মানুষের মধ্যে ভুল করার প্রবণতা আছে। কেউ এমন নেই যে বুকে হাত দিয়ে বলতে পারবে, ‘আমার জীবনে কোনো দিন ভুল হয়নি।’ ইচ্ছায়-অনিচ্ছায় কমবেশি সবাই ভুল করে থাকি। শরিয়তের দৃষ্টিতে ভুল একটি স্বাভাবিক বিষয়।
এই ভুল শোধরানোর নীতিমালা রয়েছে। অনেক সময় আমরা এই নীতি অবলম্বন না করার কারণে হিতে বিপরীত হয়। এখানে আমরা ভুল শোধরানোর কিছু পদ্ধতি নিয়ে আলোচনা করব।
ভুল শোধরাতে তিরস্কার নয় : অনেকেই ভুল শোধরাতে তিরস্কারের পথ অবলম্বন করে থাকি।
অথচ তিরস্কার বেশির ভাগ সময় ভালো কিছু নিয়ে আসে না। সে জন্য তিরস্কার পরিহার করে সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দেওয়াটাই অধিক শক্তিশালী। আনাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি ১০ বছর নবী (সা.)-এর খিদমত করেছি। কিন্তু তিনি কখনো আমার প্রতি উফ শব্দটি করেননি।
এ কথা জিজ্ঞেস করেননি, তুমি এই কাজ কেন করলে এবং কেন করলে না? (সহিহ বুখারি, হাদিস : ৬০৩৮)
ভুলটি সুন্দরভাবে বুঝিয়ে দিন : অনেক সময় এমন হয়, ভুল পথে চলতে চলতে রক্তমাংসে এই ভুল একাকার হয়ে যায়। তখন ভেতর থেকে অপরাধবোধ চলে যায়। সে ক্ষেত্রে এই ভুল সম্পর্কে ভালোভাবে বুঝিয়ে দেওয়াই হচ্ছে কল্যাণকর। আবু উমামা (রা.) বলেন, এক যুবক রাসুল (সা.)-এর কাছে এসে বলল, হে আল্লাহর রাসুল! আমাকে ব্যভিচার করার অনুমতি দিন। এটা শুনে লোকজন তার প্রতি উত্তেজিত হয়ে ধমক দিল এবং চুপ করতে বলল।
তখন রাসুল (সা.) তাকে কাছে কাছে নিয়ে বললেন, বসো। যুবকটি বসার পর রাসুল (সা.) তাকে বলেন, তুমি কি এটা তোমার মায়ের জন্য পছন্দ করো? যুবক জবাব দিল, আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন, আল্লাহর শপথ, তা কখনো পছন্দ করি না। তখন রাসুল (সা.) বললেন, তেমনি মানুষও তাদের মায়েদের জন্য সেটা পছন্দ করে না। তারপর রাসুল (সা.) বললেন, তুমি কি তোমার মেয়ের জন্য তা পছন্দ করো? যুবক জবাব দিল, আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন, আল্লাহর শপথ, তা কখনো পছন্দ করি না। তখন রাসুল (সা.) বললেন, অনুরূপভাবে মানুষও তাদের মেয়েদের জন্য সেটা পছন্দ করে না। তারপর রাসুল (সা.) বললেন, তুমি কি তোমার বোনের জন্য সেটা পছন্দ করো? যুবক জবাব দিল, আল্লাহ আমাকে আপনার জন্য উৎসর্গ করুন, আল্লাহর শপথ, তা কখনো পছন্দ করি না। তখন রাসুল (সা.) বললেন, তেমনি লোকেরাও তাদের বোনের জন্য তা পছন্দ করে না। (এভাবে রাসুল (সা.) তার ফুফু, খালা সম্পর্কেও অনুরূপ কথা বলেন আর যুবকটি একই জবাব দিল) এরপর রাসুল (সা.) তার বুকে হাত রেখে বললেন, ‘হে আল্লাহ, তার গুনাহ ক্ষমা করে দিন, তার মনকে পবিত্র করুন এবং তার লজ্জাস্থানের হেফাজত করুন।’ বর্ণনাকারী সাহাবি বলেন, এরপর এই যুবককে কারো প্রতি তাকাতে দেখা যেত না। (শুআবুল ঈমান, হাদিস : ৫৪১৫)
ভুলকারীর জায়গায় নিজেকে রাখুন : যিনি ভুল করেছেন, তার জায়গায় যদি আপনি হতেন তাহলে আপনি মানুষ থেকে কেমন প্রত্যাশা করতেন, এটা আগে কল্পনা করুন। এরপর তাকে সংশোধন করুন, তাহলে ইনশাআল্লাহ সুন্দর পদ্ধতিতে সংশোধন করতে পারবেন। এটি একটি চমৎকার ও পরীক্ষিত পদ্ধতি। এ ক্ষেত্রে বাড়াবাড়ি কম হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। আবদুল্লাহ ইবনে আমর ইবনুল আস (রা.) থেকে বর্ণিত, রাসুল (সা.) ইরশাদ করেন, যে চায় তাকে জাহান্নাম থেকে রক্ষা করা হোক এবং জান্নাতে প্রবেশ করানো হোক, তার মৃত্যু যেন এমন অবস্থায় আসে যে সে আল্লাহর প্রতি এবং শেষ দিবসের প্রতি ঈমান রাখে। আর মানুষের সঙ্গে তেমন আচরণ করে, যেমন আচরণ পেতে সে পছন্দ করে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ১৮৪৪)
নম্র ভাষায় শোধরানো : নম্রতা যেকোনো জায়গায় কল্যাণ বয়ে আনে। সে জন্য আল্লাহ তাআলা মন্দকে সুন্দরভাবে প্রতিহত করার আদেশ দিয়েছেন। হাদিসে এসেছে, হজরত আয়েশা (রা.) থেকে বর্ণিত, নবী (সা.) বলেছেন, নম্রতা যেকোনো বিষয়কে সৌন্দর্যমণ্ডিত করে। আর যেকোনো বিষয় থেকে নম্রতা বিদূরিত হলে তাকে কলুষিত করে। (সহিহ মুসলিম, হাদিস : ৬৪৯৬)
বিডি-প্রতিদিন/সালাহ উদ্দীন