Monday, November 10, 2025
No menu items!

আমাদের মুসলিমউম্মাহ ডট নিউজে পরিবেশিত সংবাদ মূলত বিভিন্ন পত্র পত্রিকায় প্রকাশিত সংবাদের সমাহার। পরিবেশিত সংবাদের সত্যায়ন এই স্বল্প সময়ে পরিসরে সম্ভব নয় বিধায় আমরা সৌজন্যতার সাথে আহরিত সংবাদ সহ পত্রিকার নাম লিপিবদ্ধ করেছি। পরবর্তীতে যদি উক্ত সংবাদ সংশ্লিষ্ট কোন সংশোধন আমরা পাই তবে সত্যতার নিরিখে সংশোধনটা প্রকাশ করবো। সম্পাদক

Homeদৈনন্দিন খবরআন্তর্জাতিকবেলফোর ঘোষণা, যার মূল্য আজও চুকাতে হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের

বেলফোর ঘোষণা, যার মূল্য আজও চুকাতে হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের

‘বেলফোর ঘোষণা’ মুসলিম বিশ্বের জন্য যেমন যন্ত্রণার, ইহুদিবাদীদের জন্য তেমন গর্বের। কারণ, এই ঘোষণার মধ্যদিয়েই খোদাদ্রোহী ও বিশ্ব মানবতার শত্রু ইহুদিবাদীরা ফিলিস্তিনের পবিত্র ভূমিতে একটি অবৈধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তি পায়।

ইহুদিবাদীদের ইসরাইল নামক অবৈধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ভিত্তি এনে দেয় তৎকালীন ধুরন্ধর ব্রিটিশ সাম্রাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আর্থার ডি বেলফোর। ১৯১৭ সালের ২ নভেম্বর তিনি জায়োনিজম বা ইহুদিবাদী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান নেতা এডমন্ড রথচাইল্ডের একটি চিঠির জবাবে যে চিঠি লিখেছিলেন, ইতিহাসে সেটিই ‘বেলফোর ঘোষণা’ নামে পরিচিতি লাভ করে।

এডমন্ড রথচাইল্ড শুধু ইহুদিবাদী আন্দোলনের অন্যতম প্রধান ছিলেন না, বরং বিত্তশালী ইহুদি পরিবার রথচাইল্ডেরও প্রধান ছিলেন। তিনি ফিলিস্তিনের বুকে ইহুদিবাদী অবৈধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় তৎকালীন শক্তিশালী সাম্রাজ্যগুলোকে অর্থের বিনিময়ে হাত করতেও তৎপর ছিলেন। সুলতান আব্দুল হামিদ সানীকে ক্ষমতাচ্যুত করতে ও উসমানী খেলাফত ধ্বংসের পেছনেও প্রচুর অর্থ ব্যয় করেছেন।

১৯১৭ সালে ১ম বিশ্বযুদ্ধের পর তিনি ব্রিটিশ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেলফোরকে যে চিঠি লিখেছিলেন এবং যার প্রতিক্রিয়ায় বেলফোর ঘোষণা আসে, তার বক্তব্য নিম্নে তুলে ধরা হলো।

প্রিয় বেলফোর,

গত শুক্রবার একটি আর্জি পেশ করতে ভুলে গিয়েছিলাম। আমার ধারণামতে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি এদিকে ফেরানো উচিত। গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সরকারী ও বেসরকারী জার্মান পত্রিকাগুলো ব্যাপক সংবাদ প্রচার করেছে, যেখানে বলা হচ্ছে নিরাপত্তা চুক্তিগুলোর মধ্যে কেন্দ্রীয় শক্তিকে এই শর্ত দেওয়া উচিত; যাতে জার্মানির অধীন ফিলিস্তিনের এলাকাকে ইহুদিদের ভূমি ঘোষণা দেওয়া হয়। আমি এটাকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ মনে করি। ব্রিটেনের এই ঘোষণাকে একটা আন্দোলনের মাধ্যম বানানো উচিত বলেও মনে করি। যদি আপনি আপনার ওয়াদা মুতাবেক আমার সাথে সাক্ষাতের ব্যবস্থা করে দিতে চান, তাহলে অনুগ্রহপূর্বক মিস্টার ওয়াইজম্যান (ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী)-কে জানিয়ে দিন।

