একে একে পদ্মা সেতুতে বসল ৪১টি স্প্যান। স্বপ্নের সেতু এখন একেবারে বাস্তবের দ্বারপ্রান্তে। সেতু চালু হলেই সড়কপথে যাতায়াত শুরু করবে দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষ। এতে বন্ধ হয়ে যাবে মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া-মাদারীপুরের বাংলাবাজার এবং মাঝিকান্দি ঘাটে লঞ্চ ও স্পিডবোট চলাচল। আর তাই এখন থেকেই এ পথে চলাচলকারী নৌযানগুলো অন্য পথে নেওয়ার চিন্তাভাবনা করছেন মালিকেরা।
শিমুলিয়া ঘাটের লঞ্চ ও স্পিডবোট কর্তৃপক্ষ জানায়, মুন্সিগঞ্জের শিমুলিয়া ও মাদারীপুরের বাংলাবাজার নৌপথে ছোট-বড় মিলিয়ে ৮৭টি যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচল করে। এ নৌপথে চলাচলকারী ২৫০টি স্পিডবোট রয়েছে। লঞ্চ ও স্পিডবোট ঘাটের ব্যবস্থাপক, শ্রমিক, চালক, তাঁর সহকারীসহ প্রায় এক হাজারের বেশি মানুষের জীবন–জীবিকা চলে এখান থেকে আয় করে।
সরেজমিন বৃহস্পতিবার সকাল থেকে লঞ্চ ও স্পিডবোট ঘাটে যাত্রী ও পরিবহন চালক, মালিকদের ব্যস্ততা লক্ষ করা যায়। লঞ্চের শ্রমিকেরা যাত্রীদের ডাকাডাকি করছেন। যাত্রীরা তাঁদের গন্তব্যে যাওয়ার জন্য হুমড়ি খেয়ে লঞ্চে উঠছেন। একই অবস্থা লঞ্চঘাটের পাশে থাকা স্পিডবোট ঘাটেও।
দেশের দক্ষিণ, দক্ষিণ–পশ্চিমাঞ্চলের ২১ জেলার মানুষের যাতায়াতের জন্য ব্যবহৃত হয় এ নৌপথ। সেতু চালু হলে বন্ধ হবে এসব পথ।
একজন যাত্রী বললেন, পদ্মা সেতু বাস্তবের একেবারে কাছাকাছি। সামনে আর ফেরি, লঞ্চ ও স্পিডবোটে চড়তে হবে না। ঘাটে এসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষাও করতে হবে না। ভাড়া নিয়ে স্পিডবোট ও লঞ্চ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে ঝগড়া করতে হবে না।
এমবি ফারজানা অ্যান্ড সানজিদা কোম্পানির মালিক রিপন মাতবর বলেন, তাঁর কোম্পানির চারটি লঞ্চ এ পথে চলে। খরচ বাদে আয়টা ভালো হতো। সেতু চালু হলে এ পথে আর লঞ্চ চালবে না। তার লঞ্চগুলো অন্য নৌপথে স্থানান্তর করার কথা ভাবছেন তিনি।
বেপারি নেভিগেশন-২–এর চালক মো. ওয়াহিদ মিয়া বলেন, তাঁদের কোম্পানির ৮-১০টি লঞ্চ আছে। সেতু চালু হলে কিছু লঞ্চ বিক্রির সিদ্ধান্ত নিয়েছেন মালিকেরা। কয়েকটি লঞ্চ অন্য নৌপথে পাঠাবেন বলে তিনি শুনেছি। লঞ্চের চালক ও সহকারীদের অনেকেই অন্য কাজে ঢোকার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
স্পিডবোট মালিক আল-আমিন বলেন, ১০ লাখ টাকায় তিনটি স্পিডবোট কিনেছেন তিনি। তিন বছর ধরে শিমুলিয়া-কাঁঠালবাড়ি ঘাটে চলছে তাঁর স্পিডবোট। তিনি বলেন, পদ্মা সেতু নিয়ে সবাই দ্বিধাগ্রস্ত ছিল। এখন বিষয়টি স্পষ্ট। সেতু হলে তাঁরা তাঁদের স্পিডবোট দোহারের মৈনটঘাট নিয়ে যাবেন।
স্পিডবোটের চালক হাবীব মিয়া বলেন, সেতু চালু হলে তাঁদের কাজ চলে যাবে।
স্পিডবোট ঘাটের পরিচালক মো. ইলিয়াস ঢালী প্রথম আলোকে জানান, ‘সেতু চালু হলে স্পিডবোট চলাচল বন্ধ হয়ে যাবে। এতে মালিক-শ্রমিকেরা কিছুটা চিন্তিত। ব্যবসা অন্য জায়গায় স্থানান্তরের চেষ্টা করছেন মালিকেরা। কেউ কেউ বিক্রি করে দেবেন বলে শুনছি।’