহর থেকেই’- কথাটির মাঝে একটি না-বোধক সুর আছে; অর্থাৎ এখানে সীমারেখা হলো যে, বিজয় অন্য কোন কারণে আসবে না; এটি শুধুমাত্র আল্লাহর তরফ থেকে আসবে, যিনি সুবহান (সুমহান), যার কোন শরীক নেই। একমাত্র তাঁর অনুমতিতেই বিজয় আসবে, কোন পার্থিব বিষয়ের আধিক্যের দ্বারা এই বিজয় লাভ করা সম্ভব নয় যতক্ষণ না আল্লাহ্ ইচ্ছা করেন। আর হুনায়নের যুদ্ধে যখন মুসলিমদের মাঝে এই বিশ্বাসের অভাব দেখা দেয়, অর্থাৎ তারা যখন তাদেরসংখ্যাধিক্যের কারণে সন্তুষ্ট ছিল, তখনই আল্লাহ্ তাদের পরাজয় আস্বাদন করান যাতে তারা বুঝতে পারে যে, সংখ্যা বা সরঞ্জাম কোন কিছুই কাজে আসবে না যদি আল্লাহর অনুমতি না থাকে। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেছেন,

‘‘সত্যিই আল্লাহ্ তোতোমাদের বিজয় দিয়ে বহু ক্ষেত্রে এবং হুনায়নের যুদ্ধের দিনে যখন তোমাদেরকেতোমাদের সংখ্যাধিক্য উৎফুল্ল করেছিলকিন্তু তা তোমাদের কোন কাজে আসেনি এবংবিস্তৃত হওয়া সত্ত্বেও পৃথিবী তোমাদের জন্য সংকুচিত হয়েছিল এবং পরে তোমরাপৃষ্ঠপ্রদর্শন করে পলায়ণ করেছিলেঅতঃপর আল্লাহ্ তাঁর নিকট থেকে তাঁর রাসূল মুমিনদের উপর প্রশান্তি বর্ষণ করেন এবং এমন এক সৈন্য বাহিনী অবতীর্ণকরেন যা তোমরা দেখতে পাওনি এবং তিনি কাফিরদের শাস্তি প্রদান করেনইহাইকাফিরদের কর্মফল’’ [সূরা আত-তাওবাহ ৯: ২৫-২৬]

সুতরাং আল্লাহ্, মহিমান্বিত তিনি, তাদেরকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছেন কিভাবে তিনি বহুবার কমসংখ্যক হওয়া সত্ত্বেও তাদের বিজয় দান করে উৎফুল্ল করেছেন, আর যখন তারা নিজেদের উপর সন্তুষ্ট ছিল এবং তাদের সংখ্যার উপর ভরসা করছিল- তখন তা তাদের কোনই কাজে আসেনি, ফলশ্রুতিতে তারা পরাজিত হন। এই পরাজয়ের পর তিনি তাদের আবার বিজয় দিয়ে স্মরণ করিয়ে দেন যে, সংখ্যাধিক্য দিয়ে কিছুই হবে না, বিজয় আসবে শুধুমাত্র আল্লাহর তরফ থেকে। সুতরাং এই পরাজয়ের মাধ্যমে তিনি তাদেরকে পূর্বের (মজবুত ঈমান ও সকল ব্যাপারে একমাত্র আল্লাহরই উপরে ভরসা করা সেই) অবস্থায় ফিরিয়ে আনেন যার অনুপস্থিতি কিছুজনের মধ্যে দেখা দিয়েছিল। সেই ঈমান হলোঃ‘‘…এবং বিজয় তো শুধুমাত্র আল্লাহর থেকেই আসে’’

একইরকম আরেকটি আয়াতে তিনি বলেছেন,

‘‘হে মুমিনগণ তোমাদের হলো কি যেযখন তোমাদেরকে আল্লাহর পথে অভিযানে বের হতে বলা হয় তখন তোমরা যমীনকে আকড়ে ধর?..’’