আপনার একান্ত প্রিয়
রথচাইল্ড

এর জবাবে ব্রিটিশ সরকারের তরফ থেকে ফিলিস্তিনে ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার অনুমোদন ও প্রতিশ্রুতি স্বরূপ বেলফোর যে চিঠি লিখেছিলেন তার বক্তব্য ছিলো নিম্নরূপ –

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় – ২ নভেম্বর ১৯৯৭

প্রিয় লর্ড রথচাইল্ড,

আপনাকে এটা জানাতে পেরে আমার খুশি লাগছে যে, ব্রিটেনের বাদশাহর প্রশাসন ইহুদিদের আকাঙ্ক্ষার সাথে সহমর্মিতা প্রকাশ করেছে। এটা নিশ্চিত করা হয়েছে যে, ব্রিটিশ প্রশাসন ইহুদি জনগণের জন্য আলাদা জাতীয় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে পছন্দের দৃষ্টিতে দেখছে এবং নিজেদের সমস্ত চেষ্টা সেই উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে ব্যয় করবে। এই কথা স্পষ্টভাবে জেনে নিন যে, এমন কোনো কাজ করা হবে না, যার ফলে ফিলিস্তিনে অবস্থিত ইহুদি ভাইদের নাগরিক ও ধর্মীয় অধিকারের ক্ষতি হয় অথবা অন্য কোনো রাষ্ট্রে ইহুদিদের অধিকার ও রাজনৈতিক অবস্থান ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আমি কৃতার্থ থাকব যদি আপনি এই ঘোষণা জায়োনিস্ট ফেডারেশনকে জানিয়ে দেন।

আপনার একনিষ্ঠ
আর্থার জেমস বেলফোর

তবে ইহুদিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে ব্রিটিশ সরকারের সমর্থন আদায় যথেষ্ট ছিলো না। কারণ, জেরুসালেম তখনও খেলাফত বাহিনীর নিয়ন্ত্রণে ছিলো। আর ফিলিস্তিনের বুকে রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠায় সবচেয়ে বড় বাধা হয়ে দাঁড়াচ্ছিলো সুলতান আব্দুল হামিদ সানী ও তার ক্ষমতাচ্যুতির পর খেলাফত কাঠামো।

সুলতান আব্দুল হামিদ বিহীন খেলাফত কাঠামো নানান ষড়যন্ত্র ও কার্যকরী নেতৃত্বের অভাবে ক্রমেই দুর্বল হয়ে পড়ছিলো। এক পর্যায়ে ব্রিটিশরা ১৯১৭ সালের ডিসেম্বরে জেরুসালেম দখল করে নেয়। এতে করে তারা এই পবিত্র ভূখণ্ডটিতে শাসনের ম্যান্ডেট পেয়ে যায়, যার অনুমোদন দেয় তৎকালীন ‘লীগ অফ নেশনস’ বা আজকের জাতিসংঘ।

এমনকি সুলতান আব্দুল হামিদ সানীর আমলে ইহুদিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা এতটায় অসম্ভব মনে হচ্ছিলো যে, ইহুদিবাদের জনক থিউডর হার্জেল ও বড় বড় জায়োনিস্ট নেতারা ফিলিস্তিনের পরিবর্তে উগান্ডায় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠারও পরিকল্পনা করেছিলেন। ১৯০২-১৯০৫ পর্যন্ত ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করা জায়োনিস্ট বেলফোরই এর প্রস্তাব রেখেছিলেন।

