বর্তমান সরকারের কাছে পিলখানা হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্তে কমিশন গঠনে দাবি জানিয়েছেন শহীদ বিডিআর মহাপরিচালক শাকিল আহমেদের ছেলে ব্যারিস্টার রাকিন আহমেদ। তিনি বলেন, পিলখানা হত্যাকান্ডের সুষ্ঠু তদন্তে দ্রুতই কমিশন গঠন করুন। তা করা না হলে ১৮ হাজার বিডিআর সদস্য রাস্তায় নামতে বাধ্য হবেন।
গতকাল রাজধানীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউটে পিলখানা হত্যাকান্ডের ঘটনায় শহীদ মেজর জেনারেলের শাকিল আহমেদের পরিবারসহ ১৭টি শহীদ সেনা পরিবার এবং বিডিআর কল্যাণ পরিষদ আয়োজিত যৌথ সংবাদ সম্মেলনে ব্যারিস্টার রাকিন আহমেদ এসব কথা বলেন। এ সময় সেনাবাহিনীর ১৭টি শহীদ পরিবারের সদস্য এবং বিডিআর কল্যাণ পরিষদের উপদেষ্টারা ৯ দফা দাবি জানান।সেখানে রাকিন আহমেদ বলেন, সরকারের জানা উচিত ১৮ হাজার বিডিআর সদস্য এক কাতারে রয়েছেন। এসব সদস্যদের মধ্যে কিছু মানুষ প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন, আবার কেউ মানবেতর জীবনযাপন করছেন। তাদের পক্ষে সরকার কোনো পদক্ষেপ নিলে বিডিআর পরিবারের পক্ষ থেকে খুশি হতাম। বিডিআর সদস্যদের উদ্দেশে তিনি বলেন, আমার বাবা আপনাদের সন্তানের মতো ভালোবাসতেন। আপনাদের আগেও পরিবার হিসেবে দেখতাম, এখনো দেখি। আপনারা আমাকে ভাই হিসেবে বলেন, আর সন্তান বা অভিভাবক বলেন। আমরা চাই একটি সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে নির্দোষ বিডিআর সদস্যরা মুক্তিপাক আর দোষীরা শাস্তির আওতায় আসুক।
আরও পড়ুন
কিন্তু বাকি ১৮ হাজারের বেশি বিডিআর সদস্য এই হত্যাকান্ডের সঙ্গে জড়িত নয়। তা-ও তাদের সন্তানরা রাস্তায় বের হতে পারেন না, তাদের খুনির সন্তান বলা হয়।
রাকিন অভিযোগ করে বলেন, ভয়াবহ বিষয় হচ্ছে আওয়ামী লীগের দোসররা এখনো সরকারে রয়েছে। আমাদের ছাত্র-জনতার পাশে দাঁড়াতে হবে। জাতীয়তাবাদী শক্তির পাশে দাঁড়াতে হবে। সব ষড়যন্ত্র মোকাবেলা করতে হবে। বর্তমান সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জনস্বার্থে কাজ করবেন বলে বিশ্বাস করি। সরকারের কাছে ভালো কিছু আশা করছি। দ্রুত সময়ের মধ্যে দেশ একটি স্থিতিশীল পর্যায়ে চলে যাবে। পার্শ্ববর্তী দেশ ও গোয়েন্দা সংস্থা বিভিন্ন ধরনের ষড়যন্ত্র করছে। কয়দিন আগে কচুক্ষেত মোড়ে সেনাবাহিনীর গাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে। এর তীব্র নিন্দা জানান তিনি।
তাদের দাবিগুলো হলো- পিলখানা হত্যাকান্ডটি বিদ্রোহ না বলে এটি পরিকল্পিত হত্যাকান্ড হিসেবে আখ্যায়িত করা; ঢাকাসহ সারা দেশে বিডিআর ব্যাটালিয়ন সেক্টরে গঠিত বিদ্রোহ আইনের প্রহসনের বিশেষ আদালতকে নির্বাহী আদেশে বাতিল করা; চাকরিচ্যুত সব পদবির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও জোয়ানদের পূর্ণ সুযোগ-সুবিধাসহ চাকরিতে পুনর্বহাল; হত্যাকান্ড মামলার তদন্তের জন্য স্বাধীন তদন্ত কমিশন গঠন; পিলখানা হত্যাকান্ডে শাহাদাতবরণকরী ৫৭ সেনা কর্মকর্তাসহ ৭৪ জনকে শহীদের মর্যাদা প্রদান করা; ২৫ ফেব্রুয়ারি দিনটিকে পিলখানা ট্র্যাজেডি দিবস হিসেবে ঘোষণা; ঘটনা-পরবর্তী যেসব নিরীহ জোয়ানদের তদন্ত/জিজ্ঞাসাবাদে নিরাপত্তা হেফাজতে নির্যাতন করে হত্যা করা হয়েছে, তার তালিকা প্রকাশসহ মৃত সব সদস্যের পরিবারকে ক্ষতিপূরণ ও পুনর্বাসন ব্যবস্থা করতে হবে; ফ্যাসিস্ট সরকারের দোসর হিসেবে ঘটনার সময় যেসব সংস্থার সদস্যরা প্রকৃত ঘটনা আড়াল করে ফ্যাসিস্ট হাসিনার পরিকল্পনামতে তদন্ত/জিজ্ঞাসাবাদে নিরীহ নিরপরাধ জোয়ানদের নির্যাতন ও বিদ্রোহের মিথ্যে মামলার আসামি করে ঢাকাসহ সারা দেশে ব্যাটালিয়ন ও সেক্টরে হাজার হাজার বিডিআর সদস্য ও পরিবারকে পথে বসিয়েছে, তাদের শনাক্ত ও আইনের মাধ্যমে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ এবং পিলখানা হত্যাকান্ড মামলায় খালাসপ্রাপ্ত অথচ প্রহসনের বিস্ফোরক মামলায় বিনা বিচারে ১৬ বছর কারাবন্দি জোয়ানদের অনতিবিলম্বে জামিন/মামলা প্রত্যাহারপূর্বক খালাস দিতে হবে।
আরও পড়ুন