এর পরপরই তিনি বলেছেন,

‘‘যদি তোমরাঅভিযানে বের না হওতবে তিনি তোমাদের মর্মন্তুদ শাস্তি দেবেন এবং অপরজাতিকে তোমাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন এবং তোমরা তাঁর কোন ক্ষতিই করতে পারবেনাআল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমানযদি তোমরা তাকে সাহায্য না কর তবেআল্লাহ্ তো তাকে সাহায্য করেছেন যখন কাফিররা তাকে বহিষ্কার করেছিল এবং সেছিল দুইজনের দ্বিতীয়জনযখন তারা উভয়ে গুহার মধ্যে ছিল’’ [সূরা আত-তাওবাহ ৯: ৩৮-৪০]

অর্থাৎ আল মাওলা (আল্লাহ), মহিমান্বিত তিনি, মু’মিনদের আদেশ করছেন অভিযানে বেরিয়ে পড়তে এবং ঘরে বসে থাকার পরিণতির ব্যাপারে সতর্ক করে দিচ্ছেন এবং ঘোষণা দিচ্ছেন যে, তিনি তাদের পাল্টে অন্য এক জাতি সৃষ্টি করবেন, ‘‘… আল্লাহ্ সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান’’। এর তিনি তাঁর ক্ষমতার কিছু নিদর্শন স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন- যেমন কিভাবে তিনি তারঁ রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে হিজরতের সময় মক্কার কাফিরদের বিরুদ্ধে পার্থিব কোন সরঞ্জাম ছাড়াই সাহায্য করেছেন। সুতরাং তাদেরকে পূর্বের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে চেয়েছেন, যখন তারা দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতো, ‘‘…এবং বিজয় তো শুধুমাত্র আল্লাহর থেকেই আসে’’

এভাবেই আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেছেন,

‘‘তোমরাতাদেরকে হত্যা করনি বরং আল্লাহই তাদেরকে হত্যা করেছেনএবং যখন তুমিনিক্ষেপ করেছিলে তখন তুমি নিক্ষেপ করনিআল্লাহই নিক্ষেপ করেছিলেন,…’’ [সূরা আল আনফাল ৮: ১৭]

সুতরাং তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) তাদেরকে ‘নিক্ষেপ’ করার কথা উল্লেখ করে প্রস্তুতি নেয়া বা সতর্ক থাকার আবশ্যকতা স্মরণ করিয়ে দিয়েছেন। নিশানা করা এবং লক্ষ্যবসত্মুতে আঘাত করার কৃতিত্ব তাঁরই, ‘‘… আল্লাহই তাদেরকে হত্যা করেছেন… আল্লাহই নিক্ষেপ করেছিলেন,…’’ এর দ্বারা তিনি বুঝিয়েছেন যে, প্রস্তুতি গ্রহণ করা আবশ্যক হলেও শুধুমাত্র এর দ্বারাই কোন বিজয় আসে না; বিজয় আসে শুধুমাত্র তাঁরই তরফ থেকে; সফলতা বা অর্জনও (তৌফিক) আসে তাঁর তরফ থেকে।

এ ক্ষেত্রে দুইটি বিষয় মনে রাখা দরকারঃ

প্রথমতঃ বিজয় শুধুমাত্র আল্লাহর তরফ থেকে আসে, আর তাঁর কাছ থেকে এটি পেতে হলে অবশ্যই প্রস্তুতি নিতে হবে- যা তিনি এক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক করেছেন। আর আমরা ‘ঈমানভিত্তিক প্রসত্মুতি’- সংক্রান্ত আলোচনায় উল্লেখ করেছি যে,আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) মু’মিনদেরকে বিজয় দেয়ার দায়িত্ব গ্রহণ করেছেন যারা তাঁর দ্বীনকে সাহায্য করে।তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেছেন,

‘‘মুমিনদের বিজয় দেয়া আমার দায়িত্ব’’ [সূরা আর রূম ৩০: ৪৭]

এবং তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেন,

‘‘আল্লাহ্ নিশ্চয় তাদেরকে সাহায্য করেন যারা আল্লাহকে সাহায্য করে’’ [সূরা হাজ্জ ২২: ৪০]