তবে হার্জেলের মৃত্যুর বেশ কয়েক বছর পর রুশ বংশোদ্ভূত জায়োনিস্ট শীর্ষ নেতা ও বিজ্ঞানী ড. হায়্যিম ভাইৎসম্যান ব্যাপক তৎপরতা চালিয়ে উগান্ডা পরিকল্পনা বাতিল করেন এবং ফিলিস্তিনে ইহুদিবাদী রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠাকে আন্দোলনে পুনরায় ফিরিয়ে আনেন।

ব্রিটিশরা ১৯১৭ সালের ডিসেম্বরে ফিলিস্তিন দখলের আগে গোপনে একদিকে যেমন মক্কার শরীফ হোসাইনের হাতে তুলে দেওয়ার ওয়াদা করেছিলো, অপরদিকে বেলফোর ঘোষণার মাধ্যমে ইহুদিবাদীদের। আরব থেকে শুরু হওয়া খেলাফতকে আরবে ও নিজের আয়ত্তে আনার স্বপ্নে বিভোর শরীফ হোসাইনকে দেওয়ার ওয়াদা করেছিলো খেলাফতে উসমানিয়ার বিরুদ্ধে হেজাজ থেকে বিদ্রোহ করার বিনিময়ে এবং ইহুদিবাদীদের দেওয়ার ওয়াদা করেছিলো প্রচুর অর্থ-সম্পদ লাভের বিনিময়ে।

ধুরন্ধর ব্রিটিশরা শরীফ হোসাইনকে তো সালতানাত ও খেলাফত কোনোটিই কায়েম করতে দেয়নি, উল্টো বিশ্বাসঘাতকতার বদৌলতে খেলাফতে উসমানিয়াকে নিতান্তই দুর্বল করে তুলেছিলো। একই সময়ে ইহুদিবাদীদের অর্থে প্রচুর লাভবানও হয়েছিলো। ম্যান্ডেট প্রতিষ্ঠার পর আশ্রয়ের নামে ইউরোপ থেকে ইহুদিদের ফিলিস্তিনে আসার জন্যও উৎসাহিত করেছিলো।

ব্রিটিশদের সহায়তায় স্বাধীন ফিলিস্তিনে পা জমানো ইহুদিরা পরবর্তীতে ১৯৪৮ সালের ১৪ মে’র রাত্রিতে তেলে আবিব থেকে ইসরাইল প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দেয়।

এর আগে তাদেরই অনবরত সন্ত্রাসী হামলা ও আন্তর্জাতিক চাপের মুখে পড়ে ১৪ মে দিনের বেলায় ফিলিস্তিন ছেড়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছিলো ব্রিটিশরা।

ইহুদিবাদীদের ইসরাইল রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণার ফলে ১৫ মে রক্তক্ষয়ী যুদ্ধ বাধে খেলাফত ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া আরব দেশ ও ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের মাঝে।বেলফোর, যার মূল্য আজও চুকাতে হচ্ছে ফিলিস্তিনিদের

কুখ্যাত দুর্ধর্ষ ব্রিটিশ গোয়েন্দা লরেন্সের প্ররোচনায় প্ররোচিত হয়ে খেলাফতের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে বসা আরবরা পরবর্তীতে বিলুপ্ত খেলাফতের অভাব দূর করতে সৌদি, মিশর, সিরিয়া, লেবানন, জর্ডান ও ইরাকের মতো দেশগুলোকে নিয়ে আরব লীগ প্রতিষ্ঠা করেছিলো। কিন্তু যে খেলাফত অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ, পবিত্র ও বহু স্মৃতি বিজড়িত পবিত্র কুদস ও ফিলিস্তিনকে রক্ষা করে এসেছিলো একেবারে বিলুপ্তির আগ পর্যন্ত, তা ব্রিটিশরা চলে যাওয়ার পর রক্ষা তো করতে পারেইনি উল্টো মার খেয়ে হেরে যাওয়ার উপক্রম হয়।

