ভিসা নবায়নের জন্য মালয়েশিয়ার ইমিগ্রেশনে পাসপোর্ট জমা দিয়েছিলেন মো. আশরাফুল গণি চৌধুরি নামে এক বাংলাদেশি শিক্ষার্থী। তিনি সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ডিগ্রি কোর্সের একজন ছাত্র। গত ৩ নভেম্বর বন্ধুর সঙ্গে দেখা করতে গেলে একটি রেস্তোরাঁ থেকে আশরাফুলকে গ্রেপ্তার করে মালয়েশিয়া পুলিশ।
তার অপরাধ, নিজের পাসপোর্ট বহন করছিলেন না আশরাফুল। যদিও পুলিশকে তিনি জানান, পাসপোর্ট নবায়নের জন্য তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈদেশিক শিক্ষার্থী শাখার মাধ্যমে ইমিগ্রেশনে জমা দিয়েছিলেন। পুলিশ কথা না শুনেই তাকে ধরে নিয়ে যায়।
মালয়েশিয়ার একজন প্রতিরক্ষা আইনজীবী হিসেবে এ ঘটনায় বাংলাদেশি ছাত্র আশরাফুলের প্রতি অবিচার দেখেন রাজপাল সিং নামে এক আইনজীবী। বিদেশি শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে অবিচার নিয়ে বিচার ব্যবস্থাটির সমালোচনাও করেন তিনি। বর্তমানে আশরাফুলের মামলাটি লড়ছেন রাজপাল।
আশরাফুলকে গ্রেপ্তারের পর পুলিশ হেফাজতে রাখা হয়েছিল। রিমান্ড আদেশ দেওয়ার পরও সি পার্ক থানা পুলিশ তাকে ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে হাজির করেনি। ইমিগ্রেশন আইন এটি অনুমোদনও করে। এ বিষয়টি নিয়েই সমালোচনা করেন রাজপাল সিং। তিনি আশরাফুলকে জামিন দেওয়ার বিষয়ে ম্যাজিস্ট্রেটের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করেন। পাশাপাশি প্রসিকিউশনের সিদ্ধান্তে ক্ষুদ্ধ হয়ে মামলাটিকে ‘অবিচারের ক্ষুদ্রাকর্ষণ’ হিসেবে মন্তব্য করেন।
গ্রেপ্তারের খবর পেয়ে সিটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে জামালুল্লাহিল আলিয়াস নামে একজন প্রতিনিধিকে আশরাফুলের পাসপোর্টসহ সি পার্ক থানায় পাঠায় কর্তৃপক্ষ। ১০ দিন আটকে রাখার পর গত ১৩ নভেম্বর আশরাফুলকে ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে হাজির করা হয়। সেখানে তার বিরুদ্ধে মালয়েশিয়ায় থাকতে বৈধ পাস বা অনুমতি না থাকার অভিযোগ আনা হয়। এসব ক্ষেত্রে আদালত অভিযুক্ত ব্যক্তিকে ১০ হাজার মালয় মুদ্রা বা পাঁচ বছরের কারাদণ্ড অথবা ছয়ধাপে শাস্তি দিতে পারে। আদালত শাস্তিগুলির মধ্যে একটি বা দুটি অথবা তিনটি শাস্তি দেওয়ারও ক্ষমতা রাখেন। তবে সিটি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিনিধি জামালুল্লাহিল আলিয়াস আশরাফুলের পাসপোর্ট এবং নবায়নকৃত ভিসা উপস্থাপন করেন।
আশরাফুল মামলার শুনানি দাবি করলে তাকে বেন্টং কারাগারে পাঠায় দেশটির আদালত। এর মধ্যে আশরাফুলের বন্ধু রাজপাল সিংয়ের সঙ্গে যোগাযোগ করে তাকে মামলাটি লড়তে নিযুক্ত করেন। গত ২৫ নভেম্বর আশরাফুলকে ফের আদালতে হাজির করা হলে ম্যাজিস্ট্রেট তাকে দুটি ধারায় জামিন প্রদান করেন। তবে ৬ হাজার রিঙ্গিত জরিমানা করেন। জামিন পেয়ে আশরাফুল পরীক্ষা দেওয়ার সুযোগ পান। তাকে মাসে একবার সি পার্ক পুলিশকে রিপোর্ট করারও আদেশ দেওয়া হয়।
আশরাফুলের আইনজীবী রাজপাল সিং জানান, তার মক্কেলকে তিন সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে আটকে রাখা হয়েছিল। জামালুল্লাহিল আদালতে পাসপোর্ট জমা দিয়েছেন, এতে প্রতীয়মান হয় আশরাফুলের এখানে কোনো দোষ নেই। প্রসিকিউশন যে চ্যালেঞ্জ দিয়েছেন, তা হাস্যকর। আদালত বিবেচনার ভিত্তিতে বা শর্তযুক্ত করে জামিন দিতেই পারেন।
রাজপাল প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘যে অভিযোগ উঠেছিল, তা ত্রুটিযুক্ত। তাহলে কেন একজনকে কারাগারে বন্দী করে রাখতে হবে?’ তিনি আরও বলেন, ‘এখন সময় এসেছে, সরকারের উচিত ইমিগ্রেশন আইনটি সংশোধন করা। ফেডারেল সংবিধানে বলা হয়েছে, আইন অনুসারে কেউ তার জীবন ও স্বাধীনতা থেকে বঞ্চিত হবে না। আমাদের আইনি সনদে আরও বলা হয়েছে, সবাই-ই আইনের সমান সুরক্ষার অধিকারী।’