এবং সেখানে আমি উল্লেখ করেছি যে, বিজয়ের যোগ্যতা অর্জন করতে দুই ধরণের প্রস্তুতি গ্রহণ করা আবশ্যক-ঈমানের প্রস্তুতি এবং ‘সরঞ্জামেরপ্রস্তুতি। আর এর মানে হলো নিরন্তর সংগ্রাম ও সাধনা; দাওয়া ও ধৈর্য্য। এরমাধ্যমে আমি সেইসব অলস ও প্রতিক্রিয়াহীন মানুষকে স্মরণ করাতে চেয়েছি যারা আল্লাহর দ্বীনকে সাহায্য না করেই তাঁর কাছ থেকে বিজয় প্রত্যাশা করে; একই তাদেরকেও স্মরণ করিয়ে দিতে চাই যারা ইসলামের জন্য কাজ করছেন অথচ জিহাদের রাস্তায় নামেননি এবং প্রস্তুতিও নেননি; যা আল্লাহ্ তাঁর দ্বীনের বিজয়ের জন্য আবশ্যক করেছেন। আল্লাহ্ তা‘আলা বলেন, ‘‘যারা মুমিন হয়ে আখিরাত কামনা করে এবং তার জন্য যথাযথ চেষ্টা করেতাদের প্রচেষ্টা পুরস্কারযোগ্য’’ [সূরা বনী ইসরাইল ১৭: ১৯]

দ্বিতীয়তঃতাদেরকে মনে করিয়ে দিতে চাই যারা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ে পড়েছেন; তারা এমনটি আশাই করতে পারেন না যে, মুসলিমরা জেগে উঠবে এবং এই অপমান ও বঞ্চনা থেকে মুক্ত হবে। যারা নিরাশ হয়ে বসে আছেন এই ভেবে যে, মুসলিমরা কাফির বাহিনীকে পরাভূত করতে পারবে না যারা সর্বদা প্রসত্মুত রয়েছে। তুমি হয়তো তাদের কাউকে বলতে শুনবে, ‘‘কিভাবে মুসলিমদের একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে যখন দুনিয়ার প্রায় সবদেশই আমেরিকা নয়তো রাশিয়ার পদানত হয়ে রয়েছে?’’ আর সে বলবে এসব বিশাল কাফির রাষ্ট্রগুলো তাদের খাদ্য ও গোলাবারূদের নিয়ন্ত্রণনিয়ে বসে আছে; তাদের এমন মিসাইল আছে যা এক মহাদেশ থেকে অন্য মহাদেশে আক্রমন করতে সক্ষম; তারা মহাশূন্যে এমন মারণাস্ত্র প্রসত্মুত রেখেছে যা পৃথিবীর যেকোন স্থানে আঘাত হানতে পারে। আর এই জমীনে ও মহাশূন্যে (স্যাটেলাইট) এমন উন্নত ইনটেলিজেন্স (গোয়েন্দা নজরদারী) সরঞ্জাম রয়েছে যা দ্বারা তারা আমাদের প্রতিটি পদক্ষেপ ও গোপন কথাবার্তার ওপর কড়া নজর রাখে, সুতরাং এর মধ্যে জিহাদ ও অন্যান্য কাজ করা কি সম্ভব? ‘‘তারা যেকোন পরিকল্পনাকে শুরুতেই ভেস্তে দেবে;’’ সে বলে, ‘‘কিভাবে মুসলিমদের জন্য একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হবে যেখানে ওয়ার্ল্ড ব্যাংক, আই. এম. এফ. এর মতো প্রতিষ্ঠান একটি দেশের অর্থনীতিকে কয়েক ঘন্টার মধ্যে বিধ্বস্ত করতে পারে?’’এরকমই আরো সব বক্তব্য যা মুসলিমদের নিরূৎসাহিত করে, এবং তাদের সাহায্যের সকল রাস্তা নষ্ট করে দেয়; এবং তাদের বর্তমান পরিস্থিতির কাছে নতি স্বীকার করতে বাধ্য করে। সবচাইতে দুঃখ লাগে তখন যখন এমনসব কথা তাদের মুখ থেকে বের হয় যারা আজকাল ইসলামের দাওয়াহ দিচ্ছে। আর এদেরকেই যখন আপনি তাগুত ও কুফর শক্তির কাছ থেকে কিছু সামান্য ক্ষমতা পাবার জন্য লালায়িত দেখবেন তখন মোটেও অবাক হবেন না।