তবে মিশরীয় বাহিনী এক্ষেত্রে কিছুটা সফলতা দেখায়। কথিত ইসরাইলের রাজধানী তেলে আবিবের একদম কাছাকাছি পৌঁছে গিয়েছিলো মিশরীয় সেনারা। কিন্তু সেই মুহুর্তেই লীগ অব নেশনস বা জাতিসংঘ থেকে যুদ্ধবিরতি চুক্তির ডাক সামনে আসে। এতে করে তখনকার মতো নিস্তার পেয়ে যায় গোলাবারুদ ও রসদ ফুরিয়ে আসতে থাকা ইহুদিবাদীরা।

অবৈধ দখলকৃত জায়গায় রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার ঘোষণা দিয়ে ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীরা যে নজিরবিহীন নৃশংসতা চালিয়ে শত শত ফিলিস্তিনিকে শহীদ ও লক্ষ লক্ষ ফিলিস্তিনির উপর অমানবিক নির্যাতনের মাধ্যমে নিজেদের ঘর ও ফিলিস্তিন ছাড়তে বাধ্য করেছিলো, সেই নির্মম ঘটনাকে ইতিহাসে নাকাবা বা বিপর্যয় নামে স্মরণ করা হয়।

জানা যায়, ব্রিটিশদের সহায়তায় ফিলিস্তিনে আগমনের পর থেকেই অবৈধ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার আগে এবং পরে ১৯৪৭ থেকে সাল ১৯৪৯ পর্যন্ত হাগানাহ, স্টার্ন গ্যাং সহ অন্যান্য ইসরাইলী সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীরা ফিলিস্তিনের ৫৩০টি গ্রামকে সম্পূর্ণ জনমানবহীন গ্রামে পরিণত করে। ১৫ হাজার ফিলিস্তিনিকে শহীদ করে। ৭ লক্ষাধিক ফিলিস্তিনি গৃহহীন উদ্বাস্তুতে পরিণত করে।

এর আগে গোপনে ব্রিটিশদের ওয়াদা পেয়ে পরিচয় আড়ালে রেখে ফিলিস্তিনে বহু জমিজমাও কিনে নিয়েছিলো।

বেলফোর ঘোষণার মধ্যদিয়ে রাষ্ট্রের ভিত্তি পাওয়া ইহুদিবাদী সন্ত্রাসীদের অবৈধ রাষ্ট্র ইসরাইল সর্বশেষ, ২০২৩ এর অক্টোবর থেকে ইতিহাসের জঘন্যতম গণহত্যা ও নিধনযজ্ঞ শুরু করে। এতে এখন পর্যন্ত ৬৫ হাজারের অধিক ফিলিস্তিনি নিহত হয়। আহত হয় লাখের অধিক।

এছাড়া ফিলিস্তিন বর্তমানে নামে টিকে রয়েছে, আদতে এর বেশিরভাগ গ্রাম ও শহর তাদের দখলে। যেটুকু ফিলিস্তিনিদের রাষ্ট্র বলে স্বীকৃত, তাতে নেই নূন্যতম স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব। ইসরাইলের অনুমতি ও সম্মতি ছাড়া কিছুই করার ক্ষমতা রাখে না সেখানকার জনগণ। যদিও গাজ্জার বিষয়টি ভিন্ন। তাদের প্রবেশ পথ ইসরাইলের নিয়ন্ত্রণে থাকলেও ভেতরে ছিলো স্বাধীনতা। আর এর শাসক ছিলো, বর্তমানে ফিলিস্তিনিদের সশস্ত্র সংগ্রামে নেতৃত্ব দেওয়া ফিলিস্তিন স্বাধীনতাকামী ইসলামী প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস।

© insaf24

Sourceinsaf24

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

thirteen − 4 =

সবচেয়ে জনপ্রিয়

সাম্প্রতিক মন্তব্য