ইসলাম ব্যবসাকে হালাল করেছে এবং এটি উপার্জনের সর্বোত্তম মাধ্যম হিসাবে আখ্যায়িত করেছে। ইসলামে ব্যবসার সংজ্ঞা খুবই সহজ ও প্রাঞ্জল। ব্যবসা হচ্ছে এমন একটি লেনদেন, যেখানে ক্রেতা ও বিক্রেতার সম্মতি থাকে এবং মিথ্যা, ভেজাল, অবৈধ মজুত, কিংবা বাড়তি লাভের কোনো জায়গা নেই। কুরআনের সূরা নিসা-এর ২৯ নং আয়াতে আল্লাহ বলেন : ‘হে ইমানদারগণ! তোমরা একে অন্যের সম্পদ অন্যায়ভাবে গ্রাস করো না। শুধু তোমাদের পরস্পরের সম্মতিক্রমে যে ব্যবসা কর তা বৈধ।’
কিন্তু আমাদের দেশের ব্যবসা খাতের বাস্তবতা ইসলামি নীতিমালার বিপরীত। ব্যবসায়ীদের একটি বড় অংশ নিজেদের মুনাফার পেছনে এতটাই ব্যস্ত, সমাজের প্রতি তাদের নৈতিক দায়িত্ব প্রায় ভুলতে বসেছে। সিন্ডিকেট তৈরি, কৃত্রিম সংকট সৃষ্টি, ভেজাল পণ্য সরবরাহ এবং অতিরিক্ত মূল্য নির্ধারণ এসব নীতিহীন কাজ সাধারণ মানুষের জীবনকে অসহনীয় করে তুলেছে।
রাসূল (সা.) বলেন, ‘যে প্রতারণা করে, সে আমার উম্মত নয়।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস ১০২)। অন্য এক হাদিসে এসেছে: ‘জঘন্য অপরাধী ছাড়া কেউ-ই নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি (মূল্যবৃদ্ধির আশায়) মজুত করে না।’ (আবু দাউদ শরিফ, হাদিস ৩৪৪৭)।
রমজান এলে মুসলিম দেশগুলো পণ্যের মূল্য কমিয়ে প্রতিযোগিতা করে, যাতে গরিব মানুষও এ মাসে শান্তিতে ইবাদত করতে পারে। কিন্তু আমাদের দেশের কিছু অসাধু ব্যবসায়ী উলটো পথে হাঁটে। সরকার বাজার মনিটরিং ও সিন্ডিকেট ভাঙার জন্য কিছু উদ্যোগ নিলেও এর ফল তেমন কার্যকর হয়নি। বাজার ব্যবস্থাপনায় রাসূল (সা.)-এর দেখানো পদ্ধতির প্রবর্তন ছাড়া পরিস্থিতির উন্নতি সম্ভব নয়। কুরআন-হাদিসের আলোকে নৈতিকতা ও মানবিকতার অভ্যাস তৈরিই একমাত্র স্থায়ী সমাধান।
দুনিয়া-আখেরাতের কল্যাণের জন্য ব্যবসায়ীদের উচিত তারা যেন ইসলামের নীতিমালার প্রতি বিশ্বস্ত থেকে ব্যবসা পরিচালনা করেন। মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে সমাজের প্রতি তাদের দায়িত্ব সম্পর্কে সচেতন হন। ব্যবসায় সৎ আচরণ করলে শুধু আখেরাতে নয়, দুনিয়ার জীবনেও তারা সুনাম ও বরকত পাবেন। ইসলাম ব্যবসায়ীদের শুধু মুনাফা নয়, বরং সমাজের কল্যাণেও কাজ করতে উদ্বুদ্ধ করে। যারা পণ্য মজুত করে মূল্যবৃদ্ধি করেন, তাদের জন্য কঠিন শাস্তির কথা উল্লেখ রয়েছে। ব্যবসা একটি ইবাদত হতে পারে, যদি তা সৎভাবে পরিচালিত হয়। ব্যবসায়ী হিসাবে আমাদের নৈতিক দায়িত্ব হলো, এমন একটি সমাজ গড়ে তোলা, যেখানে কোনো পরিবার ক্ষুধার্ত থাকবে না। এতে ব্যবসায়ীরা শুধু নিজেরাই লাভবান হবেন না, বরং পুরো সমাজ উন্নতির দিকে ধাবিত হবে। প্রফেসর ড. ইউনূসের মতো উদ্যোক্তারা যেভাবে ক্ষুদ্র ব্যবসায় অর্থায়নের মাধ্যমে লাখো মানুষের জীবন বদলে দিয়েছেন, সেভাবেও আমাদের ব্যবসায়ীদের এগিয়ে আসা উচিত। ব্যবসা যদি নৈতিকতার ভিত্তিতে পরিচালিত হয়, তাহলে সমাজে বৈষম্য কমে যাবে এবং সবার জন্য সমান সুযোগ সৃষ্টি হবে।
বর্তমান সময়ে, নৈতিকতা ছাড়া ব্যবসা শুধু সমাজের দুর্দশা বাড়ায়। ব্যবসায়িক সাফল্যের জন্য ক্রেতাদের আস্থা অর্জন করা জরুরি। ব্যবসায়ীরা যদি তাদের পণ্যের গুণগত মান বজায় রাখেন এবং ন্যায্যমূল্যে তা সরবরাহ করেন, তাহলে ক্রেতারা তাদের প্রতি অনুগত থাকবে। এর ফলে দীর্ঘমেয়াদে ব্যবসায়ীরা আরও সফল হবেন। ব্যবসায়ী সমাজ হলো একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্যতম স্তম্ভ। তাদের মধ্যে নৈতিকতা, সততা এবং মানবিকতার চর্চা থাকলে পুরো সমাজ উপকৃত হবে।