আমরা বলবো, সেই ব্যক্তি চরম পথভ্রষ্টতায় নিমজ্জিত যে একথা বলে যে, আন্তর্জাতিক কুফরী শক্তি তাদের সকল সামর্থ নিয়ে বাহ্যিক ও বাস্তবিক অর্থে একটি সত্যিকার মুসলিম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় বাঁধা দিতে সক্ষম। আসলে তারা সুমহান আল্লাহর আয়াতের সত্যতাকেই অস্বীকার করে এবং তাঁর দৃঢ় প্রতিশ্রুতিকে অগ্রাহ্য করে।

তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেন,

‘‘…কারণ আল্লাহর রহমত থেকে কেউ নিরাশ হয় নাকাফির সম্প্রদায় ব্যতীত’’ 
[সূরা ইউসুফ ১২: ৮৭]

এবং তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) আরো বলেন,

‘‘…এবং বিজয় তো শুধুমাত্র আল্লাহর থেকেই আসে’’ [সূরা আলি ইমরান ৩: ১২৬]

সুতরাং বিজয় আমেরিকার হাতেও নেই রাশিয়ার হাতেও নেই। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেন,

‘‘আল্লাহ্মানুষের প্রতি রহমত অবারিত করলে তা নিবারণকারী কেউ নেই এবং তিনি কিছুনিরুদ্ধ করতে চাইলে তৎপর কেউ তার উন্মুক্তকারী নেই’’ [সূরা ফাতির ৩৫: ২]

এসকল আন্তর্জাতিক কুফরী শক্তি যত আধুনিক ক্ষমতাই অর্জন করুক না কেন তারা কখনোই মহামহিম ও পরাক্রমশালী আল্লাহর ক্ষমতা ও নিয়ন্ত্রনের বাইরে যেতে পারবে না। আর তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেন,

‘‘কাফিররাযেন কখনো মনে না করে যে তারা (আল্লাহর আযাব থেকেপরিত্রান লাভ করেছেনিশ্চয় তারা কখনো তাদেরকে (আল্লাহর আযাব থেকেরক্ষা করতে পারবে নাতোমরাতাদের মোকাবিলার জন্য যথাসাধ্য শক্তি  অশ্ববাহিনী প্রসত্মুত রাখিবে’’ [সূরা আনফাল ৮: ৫৯-৬০]

নিশ্চয় তারা কখনোই আল্লাহর ক্ষমতার বাইরে যেতে পারবে না; আর তার পরিকল্পনাকেও ভেস্তে দিতে পারবে না।নিশ্চয় আল্লাহর তার মু’মিন সমর্থকদের সাথে আছেন, আর তিনি তাদেরকে কাফিরদের উপর বিজয় দান করবেন,আল্লাহু আকবার। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেন,


‘‘
ইহাই তোমাদের জন্যআল্লাহ্ কাফিরদের ষড়যন্ত্রদুর্বল করেন (হে মুমিনগণতোমরা মীমাংসা চেয়েছিলেতা তো তোমাদের নিকটএসেছেযদি তোমরা বিরত হও তবে তা তোমাদের জন্য কল্যাণকর,যদি তোমরা পুণরায়কর আমি তোমাদের পুণরায় শাস্তি দেব এবং তোমরা দলসংখ্যায় অধিক হলেও তাতোমাদের কোন কাজে আসবে নাএবং নিশ্চয় আল্লাহ্ মুমিনদের সাথে আছেন’’ [সূরা আনফাল ৮: ১৮-১৯]

এবং মহিমান্বিত ও পরাক্রমশালী আল মাওলা, আমাদেরকে শক্তিসঞ্চয় করার জন্য হুকুম করেছেন। এটা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। এরপরই তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বিজয় প্রদানের দায়িত্ব নিয়েছেন। যেমন তিনি তাঁর রাসূল(সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) কে বলেছেন, ‘‘আর তাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করুন, আমিও আপনার পাশাপাশি যুদ্ধ করব।এবং খরচ করুন, আমিও আপনার জন্য খরচ করব। এবং আপনি সৈন্য বাহিনী প্রেরণ করুন আমি এরূপ পাঁচটি (বাহিনী) প্রেরণ করব।’’ [সহীহ মুসলিম, ‘আইয়াদ ইবনে হিমার (রদিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত] এভাবেই আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) কাফিরদের অপমান করার দায়িত্বভার গ্রহণ করেছেন। যেমন তিনি বলেছেন,

‘‘ইহাই তোমাদের জন্যআল্লাহ্ কাফিরদের ষড়যন্ত্র দুর্বল করেন’’ [ ৪৭: ১১]

তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) আরো বলেন,

‘‘সুতরাং তোমরা শয়তানের বন্ধুদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করশয়তানের কৌশল অবশ্যই দুর্বল’’ [সূরা আন নিসা ৪:৭৬]

আর তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) আমাদের সাহায্য করার দায়িত্ব নিয়েছেন। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেন,

‘‘এবংআরো আছে (তিনি আশ্বাস দিচ্ছেন আরো বিজয়  গণীমতেরযা এখনো তোমাদেরঅধিকারে আসেনিতা তো আল্লাহ্ আয়ত্বে রেখেছেনআল্লাহ্ সর্ববিষয়েসর্বশক্তিমান’’ [সূরা আল ফাতহ্ ৪৮: ২১]

নিশ্চয় যারা কাফিরদের সৈন্য বাহিনী দেখে ভয় পেয়েছে তারা আল্লাহ্ তা‘আলার এই বাণী ভুলে গেছেঃ

‘‘আকাশ মন্ডলী  পৃথিবীর বাহিনীসমূহ আল্লাহরই এবং আল্লাহ্ পরাক্রমশালী প্রজ্ঞাময়’’ [সূরা আল ফাতহ্ ৪৮: ৭]

এবং নিশ্চয় যারা কাফিরদের ঐশ্বর্য ও ক্ষমতার দাপট দেখে ভয় পেয়েছে তারা আল্লাহ্ ত্’আলার এই বাণী ভুলে গেছেঃ

‘‘আকাশমন্ডলী  পৃথিবীর ধনভান্ডার তো আল্লাহরই কিন্তু মুনাফিকরা তা বুঝে না’’ [সূরা মুনাফিকুন ৬৩: ৭]

এবং নিশ্চয় যারা কাফিরদের দূর্গ আর তাদের প্রতিরক্ষা দেখে ভয় পেয়েছে তারা আল্লাহ্ ত্’আলার এই বাণী ভুলে গেছেঃ

‘‘…তারা মনে করেছিলতাদের দূর্গগুলো তাদেরকে আল্লাহ্ থেকে রক্ষা করবেকিন্তু আল্লাহর শাস্তিএমন এক দিক থেকে আসল যা ছিল তাদের ধারণাতীত এবং তাদের অন্তরে তা ত্রাসসৃষ্টি করলতারা ধ্বংস করে ফেলল তাদের বাড়িঘর নিজেদের হাতে এবং মুমিনদেরহাতেওঅতএব হে চক্ষুষ্মান ব্যক্তিগণতোমরা উপদেশ গ্রহণ কর’’ [সূরা আল হাশর ৫৯: ২]

এবং ঐ আয়াতটিও ভুলে গেছে যেখানে আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেছেন,

‘‘কিতাবীদেরমধ্যে যারা তাদেরকে সাহায্য করেছিলতাদেরকে তিনি তাদের দূর্গ থেকে অবতরণকরালেন এবং তাদের অন্তরে ভীতি সঞ্চার করালেনএখন তোমরা তাদের কতককে হত্যাকরছ এবং কতককে করছ বন্দীআর তিনি তোমাদেরকে অধিকারী করলেন এদের ভূমিঘরবাড়ি  ধনসম্পদের এবং এমন ভূমির যাতে তোমরা এখনও পদার্পন করনিআল্লাহ্সর্ববিষয়ে সর্বশক্তিমান’’ [সূরা আল আহযাব ৩৩: ২৬-২৭]

এবং নিশ্চয় যারা তাদের গোয়ান্দা সংস্থার সক্রিয়তা দেখে ভয় পেয়েছে তারা আল্লাহর আয়াতকে ভুলে গেছে,

‘‘… আল্লাহ্ কাফিরদের পরিবেষ্টন করে আছেন’’ [সূরা আল বাকারা ২: ১৯]

এবং তাঁর, (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা), ঐ আয়াতটিও ভুলে গেছে,

‘‘… এবং সবকিছুকে আল্লাহ্ পরিবেষ্টন করে আছেন’’ [সূরা আন নিসা ৪: ১২৬]

এবং ঐ আয়াতও,

‘‘তারা যা করে আল্লাহ্ তা পরিবেষ্টন করে আছেন (মুহিতুন)’’ [সূরা আনফাল ৮: ৪৭]

আসলে কাফির হওয়া সত্ত্বেও আব্দুল মুত্তালিব আল্লাহ্ ও তাঁর ক্ষমতা সম্পর্কে এসব কাপুরুষের চেয়ে অনেক বেশী জানতেন। আর এর প্রমাণ পাওয়া যায় যখন সে আব্রাহাকে বলেছিল, ‘‘নিশ্চয় এই ঘরের (কাবা) একজন রব আছেন যিনি এটাকে রক্ষা করবেন।’’ যখন আল্লাহ্ পাখির ঝাঁক দিয়ে আব্রাহা বাহিনীকে বিধ্বস্ত করলেন, তাদের অনেকেই ভয়ে পালিয়ে গেল, তাদের পথপ্রদর্শক বললঃ

‘‘কোথায় সেই ব্যক্তি যে পালিয়ে যায় এবং রবকে খোঁজে এবং আল আসরাম তো পরাভূত, সে বিজয়ী নয়।’’ আল আসরাম হলো আব্রাহা।

আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেন,

‘‘এবং বহু সৈন্য শিবিরের অধিপতিফিরআউনের প্রতিযারা দেশে সীমালঙঘন করেছিলএবং সেখানে অশান্তি ৃদ্ধকরেছিলঅতঃপর তোমার রব তাদের উপর নানাবিধ শাস্তির কশাঘাত হানলেনতোমারপ্রতিপালক অবশ্যই সতর্ক দৃষ্টি রাখেন’’ [সূরা আল ফাজর ৮৯: ১০-১৪]

নিজের জান ও তার সাম্রাজ্যের ভয়ে ফিরআউন বনী ইস্রাইলের কত শিশুকেই না হত্যা করেছিল; আর অবশেষে তারই ঘরে সে লালন পালন করেছে এমন একজনকে (মূসা আলাইহিস সালাম) যার হাতে দিয়ে ধ্বংস হয়েছে তার পুরো সাম্রাজ্য। আল্লাহর ক্বদরের ক্ষেত্রে কোন সতর্কতাই কাজে আসে না। আল্লাহ্ তাদের সবদিক থেকে ঘিরে আছেন। আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেন,

‘‘আল্লাহর তাঁর কার্য সম্পাদনে অপ্রতিরোধ্যকিন্তু অধিকাংশ মানুষই তা জানে না’’
[সূরা ইউসুফ ১২: ২১]

তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) আরো বলেন,

‘‘আল্লাহ্ সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ‘আমি অবশ্যই বিজয়ী হব এবং আমার রাসূলগণওনিশ্চয় আল্লাহ্ সর্বশক্তিমান,পরাক্রমশালী’’ [সূরা মুজাদিলা ৫৮: ২১]

নিশ্চয় কাফিরদের দূর্গগুলো আল্লাহর শাস্তি থেকে তাদের রক্ষা করতে পারবে না এবং তাদের সৈন্য বাহিনীও আল্লাহর আক্রমন ঠেকাতে কোনই উপকারে আসবে না। আর নিশ্চয় তাদের সম্পদ আল্লাহর কাছে কোন সুপারিশ করবে না এবং তাদের পরিকল্পনা আর চক্রান্ত আল্লাহর ক্ষমতাকে কমাতে পারবে না। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেন,

‘‘তারাচক্রান্ত করেছিল এবং আমিও এক কৌশল অবলম্বন করলামকিন্তু তারা বুঝতেপারেনিঅতএব দেখ তাদের চক্রান্তের পরিণাম কি হয়েছে– আমি অবশ্যই তাদেরকেএবং তাদের সম্প্রদায়ের সকলকে ধ্বংস করেছিএইতো তাদের ঘরবাড়ি –সীমালংঘনহেতু যা জনশূণ্য অবস্থায় পড়ে আছেএতে জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্যঅবশ্যই নিদর্শন রয়েছে’’ [সূরা আন নামল ২৭: ৫০-৫২]

এবং আমি আবারও মনে করিয়ে দিতে চাই আমাদের ব্যর্থতা প্রথমত আমাদের নিজেদের কারণেঃ

‘‘…অকল্যাণ যা হয় তা তোমাদের নিজের কারণে’’ [সূরা আন নিসা ৪: ৭৯]

সুতরাং প্রথমে আমাদের নিজেদেরকে বদলাতে হবে। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেন,

‘‘নিশ্চয় আল্লাহ্ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষণ না তারা নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটায়’’ [সূরা আর রাদ ১৩: ১১]

নিশ্চয় আল্লাহ্ তা‘আলা আমাদেরই অবাধ্যতার কারণে আমাদের উপরে কাফিরদের শক্তিশালী করেছেন; যেমনিভাবে তিনি মাজুসদের শক্তিশালী করেছিলেন বনী ইস্রাইলের উপর যখন তারা আল্লাহকে ক্রোধান্বিত করেছিল তাদের আমলের দ্বারা। তিনি (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেন,

‘‘তারা ঘরে ঘরে প্রবেশ করে সমস্ত কিছু ধ্বংস করেছিলআর প্রতিশ্রুতি কার্যকরী হয়েই থাকে’’ [সূরা আল ইসরা ১৭: ৫]

সুতরাং নিজেদেরকে পাল্টানো আজ জরুরী হয়ে পড়েছে; আমাদের তিনটি ক্ষেত্রে নিজেদের শুধরাতে হবেঃ সঠিক পন্থা;সততার সাথে এর অনুসরণ এবং সকল নিয়্যতে বিশুদ্ধতা আনয়ণ।
এবং আমি এই বইতে সঠিক কর্মপন্থার বিষয়টি ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করেছি, যতটুক সম্ভব হয়েছে, আর আল্লাহ্ সবচাইতে ভালো জানেন। এ ব্যাপারে আলোচনা রয়েছে ‘কিতাব ও সুন্নাহ দৃঢ়ভাবে আঁকড়ে ধরার মূলনীতি’ ও ‘আহলে সুন্নাহ ওয়াল জামায়াতের কর্মপন্থা’ নামক অধ্যায়ে।

এবং আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেছেন,

‘‘নিশ্চয় আমি রাসূলগণকে এবং মুমিনগণকে সাহায্য করব পার্থিব জীবনে এবং যেইদিন সাক্ষী দন্ডায়মান হবে’’ [সূরা গাফির ৪০: ৫১]

নিঃসন্দেহে এই প্রতিশ্রুতি সত্য। এবং আল্লাহ্ (সুবহানাহু ওয়া তা‘আলা) বলেন,

‘‘নিশ্চয় আল্লাহর অনুগ্রহ সৎকর্মশীলদের (মুহসীননিকটবর্তী’’ [সূরা আল আরাফ ৭: ৫৬]

RELATED ARTICLES

একটি উত্তর ত্যাগ

আপনার মন্তব্য লিখুন দয়া করে!
এখানে আপনার নাম লিখুন দয়া করে

twelve + 18 =

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য